রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত | জুমুয়ার খুতবা | পিডিএফ

সিয়াম বা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

সিয়াম বা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

সিয়াম ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির স্মারক। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়। ইসলামী জীবন দর্শনে সিয়াম বা রোজা এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ইহা মানুষকে ত্যাগী ও সংযমী হতে অনুপ্রাণিত করে। সিয়ামের ফরজিয়াত কোরআন, হাদিস ও ইজমা দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত। সকল নবীর শরীয়তে সিয়াম ফরজ ছিল। উম্মতে মোহাম্মদীর উপর রমজানের সাওম ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরীতে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ۙ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরাহ বাক্বারা ২:১৮৩)

সিয়াম বা রোজার সংজ্ঞা

সিয়াম বা সাওম আরবি শব্দ। এর ফারসি প্রতিশব্দ হচ্ছে রোজা। আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর অর্থ হচ্ছে, যে কোন বিষয় ও কাজ থেকে বিরত থাকা, সংযত হওয়া, উপবাস করাকঠোর সাধনা, অবিরাম প্রচেষ্টা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় সাওম বা রোজা বলা হয় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রিয় কামনা বাসনা হতে বিরত থাকার নাম সিয়াম বা রোজা।

সিয়াম বা রোজার গুরুত্ব

রমাদ্বানের পূর্ণ মাস একজন বালেগ, সুস্থ্য ও বিবেকবান মুসলমানের উপর সাওম পালন করা ফরজ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ۙ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَعَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَہٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَہُوَ خَیۡرٌ لَّہٗ ؕ وَاَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা আল বাক্বারা ২:১৮৩-১৮৫)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‏

ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।

১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। 

২. সলাত কায়িম করা। 

৩. যাকাত আদায় করা। 

৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং

৫. রমযানের সিয়ামব্রত পালন করা (রোজা রাখা)।

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮, মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৭)  

সিয়ামের উদ্দেশ্য

সিয়ামের উদ্দেশ্য হল তাক্বওয়া অর্জন করা। যা আমরা পূর্ববর্তী আয়াতে অর্থাৎ সূরাহ বাক্বারার ১৮৩ নং আয়াতে জেনেছি। তাক্বওয়া অর্জন করতে পারলে একজন মানুষ খাঁটি মুমিন হতে পারে। যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৩)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشَّرْبِ فَقَطْ إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ فَإِنْ سَابَّكَ أَحَدٌ أَوْ جَهِلَ عَلَيْكَ فَقَلْ : إِنِّى صَائِمٌ إِنِّى صَائِمٌ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়। সিয়াম তো অসার, বাজে ও অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকার নাম। যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় অথবা তোমার সাথে কেউ মূর্খামি করে তবে তাকে বল, আমি সিয়াম রেখেছি। আমি সিয়াম রেখেছি। (হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১০৪৮, হাকেম ১৫৭০, বাইহাক্বী ৮০৯৬, ইবনে খুযাইমা ১৯৯৬, সহীহুল জামে৫৩৭৬)

সুতরাং আমাদেরকে এমনভাবে রমজানের তাকওয়া প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে, যাতে পুরো বছর ওই প্রশিক্ষণের পর ভোগ করতে পারি। যেমনটি সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন সময় কষ্টকর প্রশিক্ষণ চালু আছে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য লোকদের কষ্ট দেয়া নয় বরং এর দ্বারা তাদেরকে কর্মঠ, কর্ম উপযোগী ও শারীরিকভাবে যোগ্য করে তোলা হয়। ঠিক এভাবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য সাওমের বিধান দেননি বরং মুমিনের উপকারের জন্যই এই বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা বাক্বারা ২:১৮৫)

সাওম ফরজ হওয়ার শর্তাবলী

১) মুসলমান হওয়া।

২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।

৩) বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া।

সুতরাং কোনো অমুসলিম অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের উপর সাওম ফরজ নয়। তাছাড়া অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির জন্য রমজান মাসের সাওম পালন কষ্টকর হলে তখন সাওম না রেখে পরে সাওম পালন করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। (সূরা বাক্বারার ১৮৪ নং আয়াতে বিস্তারিত)

হাদিসে বর্ণিত আছে,

عَنِ ابْنِ، عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - قَالَ لاَ تَعِبْ عَلَى مَنْ صَامَ وَلاَ عَلَى مَنْ أَفْطَرَ قَدْ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي السَّفَرِ وَأَفْطَرَ .

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সওম পালন করে তার প্রতি দোষারোপ করো না এবং তার প্রতিও না যে সওম ছেড়ে দেয়। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের অবস্থায় (কখনো) সিয়াম পালন করেছেন (আবার কখনও) সওম ছেড়ে দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪৯৯, ই.ফা. ২৪৭৬, ই.সে. ২৪৭৫)

সিয়ামের ফজিলত

সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত আছে, নিন্মে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলঃ

সিয়াম পালন কারীর পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ . وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ " .

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুন থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ্‌ বলেন, কিন্তু সিয়াম আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। বান্দা আমারই জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে। সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ আছে। একটি তার ইফত্বারের সময় এবং অপরটি তার প্রতিপালক আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাতের সময়। সিয়াম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৯৭, ই.ফা. ২৫৭৪, ই.সে. ২৫৭৩)

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يُدْعَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَمَنْ كَانَ مِنْ الصَّائِمِينَ دَخَلَهُ وَمَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا».

সাহ্‌ল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জান্নাতের একটি দরজার নাম রায়্যানকিয়ামাতের দিন সেখান থেকে আহ্বান করা হবেঃ রোযাদারগণ কোথায়? যে ব্যক্তি রোযাদার হবে, সে উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং যে উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে কখনও পিপাসার্ত হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬৪০)

রমাজান মাসের ফজিলত

রমজানুল মুবারক মাসের ফজিলত অসীম। এ মাসটি কুরআন নাজিলের মাস। অন্যান্য আসমানী কিতাবও এই মাসে অবর্তীর্ণ হয়। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদিসে বর্ণিত আছে,

রমদ্বান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ ‏"‏ ‏.

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমাযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শাইত্বনগুলোকে শিকলে বন্দী করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৩৮৫, ই. ফা. ২৩৬২, ই. সে. ২৩৬৩)

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏"‏‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ، وَأَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ، حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ ـ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ـ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ، فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ فَلَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ‏.

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। তাঁর দানশীলতা বহুগুন বর্ধিত হত রমাযানের পবিত্র দিনে যখন জিব্রাঈল (আঃ) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। জিব্রাঈল (আঃ) রমাযানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কুরআনের সবক দিতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কল্যাণ বণ্টনে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫৫৪)

সিয়াম এবং কুরআন শাফায়াত করবে

وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمْرٍو : أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ : «الصِّيَامُ وَالْقُرْاٰنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ، يَقُوْلُ الصِّيَامُ : أَيْ رَبِّ! إِنِّىْ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ، فَشَفِّعْنِىْ فِيهِ، وَيَقُولُ الْقُرْاٰنُ : مَنَعْتُهُ النُّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِىْ فِيهِ، فَيُشَفَّعَانِ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৯৬৩, বায়হাক্বী; শুআবূল ঈমান)

উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রমাদান মাস মুসলিম জাতির জন্য আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ নেয়ামত। এই মাসে একজন মুসলিম সিয়ামরত অবস্থায় যাবতীয় অপরাধ্মূলক কাজ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এক বিরাট সুযোগ লাভ করে। সাওম ফরজ করার মূল উদ্দেশ্যও তাই যা لعلكم تتقون  দ্বারা আল্লাহ তাআলা ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণ হক্ব আদায় করে সাওম পালন করার তাউফিক দান করুন। 

সিয়াম বা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

পিডিএফ ডাউনলোড