১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেম সমাজের অবদান


১৯৬৪ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে এক সমাবেশে মওলানা আবদুল হামিদ ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ

১৯৬৪ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে এক সমাবেশে মওলানা আবদুল হামিদ ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ

ভূমিকাঃ স্বাধীনতা আল্লাহ তাআলার মহান নেয়ামত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দল-মত-নির্বিশেষে দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। ওলামায়ে কেরাম কখনো জুলুমের পক্ষে থাকতে পারে না। তাই তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শোষণ ও  চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশাল অবদান রেখেছেন।  উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলনবাংলাভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ সকল জাতীয় অর্জনে এ দেশের আলেম সমাজের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ইসলাম ও আলেম বিদ্বেষী কুচক্রী মহলের কারসাজিতে ইতিহাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমদের অবদানের কথা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। আলেমদের পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতা বিরোধী বানানো হচ্ছে। নাটক-সিনেমা গল্প উপন্যাস এবং মুক্তিযুদ্ধের অনির্ভরযোগ্য বহু গ্রন্থের মাধ্যমে একটি চক্র উলামায়ে কেরামকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে যুগের পর যুগ চিত্রায়িত করে আসছিল। এর ফলে  সাধারণভাবে দাঁড়ি টুপি যেকোনো মাদ্রাসা ছাত্রকেও রাজাকার হিসেবে টিপ্পনী দেয়ার একটি বাজে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ওলামায়ে কেরামকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা গেছে।  যা ইতিহাসের বিকৃতি ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে একটি নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং এভাবে আর চলতে দেয়া ঠিক হবে না।

স্বাধীনতা কালীন ওলামায়েকেরাম প্রধানত ৬ টি ভাগে বিভক্ত ছিলেন ।

  • ১/ জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত সীমিত সংখ্যক আলেম-ওলামা ।
  • ২/ সাধারণ আওয়ামী লীগ সহ সাধারণ রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত তৃণমূলের সাধারণ ওলামায়ে কেরাম ।
  • ৩/ সরকারি বেসরকারি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক বৃন্দ ।
  • ৪/ সারাদেশের মসজিদ সমূহের ইমাম ও মুয়াজ্জিনগন ।
  • ৫/ খানকা কেন্দ্রিক পীর-মাশায়েখ ও ওয়ায়েজীনে কেরাম ।
  • ৬/ অন্যান্য পেশায় সম্পৃক্ত সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম সমাজ ।

এই ৬ শ্রেণীর মাঝে শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামের নেতা কর্মী হিসেবে যারা কাজ করতেন জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থানের কারণে তাঁরা ছিলেন স্বাধীনতার বিপক্ষে । এ সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা ।

    প্রথমতঃ ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী তৃণমূল ওলামায়ে কেরামের মাঝে তেমন জনপ্রিয় কোন সংগঠন ছিলনা।

  দ্বিতীয়তঃ এ দেশের বিপুলসংখ্যক দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম ও জামায়াতের সাথে আদর্শিক এবং রাজনৈতিক দূরত্ব ঐতিহাসিক সত্য।

  তৃতীয়তঃ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সমর্থক আলেম-ওলামাগণও তাদের এই সাংগঠনিক সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন অথবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। কাজেই জামায়াতে ইসলাম কিছুতেই বৃহত্তর আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতিনিধিত্বশীল কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে শুধুমাত্র একটি দলের রাজনৈতিক অবস্থান দিয়ে বিপুল সংখ্যক ওলামায়ে কেরামকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যায়িত করা  এক ধরনের জ্ঞান পাপ উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রপাগান্ডা প্রকারান্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির বাইরে মসজিদ মাদ্রাসা খানকা ও অন্যান্য পেশার বিপুলসংখ্যক ওলামায়ে কেরাম হয়তো মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন অথবা মৌন সমর্থন দিয়েছেন অথবা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। এদের কেউই স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে নি। সুতরাং স্বাধীনতার প্রশ্নে ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে প্রচারিত অভিযোগের ইতি টানার সময় হয়েছে। এই মিথ্যা ও বিকৃত ইতিহাস চর্চা কে চলতে দেয়া আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার প্রতি এক ধরনের বে-ইনসাফি ।

       মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদান ও তৎপরতার এমন অসংখ্য গল্প আছেযা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিহিংসার কারণে ইতিহাসের অলিখিত অধ্যায়ে হারিয়ে গেছে। আর এই সুবাদে একটা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে যেদাঁড়ি-টুপিধারী আর আলেম মানেই রাজাকার। অথচ টুপি-দাঁড়ি পরে রাজাকারি যারা করেছিলতাদের সিংহভাগই জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত লোক এবং আলেমদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

       পাকিস্তানিরা সর্বপ্রথম সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছিল চট্টগ্রামেআর আলেমদের এই অংশের মূল ঘাঁটি ছিল সেখানেই। উপমহাদেশের অন্যতম ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা এবং পটিয়া মাদরাসা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দুটো দুর্গ। বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার প্রথম পটিয়া মাদরাসা থেকেই করা হয়েছিল। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার নিরাপদ আশ্রয় ছিল এ মাদরাসাটি।

(তথ্যসূত্র হাম্মাদ রাগিবমুক্তিযুদ্ধ ও আলেম সমাজFateh24.com  মার্চ ২৬,২০১৯)

চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসা  ও বরিশালের চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প। (তথ্যসূত্র: ourislam24.com১ ডিসেম্বর ২০১৭মুফতি আরাফাতমুক্তিযুদ্ধ আলেমসমাজ স্বতন্ত্র প্রহরী)

মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী
মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী

        তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন মাওলানা ফজলুল করীম (রহ.) পীর সাহেব চরমোনাইআল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ (রহ.)  জালালাবাদী ভাতৃদ্বয়,  মাওলানা আতাউর রহমান খানমাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ  প্রমুখ । স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণের এক দলীল হয়ে আছে "আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে" বইটি। যাতে শতাধিক আলেম মুক্তিযোদ্ধাকে দলীলসহ নিবন্ধিত করা হয়েছে।

      এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ওলামায়ে কেরামের ভূমিকাও অবিস্মরনীয় ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের মুসলমান সমাজে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রবল জনমত গঠনের কাজ করেন মাওলানা আসআদ মাদানী।

    রাজধানী দিল্লিতে বিশাল মহাসমাবেশসহ ভারতজুড়ে প্রায় ৩০০টি সমাবেশ করেন তিনি। শরণার্থী শিবিরগুলোতে তার অপরিসীম সহযোগিতা ও দেখাশোনাগণনির্যাতন বন্ধ করার জন্য তার বিরামহীন দুঃসাহসী ভূমিকা এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বাধিকার প্রাপ্তিতে তার অবদান স্বাভাবিকভাবে তাকে স্বাধীনতার অন্যতম কাণ্ডারী দূতের মহিমা দিয়েছে।

      স্বাধীনতা যুদ্ধের একপর্যায়ে পাক-হানাদার বাহিনীর সহায়তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে দমন-পীড়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যখন কুখ্যাত সপ্তম নৌবহর এ উপমাহাদেশে যাত্রা করেতখন মাওলানা আসআদ মাদানী (র.) পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক মুসলমানদের নিয়ে দিল্লির রাজপথে মিছিল করেন এবং তার নেতৃত্বে মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও করা হয়।

      সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) সাহেবজাদা জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল ও ভারতীয় পার্লামেন্টের লোকসভার সদস্য হজরত আসআদ মাদানী (রহ.) ।

তিনি ছিলেন ভারতের মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল ও ১৮ আগস্ট কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে আয়োজিত জমিয়তের কনভেশন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে দুদফায় দুটি রেজুলেশন পাস করেন তিনি।

     এছাড়া মাওলানা আসআদ মাদানী (রহ.) পশ্চিমবঙ্গআসামত্রিপুরা এলাকায় বাংলাদেশীদের জন্য শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থা করেন এবং জমিয়তের পক্ষ থেকে নিয়মিত রিলিফ বিতরণের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ সালে ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হিসেবে  বাংলাদেশে আসেন। মাওলানা কাজি মুতাসিম বিল্লাহসহ বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামকে নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে বঙ্গবন্ধুকে

এ কথা বোঝাতে সক্ষম হন যেঅধিকাংশ আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধারা তাদের ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছে। বিষয়টি দূরদর্শী রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে সক্ষম হন ।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা পালন এবং বাংলাদেশে দেওবন্দ পন্থী বিপুল ওলামায়ে কেরামের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির জন্য অক্টোবর ২০১৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে  "বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) পদক" প্রদান করে বিরল সম্মানে ভূষিত করে। তার পক্ষে এ সম্মান গ্রহণ করেন তার মেজ ছেলে মাওলানা মওদুদ মাদানী। এ সম্মান স্বাধীনতা যুদ্ধে উলামায়ে কেরামের অবদান এর একটি বিশাল স্বীকৃতি ।

(তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত জীবনী গ্রন্থ মাওলানা সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ভূমিকা) ।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ওলামায়ে কেরাম ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে কালজয়ী ভূমিকা রেখেছেন তা জাতির সামনে তুলে ধরা সময়ের একান্ত দাবি । স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে আলেমদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।

মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী
মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী

স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ সংগ্রামে আলেম সমাজের ধারাবাহিক আন্দোলন

        স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেমদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। শুধু তাই নয় বরং বিভিন্ন আন্দোলনে আলেম সমাজের সক্রীয় অংশগ্রহণ ইতিহাসে চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। পিনাকী ভট্টাচার্য তার মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বইয়ের ২৩ ও ২৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন আজাদী আন্দোলন১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবইংরেজি বিরোধী আন্দোলন৫২ এর ভাষা আন্দোলন৬৯ এর অভ্যূত্থানস্বাধীনতার সংগ্রাম সহ দেশ ও মজলুমের পক্ষে সকল প্রকার আন্দোলনে আলেমরা ছিলেন অগ্রগামী।

১৯৪৭ এ দেশ ভাগের সময় বাংলার আলেম সমাজের ভুমিকা

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে ২টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সে সময় বাংলার প্রখ্যাত আলেম মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেন এবং বাংলা ভাষাভাষী লোকদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত রাজনীতিতে বঙ্গীয় ওলামাদের ভূমিকা নামক বইয়ে ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ লিখেছেন মাওলানা পাঁচবাগী পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধী ছিলেন এবং স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ কর্তৃক ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তদানিন্তন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী ও বাংলার মুসলিম লীগের সেক্রেটারী মৌলভী আবুল হাসেমবেঙ্গল কংগ্রেস পার্টির নেতা কিরন সংকর রায় প্রমুখ স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। কিন্তু সেটি কংগ্রেস মেনে নেয়নি। এমনকি সমগ্র বাংলার আসামকে পাকিস্তানের অংশ করার দাবি ছিলো সেটি তিনি রাখেন নি। মৌলভী হাশেমসোহরাওয়ার্দী ও কিরন সংকর রায় স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবির বহুপূর্বেই মাওলানা পাঁচবাগী তার প্রচার পত্রের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবি উপস্থাপন করেন। এ কারনে মাওলানা পাঁচবাগীকে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা বলা যেতে পারে।

৫২ এর ভাষা আন্দোলনে আলেম সমাজের ভুমিকা

পৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান ও অশেষ নেয়ামত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

 ‏‏ خَلَقَ ٱلْإِنسا نَ عَلَّمَهُ ٱلْبَيَان 

আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষতাদের শিখিয়েছেন ভাষা। (সূরা আর রাহমান:৩-৪) উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি ভাষা শিক্ষার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলে মুসলমান ও আলেম-উলামাগণ এ দিকে নজর দিতে শুরু করেন। ফলে বাংলা ভাষা যখন উদার আলেম-উলামা ও মুসলমানদের পরশ পেয়ে মাত্রা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তখনই পাকিস্তানের নির্বোধ শাসকদের মাথায় চাপে একের ভাষা অপরের উপর চাপিয়ে দেয়ার নাদান ভূত। তখনই গর্জে উঠে বাংলার দামাল ছেলেরা। ঢাকার রাজপথ লাল হয় যুবকদের তপ্ত রক্তে। বাতাসে ঢেউ উঠে প্রতিবাদের। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের বহিৃশিখা। এই আন্দোলনে সচেতন অন্য সকলের মতো আলেম সমাজও অংশগ্রহণ করেন দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমরা সবিশেষ উল্লেখ করতে পারি মাওলানা আতহার আলী (রহ.) এর নাম। ঐতিহাসিক দলীল মতে ১৯৫২ সালের ১৮১৯ ও ২০ মার্চ কিশোরগঞ্জের হজরত নগরে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঐতিহাসিক সম্মেলেন। এই সম্মেলনে সর্ব মহলের আলেম-উলামাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৮ মার্চ ছিল কাউন্সিল। সভাপতি ছিলেন মাওলানা আতহার আলী (রহ.)। এই কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি ছিল চতুর্থ প্রস্তাব: খ. পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এই সম্মেলন পাকিস্তান গণপরিষদের নিকট দৃঢ়তার সহিত দাবি জানাইতেছে যেবাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা রুপে গ্রহণ করা হোক।

তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টির জন্য প্রণীত মূলনীতিতেও তিনি এই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে উত্থাপন করেন- উর্দুর সাথে বাংলাকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এক কথায় উভয় পাকিস্তান থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবকারী তিনিই প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। (হায়াতে আতহার: ১৩৮-১৩৯)

এখানেই কি শেষসেই সময় তিনি কওমী মাদরাসার তালিবুল ইলমদের বাংলা ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন মুতামুরুল মাদারিসিল কাওমিয়্যা। তখন তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ এর প্রধান। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলবামপন্থী ও সেক্যুলার শ্রেণির লেখক-বুদ্ধিজীবীগণ তাদের আলোচনা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের যে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও স্বর্ণোজ্জ্বল অবদান আছে তা পরিপূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। ইসলামপন্থীদের প্রতি তাদের নাক সিঁটকানো দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের কারণেই তাঁদের ত্যাগ ও অবদানের সোনালি ইতিহাসকে ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যান। চামচিকা চায় না বলেই কি সূর্য ঘরে বসে থাকবেনা। ক্ষণিক সময় তারা এই সত্য ইতিহাস চেপে রাখলেও ইতিহাস তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় জ্বলে ওঠে। তাদের সেই কারসাজির খেলাঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আলেম-ওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ ভাষা আন্দোলনে যে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেনতা জাজ্বল্যমান সত্য। ৪৭-এর ১৭ই নভেম্বর বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করার অনুরােধ জানিয়ে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি স্মারকপত্র দাখিল করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের শত শত নাগরিক এই স্মারকপত্রে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরকারীগণের মধ্যে কবিসাহিত্যিকশিল্পীআইনজীবীশিক্ষকওলামাছাত্ররাজনৈতিক নেতাডাক্তারসাংবাদিক এবং সরকারী কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লােক ছিলেন। স্মারকপত্রে উল্লিখিত রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাবটি পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মন্ত্রীরাও সমর্থন করেন বলে জানা যায় । (দৈনিক আজাদ১৮ই নভেম্বর১৯৪৭)

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদের একটি উদ্ধৃতি এখানে প্রণিধানযোগ্য। বাংলা ১৩৫০ সালের মাসিক মোহাম্মদীর কার্তিক সংখ্যায় আবুল মনসুর আহমেদ তার পূর্ব-পাকিস্তানের জবান-এ লিখেছেনবাংলার মুসলমানদের মাতৃভাষা বাংলা হবে কি উর্দু হবেএ-তর্ক খুব জোরে-শোরে একবার উঠেছিল। মুসলিম বাংলার শক্তিশালী নেতাদের বেশির ভাগ উর্দুর দিকে জোর দিয়েছিলেন। নবাব আবদুর রহমান মরহুমস্যার আবদুর রহিমমৌ. ফজলুল হকডা. আবদুল্লাহসোহরাওয়ার্দীমৌ. আবুল কাসেম মরহুম প্রমুখ প্রভাবশালী নেতা উর্দুকে বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা করবার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুসলিম বাংলার সৌভাগ্য এই যেউর্দু-প্রীতি যাদের বেশি থাকবার কথাসেই আলেম সমাজই এই অপচেষ্টায় বাধা দিয়েছিলেন। বাংলার আলেম সমাজের মাথার মণি মওলানা মুহাম্মদ আকরম খাঁমওলানা আবদুল্লাহেল বাকীমওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীউর্দু-বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এঁদের প্রয়াসে শক্তি যুগিয়েছিলেন মরহুম নবাব আলী চৌধুরী সাহেব। সে লড়াই-এ এঁরাই জয়লাভ করেছিলেন। বাংলার ওপর উর্দু চাপাবার সে-চেষ্টা তখনকার মতো ব্যর্থ হয়। (দৈনিক বণিক বার্তা১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)

 তমদ্দুন মজলিস ও অন্য আরেকটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ড. এ. এসএম নুরুল হক ভূইয়াসর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়ক এডভোকেট কাজী গােলাম মাহবুবভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ আলীঅধ্যাপক আবদুল গফুরবিশিষ্ট দার্শনিক দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফনেজাম ইসলাম পার্টির নেতা মৌলভী ফরিদ আহমদ এ ধরনের বহু ইসলামী ব্যক্তিত্ব রয়েছেনযারা প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বের কাতারে ছিলেন। তারা ইসলাম বর্জন করে নয়বরং ইসলামী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েই আল্লাহর দেয়া নেয়ামত মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন। তবে একথাও সত্যএ আন্দোলনে ইসলামপন্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সাধারণ বাঙ্গালী ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছিলেন মূলত একটি গণআন্দোলন হিসেবে।

বর্তমান ইতিহাস বিকৃতকারীগণ এমনভাবে ইতিহাস সৃষ্টির চেষ্টা করছেনযেন ইসলাম আর বাংলা ভাষার মাঝে দা-কুমড়া সম্পর্ক। তারা এ কথাই বলতে বা শ্রবণ করাতে চান যেবাংলাভাষা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিলেন কমিউনিষ্টরাইসলামপন্থীরা নন। এ জন্যই ভাষা আন্দোলনের নেতা কাজী গোলাম মাহবুব দুঃখ করে বলেছেনভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি। দুঃখের বিষয়ভাষা আন্দোলনের যে কয়েকটি ইতিহাস বা দলিল প্রকাশিত হয়েছেতা পড়লে আমাদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। বেশির ভাগ লেখার মধ্যেই দেখা যায়কমিউনিষ্টরাই যেন এ আন্দোলন করেছিল এবং নেতৃত্বটাও তারাই দিয়েছেন। অথচ কমিউনিষ্ট পার্টি এ দুটি আন্দোলনকালেই নিষিদ্ধ ছিল। (মাসিক ঐতিহ্যইসলামিক ফাউন্ডেশনবাংলাদেশফেব্রুয়ারী১৯৮৬)

এ প্রসঙ্গে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী বলেছেন১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনে মূল চালিকা শক্তিই ছিল ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত সংস্থা তমদ্দুন মজলিস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। তখন কমিউনিষ্ট ছাত্রদের সংখ্যা এত মুষ্টিমেয় ও নগণ্য ছিল যেচালিকা শক্তি হওয়া তাে দূরের কথাকোন ফ্যাক্টরই তারা ছিল না। (বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরীঐতিহ্যফেব্রুয়ারী৮৬) মোট কথাকিছু সংখ্যক মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও শাসক নবপ্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রক্ষার মোহে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে। এ বিভ্রান্তির মূলে তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরিস্থিতিকেও দায়ী করা যায়। কারণ তখন ভারত উপমহাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার হিড়িক পড়েছিল। যেজন্য এমনকি বামপন্থীরা যে কবি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গর্ব করে এবং যিনি বাংলা ভাষাতেই সাহিত্য রচনার জন্য নোবেল পুরস্কার পানতিনিও হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নেহেরুর কাছে পত্র দিয়েছিলেন। অতএব তখন অনেকেই বিভ্রান্ত ছিলেন এবং আমাদের বাংলা ভাষাকে অমর্যাদা করেছেন। (মাতৃভাষা আন্দোলন ও ইসলাম,ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আন্ওয়ারীমুহাম্মদ ব্রাদার্স২০০৩ খ্রি.পৃ. ৯০-৯২)

ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকে চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি পর্বেই দেশের মূলধারার সিংহভাগ আলেম-ওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ সোচ্চার ছিলেন। নিজের শ্রমমেধা ও সাহসিকতার মাধ্যমে এই আন্দোলনে যেসব আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদের দৃপ্ত পদচারণা ছিলতাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেনভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মাওলানা আকরম খাঁ (রহ.)ভাষা আন্দোলনে প্রেরণার বাতিঘর মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (রহ.)মাওলানা আবদুল্লাহিল বাকী (রহ.)ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মওলানা ভাসানী (রহ.)ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ (রহ.)ভাষা আন্দোলনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠস্বর মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)মুফতী দ্বীন মুহাম্মদ খান (রহ.)অবিভক্ত পাকিস্তানের উভয় অংশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি উত্থাপনকারী প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আতহার আলী (রহ.)ভাষা আন্দোলনের অকুণ্ঠ সমর্থক খতিবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ (রহ.)ভাষা আন্দোলনের সমর্থক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ.)ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক মৌলভী ফরিদ আহমদ (রহ.)ভাষার জন্য টানা দেড় মাস কারাবরণকারী ভাষাসৈনিক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.)ভাষা সৈনিক মাওলানা ফজলুল হক নূরনগরী (রহ.)ভাষাসৈনিক মাওলানা আবদুস সোবহান (রহ.)ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী (রহ.)ভাষাসৈনিক মাওলানা লোকমান আহমদ আমীমীভাষাসৈনিক মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.)ভাষাসৈনিক মাওলানা মুসা (রহ.)ভাষাসৈনিক মাওলানা হাসান শরীফ (রহ.)মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান (রহ.)।

ভাষা আন্দোলনে ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেনভাষা আন্দোলনের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (রহ.)ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ (রহ.)বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম (রহ.)ইসলামি চিন্তাবিদ অধ্যাপক শাহেদ আলী (রহ.)ইসলামি চিন্তাবিদ দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ (রহ.)ইসলামি চিন্তাবিদ শামসুল হক (রহ.)ইসলামি চিন্তাবিদ অধ্যাপক আবদুল গফুর প্রমূূখ।

৬ দফা দাবির সমর্থনে আলেম উলামা

মাওলানা অলিউর রহমান ছিলেন আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। শেখ মুজিব যখন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষনা করেন তখন অনেকেই ৬ দফা কে ইসলাম বিরোধী বলে ঘোষনা দেয়। সেই সময় মাওলানা অলিউর রহমান, "ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ৬ দফা" নামক একটি বই লিখে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কোন দাবীই যে ইসলামী বিরোধী নয় তা প্রমান করেন।

৭০ এর নির্বাচনে আলেমদের ভুমিকা

৭০-এর নির্বাচনে পিপলস পার্টির পরাজয় এবং আওয়ামীলীগের বিজয় হলে পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অসম্মতি প্রকাশ করে বলেছিলেন- যারা জাতীয় পরিষদের বৈঠকে ঢাকায় যাবে তাদের পা ভেঙে দেওয়া হবেতখন মুফতি মাহমুদ জোর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন- বর্তমান সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক আহ্বান এবং সংবিধান ও আইন বিষয়ক সকল বিষয়ই জাতীয় পরিষদে মীমাংসা করা-(ক্বাইদে জমিয়ত মুফতি মাহমুদআশফাক হাশেমী)।

৭০-এর নির্বাচনের মাস-দিন পর অর্থাৎ ১৩ জানুয়ারি ১৯৭১-এ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার পর যখন নিশ্চয়তা পেলেন যেশেখ মুজিবুর রহমানকর্তৃক সরকার গঠিত হলেও তিনি নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেনতখন ঘোষণা করেছিলেন- শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নির্বাচিত দলের প্রধান হিসেবে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী। এতএবরাষ্ট্রীয় ব্যাপারে তার সিদ্ধন্তটাই চূড়ান্ত। কিন্তু ঢাকা  থেকে ফেরার পথে দু-জন উর্ধ্বতন সেনা অফিসারসহ জেনারেল ইয়াহিয়া খান ভূট্টোর সাথে লারকানা এলাকাতে গিয়ে গোপন বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঘোষণা দিলেন- শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংবিধান রচনার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম-পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় দলের সমঝোতা পূর্বশর্ত। এই ফর্মূলা মূলত ছিলো পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টোরপাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য যা ছিলো যথেষ্ট। এক দেশে দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় কীভাবেএই প্রশ্ন উঠিয়ে তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মুফতি মাহমুদন্যাপ নেতা ওয়ালী খান এবং শেখ মুজিবুর রহমান কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বলেছিলেন-এমন উক্তি দেশকে দু-ভাগে বিভক্ত করার সমতুল্য।-(প্রাগুক্ত)। ২৭ জানুয়ারি ১৯৭১-এ ভূট্টো সাহেব ঢাকা এসে গেলেন। ফিরে গিয়ে পেশওয়ারে জমিয়ত নেতা মুফতি মাহমুদন্যাপ নেতা ওয়ালী খান এবং মুসলিমলীগ নেতা কাইয়ূম খানের সাথে দেখা করে চেষ্টা করেন ৩ মার্চ আহূত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন বর্জন ঘোষণা করাতে। আব্দুল কাইয়ূম খান ব্যতীত বাকি দু-জন অসম্মতি জানালেন ভূট্টো সাহেবের প্রস্তাবে। ভূট্টো সাহেব তখনই ঘোষণা করেছিলেন-পিপল্স পার্টির কোনো সদস্য ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে গেলে তার পা ভেঙে ফেলা হবে এবং অন্যকোনো দলের সদস্য যদি ঢাকায় যান তা হলে তিনি যেনো পশ্চিম-পাকিস্তানে ফিরার টিকেট না করেন। পিপলস পার্টির নেতাকর্তৃক এই ঘোষণার প্রতিবাদে  জমিয়ত নেতা মুফতি মাহমুদন্যাপ নেতা ওয়ালী খান ঘোষণা করেন তারা ৪২ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য নিয়ে জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিবেন।  উল্লেখ্য যেএই ৪২ জনের মধ্যে ভূট্টো সাহেবের দল পিপলস পার্টির নেতা আহমদ রেজা কাসূরীও ছিলেন। ১৩ মার্চ ১৯৭১-এ মুফতি মাহমুদ পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য লাহোরে সর্বদলীয় একটি বৈঠক ডাকেন। পিপলস পার্টি আর মুসলিমলীগের কাইয়ূম গ্রুপ (যা কাইয়ূমলীগ বলে পরিচিতি ছিলো) ছাড়া বাকি সকল দলের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত হয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের পেশকৃত চার দফা দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত এই দাবিগুলোর সমর্থনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। দাবিসমূহ ছিলো যথাক্রমে-

১. অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার,

২. সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনম্যান্টে ফেরৎ নেওয়া,

৩. সেনা অভিযানে ঘটিত প্রাণহানীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত,

৪. জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার আগে মতা হস্তান্তর।

মুফতি মাহমুদ ১৩ মার্চের বক্তব্যে স্পষ্ট ভাষায় ইয়াহিয়া-ভূট্টোর নীতিকে ভুল আখ্যায়িত করে অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিদের কাছে মতা হস্তান্তরের দাবি জানান। জুলফিকার আলী ভূট্টো সাহেবের পক্ষ থেকে সত্তরের নির্বাচনের পর যখন ঘোষণা করা হলো-ওখানে তুমিএখানে আমি। তখন মুফতি মাহমুদ প্রতিবাদ করে বলেছিলেন-পাকিস্তানের ঐক্য ভেঙে গেলে রাজনৈতিকভাবে পশ্চিম-পাকিস্তানের পরিভাষা অর্থহীন হয়ে যাবে। তখন কোনো দলের পে পশ্চিম-পাকিস্তানের মতা একা হাতে তোলে নেওয়া যুক্তিহীন হয়ে যাবে। কেনো না পিপলস পার্টির সারা পশ্চিম-পাকিস্তানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নয়তারা কেবল সিন্ধু ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধি মাত্র। সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করার কোনো অধিকার তাদের নেই। তা ছাড়া জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটাই থাকেআর সে দল হলো আওয়ামীলীগ। সুতরাং প্রেসিডেন্টের উচিত তাৎকনিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান করা-(ক্বাইদে জমিয়ত মুফতি মাহমুদআশফাক হাশেমী/ সাপ্তাহিক কৌমী ডাইজেষ্টমুফতি মাহমুদ নম্বারপাকিস্তান)।

উল্লেখ্য যেমুফতি মাহমুদ পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৭০-এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ডের ইসমাইল খা আসনে স্বয়ং পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টোকে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন।

উল্লেখ্য যেমুফতি মাহমুদ ছিলেন পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমীর এবং সেই সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ছিলেন জমিয়তের সাথে সম্পৃক্ত। আজকে শায়খুল হাদিস বলে খ্যাত মাওলানা আজিজুল হক তখন ছিলেন পূর্ব-পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমীর। বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদের খতীব মাওলানা উবায়দুল হকহযরত হাফেজ্জী হুজুর (রা.)-এর খলিফা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে আলেমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক

যুদ্ধ প্রস্তুতি পর্বে মাওলানা আজিজুল হক রহঃ (শাইখুল হাদিস সাহেব হুজুর)। হুজুর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকের পর শেখ সাহেব হুজুরের প্রশংসা করে পত্রিকায় বিবৃতিও প্রদান করেন। সে সময়কার দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাগণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অবস্থান নেন। ২৫ মার্চ এর গণহত্যার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখনো বন্ধ হয়নি কিন্তু প্রধান সারির মাদরাসাগুলো বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্তিযুদ্ধে অংগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যাত্রাবাড়ি মাদরাসালালবাগ মাদরাসার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রখ্যাত আলেম হাফেজ্জি হুজুর রহঃ পাকিস্তানিদের জালেম এবং এ যুদ্ধকে জালেমের বিরুদ্ধে মাজলুমের লাড়াই বলে আখ্যায়িত করেন। হাফেজ্জি হুজুরের প্রাণ-শক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে মাওলানা এমদাদুল হক আড়াই হাজারি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন।

শুধু দেশের আলেমগণই নন স্বয়ং পশ্চিম পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের তৎকালীন আমির মুফতি মাহমূদ জনৈক রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধুকে গাদ্দার বললে তার ঘোরতর বিরোধিতা করেন এবং রাজাকারআল-বদরআল-শামসের মতো যেসব বাহিনী পাক হানাদারদের সহযোগিতা করছিলো তাদের কড়া সমালোচনা করে তাদের বিলুপ্ত করার দাবি করেন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মুফতি সাহেবের পেশওয়ারস্থ অফিস আক্রমণের পর্যন্ত শিকার হয়। তবুও তিনি তার মত থেকে সরে আসেননি। উপরন্তু২৬ মার্চ ৭১ সালে ঢাকা এসে পূর্ব পাকিস্তান অংশের নেতাদের বলে যান আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলুনদেশের মানুশকে মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত করুন

মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের সমর্থন অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ

বাংলাদশেরে স্বাধীনতা যুদ্ধরে ইতহিাসরে দকিে যদি আমরা তাকাই তাহলে দখেতে পাইমহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক আলেম মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি যনিি এক অনবদ্য অবদান রখেছেলিনেতনিি হলনে মাওলানা আবদুল হামদি খান ভাসানী। তনিি ছলিনে এদশেরে নর্যিাততি-নপিীড়তি বাংলার মহেনতি মানুষরে মুক্তরি দশিারী। স্বাধীন বাংলাদশেরে জন্য তনিি যে ভূমকিা রখেছেলিনেতা আলোচনা ও স্মরণ করার মতো ।   

মাওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালে সরিাজগঞ্জরে ধনগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করনে। তার পতিার নাম হাজী শরাফত আলী খান। মক্তব থকেে শক্ষিাগ্রহণ করে কছিুদনি মক্তবইে শক্ষিকতা করনে। ১৮৯৭ সালে পীর সয়ৈদ নাসীরুদ্দীনরে সাথে আসাম যান। ইসালামকি শক্ষিার উদ্দশ্যেে ১৯০৭-এ দওেবন্দ যান। দুই বছর সখোনে অধ্যয়ন করে আসামে ফরিে আসনে। ১৯১৭ সালে দশেবন্ধু চত্তিরঞ্জন দাস ময়মনসংিহ সফরে গলেে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণতি হন। ১৯১৯ সালে ব্রটিশি বরিোধী অসহযোগ ও খলোফত আন্দোলনে যোগদানরে মধ্য দযি়ে তাঁর রাজনতৈকি জীবনরে সূচনা হয়। কৃষক আন্দোলনরে নতো হসিবেে তার রাজনতৈকি জীবনরে শুরু। তনিি সবসময় রাজনীতি করছেনে অধকিার বঞ্চতি মানুষরে জন্য। বাংলাদশেরে স্বাধীনতার ইতহিাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ র্মাচরে ভাষণরে পরে আরকেটি গুরুত্বর্পূণ ভাষণ দনে মাওলানা আবদুল হামদি খান ভাসানী। তনিি ৯ র্মাচ১৯৭১ সালে পল্টনে এই ভাষণ দনে। দুই প্রধান নতোর একই সদ্ধিান্তে চলে আসার একটি উদাহরণ স্থাপতি হয়। তবে এ উদাহরণটি ইতহিাসরে পাতায় অনকেটাই অনুপস্থতিই বলা যায়। যদওি বাংলাদশেরে স্বাধীনতার ভত্তিপ্রিস্তর স্থাপতি হয়ে যায় ৭ র্মাচরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণরে পরপরইতবে যখন প্রধান দুই নতো একসাথে একই সদ্ধিান্ত নয়োর ক্ষত্রেে ঐকমত্য প্রকাশ করনে তখন স্বাধীনতার ক্ষত্রেে আর কোনো সন্দহেরে অবকাশ থাকে না। ঠকি এমনটইি ঘটছেলি তখন বাঙালরি জীবন।

৭১ এর জানুয়ারি থকেে ২৫ র্মাচ র্পযন্ত মওলানা ভাসানী সারাদশেে জনসভা করে জনগণকে সশস্ত্র যুদ্ধরে জন্য উদ্বুদ্ধ করনে । যে কোনো আন্দোলনরে জন্য তৃণমূল গঠন কতটা গুরুত্বর্পূণ সটো বোধহয় রাজনীততিে সক্রয়ি নতোর্কমী ও রাজনতৈকি বশ্লিষেকদরে বোঝানোর জন্য আলাদা করে কোনো শব্দপ্রয়োগরে প্রয়োজন হবে না।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৪ এপ্রলি পাকসনোরা মওলানা ভাসানীকে হত্যা অথবা গ্রপ্তোররে উদ্দশ্যেে সন্তোষে এসে তাকে খুঁজতে থাকে এবং জজ্ঞিসে কর, কাফরে ভাসানী কোথায়? তাকে না পয়েে তার বাড়ঘির আগুন দয়িে জ্বালয়িে দয়ে । পাকবাহনিীর দৃষ্টি এড়য়িে নানা কৌশলে মওলানা ভাসানী পাড়ি জমান ভারত।ে সখোনে প্রবশেরে পরদনি আনন্দবাজার পত্রকিার কলাম জুড়ে ছাপা হয়সীমান্তরে এপার ভাসানীসজল চোখে সাহায্য র্প্রাথনা

সখোনে লখো হয় বাংলাদশেরে জনগণরে উপর পাকস্তিানি জঙ্গি ফৌজরে নর্যিাতন বন্ধরে জন্য তনিি করজোড়ে ও সজল চোখে ভারত সরকাররে কাছে নতৈকি সর্মথন ও সাহায্য র্প্রাথনা করনে।

যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতে অবস্থান করে মওলানা ভাসানী মুক্তযিুদ্ধকে সুদৃঢ় এবং মুক্তযিুদ্ধরে গতবিগে সঞ্চার করার জন্য জাতসিংঘরে মহাসচবিমুসলমি বিশ্বের কাছে গণতান্ত্রকি সকল রাষ্ট্রসহ বশ্বিবাসীর কাছে চঠিি পাঠান।  আর ৭১ এ চীন ও আমরেকিা বাংলাদশেরে বরিোধতিা ও পাকস্তিানকে সর্মথন করায় মওলানা ভাসানী তাদরে কৃত অন্যায়রে প্রতবিাদ করে একরে পর এক ববিৃতি প্রদান করে চঠিপিত্র ও টলেগ্রিাম পাঠান এসব দেশে মওলানা ভাসানী সাহসকিতা ও বচিক্ষণতার সাথে এ ষড়যন্ত্রকে প্রতহিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও শক্তশিালী ও গতশিীল করে বজিয়রে পথে নয়িে যান।

১৯৭১ সালরে ২৫ এপ্রিল মওলানা ভাসানী সোভয়িতে রাশয়িার প্রসেডিন্টেরে কাছে বাংলাদশেরে জনগণরে ওপর পাকস্তিান যে র্ববরোচতি অত্যাচার চালাচ্ছে তার বরিুদ্ধে র্কাযকর ব্যবস্থা গ্রহণরে জন্য অনুরোধ করনে। ৩১ মে মওলানা ভাসানী এক ববিৃততিে বলনেবাংলাদশেরে সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহনিীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লপ্তি। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরকির। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবইে। ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক ববিৃততিে বলনেবাংলাদশেরে সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালরি রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানরে মধ্য দয়িইে বাংলার স্বাধীনতা আসব।ে

১৯৭১ সালরে ৮ সপ্টেম্বের কলকাতায় মওলানা আবদুল হামদি খান ভাসানীর সভাপতত্বিে অনুষ্ঠতি আওয়ামী লীগন্যাপ সহ ৫ রাজনতৈকি দলরে নতোদরে বঠৈকে জাতীয় উপদষ্টো কমটিি গঠতি হয়যা র্সবদলীয় উপদষ্টো পরষিদ নামে পরচিতিি লাভ কর।ে ৮ সদস্য বশিষ্টি এ পরার্মশক কমটিরি সভাপতি ছলিনে মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। আর্ন্তজাতকি শক্তকিে বাংলাদশেরে স্বাধীনতার অনুকূলে আনতে এ কমটিি সহায়ক ভূমকিা পালন কর।ে

যুদ্ধরে পুরো সময় মওলানা ভাসানী ভারতরে বভিন্নি জায়গায় ঘুরে বড়েয়িছেলিনে। এ সময় তনিি বাংলাদশেরে স্বাধীনতার পক্ষে সহায়ক ভূমকিা রাখতে জাতসিংঘচীনরাশয়িাসহ বশ্বিরে বভিন্নি দশেরে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদরে কাছে তারর্বাতা প্ররেণরে পাশাপাশি তাঁর আর্ন্তজাতকি প্রভাবরে র্সবাত্মক ব্যবহার করছেলিনে।

সদ্য স্বাধীন হওয়া দশেরে মহানায়ক যদি ভাসানী হন তবে র্স্বাথহানী হবে ভারতরে। কারণ ভাসানী হক কথা বলতে দ্বধিাবোধ করতনে না এবং রাষ্ট্রীয় র্স্বাথরে ব্যাপারে তনিি ছলিনে আপোষহীন। সজেন্যই ১৬ ডসিম্বের দশে স্বাধীন হওয়া স্বত্বওে মওলানা ভাসানী স্বাধীন দশেে পা রাখনে পাকস্তিানে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শখে মুজবিুর রহমানরে দশেে ফরোর ১২ দনি পর। ১৯৭২ সালরে ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফরিে তনিি র্সবপ্রথম যে দাবটিি তোলনে তা হলোবাংলাদশে ভূখণ্ড থকেে ভারতীয় সনোবাহনিীর অপসারণ।

১৯৭৬ সালরে ১৭ নভম্বের ঢাকার পজিতিে মওলানা ভাসানীর সংগ্রামী জীবনরে অবসান ঘটয়িে চরিবশ্রিামে চলে যান পরোপার।ে

   মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা প্রসঙ্গে ড. তারেক মুহম্মদ তওফীকুর রহমান তার বিশ্লেষণে একটা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি সেই সময়ে ইসলামপন্থী দল বা সামাজিক সংগঠনগুলোকে তাদের ঝোঁক বা অনুসৃত ধারা অনুসারে ভাগ করেছেন। তিনি তার বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেম সমাজের ভূমিকা ও প্রভাব গ্রন্থের ২২নং পৃষ্ঠায় লিখেছেনসেই সময়ে বাংলাদেশের আলেম সমাজকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা ছয় ধারায় বিভক্ত ছিলেন।

১. বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলেম।

২. বিভিন্ন সাধারণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলেম।

৩. সরকারি-আধা সরকারি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক আলেম।

৪. কওমি সাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক আলেম ।

৫. বিভিন্ন খানকাহসিলসিলা ও পীর-মুরিদী সংশ্লিষ্ট আলেম।

৬. ইমাম,মুয়াজ্জিন ও ব্যক্তি পর্যায়ের আলেম।

এ ধারাগুলোর মধ্যে আলেম সমাজের এক বিশাল অংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নেন। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আল্লামা হাফেজ্জি হুজুরআল্লামা লুৎফুর রহমান বরুণী আল্লামা কাজী মুরতাসিম বিল্লাহআল্লামা মুফতি নুরুল্ল্যাহ,আল্লামা এমদাদুল্লাহ আড়াই হাজারীআল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী। এদের মধ্যে অনেকেই রণাঙ্গনে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেনঅনেকেই মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য খেতাবপ্রাপ্ত হন। সংগ্রামের সময় বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নেন। মাওলানা শাকের হোসাইন শিবলী তার আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন মাওলানা ইমদাদুল্লাহ আড়াইহাজারী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কী করবেন এ ব্যাপারে দেশবরেণ্য আলেম মাওলানা হাফেজ্জী হুজুরকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "এ যুদ্ধ ইসলাম আর কুফরের যুদ্ধ নয়এটা হল জালেম আর মাজলুমের যুদ্ধ"। পাকিস্তানীরা জালেম আর এ দেশের বাঙ্গালীরা মাজলুম । পাকিস্তানরা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করেছেসুতরাং তারা জালেম। জুলুম আর ইসলাম এক হতে পারে না। তুমি যদি মুসলমান হও তবে পাকিস্তানিদের পক্ষে যাও কীভাবেএটা তো জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের প্রতিবাদ প্রতিরোধ।

১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান এই চট্রগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান কে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা দানেশ কে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা হত্যা করে। "পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নিশ্চিত হয় পটিয়া মাদ্রাসার আলেমরা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছেতখনি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সেই পটিয়া মাদ্রাসার উপর জঙ্গি বিমান দিয়ে বোমা বর্ষণ করা শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই বোমা বর্ষণে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আল্লামা দানেশ ও ক্বারী জেবুল হাসান সহ অনেকেই শহীদ হন। [ বেলাল মোহাম্মদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রপৃষ্ঠা - ৫৪৫৫ ও ১০২॥ ]

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল বদর রাজাকার বাহিনীর হাতে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করার জন্য দেশের একজন স্বনামধন্য মাওলানাও শহীদ হয়েছিলেন। উনার নাম - মাওলানা অলিউর রহমান। ১৪ ডিসেম্বর উনার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় রায়ের বাজার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বেয়নেট দ্বারা খুুঁচিয়ে খুুঁচিয়ে উনাকে হত্যা করে। ১৯৭২ সালে তৈরি শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকায় মাওলানা অলিউর রহমানের নাম আছে। মাওলানা অলিউর রহমান ছিলেন আওয়ামী ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। শেখ মুজিব যখন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষনা করেন তখন অনেকেই ৬ দফা কে ইসলাম বিরোধী বলে ঘোষনা দেয়। সেই সময় মাওলানা অলিউর রহমান, "ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ৬ দফা" নামক একটি বই লিখে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কোন দাবীই যে ইসলামী বিরোধী নয় তা প্রমান করেন । ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মাওলানা মুখলেছুর রহমানের কাছে কুমিল্লার চান্দিনা থানা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় এবং ১৩৯৫ জন পাক আর্মি আত্মসমর্পন করে। ১৯৭১ সালে মাওলানা মুখলেছুর রহমান চাদপুরের কচুয়া মাদ্রাসায় তাফসীরে জালালাইন পড়তেন। মাওলানা মুখলেছুর রহমান এর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট এর সনদ ক্রমিক নং ২০২০৬। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার জয়দা গ্রামের মাওলানা বাড়ির সবাই মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। মাওলানা বাড়ির ছেলে মাওলানা হাবীবুর রহমান যিনি সরাসরী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন॥ উনার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট এর সনদ ক্রমিক নং ১০০৯॥ মাওলানা বাড়ির জামাই হাফেয মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমদ ভারতীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা । উনার ক্রমিক নং ৯৫২। এইরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে ।। "মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য রাজবাড়ী জেল খানার মাওলানা কাজী ইয়াকুব আলীকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। মাওলানা কাজী ইয়াকুব আলীকে গলা কেটে করে হত্যা করে তারপর তার পেটের মাঝখানে পাকিস্তানি পতাকা পুঁতে দিয়ে বলে, 'আভি শালা জয় বাংলা বোলো।'

আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনমুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাসদ্বিতীয় খণ্ডপৃষ্ঠা - ৬১। ]

পাবনা সদরের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ ছিলেনমাওলানা কসিম উদ্দিন। [ মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাসদ্বিতীয় খ-পৃষ্ঠা- ১৪৭ -১৪৮। ]" শুধু তাই নয় ১৯৭১ সালে এই দেশে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে আলেমদের সংগঠন "জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ" ছিল উনারাও কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে অনেক ফতোয়া দিয়েছিলেন। "১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান (রহ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন । পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সরকার উনাকে জোর করে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর উনি বাংলাদেশে ফিরলে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান খতীব হিসাবে নিযুক্ত করেন। [ শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান (র) এর জীবন ও কর্মইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ॥ ]"

 ১৯৭১ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরের সবচেয়ে বড় কওমী মাদ্রাসার প্রধান মুহতামিম আল্লামা তাজুল ইসলাম (রহ) পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় অনেক বড় বড় আলেম উনার ফতোয়া শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। "অনেক মুক্তিযুদ্ধাকে আল্লামা তাজুল ইসলাম নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। [ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম (র) ও উনার সাথীবর্গলেখক - হাফিয মুহাম্মদ নুরুজ্জামানইসলামিক ফাউন্ডেশন,বাংলাদেশ ॥]"

     ১৯৭১ এ যদি অধিকাংশ মুসলিম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী থাকতো তাহলে এই দেশ কোনোদিন স্বাধীন হতো নাতাই উলামায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে যারা এরূপ মিথ্যাপবাদ করে তারা নিশ্চিত বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে । ১৯৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গণে যাবার আগে আল্লাহর কাছে সালাত আদায়ান্তে মুনাজাত করে রওনা হয়েছেন। সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলি সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন। বহুল প্রশংসিত সেই বইটির নাম আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজেএ বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের ইতিহাস। এ চেতনায় শত শত আলেমের অস্ত্র তুলে নেবার রোমাঞ্চকর ইতিবৃত্ত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন মত ও পেশার লোকেরা অংশ গ্রহন করেছিলেন। বাংলার আলেম সমাজও এর থেকে দূরে ছিলেন না। ঐ আলেমরা কিন্তু আওয়ামীলিগ বা ছাত্রলীগ করতো না। উনারা শুধু দেশ মাতৃকার টানে ও নির্যাতীত নারীদের কে পাকিস্তানী হানদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক আলেম মূল্যবান ভূমিকা রেখেছেন। কেউ কেউ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে পালিয়ে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে যেতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। নীরবে নিভৃতে বহু আলেম মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। হাতিয়ার মাওলানা মোস্তাফিজচট্টগ্রামের মাওলানা ছৈয়দছাগলনাইয়ার মাওলানা মাকসুদ প্রমুখের নাম এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। ২৬ মার্চ পাক হানাদারদের গুলিতে প্রাণ হারান ঢাকার হাতিরপুল মসজিদের ইমাম। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইমাম মাওলানা ইরতাজ আলি কাসিমপুরী পরাধীন দেশে জুমআর নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জানান। পাকিস্তানী হানাদাররা তাকে ুনির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই ইরতাজ আলি কাসিমপুরীর কথা হুমায়ূন আহমেদ তার বিখ্যাত উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্পে উল্লেখ করেছেন।

ফুলগাজীর মাওলানা উসমান গনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করতেন ।  ৭১-এ পাক সেনা ও রাজাকারদের অবস্থান জেনে গিয়ে ক্যাম্পে রিপোর্ট করতেন । ১৯৫৪ সালে জন্ম নেয়া  মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা উসমান গনী জানান তাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর হায়দার সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল জাফর ইমাম । মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ফেনীর রাজপথে কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগান তুলেন । শেখ মুজিবকে নিয়ে তিনি নিজে অনেক ছন্দ তৈরি করেছেন । তিনি ছন্দে ছন্দে গেয়ে ওঠেন -

মজিব ভাইয়া যাওরে

     নির্যাতিত দেশের মাঝে

     জনগণের নাওরে ।

     বঙ্গবন্ধুরে প্রাণে মজিব ভাই

     স্বাধীন বাংলা আসমানে উড়াই ।

     ছলে বলে ২৪ বছর রক্ত খাইছে চুষি

     জাতিকে বাঁচাইতে গিয়ে মজিব হইলা দুষি ।  

আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে-লেখক সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলীপৃষ্ঠা ঃ  ৩৬৫ ৩৬৭) ।

যশোর রেল স্টেশন মাদরাসার মুহতামীম দেওবন্দ ফারেগ মাওলানা আবুল হাসান যশোরীর কথা বলা যায়। তিনি এবং তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছেন। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে। শহীদ হন ২১ জন। যাদের মধ্যে একজন সম্মানিত আলেম হাবীবুর রহমান৫ জন ছাত্র এবং বাকীরা ছিল ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। মাদরাসা প্রাঙ্গনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর রয়েছে। ওই হামলায় যাশোরী গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরে ১৯৯৩ সালে যশোরী ইন্তেকাল করেন।  (তথ্য সূত্র: আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে-লেখক সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলী ঃ ৩৮৫ পৃষ্ঠা)।

যারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন এ রকম বহু আলেম ওলামা পীর মাশায়েখের কথা উল্লেখ করা যায়। যারা কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। এই সত্য অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণ নিয়ে তেমন সাহিত্যকর্ম হয়নি। প্রবন্ধনিবন্ধবই প্রকাশ হয়েছে কম। যেটা হচ্ছে তা হল আলেমদের নেগেটিভভাবে তুলে ধরা। বাংলাদেশের প্রকৃত আলেমরা ন্যায়ের পক্ষেঅন্যায়ের বিপক্ষে সব সময়। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান অনেটাই অন্তরালে আছে। তাই মুক্তি সংগ্রামে আলেমদের অবস্থানতাদের বীরত্ব নিয়ে সহিত্যকর্ম হওয়া দরকার। (মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদানমুহাম্মদ শফিকুর রহমানপ্রকাশের সময়ঃ ৩ জানুয়ারী২০১৮)

পাকিস্তান কা মতলব কিয়া হ্যাঁয়লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ: (পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলআল্লাহর কালিমা উঁচু করা) ১৯৪৭ সালে এই স্লোগান শুনিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেনতখন ধর্মপ্রাণহক্কানী আলেম ওলামা জান বাজি রেখে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৪ বছরের মাথায় বাঙালির ওপর পাক সেনাদের হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা দেখে বুঝতে পারলেন যে মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আলেমরা যার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন সেই জালেমদের মাধ্যমে তা কখনই প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর আল্লাহর কালিমা জিন্দা করার সেই মধুস্লোগান নিছক চাপাবাজি বৈ কিছুই ছিল না। তখন তথাকথিত কিছু নামধারী আলেম ছাড়া আলেমদের এক বিরাট অংশ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংগ্রামে যোগ দেয়। জালেম হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেন আলেম সম্প্রদায়। কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থের ১৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের কোনো বন্ধু ছিল না।  তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল একদল দেশদ্রোহী পাকিস্তানী রাজাকার। পাকিস্তানিদের সাহায্যের জন্য দেশদ্রোহীদের নিয়ে যে রাজাকার বাহিনী গঠন কনরা হয়েছিল সেটি ছিল সশস্ত্র দল। হানাদার বাহিনীর পদলেহী হিসেবে এরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে জুলম ও অত্যাচার করেছে তার অন্য কোন নজির ইতিহাসে নেই।

মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেনসে সময় আমার দায়িত্ব ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও যুবকদের যুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। তা ছাড়া মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদীমাওলানা আবদুস সোবহানমাওলানা দানেশমাওলানা আতাউর রহমান খানমাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফমাওলানা মুহিউদ্দীন খানমাওলানা ইমদাদুল্লাহ আড়াইহাজারী ও মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ প্রমুখ বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্টিফিকেটের অধিকারী। পাক হানাদার বাহিনী এসে কালিমা জিজ্ঞেস করত। বলতে পারলে বুঝত তারা মুসলমান। আর না পারলে হিন্দু প্রমাণিত হতো। এ ক্ষেত্রে অনেক আলেম নিজেদের ঘরে এসব হিন্দুদের আশ্রয় দিয়ে তাদের কালেমা শিখিয়েছেন এবং পাক বাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন।

২৫ মার্চের পর সেই সময়ের বড় মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। এত কিছুর পরও কি কেউ বলবেন আলেম সমাজ স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেনস্বাধীনতার শত্রু ছিলেনআসল সত্য হল হক্কানি আলেম সমাজ স্বাধীনতার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বন্ধু ছিলেন। আলেম ওলামা স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তবেহ্যাঁঅল্পসংখ্যক আলেম ছিলেন নীরব। তার কারণ প্রথম তারা বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই স্বাভাবিক কারণেই তারা পাকিস্তান ভেঙে ফেলার কথা হয়তো তখনও ভাবতে পারেননি। দ্বিতীয়ত ভারতবেষ্টিত এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন করলেও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কতটা ভারতীয় আগ্রাসনমুক্ত থাকতে পারবেসে বিষয়ে একটা বিরাট সংশয় দেখা দিয়েছিল তাদের মনে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা পাক হানাদার বাহিনীর পদলেহন করেছেনিজের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেতারা অপরাধীতারা ক্ষমার অযোগ্য। অবশ্যই তাদের কঠিন সাজা দিতে হবে।

পরিশেষে ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলছি  বাঙালি হয়ে যারা বাঙালির ঘরে আগুন দিয়েছেবাঙালি মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতনে মদদ জুগিয়েছেশরিক হয়েছেঅহেতুক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেতারা যে পক্ষের হোক না কেন ধর্মীয় ও মানবিক দিক থেকে তারা অপরাধী। আর অপরাধীর বিচার সবসময় কাম্য। এটি নৈতিকমানবিক ও প্রচলিত আইনের বিধান। অপরাধিকে বিনা বিচারে ক্ষমা প্রদর্শন করা একটি ক্ষমাহীন অপরাধও বটে।  (বেশিরভাগ আলেম মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ছিলেন আসিফ আসলাম দৈনিক যুগান্তর ১৬ মার্চ ২০১৮ ।)

মুক্তিযুদ্ধে পীর মাশায়েখ ও বিভিন্ন দরবারের ভূমিকা   

কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের মা উপন্যাসে আজাদের মা সাফিয়া বেগম তার ছেলে আজাদকে পুরান ঢাকার জুরাইনের পীরের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করেন। জুরাইনের পীরের আসল নাম ছিল মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চিশতী। এই জুরাইনের পীরের বহু মুরীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। জুরাইনের পীর সাহেব নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন অসংখ্য উলাময়ে কেরাম। ২নং সেক্টরের যোদ্ধা মেজর কামরুল হাসানের লেখা জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা বইটিতে কুমিল্লার মুরাদনগরের কাশিমপুরের পীর এবং বরিশালের মরহুম চরমোনাইয়ের পীর এসহাক রহমাতুল্লাহর নাম উল্লেখ করেছেন।

শৈলারকান্দার পীর আল্লামা সাইফুল মালেকের ভুমিকাও ছিল অসামান্য । তারাকান্দির পীর মাওলানা আব্দুল হালিম হুসাইনী ( হালিম মাওলানা ) এর মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে আলেম মুক্তিযুদ্ধার খোঁজেইটির ৩৮০ পৃষ্ঠায় ।

ঐতিহাসিক দৃশ্যপটে যে সত্য তা হচ্ছে এ দেশের বেশিরভাগ অলি-আউলিয়ার দরবার শরিফগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল। আমি দেখেছিমুক্তিসেনারা সুরেশ্বর দরবার শরিফে যাতায়াত করতেন এবং সেখানে অবস্থান করতেন। দরবার শরিফের আওলাদরা তাদের নিরাপদে আত্মগোপন করাবিশ্রাম করাখাওয়া ও অন্যান্য সহযোগিতা দিতেন। দরবার শরিফের অসংখ্য ভক্ত-অনুসারী প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দরবার শরিফের পক্ষ থেকে সবাইকে দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছিল। শুধু সুরেশ্বর দরবার শরিফ নয়দেশের সব আধ্যাত্মিক দরবার শরিফ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলেম সমাজের অবদানঃ

সমস্থ মানবজাতি আল্লাহ তায়ালার পরিবার। এই পরিবারের কোন একটি সদস্যদের প্রতি যদি মানবিয় দৃষ্টিকোন থেকে একে অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদর্শন করেসে যেন মূলত সৃষ্টিকর্তার সাথেই ভাল ব্যবহার করলো।

রাসূল (সাঃ) সমস্থ মুসলিম জাতিকে একটি দেহের সাথে তুলনা দিতে গিয়ে বলেন-

وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّىগ্ধ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

পরিচ্ছদঃ ২৭: মুসলিমদের মান-মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের গুরুত্ব

৩/২২৯। নুমান ইবনু বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন‘‘মুমিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতিদয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিমরিয়াদুস সালেহিন ৩/২২৯)

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو عَامِرٍ الأَشْعَرِيُّ قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، وَأَبُو أُسَامَةَ ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، وَابْنُ، إِدْرِيسَ وَأَبُو أُسَامَةَ كُلُّهُمْ عَنْ بُرَيْدٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  " الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا " .

পরিচ্ছেদঃ ১৭. মুমিনদের পারস্পরিক সহমর্মিতাসহানুভূতি ও সহযোগিতা

৬৪৭৯-(৬৫/২৫৮৫) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবু আমির আল আশআরীমুহাম্মাদ ইবনুল আলাআবু কুরায়ব (রহঃ) আবু মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একজন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিনের জন্য একটি অট্টালিকা সদৃশযার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৯ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৯)

কিন্তু এখানে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান উভয় দেশের জনগণ এবং শাসক শ্রেণি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানীদের আচরণ মূলত প্রকাশ পায় জালিম হিসেবে আর পূর্ব পাকিস্তানী জনগণ ছিল মজলুম।

১৯৭১ সালের যুদ্ধটি মূলত জালিম কর্তৃক মজলুমের উপর বর্বরচিত হত্যাযজ্ঞই প্রকাশ পেয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ অনেক গুলো ফতোয়া প্রকাশ করে।

জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ কর্তৃক ফতোয়া গুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী (র) এর যে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটির শেষে পরিশিষ্ট আকারে দেয়া হয়েছে।

জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সেক্রেটারী মুফতী মাহমুদ ২৬ শে মার্চ এ অংশের নেতাদের বলে দিয়েছিলেন

আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলুনদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করুন।

     সমাপনিঃ

     বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র অংশগ্রহণের পাশাপাশি অনেকেই পরামর্শ প্রদানের মাধমেমুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমেঅর্থের যোগান দিয়ে কিংবা দোয়া করার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন। আলেম সমাজের অনেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা না করে নীরব সমর্থন প্রদান করেছেন। ড. তারেক এম তওফীকুর রহমানের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেমসমাজ: ভূমিকা ও প্রভাব (১৯৭২-২০০১) শীর্ষক থিসিসে স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের অবদানগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। ড. তারেকের গ্রন্থ থেকে জানা যায়,পূর্বপাকিস্তানের ৯০ শতাংশ আলেম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ১০ শতাংশ আলেম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তারা বেশীরভাগই স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে নির্লিপ্ত অবস্থানে ছিলেন। মাত্র ৩ শতাংশ আলেম স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে এবং বিপক্ষে সক্রিয় ছিলেন। এর মাঝে ১.৬% থেকে ১.৮% আলেম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন বা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষ নেন আর ১.২% থেকে ১.৪% আলেম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান করেন বা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ নেন।

১৯৭১ সালে শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হকমুফতি মাহমুদহাফেজ্জি হুজুর সহ প্রমুখ আলেম জনসাধারণকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলেম সমাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক আলেমদের সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণের তাগিদ প্রদান করে আল্লামা মোহাম্মদুলাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ. বলেনঃ

এ যুদ্ধ ইসলাম আর কুফরের যুদ্ধ নয়এটা হলো জালেম আর মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালেমএদেশের বাঙালিরা মজলুম। তাই সামর্থ্যের আলোকে সকলকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং এটাকে প্রধান কর্তব্য বলে মনে করতে হবে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের ভূমিকার কারণে অসংখ্য মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দলে যুদ্ধে যোগদান করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদানের জন্য  আলেম সমাজের নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান না পেলেও বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে তারা জড়িয়ে আছেন।

আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে | একাত্তরের চেপে রাখা ইতিহাস | শাকের হোসাইন শিবলি | free pdf Download

স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে দেওবন্দের অবদান

পড়ুন, অনলাইনে কিনুন, পিডিএফ ডাউনলোড করুন

স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেম সমাজের অবদান নিয়ে এক অসাধারণ বই আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে | একাত্তরের চেপে রাখা ইতিহাস | লেখক শাকের হোসাইন শিবলি