Showing posts with label আল হাদিস. Show all posts
Showing posts with label আল হাদিস. Show all posts

রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (পর্ব ০২)

রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলাম

 পরিমিত আহার গ্রহণে ইসলামের নির্দেশনা

সুস্থতা মহান আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য সুস্থতা একান্ত প্রয়োজন। সুস্থতার মূল্যায়ন, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে ইসলাম বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। সতর্কতা সত্ত্বেও রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে এর সুচিকিৎসায় জোর দিয়েছে।

পরিমিত আহার সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أُمِّهَا، أَنَّهَا سَمِعَتِ الْمِقْدَامَ بْنَ مَعْدِيكَرِبَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ حَسْبُ الآدَمِيِّ لُقَيْمَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ فَإِنْ غَلَبَتِ الآدَمِيَّ نَفْسُهُ فَثُلُثٌ لِلطَّعَامِ وَثُلُثٌ لِلشَّرَابِ وَثُلُثٌ لِلنَّفَسِ ‏"‏ ‏.‏

মিকদাম বিন মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন পাত্র ভর্তি করে না। (যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে পাত্র থেকে ততটুকু খাদ্য উঠানো কোন ব্যক্তির জন্য দূষণীয় নয়)। যতটুকু আহার করলে মেরুদণ্ড সোজা রাখা সম্ভব, ততটুকু খাদ্যই কোন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এরপরও যদি কোন ব্যক্তির নফস (প্রবৃত্তি) জয়জুক্ত হয়, তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৪৯

এশার আগে রাতের খাবার

রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে পাকস্থলী শয়ন অবস্থায়ও কর্মরত থাকে। ফলে পরিপাকের ত্রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি হতে পারে। তাই এশার নামাজের আগে রাতের খাবার খেয়ে নিলে একদিকে মসজিদে যাওয়া-আসা, নামাজ আদায় ইত্যাদির মাধ্যমে ঘুমানোর আগেই পাকস্থলীর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়, অন্যদিকে এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমানো সম্ভব হয়, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তার পর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭০২)

অন্য হাদিসে এসেছে,

 عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا وُضِعَ عَشَاءُ أَحَدِكُمْ وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَابْدَءُوا بِالْعَشَاءِ وَلاَ يَعْجَلَنَّ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْهُ ‏"‏ ‏.

আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার এসে গিয়েছে সলাতের ইক্বামাত হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থা হলে সে খাবার দিয়েই শুরু করবে। (অর্থাৎ- প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে) আবার খাবার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সলাতের জন্য ব্যস্ত হবে না। (ই.ফা. ১১২৪, ই.সে. ১১৩৩)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১১৩১

সাপ্তাহিক ও মাসিক রোজা

হাদিসে এক দিন পর পর অথবা সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার নির্দেশনা আছে। মাসে তিন দিন রোজা রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রোজার মাধ্যমে শরীরে অটোফেজির সুযোগ তৈরি হয় এবং পাকস্থলীর দূষিত পদার্থ পরিষ্কার হয়ে যায়। এক দিন পর পর রোজা রাখাকে সাওমে দাউদ বলা হয়। দাউদ (আ.) এভাবে রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এটিকে সর্বোত্তম রোজা বলেছেন এবং বেশি রোজা রাখতে আগ্রহীদের এভাবে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.) পছন্দ করতেন। এ ছাড়া তিনি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা আদায় করাকে বছরজুড়ে রোজা রাখার সমতুল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার (বান্দার) আমল (আল্লাহর দরবারে) উপস্থাপিত হয়। আমি পছন্দ করি যে রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপিত হোক। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)

স্বাস্থ্যসম্মত আহার গ্রহণে ইসলামি দৃষ্টিকোণ

স্বাস্থ্য আল্লাহর এক অশেষ দান ও অনুগ্রহ। মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে তাকে অবশ্যই শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। সব সময় নিয়মিতভাবে শরীর ও স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে অসুস্থ হলে অবশ্যই তাকে কিয়ামতের দিন এ জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তা ছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সুস্থ থাকাকে ইসলাম অধিক উৎসাহিত করেছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে, সেটা হলো তার সুস্থতাবিষয়ক। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি? (তিরমিজি)।

প্রত্যেক মোমিনের কর্তব্য হলো, সর্বদা শরীর ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকা। একজন মোমিন প্রথমত খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়েন এবং কখনো অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কোনো অলসতা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে, যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য। (আবু দাউদ)। অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা রোগ দেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেন। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে। (জাদুল মাআদ)।


প্রথম পর্ব রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (১)

দ্বিতীয় পর্ব রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (২) 

রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (০১)

রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলাম
 ভূমিকা

সুস্থতা ও অসুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাতে আনুগত্য ও নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। নবী-রাসুলরাও অসুস্থ হয়েছেন। যাঁরা ছিলেন সব মাখলুকের সেরা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব পয়গম্বরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনিও কয়েকবার অসুস্থ হয়েছেন। তাঁকেও অসুস্থতার কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে। এটি আবশ্যক নয় যে অসুস্থতা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর অসন্তুষ্টির দলিল। অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ হতে পারে। মুমিনের জন্য তার গুনাহর কাফফারাও হতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, রোগ বালাই বিপদ মুমিনের গুনাহের কাফফারা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ ‏:‏ ‏(‏مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ ‏)‏ شَقَّ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ فَشَكَوْا ذَلِكَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ "‏ قَارِبُوا وَسَدِّدُوا وَفِي كُلِّ مَا يُصِيبُ الْمُؤْمِنَ كَفَّارَةٌ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا أَوِ النَّكْبَةِ يُنْكَبُهَا ‏"‏ ‏.‏ ابْنُ مُحَيْصِنٍ هُوَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مُحَيْصِنٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে পাবে- (সূরা আন নিসা ১২৩) আয়াত অবতীর্ণ হলে মুসলিমদের নিকট বিষয়টি খুবই গুরুতর মনে হয়। তাই তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তিনি বললেনঃ তোমরা সত্যের নিকটবর্তী থাক এবং সরল সোজা পথ তালাশ কর। মুমিনের প্রতিটি বিপদ-মুসীবত ও কষ্ট-ক্লেশ, এমনকি তার দেহে কোন কাঁটা বিদ্ধ হলে বা তার উপর কোন আকস্মিক বিপদ এলে তার দ্বারাও তার গুনাহ্‌র কাফ্‌ফারা (ক্ষতিপূরণ) হয়ে যায়।

(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩০৩৮)

অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দার স্তর উন্নত হয়। অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ من يرد الله به خيراً يصب منه‏"‏ ‏:‏ ‏(‏‏‏رواه البخاري‏‏‏)‏‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।

(সহীহুল বুখারী ৫৬৪৫, আহমাদ ৭১৯৪, মুওয়াত্তা মালেক ১৭৫২, রিয়াদুস সলেহিন ৪০)

ইসলাম রোগব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে Prevention is better than cure রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময় থেকে শ্রেয়। এ কথাও বলা যায়, ‘Prevention is cheaper than cure’ রোগ প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে সস্তা। এ কারণেই ইসলাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

রোগ বালাই প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

রোগ প্রতিরোধে অজু / পবিত্রতা

অজুর মধ্যে আল্লাহতায়ালা অনেক নেয়ামত দিয়েছেন। অজু করার বিষয়ে আল্লাহ সূরা মায়িদায় বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَاَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَامۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَاَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَاِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّہَّرُوۡا ؕ وَاِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَاَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡہُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّلٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَہِّرَکُمۡ وَلِیُتِمَّ نِعۡمَتَہٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।

(সূরা মায়িদা ৫:৬)

বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রচুর সওয়াব রয়েছে। হাদিসে  বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে দশটি নেকি লাভ করে।

অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। অজুকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন। অজুকারীদের অনেকে দুনিয়াতে জান্নাতের সু-সংবাদ পেয়েছেন। অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যাক্তির জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া অজুর শুরুতে কবজি পর্যন্ত দুই হাত ধোয়া, কুলি করা, মিসওয়াক করা, কান ও নাকের বহির্ভাগ পরিষ্কার করাকে নবী করিম (সা.) সুন্নত হিসেবে অনুসরণ করতে বলেছেন।

রোগ প্রতিরোধে শরীর চর্চা

শারীরিক শক্তি বর্ধনে এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ জরুরি। এর পাশাপাশি ব্যায়াম ও শরীরচর্চারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ জন্য শারীরিক পরিশ্রম, সাঁতার কিংবা কুস্তিগিরি কৌশল রপ্ত করা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। একই ধারাবাহিকতা ছিল নবী-সাহাবির যুগেও। পবিত্র কোরআনে মুমিনদের দৈহিক ও সামরিক শক্তির অনুশীলন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

وَاَعِدُّوۡا لَہُمۡ مَّا اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ قُوَّۃٍ وَّمِنۡ رِّبَاطِ الۡخَیۡلِ تُرۡہِبُوۡنَ بِہٖ عَدُوَّ اللّٰہِ وَعَدُوَّکُمۡ وَاٰخَرِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِہِمۡ ۚ لَا تَعۡلَمُوۡنَہُمۡ ۚ اَللّٰہُ یَعۡلَمُہُمۡ ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ یُوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَاَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ

আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

(সূরা আনফাল ৮:৬০)

রাসুল (সা.) বলেন, দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)

এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি করা শরীরচর্চার একটি মাধ্যম। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) দ্রুত হাঁটতেন। আবার কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবীজির চেয়ে দ্রুতগতিতে কাউকে হাঁটতে দেখিনি। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৮)

দৌড় দেওয়া শরীরচর্চার একটি মাধ্যম। মহানবী (সা.) আয়েশা (রা)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। আয়েশা (রা.) নিজেই বলেছেন, নবী করিম (সা.) দৌড়ে আমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেন। তখন আমি আগে বেরিয়ে গেলাম। পরে যখন আমার শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন রাসুল (রা.) আমার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে আমাকে হারিয়ে দিলেন এবং তিনি বলেন, এবার আগেরবারের বদলা নিলাম। (মুসনাদ আহমদ ও আবু দাউদ)

কুস্তি ও শারীরিক কসরত করাও ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ। নবী করিম (সা.) রুকানা নামক এক নামকরা কুস্তিগিরের সঙ্গে লড়েছিলেন। সে ছিল খুবই বলিষ্ঠ। মহানবী (সা.) একাধিকবার তাকে পরাজিত করেছিলেন। (আবু দাউদ)

সুস্থ দেহের জন্য শারীরিক পরিচর্যার পাশাপাশি হাসিখুশি থাকা ও মানসিক প্রফুল্লতার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নবীজি (সা.) নিজেও অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর অধিকারী ছিলেন। সাহাবিরা বলতেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর চেয়ে হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪১)


প্রথম পর্ব রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (১)

দ্বিতীয় পর্ব রোগ-বালাই ও মহামারী প্রতিরোধে ইসলামী দৃষ্টিকোণ (২)