Showing posts with label জুমুয়া. Show all posts
Showing posts with label জুমুয়া. Show all posts

কুরআন এবং হাদিসের আলোকে স্বদেশপ্রেম

 

ইসলামের আলোকে স্বদেশ প্রেম

ইসলাম স্বদেশ প্রেমকে উৎসাহিত করে। কোরআন ও হাদিসে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সেবার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) নিজেও স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখিয়েছেন। ইসলামে স্বদেশ প্রেম শুধু ভূখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা নয়, বরং দেশের মানুষের সেবা ও দেশের উন্নতির জন্য কাজ করাকেও বোঝায়।

মাতৃভূমি ও জন্মস্থানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বা ভালবাসা, গভীর অনুভূতি ও মমত্ববোধকে স্বদেশপ্রেম বলে। মাতৃভূমি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। যে ব্যক্তি দেশের প্রতি কর্তব্য সমূহ পালন করে সে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে। আর যে ব্যক্তি দেশের প্রতি কর্তব্যসমূহ পালন করে না, সে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। সে পূর্ণ মুমিন নয়। এ জন্য আরবী প্রবাদে বলা হয়

حُبُّ الْوَطَنِ مِنَ الْإِيْمَان 

দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।

ইসলামের দৃষ্টিতে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হলে স্বদেশ প্রেম অত্যাবশ্যক। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের ও প্রয়োজন হতে পারে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে না পারলে মান-সম্মান, স্বাধিকার, ঈমান ও আমল রক্ষা করা যায় না। এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বদেশ প্রেমের গুরত্ব অত্যাধিক। ইসলামে স্বদেশের প্রতি ভালবাসার জোরালো দিক নির্দেশনা রয়েছে। দেশ ও রাষ্ট্রে ব্যবস্থা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ব্যাপক আলোচনা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন:

لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِالۡبَیِّنٰتِ وَاَنۡزَلۡنَا مَعَہُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡمِیۡزَانَ لِیَقُوۡمَ النَّاسُ بِالۡقِسۡطِ ۚ  وَاَنۡزَلۡنَا الۡحَدِیۡدَ فِیۡہِ بَاۡسٌ شَدِیۡدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ

আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতির মানদন্ড যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। (সূরা হাদীদ ৫৭ঃ২৫)

শাসকের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَلِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ 

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। (সূরা হজ্জ ২২:৪১)

ইসলাম দেশপ্রেম ও দেশাত্ববোধকে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শে ও স্বভাব চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। তিনি স্বদেশকে খুব ভাল বাসতেন। মক্কার কাফেরদের নির্মম নির্যাতনে যখন জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করছিলেন। তখন তিনি বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে যা বলছিলেন, তা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ

عن ابنِ عباسٍ، قال: لما خرجَ رسول اللهِ ﷺ من مكةَ قال: أما واللهِ إني لأَخرجُ منكِ وإني لأعلمُ أنك أحبّ بلادِ اللهِ إلى اللهِ، وأكرمهُ على اللهِ؛ ولولا أهلكِ أخرجُوني منك ما خَرجتُ

الراوي: عبدالله بن عباس • ابن عبد البر، التمهيد (٦/٣٣) • من أصح الآثار • أخرجه الترمذي (٣٦٢٩)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন, আমি অবশ্যই বের হয়ে যাচ্ছি। তবে আমি জানি (হে মক্কা) তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং সম্মানিত শহর। যদি তোমার অধিবাসিরা আমাকে তোমার থেকে বের করে না দিত, তবে আমি বের হয়ে যেতাম না। (দুররুল মানসূর)

জাযায়িরী তাঁর আইসারুত তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন।

وكاين من قرية هي أشد قوة من قريتك التي أخرجتكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلا نَاصِرَ لَهُمْ . هذه الآية نزلت ساعة خروج الرسول صلى الله عليه وسلم من بيته إلى غار ثور مهاجرا فقد التفت إلى مكة وقال أنت أحب البلاد إلى الله وأحب بلاد الله إلى ولو أن المشركين لم يخرجوني لم أخرج . ايسر التفاسير الجزائري 

আর তোমার জনপদ যা থেকে তারা তোমাকে বহিষ্কার করেছে তার তুলনায় শক্তিমত্তায় প্রবলতর অনেক জনপদ ছিল, আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম, ফলে তাদের কোনই সাহায্যকারী ছিল না। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৩)

এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরতের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে গারে সূরের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি মক্কার দিকে ফিরে বলছিলেন, হে মক্কা তুমি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় শহর এবং আল্লাহর শহর আমার কাছেও প্রিয়। যদি মুশরিকরা আমাকে বের করে না দিত তবে আমি তোমার থেকে বের হয়ে যেতাম না।

সাহাবাদের মাঝে স্বদেশপ্রেম

সাহাবায়ে কিরামও স্বদেশকে খুব ভাল বাসতেন। হিজরতের পর আবু বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের মনে প্রাণে স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলী স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় নবী করিম (সাঃ) সাহাবীদের মনের এ দূরাবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ আমরা মক্কাকে যেমন ভালবাসি তেমনি তার চেয়ে বেশী মদীনাকে ভালবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন। (বুখারী)

৬ষ্ঠ হিজরীতে স্বপ্নে আদেশ পেয়ে রাসূল (সাঃ) যখন ওমরা পালনের জন্য মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন তখন সাহাবীরা স্বদেশের কথা স্বরণ করে আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন।

দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত মানুষেরা সমাজের চোখে যেমন সম্মানিত তেমনি আল্লাহর কাছে ও অত্যন্ত গৌরবময় মর্যাদার অধিকারী। নবুয়ত লাভের পর সুদীর্ঘ ১৩ বছর মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীরা স্বদেশ মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয়েছেন এবং নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত দেশ ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অতঃপর ১০ম হিজরীতে বিজয়ীর বেশে মহানবী (সাঃ) যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন, মক্কার মুসলমানদের উপর যে ভীষণ অন্যায় ও অত্যাচার করা হয়েছিল, তা ভূলে গেলেন এবং দেশবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় দেশ প্রেম, উদারতা ও মহানুভবতার আদর্শ স্থাপন করেন। ইউছুফ (আঃ) তাদের ভাইদের ব্যাপারে যা বলেছিলেন তিনিও সেই ঘোষণা প্রদান করেন। যা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এসেছে,

  قَالَ لَا تَثۡرِیۡبَ عَلَیۡکُمُ الۡیَوۡمَ ؕ یَغۡفِرُ اللّٰہُ لَکُمۡ ۫ وَہُوَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ 

আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। (সুরা ইউছুফ ১২:৯২)

দেশ প্রেমের ফলে মানুষের মন উদার ও মহৎপ্রাণ হয়। অপরের জন্য কল্যাণবোধ জন্ম লাভ করে। তাই দেশের স্বার্থ বিরোধীদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালানো উচিত। 

দেশের সীমান্ত পাহারা দেয়ার গুরুত্ব

দেশের সীমান্ত প্রহরীদের সম্পর্কে রাসূলে আকরাম (সঃ) ঘোষণা

أنَّ رَسولَ اللَّهِ ﷺ قالَ: رِباطُ يَومٍ في سَبيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيا وما عَلَيْها صحيح البخاري (٢٨٩٢)


অর্থাৎ একদিন আল্লাহর রাস্তায় সীমানা পাহারা দেয়া পৃথিবী ও পৃথিবীর উপরস্থ সব কিছু থেকে উত্তম

(বুখারী ২৮৯২ ও মুসলিম ৪৮৩২)

অপর হাদীসে এসেছে,

عن سلمان قال سمعتُ رسولِ اللهِ (ص) يَقُول رِباطُ يَومٍ ولَيْلَةٍ خَيْرٌ مِن صِيامِ شَهْرٍ وقِيامِهِ، وإنْ ماتَ جَرى عليه عَمَلُهُ الذي كانَ يَعْمَلُهُ، وأُجْرِيَ عليه رِزْقُهُ، وأَمِنَ الفَتّانَ

الراوي مسلم، (١٩١٣)

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, একদিন ও একরাত রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া একমাস রোজা রাখা ও রাতে ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এ অবস্থায় যদি সে মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মারা যাওয়ার পরও তা তার জন্য জারী থাকবে, তার রিজিক ও জারী থাকবে এবং কবরের পরীক্ষা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। (মুসলিম- জিহাদ অধ্যায়)

দেশপ্রেম জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়

রাসূল (সাঃ) এর বাণী,

عينان لا تمسُّهما النّارُ عينٌ بكت من خشيةِ اللهِ، وعينٌ باتت تحرسُ في سبيلِ اللهِ

أخرجه الترمذي (١٦٣٩)

দুইটি চোখকে জাহান্নামের আগুণ স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। যে চোখ আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। (তিরমিজি- ১৬৩৯)

ধৈর্যধারণ করা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা বা সীমানা পাহারা দেয়া এবং আল্লাহকে ভয় করা সফলতার উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَصَابِرُوۡا وَرَابِطُوۡا ۟  وَاتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ 

হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ধারণ কর ধৈর্যের প্রতিযোগীতা কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (সূরা আলে-ইমরান ৩:২০০)

দেশপ্রেম ও সেনাবাহিনী।

একজন সৈনিকের নিকট দেশ তথা মাতৃভূমি সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এ ক্ষেত্রে আমরা বীরশ্রেষ্ঠ সহ অনেক সেনা সদস্যের কথা স্মরণ করতে পারি যারা দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও তা হেফাজতের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। আর এ জন্যই বলা হয় আমার দেশ, আমার প্রাণ, বাঁচলে দেশ, বাঁচবে মান। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য প্রাণ প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিবেদিত। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কেহ কেহ শপথের কথা ভুলে যান। একজন ঈমানদার ব্যক্তি কোন অবস্থাতেই শপথ বা প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করতে পারে না। শপথ অনুযায়ী কাজ করা, সততা ও সত্যবাদিতা দেশ প্রেমেরই বাস্তব দিক।

সুতরাং দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হলো শপথ বা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা।শপথ বা প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন, 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ ۬

মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। (সূরা মায়িদা ৫:১)

 অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, 

وَاَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ الۡعَہۡدَ کَانَ مَسۡـُٔوۡلًا 

তোমরা প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে (কিয়ামতে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৩৪) 

অঙ্গীকার সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, 

خطبَنا رسولُ اللَّهِ ﷺ فقال: لا إيمانَ لمن لا أمانَ لَهُ ولا دينَ لمن لا عَهدَ لَهُ

যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না তার ধর্ম নেই। (মিশকাত- ঈমান অধ্যায়)

শান্তিকালীন সময়ে সরকারী সকল দ্রব্য সামগ্রী যন্ত্রপাতি ও যানবাহনকে ঈমানদারীর সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা দেশ প্রেমের পরিচায়ক। সরকারী সম্পদের অপচয় না করে এর সঠিক ও সদ্ব্যবহার করাই হলো শান্তিকালীন সময়ে একজন সৈনিকের প্রকৃত দেশপ্রেম। একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক রাষ্ট্রীয় সম্পদ, পানি, গ্যাস, বিদ্যুত, খাদ্য কোন কিছুই অপচয় করতে পারে না।

দেশপ্রেম মানুষকে মমত্ববোধ, ভ্রাতৃত্ব বোধ, সহজ সরল আচরণ শেখায়। নিজদেশের শান্তি সমৃদ্ধি সুখ ও মঙ্গলের জন্য ভাবতে অনুপ্রাণিত করে। দেশের মানুষের বিভিন্ন দল-মত সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল পরস্পরের প্রতি বিরোধ, সংঘর্ষ ও প্রতিহিংসার পরিবর্তে একে অন্যের সহযোগীতা, সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতার ভাবধারা গড়ে তোলার জন্য পরম সহিষ্ণুতা শিষ্টাচার একান্ত প্রয়োজন। দেশাত্ববোধ ও স্বদেশের প্রতি মমতা অনেক অন্যায় ও অপরাধ প্রবনতা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারে। তাই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করতে হলে অবশ্যই দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। স্বদেশের প্রতি অনুগত থেকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে ভালবাসা সবার ঈমানী দায়িত্ব ও পবিত্র কর্তব্য। সর্বোপরি দেশের জনগনের যার যার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা ইসলামী বিধি নিষেধের যথার্থ অনুশীলন আমাদের প্রকৃত ঈমানদার মানুষে পরিণত করতে পারে। এবং সমাজ জীবনে বয়ে আনতে পারে শান্তি সুখের সুশীতল সমীরণ।

শেষ কথা

ইসলামের আলোকে দেশপ্রেম ও দেশাত্ববোধ মানুষকে স্বদেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে দেশ প্রেমিক নিজের জানা-মাল উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। স্বদেশকে হেফাযত করতে না পারলে ধর্মকে হেফাযত করা যায় না। দেশের মানুষকে রক্ষা করা যায় না। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায় না। দেশ প্রেমিক ধর্মভীরু মানুষকে স্বদেশের উন্নতি সাধনে সজাগ রাখে। দেশের জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধে উদ্বুদ্ধ করে। আর দেশাত্ববোধ ব্যতীত কোন দেশের স্বাধীনতা স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না।

তাই আল্লাহ পাকের দরবারে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন বাংলার মাটি থেকে জঙ্গীবাদী, বোমাবাজ, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী, চাঁদাবাজ, সুদখোর, ঘুষখোর অবৈধ মজুদদার, ভেজাল ব্যবসায়ী, দেশের ভাবমুর্তি বিনষ্টকারী ও দেশের স্বার্থ বিরোধী দুর্নীতিবাজদের মূলোৎপাটন করে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী শোষণমুক্ত স্বাবলম্বী সোনার বাংলাদেশ গঠনের তাওফিক দান করেন। আমিন।

রমজানের শেষ দশক ও লাইলাতুল ক্বদরের আমল

রমজানের শেষ দশক ও লাইলাতুল ক্বদরের আমল
রমজানের শেষ দশক ও লাইলাতুল ক্বদরের আমল

 আরবি ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে মহিমান্বিত ও বরকত পূর্ণ মাস হলো রমজান মাস। মহান আল্লাহ এই মাসেই সাওম ফরজ করেছেন এবং এ মাসেই পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন। আর পবিত্র কুরআন নাজিলের কারণেই মাসের মর্যাদা সকল মাসের তুলনায় বেশি। কোরআনের সম্মানে এ মাসে সাওম ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরাহ বাক্বারা ২:১৮৫)

লাইলাতুল কদর এর গুরুত্ব ও আমল

এ পবিত্র মাসের মধ্যে রয়েছে খুবই ফজিলতপূর্ণ রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর। গোটা বছরের মধ্যে সর্বোত্তম রাত। আবু বক্কর ওয়াররাক বলেন, এ রাত্রিকে লাইলাতুল কদর বলার কারণ এই যে, আমল না করার কারণে এর পূর্বে যার কোন সম্মান ও মূল্য ছিল না, সে রাত্রিতে তাওবা ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে সম্মানিত হয়ে যায়। ক্বদরের আরেক অর্থ তাকদির। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্যলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়। এমনকি এ বছরকে হজ করবে তাও লিখে দেয়া হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি অনুযায়ী চারজন ফেরেশতাকে এসব কাজ দেয়া হয়। তারা হলেন ইসরাফিল মিকাইল মালাকুল মাউত (আজ্রাইল) ও জিব্রাইল। (কুরতুবী)

সূরা ক্বদর

এই রাতের মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল করেন যার নাম সূরাতুল কদর,

‏إِنَّآ أَنزَلْنَهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْر. ‏وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ .‏لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌۭ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍۢ .‏تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍۢ .‏سَلَمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ

নিঃসন্দেহ আমরা এটি অবতারণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কি? লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে হাজার মাসের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরাহ ক্বদর ৯৭:১-৫)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে দূররুল মানসুর গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, এই মোবারক রাত শুধুমাত্র উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য বিশেষায়িত করা হয়েছে। ইবনে আবি হাতেম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার বনি ইসরাইলের জনৈক মুজাহিদের সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম আল্লাহর পথে দ্বীনের কাজে মশগুল ছিলেন অর্থাৎ জিহাদে লিপ্ত ছিলেন। এতে সাহাবীগণ খুব বিস্মিত হলেন।  তখন রসূল (সাঃ) বলেন, "বনী ইসরাঈলের ওই উম্মতের চেয়ে তোমাদের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে যাতে তোমরা এবাদত করলে বেশি সাওয়াব পাবে। আর তা হলো লাইলাতুল কদর।" (তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন)

এছাড়া সূরা দুখানে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰہُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ اِنَّا کُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ فِیۡہَا یُفۡرَقُ کُلُّ اَمۡرٍ حَکِیۡمٍ ۙ اَمۡرًا مِّنۡ عِنۡدِنَا ؕ  اِنَّا کُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ ۚ

আমি একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। (সূরা দুখান ৪৪:৩-৫)

হাদিসে বর্ণিত আছে,

عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْمَنَامِ فِي السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ.

মালিক (র) থেকে বর্ণিতঃ তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে কিছু লোককে লাইলাতুল ক্বদর স্বপ্নে দেখানো হয় শেষের সাত রাত্রে। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি মনে করি তোমাদের স্বপ্ন শেষের সাতদিনের ব্যাপারে পরস্পর মুয়াফিক (সামঞ্জস্যপূর্ণ) হয়েছে। অতঃপর যে উহাকে (লাইলাতুল ক্বদর) তালাশ করে, সে যেন শেষের সাত দিনে উহাকে তালাশ করে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ৬৯০, বুখারী ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫)

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ تَذَاكَرْنَا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَأَتَيْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ - رضى الله عنه - وَكَانَ لِي صَدِيقًا فَقُلْتُ أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ فَخَرَجَ وَعَلَيْهِ خَمِيصَةٌ فَقُلْتُ لَهُ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فَقَالَ نَعَمْ اعْتَكَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعَشْرَ الْوُسْطَى مِنْ رَمَضَانَ فَخَرَجْنَا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ فَخَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ "‏ إِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ وَإِنِّي نَسِيتُهَا - أَوْ أُنْسِيتُهَا - فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ كُلِّ وِتْرٍ وَإِنِّي أُرِيتُ أَنِّي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلْيَرْجِعْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَرَجَعْنَا وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً قَالَ وَجَاءَتْ سَحَابَةٌ فَمُطِرْنَا حَتَّى سَالَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ وَكَانَ مِنْ جَرِيدِ النَّخْلِ وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَسْجُدُ فِي الْمَاءِ وَالطِّينِ قَالَ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ فِي جَبْهَتِهِ ‏.

আবূ সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমরা পরস্পর ক্বদরের রাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এরপর আমি আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর নিকট এলাম এবং তিনি ছিলেন আমার বন্ধু। আমি তাকে বললাম, আপনি কি আমাদের সাথে খেজুরের বাগানে যাবেন না? তিনি একটি চাদর পরিহিত অবস্থায় বের হলেন। আমি তাকে বললাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লায়লাতুল ক্বদ্র সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা রমাযান মাসের মাঝের দশকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ইতিকাফ করলাম। আমরা ২১তম দিন ভোরে (ইতিকাফ থেকে) বের হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বললেন, আমাকে স্বপ্নযোগে ক্বদরের রাত দেখানো হয়েছিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি অথবা আমাকে ভুলানো হয়েছে। তোমরা শেষ দশ দিনের প্রতিটি বেজোড় রাতে তা অন্বেষণ কর। আমি আরও দেখেছি যে, আমি কাদা ও পানির মধ্যে সাজ্দাহ্ করছি। অতএব যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ইতিকাফ করেছে, সে যেন পুনরায় তার ইতিকাফে ফিরে যায়। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমরা (ইতিকাফের অবস্থায়) ফিরে গেলাম। আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখতে পাইনি। ইতিমধ্যে একখণ্ড মেঘ এলো এবং আমাদের উপর বৃষ্টি হল, এমন কি মাসজিদের ছাদ হতে পানি প্রবাহিত হল। মাসজিদের ছাদ খেজুর ডাটার ছাউনিযুক্ত ছিল। ফজরের সলাত আদায় করা হল এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাদা ও পানির মধ্যে সাজ্‌দাহ দিতে দেখলাম, এমনকি কি আমি তাঁর কপালে কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৬২, ই.ফা. ২৬৩৯, ই.সে. ২৬৩৮)

إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ مَنْ قَامَ السَّنَةَ أَصَابَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ - فَقَالَ أُبَىٌّ وَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ إِنَّهَا لَفِي رَمَضَانَ - يَحْلِفُ مَا يَسْتَثْنِي - وَوَاللَّهِ إِنِّي لأَعْلَمُ أَىُّ لَيْلَةٍ هِيَ ‏.‏ هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقِيَامِهَا هِيَ لَيْلَةُ صَبِيحَةِ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ وَأَمَارَتُهَا أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فِي صَبِيحَةِ يَوْمِهَا بَيْضَاءَ لاَ شُعَاعَ لَهَا ‏.

আবদুল্লাহ ইবনু মাস'উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে সলাত আদায় করবে সে ক্বদরের রাত প্রাপ্ত হবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনু ক্বা'ব বললেনঃ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই সে মহান আল্লাহর ক্বসম! নিশ্চিতভাবে লায়লাতুল ক্বদর রমাযান মাসে। এ কথা বলতে তিনি ক্বসম করলেন কিন্তু ইন-শা-আল্লাহ বললেন না (অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝলেন যে, রমাযান মাসের মধ্যেই লায়লাতুল ক্বদর আছে) এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেনঃ আল্লাহর কসম! কোন্‌ রাতটি ক্বদ্‌রের রাত তাও আমি জানি। সেটি হল এ রাত, যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কে সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। সাতাশ রমাযান তারিখের সকালের পূর্বের রাতটিই সে রাত। আর ঐ রাতের আলামাত বা লক্ষন হল-সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোন তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৭০, ই.ফা. ১৬৫৫, ই.সে. ১৬৬২)

عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ أُبَىٌّ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَاللَّهِ إِنِّي لأَعْلَمُهَا وَأَكْثَرُ عِلْمِي هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقِيَامِهَا هِيَ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ - وَإِنَّمَا شَكَّ شُعْبَةُ فِي هَذَا الْحَرْفِ - هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ وَحَدَّثَنِي بِهَا صَاحِبٌ لِي عَنْهُ ‏.

উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি লাইলাতুল ক্বদ্‌র বা ক্বদ্‌রের রাত সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর ক্বসম! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি এবং এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে, যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন সেটিই অর্থাৎ সাতাশ তারিখের রাতই ক্বদ্‌রের রাত। হাদীসটির ঐ অংশ সম্পর্কে যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। শুবাহ্ সন্দেহ পোষন করেছেন। বর্ণনাকারী শুবাহ্ বলেছেনঃ আমার এক বন্ধু (আবদাহ্ ইবনু আবূ লুবাবাহ্ ) তার থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৬৭১, ই.ফা. ১৬৫৬, ই.সে. ১৬৬৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৭)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، - رضى الله عنه - قَالَ اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ يَلْتَمِسُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ قَبْلَ أَنْ تُبَانَ لَهُ فَلَمَّا انْقَضَيْنَ أَمَرَ بِالْبِنَاءِ فَقُوِّضَ ثُمَّ أُبِينَتْ لَهُ أَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَأَمَرَ بِالْبِنَاءِ فَأُعِيدَ ثُمَّ خَرَجَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهَا كَانَتْ أُبِينَتْ لِي لَيْلَةُ الْقَدْرِ وَإِنِّي خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِهَا فَجَاءَ رَجُلاَنِ يَحْتَقَّانِ مَعَهُمَا الشَّيْطَانُ فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ الْتَمِسُوهَا فِي التَّاسِعَةِ وَالسَّابِعَةِ وَالْخَامِسَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ يَا أَبَا سَعِيدٍ إِنَّكُمْ أَعْلَمُ بِالْعَدَدِ مِنَّا ‏.‏ قَالَ أَجَلْ ‏.‏ نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْكُمْ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ مَا التَّاسِعَةُ وَالسَّابِعَةُ وَالْخَامِسَةُ قَالَ إِذَا مَضَتْ وَاحِدَةٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا ثِنْتَيْنِ وَعِشْرِينَ وَهْىَ التَّاسِعَةُ فَإِذَا مَضَتْ ثَلاَثٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا السَّابِعَةُ فَإِذَا مَضَى خَمْسٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا الْخَامِسَةُ .‏ وَقَالَ ابْنُ خَلاَّدٍ مَكَانَ يَحْتَقَّانِ يَخْتَصِمَانِ ‏.

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বদরের রাত অন্বেষণের উদ্দেশ্যে তা তাঁর কাছে সুস্পষ্ট হবার পূর্বে রমাযানের মধ্যেই দশদিন ইতিকাফ করলেন। দশদিন অতিবাহিত হবার পর তিনি তাঁবু তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। অতএব তা গুটিয়ে ফেলা হল। অতঃপর তিনি জানতে পারলেন যে, তা শেষ দশ দিনের মধ্যে আছে। তাই তিনি পুনরায় তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। তা খাঁটানো হল। এরপর তিনি লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে লোক সকল! আমাকে ক্বদ্রের রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু দুই ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া করতে করতে উপস্থিত হল এবং তাদের সাথে ছিল শাইত্বান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা রমাযান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ কর। তোমরা তা ৯ম, ৭ম ও ৫ম রাতে অন্বেষণ কর। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ সাঈদ! আপনি সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরাই এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে অধিক হাক্বদার। আমি বললাম ৯ম, ৭ম, ৫ম সংখ্যাগুলো কী? তিনি বললেন, যখন ২১তম রাত অতিবাহিত হয়ে যায় এবং ২২তম রাত শুরু হয়-তখন তা হচ্ছে ৯ম তারিখ, ২৩তম রাত অতিক্রান্ত হবার পরবর্তী রাত হচ্ছে ৭ম তারিখ এবং ২৫তম রাত অতিবাহিত হবার পরের দিনটি হচ্ছে ৫ম তারিখ।

ইবনু খাল্লাদের বর্ণনায়……. (আরবি)-এর শব্দের স্থলে (আরবি) শব্দের উল্লেখ আছে (অর্থ একই, অর্থাৎ তারা ঝগড়া করে) (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৬৪, ই.ফা. ২৬৪১, ই.সে. ২৬৪০)

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ ‏"‏‏.‏

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্‌রের অনুসন্ধান কর। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৭

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَىُّ لَيْلَةٍ لَيْلَةُ الْقَدْرِ مَا أَقُولُ فِيهَا قَالَ ‏ "‏ قُولِي اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল ক্বদর জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেনঃতুমি বল হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫১৩

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ‏.‏

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৪

قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ ‏.

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমাযানের শেষ দশকে অধিক পরিমাণে এমনভাবে সচেষ্ট থাকতেন যা অন্য সময়ে থাকতেন না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৭৮, ই.ফা ২৬৫৫, ই.সে. ২৬৫৪)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ‏.‏ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي رَمَضَانَ الْعَشْرَ الَّتِي فِي وَسَطِ الشَّهْرِ، فَإِذَا كَانَ حِينَ يُمْسِي مِنْ عِشْرِينَ لَيْلَةً تَمْضِي، وَيَسْتَقْبِلُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، رَجَعَ إِلَى مَسْكَنِهِ وَرَجَعَ مَنْ كَانَ يُجَاوِرُ مَعَهُ‏.‏ وَأَنَّهُ أَقَامَ فِي شَهْرٍ جَاوَرَ فِيهِ اللَّيْلَةَ الَّتِي كَانَ يَرْجِعُ فِيهَا، فَخَطَبَ النَّاسَ، فَأَمَرَهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ قَالَ ‏ "‏ كُنْتُ أُجَاوِرُ هَذِهِ الْعَشْرَ، ثُمَّ قَدْ بَدَا لِي أَنْ أُجَاوِرَ هَذِهِ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي فَلْيَثْبُتْ فِي مُعْتَكَفِهِ، وَقَدْ أُرِيتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا فَابْتَغُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ وَابْتَغُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ ‏"‏‏.‏ فَاسْتَهَلَّتِ السَّمَاءُ فِي تِلْكَ اللَّيْلَةِ، فَأَمْطَرَتْ، فَوَكَفَ الْمَسْجِدُ فِي مُصَلَّى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، فَبَصُرَتْ عَيْنِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَظَرْتُ إِلَيْهِ انْصَرَفَ مِنَ الصُّبْحِ، وَوَجْهُهُ مُمْتَلِئٌ طِينًا وَمَاءً‏.‏

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সংগে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন): শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৮

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، - رضى الله عنه - أَنَّهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي رَمَضَانَ الْعَشْرَ الَّتِي فِي وَسَطِ الشَّهْرِ ‏.‏ وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمِثْلِهِ غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ ‏ "‏ فَلْيَثْبُتْ فِي مُعْتَكَفِهِ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ وَجَبِينُهُ مُمْتَلِئًا طِينًا وَمَاءً ‏.

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করতেন। অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে, সে যেন তার ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করে। তিনি আরো বলেন, তাঁর কপাল মুবারক কাদা ও পানিতে সিক্ত ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৬০, ই.ফা. ২৬৩৭, ই.সে. ২৬৩৬)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ‏.‏ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي رَمَضَانَ الْعَشْرَ الَّتِي فِي وَسَطِ الشَّهْرِ، فَإِذَا كَانَ حِينَ يُمْسِي مِنْ عِشْرِينَ لَيْلَةً تَمْضِي، وَيَسْتَقْبِلُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، رَجَعَ إِلَى مَسْكَنِهِ وَرَجَعَ مَنْ كَانَ يُجَاوِرُ مَعَهُ‏.‏ وَأَنَّهُ أَقَامَ فِي شَهْرٍ جَاوَرَ فِيهِ اللَّيْلَةَ الَّتِي كَانَ يَرْجِعُ فِيهَا، فَخَطَبَ النَّاسَ، فَأَمَرَهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ قَالَ ‏ "‏ كُنْتُ أُجَاوِرُ هَذِهِ الْعَشْرَ، ثُمَّ قَدْ بَدَا لِي أَنْ أُجَاوِرَ هَذِهِ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعِي فَلْيَثْبُتْ فِي مُعْتَكَفِهِ، وَقَدْ أُرِيتُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا فَابْتَغُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ وَابْتَغُوهَا فِي كُلِّ وِتْرٍ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ ‏"‏‏.‏ فَاسْتَهَلَّتِ السَّمَاءُ فِي تِلْكَ اللَّيْلَةِ، فَأَمْطَرَتْ، فَوَكَفَ الْمَسْجِدُ فِي مُصَلَّى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، فَبَصُرَتْ عَيْنِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَظَرْتُ إِلَيْهِ انْصَرَفَ مِنَ الصُّبْحِ، وَوَجْهُهُ مُمْتَلِئٌ طِينًا وَمَاءً‏.‏

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযান মাসের মাঝের দশকে ইতিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ইতিকাফ করেছিলেন সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ইতিকাফ করেন ঐ মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন, অতঃপর বলেন যে, আমি এই দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে, শেষ দশকে ইতিকাফ করব। যে আমার সংগে ইতিকাফ করেছিল সে যেন তার ইতিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন): শেষ দশকে ঐ রাতের তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তা তালাশ কর। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ঐ রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি। ঐ রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মসজিদে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সালাতের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের সালাত শেষে ফিরে বসেন তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমন্ডল কাদা-পানি মাখা। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৮

সমাপনী

পরিশেষে বলা যায় যে, লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। যে রাত্রি ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ সৌভাগ্যবান ও সম্মানিত হয়ে থাকে। এমনকি এ রাত্রে বান্দা তার আমলের পাল্লাকে ভারী করার সুযোগ পায়। সুতরাং এ রাতে আমাদের উচিত নফল সালাত, কুরআন তেলাওয়াত, দরুদ পাঠতাসবিহ তাহলিল, আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা, নিজের গুনাহের কথা চিন্তা করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি ও তাওবা ইস্তেগফার ইত্যাদি ইবাদত করার মাধ্যমে রমজানের শেষ দশক বিশেষ করে লাইলাতুল কদর অতিবাহিত করা। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের মতো একটি মহিমান্বিত রাত্রিতে ইবাদতে কাটানোর তৌফিক দান করুন।

পিডিএফ ডাউনলোড করুন  

জুমুয়ার খুতবার বিষয় সমূহ


জমুয়ার খুতবার বিষয় সমূহ
জুমুয়ার খুতবার বিষয় সমূহ

সীরাতুন্নবী (সাঃ) বিষয়ক খুতবাহ ও আলোচনা নোট

১। প্রিয়নবী (সাঃ) এর বয়স ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত জীবনী

২। কেমন ছিলেন বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

৩। আদর্শ স্বামী হিসেবে কেমন ছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ)

৪। সমাজ সংস্কারক মূহাম্মাদ (সাঃ)

৫। সেনানায়ক মুহাম্মাদ (সাঃ)

খুতবাহ তালিকা

১। আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলামের নীতিমালা

২। পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি

৩। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আলেমের মর্যাদা

৪। কুরআন তিলাওয়াত এর গুরুত্ব ও ফজিলত

৫। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

৬। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব, এবং এর প্রতিকার

৭। জুমুয়ার সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

৮। মুনাফিকের আলামত ও নেফাকি থেকে বাঁচার উপায়

৯। তাওহীদের গুরুত্ব ও প্রকারভেদ

১০। কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে মানুষের অধিকার

১১। কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে বান্দার হক্ব

১২। অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন

১৩। শিরক কি? ও এর কুফল

১৪। অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা

১৫। হাদিসের আলোকে আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা

১৬। দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে আমানতদারী

১৭। সহকর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহারের গুরুত্ব

১৮। সুন্নতের গুরুত্ব ও ফজিলত

১৯। কুরআন তিলাওয়াত এর গুরুত্ব ও ফজিলত

২০। কুরআন পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

২১। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ

২২। আখলাকে হামিদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র

২৩। ইসলামে পানাহারের আদব

২৪। ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান ও মাদকদ্রব্য

২৫। মানব চরিত্রের নেতিবাচক দিক সমূহ

২৬। কোরআন ও হাদিসের পারস্পরিক সম্পর্ক

২৭। কুরআন ও বিজ্ঞান

২৮। মানবসেবা

২৯। জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত

৩০। আল কুরআনঃ বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ

৩১। মুত্তাকী ব্যক্তির পরিচয়

৩২। লাইলাতুল বারাআত এর তাৎপর্য

৩৩। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে ইতিকাফ

৩৪। রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

৩৫। সাদাকাতুল ফিতর ও ঈদুল ফিতরের আহকাম

৩৬। ঈদুল ফিতরের খুতবা

৩৭। রমাদ্বানের শিক্ষা এবং বাকী ১১ মাসের করণীয়

৩৮। ঈদুল আযহার খুতবাহ + ঈদুল আযহার দ্বিতীয় খুতবাহ

৩৯। কুরবানি বিষয়ক আয়াত ও হাদিস

৪০। হজ্জের আহকাম, গুরুত্ব ও ফজিলত

৪১। যাকাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি

৪২। যাকাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

৪৩। জুমুয়ার সানি খুতবাহ


প্রয়োজনে আমাকে মেসেজ দিন

Abubokar Abubokar

ফেসবুক থেকে কমেন্ট করুন