জুলুমের পরিণতি: ইসলামে অন্যায় ও নিপীড়নের ভয়াবহ বিচার ও শিক্ষা
![]() |
জুলুমের পরিণতি: জুমুয়ার খুতবাহ |
জুলুম এমন এক অগ্নিশিখা
যা প্রথমে অন্যদের পোড়ায়, কিন্তু শেষে জালিমকেই ভস্ম করে!
আজ আমরা এমন এক বিশ্বে
বাস করছি যেখানে জুলুম রাষ্ট্রীয় নীতি,অর্থনীতির হাতিয়ার
এবং সামাজিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনের মাটিতে রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে, কঙ্গোর খনিতে
শিশুরা রক্তঝরায়,
রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভস্মীভূত হচ্ছে—এমন কোনো অঞ্চল কি আছে যেখানে মানুষের আর্তনাদ শোনা যায় না? আল্লাহ তাআলা
সতর্ক করে দিয়েছেন:
وَلاَ
تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
তুমি কখনো মনে করো
না যে, জালিমরা যা করছে আল্লাহ তা দেখছেন না! (সূরা ইবরাহিম ১৪: ৪২)
জুলুম শুধু রক্তপাত
বা সম্পদ কেড়ে নেওয়া নয়—এটি ঈমানের বিপরীত, ন্যায়ের শত্রু
এবং সমাজের ক্যান্সার। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
قال رسولُ اللهِ صلّى الله عليه وسلّم: "ثَلاثُ
دَعَواتٍ يُرْفَعُ لَهُنَّ غَمَامٌ: دَعْوَةُ الظَّالِمِ، وَدَعْوَةُ الصَّائِمِ
حِينَ يُفْطِرُ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَيُفْتَحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ"
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তিন ব্যক্তির দোয়া মেঘের উপর ওঠে: অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির
দোয়া, রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া, এবং অন্যায়
শাসকের দোয়া। আসমানের দরজাগুলো তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। (সুনান তিরমিজি
৩৫৮৯, ইবনে মাযাহ ৩৭২৯)
জুলুমকারী হয়তো আজ
ক্ষমতায়, কিন্তু তার পতন নিশ্চিত। ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহলের
ইতিহাস আমাদের কী শেখায়?
আজ যারা মানবতার রক্তে হোলি খেলছে, আগামীকাল
তাদেরই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। আল্লাহর আইন অমোঘ:
فَكَأَيِّن
مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ
কত জনপদ আমি ধ্বংস
করেছি, কারণ তারা জুলুম করেছিল! (সূরা আল-হাজ্জ
২২:৪৮)
মুসলিম
হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো:
১. জুলুম চিনতে শেখা
(রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব রূপে),
২. মজলুমের পাশে
দাঁড়ানো,
৩. ন্যায়ের কণ্ঠস্বর
হওয়া—নীরবতা যেন জালিমের সমর্থন না হয়!
জুলুমের বিরুদ্ধে
দাঁড়ানোই ঈমানের দাবি। আজ যদি আমরা ফিলিস্তিনির চিৎকারে কান না দিই, আগামীকাল
আমাদেরই চিৎকার উপেক্ষিত হবে! আল্লাহ আমাদের জুলুমের অন্ধকার থেকে বাঁচুন এবং ন্যায়
প্রতিষ্ঠার তাওফিক দিন। আমিন!
জুলুমের ধরন
(বিশ্বব্যাপী জুলুমের উল্লেখযোগ্য
ক্ষেত্রসমূহ)
জুলুম শুধু ব্যক্তিগত
পর্যায়ে নয়, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক স্তরেও সংঘটিত হচ্ছে। কিছু উল্লেখযোগ্য
ক্ষেত্র:
ক.
রাজনৈতিক জুলুম: শাসকগণ জনগণের অধিকার হরণ করছে, নির্যাতন
ও স্বৈরাচারী শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে। যা দেশে এবং বিশ্বব্যাপী সর্বত্র আজ বিরাজমান।
আন্তর্জাতিক
পরিমণ্ডলে দেখা যায় ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, রোহিঙ্গাদের
উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
খ.
অর্থনৈতিক জুলুম: ধনী দেশ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গরিব
দেশগুলোর সম্পদ লুট করছে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে শোষণ করা।
গ.
সামাজিক জুলুম: চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, ধর্ষণ, খুন,
অন্যের জমি, দোকান, প্রতিষ্ঠান দখল, নারী-শিশু পাচার, যৌন নির্যাতন,দুর্বল সম্প্রদায়ের
উপর শক্তিশালীদের অত্যাচার ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধসমূহ
সামাজিক জুলুমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
ঘ.
ধর্মীয় জুলুম: মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা (যেমন:
ফিলিস্তিন,মিয়ানমার)। ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ।
ঙ.
প্রাতিষ্ঠানিক জুলুম:
প্রতিষ্ঠান
প্রধান বা উপরস্থ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক অধিনস্থদের প্রতি নানা ভাবে জুলুম করে থাকে।
যথা সময়ে মজুরি না দেয়া, সাধ্যের বাহিরে কাজ চাপিয়ে দেয়া, ইচ্ছাকৃত মানসিক চাপের
মধ্যে রাখা এবং কাজের স্বীকৃতি না দেয়াও জুলুমের অন্তর্ভূক্ত।
চ.
পরিবেশগত জুলুম:
শিল্পোন্নত দেশগুলো
পরিবেশ দূষণ করে,যার ক্ষতি ভোগ করছে গরিব দেশগুলো। পরিবেশগত জুলুম হলো এমন অবস্থা
যেখানে শিল্পোন্নত দেশগুলো অধিক পরিবেশ দূষণ করে, কিন্তু তার ক্ষতি গরিব দেশগুলো ভোগ করে। উন্নত দেশগুলো কারখানা, যানবাহন ও শিল্পে বিষাক্ত গ্যাস ও বর্জ্য উৎপাদন করে, যা বাতাস, পানি ও মাটি দূষিত
করে। গরিব দেশগুলোতে এই দূষণের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় ও অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। কারণ হলো আর্থিক
বৈষম্য এবং দুর্বল আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন। সমাধান হিসেবে উন্নত দেশগুলোর পরিবেশবান্ধব
প্রযুক্তি ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।
জুলুমের পরিণতিঃ (দুনিয়াবী
পরিণতি)
১.
অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা: জুলুম সমাজে অশান্তি সৃষ্টি
করে, আইনের শাসন ভেঙে দেয়।
রাসূলুল্লাহ সাঃ
বলেন,
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ :إِنَّ
اللَّهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ، حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ
হযরত ইবনে উমর (রা.)
থেকে বর্ণিত, নবীজি ﷺ বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন (তাকে সময় দেন), কিন্তু যখন
তাকে পাকড়াও করেন,
তখন তাকে ছেড়ে দেন না। (সহীহ আল-বুখারী
৪৬৮৬, সহীহ মুসলিম ২৫৮৩)
২.
অর্থনৈতিক ধস: জালিম শাসকদের দুর্নীতি ও শোষণে দেশ দেউলিয়া হয়
(যেমন: ভেনেজুয়েলা,
জিম্বাবুয়ে)।
৩.
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: জুলুমের কারণে আল্লাহর রহমত
উঠে যায়, খরা-বন্যা বাড়ে।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: يَا
مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ، خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ
بِاللّٰهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ:... وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ
وَالْمِيزَانَ إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ وَجَوْرِ
السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি বিষয় আছে, যখন তোমরা
সেগুলোর দ্বারা পরীক্ষিত হবে— (এর মাঝে একটি হলো): যখন কোনো জাতি মাপে ও ওজনে কম দিতে শুরু
করে, তখন আল্লাহ তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, জীবন-জীবিকার
কষ্ট ও শাসকের জুলুমে আক্রান্ত করেন। (ইবনে মাজাহ ৪০১৯)
৪.
যুদ্ধ ও রক্তপাত: ফিলিস্তিন, কঙ্গো, ইয়েমেনে জুলুমের
ফলাফল লক্ষ লক্ষ প্রাণহানি।
৫.
মানবিক বিপর্যয়: শরণার্থী সংকট, শিশুদের অপুষ্টি, নারী নির্যাতন
বৃদ্ধি পায়।
৬.
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন: পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে
অবিচার বাড়লে ভালোবাসা নষ্ট হয়।
৭.
জ্ঞান-বিজ্ঞানের পতন: জালিম শাসকরা সত্য গোপন করলে
জাতি অজ্ঞতায় ডুবে যায়।
৮. স্বাস্থ্যহানি: পরিবেশ দূষণ ও চিকিৎসা বৈষম্যে গরিবরা মারা যায়।
৯.
প্রতিবাদের উত্থান: জুলুম জিহাদ ও বিপ্লব ডেকে আনে।
১০.
আল্লাহর সাহায্য বন্ধ: হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ
عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللّٰهِ ﷺ: "إِنَّ اللّٰهَ لَا
يَنْصُرُ قَوْمًا ظَلَمُوا"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে
উমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ এমন জাতিকে বিজয় দেন
না যারা জুলুম করে। (মুসনাদ আহমাদ ৫৬১৩; সিলসিলাতু আহাদিস আস-সহিহাহ ২১৬৭)
১১.
সামাজিক অনাচার বৃদ্ধি: যখন সমাজে জুলুম বাড়ে, তখন ন্যায়বিচার লোপ পায়, দুর্বলরা নিরাপত্তাহীনতায়
ভোগে এবং অপরাধীরা সাহস পায়। এতে প্রতিশোধ, সহিংসতা, দুর্নীতি ও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ একে অপরের ওপর আস্থা হারায় এবং সামাজিক
বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। কুরআনের ভাষায়, জুলুমের কারণে আল্লাহ্
গোটা জাতিকেই ধ্বংস করে দেন (সূরা কাহফ: ৫৯)। তাই জুলুম রোধ না করলে সমাজ ধ্বংসের পথে
যায়।
জুলুমের পরকালীন পরিণতি
১.
আল্লাহর ক্রোধ: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَكَذَٰلِكَ
أَخْذُ رَبِّكَ إِذَآ أَخَذَ ٱلْقُرَىٰ وَهِيَ ظَالِمَةٌ ۚ إِنَّ أَخْذَهُۥٓ
أَلِيمٌۭ شَدِيدٌۭ
এভাবেই তোমার রব
শাস্তি দেন, যখন কোনো জনপদ জুলুমে লিপ্ত হয়। নিশ্চয়ই তাঁর শাস্তি যন্ত্রণাদায়ক
ও কঠিন। (সূরা হুদ ১১:১০২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا
تَحْسَبَنَّ ٱللّٰهَ غَٰفِلًا عَمَّا يَعْمَلُ ٱلظَّٰلِمُونَ ۚ إِنَّمَا
يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍۢ تَشْخَصُ فِيهِ ٱلْأَبْصَٰرُ
তুমি কখনো মনে করো
না যে, যালিমরা যা করছে, সে বিষয়ে আল্লাহ
গাফিল। তিনি তাদেরকে (শাস্তি থেকে) মাত্র একটি এমন দিনের জন্য মুলতবি করে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুগুলো
স্থির হয়ে যাবে (ভয়ে)। (সূরা ইব্রাহীম ১৪:৪২)
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ
النَّبِيِّ ﷺ قَالَ :إِنَّ اللَّهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ، حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ
لَمْ يُفْلِتْهُ
হযরত ইবনে উমর (রা.)
থেকে বর্ণিত, নবীজি ﷺ বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ জালিমকে অবকাশ
দেন (তাকে সময় দেন),
কিন্তু যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে
ছেড়ে দেন না। (সহিহ বুখারি, কিতাব: কিতাবুল মাযালিম, ৪৬৮৬; সহিহ মুসলিম,
কিতাব: কিতাবুল বির্র ওয়াস সিলাহ, ২৫৮৩; মুসনাদ আহমাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬০, ৫৬১৩;
সুনান ইবনে মাজাহ ৪০১৫)
২.
কবরের আজাব: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
الظُّلْمُ
ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
জুলুম কিয়ামতের দিন ভয়াবহ অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৭) ইমাম নববীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী সে অন্ধকার কবর থেকেই শুরু।
৩.
হাশরের ময়দানে লাঞ্ছনা: মজলুম জালিমের গুনাহ নিয়ে দাঁড়াবে।
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ ٱللّٰهِ
صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ
كَانَتْ عِندَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ، مِنْ عِرْضِهِ، أَوْ مِنْ شَيْءٍ،
فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ ٱلْيَوْمَ، قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا
دِرْهَمٌ، إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ،
وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ، أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ، فَحُمِلَ
عَلَيْهِ."
আবু হুরাইরা (রাঃ)
হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন: যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি কোনো জুলুম করেছে
— তার সম্মান হোক বা অন্য কিছু — সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেয়। কারণ কিয়ামতের দিন দীনার
(স্বর্ণ) বা দিরহাম (মুদ্রা) কিছুই থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তাহলে সেই
মজলুম ব্যক্তিকে তার গোনাহের পরিমাণ অনুযায়ী তা নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেক
আমল না থাকে, তাহলে মজলুমের গুনাহসমূহ নিয়ে জালিমের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৯)
৪.
আমলনামায় কালি: জুলুমকারীর নেকি মজলুমকে দিয়ে দেওয়া
হবে। (আগের পয়েন্টে আলোচিত)
৫.
জাহান্নামের গভীর স্তর: সূরা আন-নাহল এ পাপাচারী
জালিমদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَادْخُلُوا
أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ
অর্থ: সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলোর ভেতরে প্রবেশ করো, সেখানে চিরকাল
থাকবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট!
(সূরা আন-নাহল ১৬:২৯)
وَقَارُونَ
وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُم مُّوسَىٰ بِٱلْبَيِّنَـٰتِ فَٱسْتَكْبَرُوا۟
فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا كَانُوا۟ سَـٰبِقِينَ
অর্থ: আর (ধ্বংস
করা হয়েছিল) কারুন, ফেরাউন এবং হামানকে।
তাদের নিকট মূসা স্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলেন। কিন্তু তারা পৃথিবীতে অহংকার করেছিল,
তারা বিজয়ী হতে পারেনি। (সূরা আল-আনকাবূত ২৯:৩৯)
৬.
আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চনা: জালিমদেরকে
ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ
ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَظَلَمُوا۟ لَمْ يَكُنِ ٱللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا
لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا ﴿١٦٨﴾ إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ
خَـٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًۭا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًۭا ﴿١٦٩﴾
নিশ্চয়ই যারা কুফরি করেছে এবং জুলুম করেছে, আল্লাহ কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথেও পরিচালিত
করবেন না। জাহান্নামের পথ ছাড়া, যেখানে তারা চিরকাল
থাকবে। এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। (সূরা আন্-নিসা ৪:১৬৮-১৬৯)
৭.
চিরস্থায়ী অভিশাপ: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
إِنَّ ٱلْمُجْرِمِينَ
فِى عَذَابِ جَهَنَّمَ خَـٰلِدُونَ
জালিমরা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে। (সূরা যুখরুফ
৪৩:৭৪)
৮.
আখিরাতে অনুতাপ বৃথা: জালিমের পরিণতি উল্লেখ করে
আল্লাহ তাআলা বলেন,
حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلْمَوْتُ قَالَ
رَبِّ ٱرْجِعُونِ
- لَعَلِّىٓ أَعْمَلُ صَـٰلِحًۭا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ
كَلَّآ ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَا ۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرْزَخٌ
إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু আসবে, তখন সে বলবে: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আবার (দুনিয়ায়) ফিরিয়ে
দিন। যেন আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি (পূর্বে) করে যাইনি। — কখনোই না! এটি একটি
কথা মাত্র, যা সে বলছে। আর তাদের সামনে রয়েছে বারযাখ (কবরের জগৎ),
যেদিন পর্যন্ত তারা পুনরুত্থিত হবে। (সূরা আল মুমিনুন
২৩ : ১০০)
৯.
চূড়ান্ত সতর্কবার্তা: জুলুমকারী যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ
তাকে অবকাশ দেন। কিন্তু যখন পাকড়াও করেন, তখন রক্ষা নেই!
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ :إِنَّ اللَّهَ
لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ، حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি ﷺ বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দেন (তাকে সময় দেন), কিন্তু যখন
তাকে পাকড়াও করেন,
তখন তাকে ছেড়ে দেন না। (সহীহ আল-বুখারী
৪৬৮৬, সহীহ মুসলিম ২৫৮৩)
উপসংহার: জুলুম একটি
মহাপাপ, যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব পর্যায়ে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। জুলুমের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নষ্ট হয়, দুর্বলরা নিপীড়নের শিকার হয় এবং সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও
জালিম কিছু সময়ের জন্য পার পেতে পারে, আল্লাহ্ তাকে অবকাশ দেন,
কিন্তু যখন পাকড়াও করেন, তখন রক্ষা নেই। কুরআন
ও হাদীসে জুলুমকারীদের জন্য কঠিন শাস্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে এবং মজলুমের দোআ কবুলের
প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক
ব্যবস্থায় সকলকে জুলুম থেকে দূরে থাকা জরুরি—এটাই শান্তি, সুবিচার ও সফলতার পথ।
ফাইল সাইজ: ~5MB
No comments