Showing posts with label Motivation Class. Show all posts
Showing posts with label Motivation Class. Show all posts

পরকীয়াঃ কারন ও প্রতিকার

পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং নৈতিক অবক্ষয়রোধে ইসলামের নির্দেশনা
পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

বর্তমান সময়ে এক মহামারির নাম পরকীয়া। পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া। বিকৃত মানসিকতার কাজ। শরিয়তের পরিভাষায় পরকীয়া বলা হয় বিবাহ-পরবর্তী কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রেম-ভালোবাসাকে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে। পরকীয়া মানবতাবিরোধী একটি অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরকীয়া নামের অসামাজিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অশুভ থাবায় বিপর্যয়ের মুখে সংসার ও পরিবার প্রথা।

উদ্দেশ্যঃ আজকের ক্লাশের উদ্দেশ্য হল পরকীয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা এবং পরকীয়া নির্মূলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা

পরকীয়ার পরিচয়ঃ পরকীয়া বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। পরকীয়া হল বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া। সমাজে এটি নেতিবাচক হিসাবে গণ্য।

মূলত পরকীয়া হল- বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে পর পুরুষ বা পর নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।

পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণ

বর্তমানে সমাজে পরকীয়ার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল তাঁর দ্য স্টেট অব অ্যাফেয়ার গ্রন্থে পরকীয়াকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (কালের কণ্ঠ)

বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল।-

১. ইসলামী শিক্ষার অভাব

ইসলাম মানব জাতির চরিত্রের হিফাযতের জন্য নারী-পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে  এবং বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ককে হারাম ঘোষণা করেছে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ

প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, (সূরা আনআম ৬:১৫১)

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম ও এর ভয়াবহ শাস্তি না জানার কারণে মানুষ পরকীয়ার মত নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে।

২. সামাজিক কারণ

ইসলাম সামর্থ্যবান পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও (নিসা ৪/৩) অনেক পুরুষ সামাজিক কারণে একাধিক বিয়ে করতে পারেন না। কারণ সমাজ বহু বিবাহকে ভাল চোখে দেখে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন চাহিদার অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। অপরদিকে দুর্বল ও অসুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রেও নারী সামাজিক ভয়ে তালাক না নিয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

৩. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা

পুরুষ-নারীর অবাধ মেলামেশার সুযোগে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর আলাপচারিতা ও পরবর্তীতে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মহিলারা আজকাল চাকুরী, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে। আর পর পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও ঠাট্টা-মশকরার মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি ঝুকে পড়ছে। অথচ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ؟ قَالَ: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ»

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোনো নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দেবর তো মরণসম বা মরণের ন্যায়। (বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৭৩৪৭, দারিমী ২৬৮৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৯০৮)

স্বামীর ভাইয়ের ব্যাপারে যদি ইসলাম এত কঠোরতা আরোপ করে তাহলে অপরিচিত বা সাময়িক পরিচিতদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি হতে পারে? নিঃসন্দেহে তা আরো কঠোর হবে।

৪. পর্দাহীনতা

পরকীয়ার অন্যতম কারণ হল পর্দাহীনতা। এর ফলে নারী-পুরুষ একে অপরের দেখা-সাক্ষাৎ করার ও কথা বলার সুযোগ পায়। এতে তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর শয়তান এটাকে আরো সুশোভিত করে উপস্থান করে এবং পরকীয়ার দিকে নিয়ে যায়। এজন্য ইসলাম পর্দাহীনতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন

,الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

মহিলারা হচ্ছে আবৃত বস্ত্ত। সে বাইরে বের হলে শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে। (তিরমিযী হা/১১৭৩)

সুতরাং যে পোষাকে নারীর চুল, গ্রীবা, বক্ষ, পেট, পিঠ ও আবৃত অঙ্গ প্রকাশিত থাকে তা পরিধান করা হারাম।

৫. ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া

পরকীয়ার আকেরটি কারণ হল, ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের অমতে বিয়ে দেওয়া। অভিভাবকরা নিজেদের কথা ভাবেন এবং অনেক তাড়াহুড়া করে তাদের সন্তানদের বিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ের পসন্দ বা মতামতকে অনেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন না। ফলে এসব ছেলে-মেয়েদের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। ছেলে-মেয়ে প্রথমে মেনে নিলেও পরে তাদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। পরিবারের ভয়ে কিছু না বললেও এক সময়য়ে তারা উভয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।

৬. দৈহিক অক্ষমতা

নারী-পুরুষ জৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু এই চাহিদা পূরণ না হলে নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়।

৭. প্রযুক্তির সহজলভ্যতা

প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিময় করেছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এর অপকারিতা জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। হাতের নাগালে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত অনেকের সাথে পরিচয় হচ্ছে এ পরিচয় থেকে অনেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

১। পরিবারে অশান্তি

পরকীয়ার প্রধান ক্ষতিকর প্রভাব হল পরকীয়ার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুখের পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়।

২। ব্যভিচারের পথ সুগম হয়

পরকীয়ার আরো একটি বড় কুফল হল এর মাধ্যমে সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। সমাজে ব্যভিচারের অসংখ্য রাস্তা খুলে যায়।

৩। ছেলেমেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যত

পরকীয়ার মাধ্যমে যখন একটি পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় তখন সে পরিবারের ছোটছোট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নিজেদের চোখে সামনে যখন পিতামাতার নৈতিক অবক্ষয় দেখতে পায় তখন তাদের মনের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় পরকীয়ার সঙ্গীর সহায়তায় নিজ সন্তানকেও অনেক মা বাবা হত্যা করতে দ্বিধা করেনা।

পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে যেসব নীতিমালা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবধর্মী। ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে-

১. খোদাভীরুতা

ইসলাম প্রথম স্বামী-স্ত্রীকে খোদাভীরুতা, দুনিয়াবিমুখতা ও কৃতকর্মের জবাবদিহিতার ভয় অর্জনের প্রতি জোর তাকিদ করেছে। কারণ তারা এসব গুণে গুণান্বিত হলে দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ বিধানকে লঙ্ঘন করবে না। পর নারী ও পর পুরুষে আসক্ত হবে না। আল্লাহ পাক বলেন, হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার জীবনসঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা-১)

২. নৈতিক শিক্ষা

ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে নৈতিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তাদের আত্মিক কলুষতামুক্ত হয়ে কষ্ট সহিষ্ণুতা, ধৈর্যশীলতা, অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতার মতো মহৎ গুণাবলি অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ মানুষের চাহিদা অসীম। সসীম জগতে তা মেটানো সম্ভব নয়। তাই দাম্পত্য জীবনে তারা যদি পরস্পর ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হয়, সুখ-দুঃখ খুশি মনে মেনে নেয়, আল্লাহর দেওয়া আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থ্যের ওপর তুষ্ট থাকে, তাহলে তারা কখনো পরকীয়ায় জড়াবে না। দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ উপহার হিসাবে মনে করবে।

৩. পরস্পরে ভালোবাসা

পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং পরস্পরের আকর্ষণ হ্রাস না পায় এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বামী-স্ত্রীকে ইসলাম আদেশ দিয়েছে। যেমন কখনো একই পাত্র থেকে আহার গ্রহণ করা। একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। স্বামীকে চিন্তিত দেখলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ও সাহস জোগানো। আম্মাজান খাদিজা (রা.) রাসূল (সা.)-এর দুঃখের সময় তার পাশে ছিলেন। তাকে সাহস জুগিয়েছেন। কর্মস্থল থেকে ফিরে হাস্যোজ্জ্বল ও সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা। স্ত্রীও মুচকি হাসি দিয়ে বরণ করা, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। অফিসে যাওয়ার সময় হলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া, মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি হাতে তুলে দেওয়া। স্বামী স্ত্রীর কপালে কিংবা হাতে চুমু দেওয়া। বাসা-বাড়িকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা। নিজে সেজেগুজে থাকা। সাংসারিক কাজকর্মে স্ত্রীকে সাহায্য করা। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দেওয়া। কিছু সময় একান্তে কাটানো। রোমান্টিক কথাবার্তা বলে ভালোবাসা প্রকাশ করা। মোটকথা পারস্পরিক সম্পর্ককে দৃঢ় ও মজবুত করা। নিজেদের মধ্যে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া।

৪. দৃষ্টি সংযত রাখা

পর নারী কিংবা পর পুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া, তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, অবাধে মেলামেশা ইত্যাদি থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ পাক বলেন : হে নবি! মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ইহাই তাদের জন্য উত্তম। ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর ৩০-৩১)

৫. অবাধে মেলামেশা না করা

কর্মস্থলে নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোযোগী থাকবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। একাকিত্বে খোশ গল্পে মেতে উঠবে না। প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। আকর্ষণীয়, কোমল ও নম্র কণ্ঠে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুবাসনা করে। তোমরা সঙ্গত কথা বল। (সূরা আহযাব ৩২)

৬. অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত না হওয়া

মহানবি (সা.) বলেন, হে লোক সকল তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে। দুনিয়ার তিনটি পরিণাম হলো- শ্রীহীনতা, দরিদ্র ও আয়ুষ্কাল হ্রাস। পরকালের তিনটি পরিণাম হলো-আল্লাহর ক্রোধ, মন্দ হিসাব, দোজখের শাস্তি (শুয়াবুল ইমান, বায়হাকী) যে অপরকে পরকীয়ার জন্য ফুসলায় তার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে অন্যের স্ত্রীকে অথবা ক্রীতদাসকে ফুসলিয়ে তার বিরুদ্ধে উসেক দেবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ)

পরকীয়ার শাস্তি

ইসলাম ধর্মে পরকীয়াকে অত্যান্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)

ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। (সুরা নুর, ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেন না এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(১) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(৩) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(১) আল্লাহর অসন্তোষ,

(২) কঠিন হিসাব ও

(৩) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো। (বুখারিঃ ৭৬৫৮)

উপসংহারঃ আমাদের সমাজ থেকে পরকীয়া দূর করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো ফলো করতে হবে। বিশেষত দেশের প্রতিটি নাগরিককে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তাদের মধ্যে খোদাভীরুতা, দুনিয়া বিমুখিত ও জবাবদিহিতার ভয় সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি পরকীয়া সম্পর্ককারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। 

আদর্শ পরিবার ও পারিবারিক জীবন | পিডিএফ ডাউনলোড | মোটিভেশন ক্লাশ

ভূমিকাঃ সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় পারিবারিক জীবনের প্রাথমিক শর্ত হলো বিয়ে। বিয়ে হচ্ছে একটি পবিত্র বন্ধন। এটা কারও অজানা নেই, একজন পুরুষ এবং একজন নারীর একত্রে জীবনযাপনে ধর্ম এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত যে বন্ধন স্থাপিত হয়, তারই নাম বিয়ে। বিয়ে-বন্ধন কেবল গতানুগতিক বা কোনো সামাজিক প্রথা নয়, এটা মানবজীবনের ইহকাল ও পরকালের মানবীয় পবিত্রতা রক্ষার জন্য আল্লাহ পাকের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। সুতরাং এটা যে কেবল পার্থিব জীবনের গুরুত্বই বহন করে এমন নয়, বরং পারলৌকিক জীবনের জন্যও অনেক গুরুত্ব বহন করে।

উদ্দেশ্যঃ আজকের ক্লাসের উদ্দেশ্য হল সকলকে বৈবাহিক জীবন এবং পারিবারিক মূল্যবোধ বিষয়ে প্রেষণা প্রধান করা।

আলোচনার সুবিধার্থে আজকের ক্লাশকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিঃ

ক) বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি / সঠিক সঙ্গী নির্বাচন

খ) বৈবাহিক জীবন / দাম্পত্য জীবন

গ) পারিবারিক জীবন

ক। বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি / সঠিক সঙ্গী নির্বাচন

বিবাহ পূর্ব প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম বিষয় হল সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা। কেননা এই নির্বাচন একবার ভুল হলে আজীবন এর মাশুল দিতে হবে। বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি ও সঠিক সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলঃ

১। হাদিসের নীতিমালাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে কেমন কনে বাছাই করতে হবে এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস থেকে জানতে পারি,

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)

‘কুফু’ সমতা রক্ষা করাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বর্তমানে অনেকেই এই বিষয়ে অবহেলা করার কারনে পারিবারিক জীবনে নেমে আসে নানা প্রকার অশান্তি। বিবাহে কুফুর বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৬৮)

বয়সঃ দাম্পত্য জীবনে সুখের একটি অন্যতম শর্ত হল বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের প্রার্থক্য। অনেকে এই বিষয়ে নানা মতামত ব্যক্ত করলেও বিয়ের ক্ষেত্রে সম-বয়স এবং বয়সের বড় ধরণের দূরত্ব দুইটিই ক্ষতিকর। সমবয়সী হলে উভয়ের মাঝে সম্মান এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক খুব কমই দেখা যায়। আবার বয়সে দূরত্ব বেশি হলে উভয়ের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো হয়না। একে অন্যের মানসিক অবস্থা, চাহিদা অনুধাবন করতে পারেনা। তখনই সংসারে শুরু হয় নানা অশান্তি।

পাত্রী নির্বাচনে 4B  

B blood (স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা)

B Brain (মেধাবী সঙ্গী বাছাই করা)

B Bank (আর্থিক অবস্থার দিকে খেয়াল করা।)

B Beauty (সঙ্গীর সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করা। )

মহরের নির্ধারণে সতর্কতাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে মহর একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু কিছু যায়গায় মহরের টাকা এত বেশি নির্ধারণ করা হয় যা পরিশোধ করা পাত্রের পক্ষে অনেক কঠিন হয়ে যায়। যা ইসলাম সম্মত নয়। মহর আদায়ের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِہِنَّ نِحۡلَۃً ؕ فَاِنۡ طِبۡنَ لَکُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡہُ نَفۡسًا فَکُلُوۡہُ ہَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا

নারীদেরকে খুশী মনে তাদের মাহর আদায় কর। তারা নিজেরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা সানন্দে, স্বচ্ছন্দভাবে ভোগ করতে পার। (আন নিসা - ৪:৪)

বিয়েতে অপচয় না করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে বিয়ে যত সহজ এবং স্বল্প ব্যয়ে হয়; সেই বিয়ে ততই শান্তি ও বরকতময় হয়।(মিশকাত)

খ) বৈবাহিক জীবন / দাম্পত্য জীবন

দাম্পত্য জীবনের সুখ অনেক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। কয়েকটি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

১। পারস্পরিক বোঝাপড়াঃ সুখি দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বোঝাপড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অন্যজনকে ভালোভাবে না বুঝলে। অন্যজনের মন খারাপের কারণ না জানলে সে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি লেগে থাকা স্বাভাবিক।

২। পারস্পরিক শ্রদ্ধা/ ভালোবাসা/ সম্মানঃ স্বামী- স্ত্রী একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান থাকা অপরিহায্য। কেননা  শ্রদ্ধা সম্মান না থাকলে সেখানে আনুগত্যের প্রশ্নই আসেনা। আর যেখানে আনুগত্য নাই সেখানে অশান্তি লেগে থাকাই স্বাভাবিক।

৩। ধৈর্য্যধারন, ক্ষমাঃ দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য্য এবং ক্ষমার কোন বিকল্প নাই। একজনের আচরণে আরেকজন ধৈর্য্যধারণ করতে না পারলে তখনই সংঘাত হা অশান্তি শুরু। ছাড় দেয়ার মন মানসিকতা ছাড়া সুখি পারিবারিক জীবন কল্পনা করা অসম্ভব।

৪। উত্তম আচরণঃ স্বাভাবিক ভাবেই ভালো আচরন, উত্তম আচরণ মানুষের স্বাভাবিক গুণ। যেকোন মানুষ অন্যজনের নিকট উত্তম আচরণ আশা করে। আর যার সাথে সারা জীবন এক সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সাথে উত্তম আচরণ না করে একসাথে থাকা কিভাবে সম্ভব? আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَعَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। (আন নিসা ৪:১৯)

প্রিয়নবী (সাঃ) তার স্ত্রীদের সাথে হাসি তামাশা করতেন, রাতের অন্ধকারে দৌঁড় প্রতিযোগীতা করতেন। তাদের ঘরের কাজে সাহায্য করতেন।

৫। স্ত্রীর ভরণপোষণঃ সামর্থ অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করাও এক ধরণের সদকাহ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِي أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ ‏"‏ ‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আযাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদেরকে দান করলে এবং আর একটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে (সাওয়াবের দিক থেকে) ওই দীনারটিই উত্তম যা তুমি পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করলে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২০১)

৬। উপহার বিনিময় করাঃ দাম্পত্য জীবনের ছোট ছোট আনন্দের মূহুর্ত গুলো দাম্পত্য জীবনের সুখ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়ার একটা অন্যতম পদ্ধতি হল একে অন্যের মাঝে উপহার বিনিময়। উপহার যত ছোটই হোক এর দ্বারা মানুষ আনন্দিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَهَادُوا تَحَابُّوا»

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা পরস্পর উপহারাদি বিনিময় করো, তোমাদের পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি হবে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৫৯৭)

গ) পারিবারিক জীবন

পারিবারিক জীবন বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে পরিবারের সকলকে নিয়ে আমাদের  বসবাসের বিষয়টি। পারিবারিক জীবনে সুখ লাভ করতে হলেও আমাদেরকে কিছু বিষয় অনুস্মরণ করতে হবে।

১। পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ আমাদের সমাজে অনেকেই পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদেরকে মূল্যায়ন করে না। অথচ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় স্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের ছোটরাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে। আল্লাহ তাআলা সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে বলেন,

وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ

অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনি পরামর্শ করুন।

২। জীবন সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনঃ একটি সুন্দর পারিবারিক জীবন পরিচালনার জন্য পরিবারের সাথে সংযুক্ত অন্য পরিবারের সদস্যদের সাথেও ভালো আচরণ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি সহ স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের সাথেও ভালো আচরণের দ্বারা আপনার পিতামাতা আত্মীয় স্বজনের প্রতিও আপনার স্ত্রীর মনে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে।

৩। পরিবারে ধর্মীয় পরিবেশ নিশ্চিত করাঃ পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপদ, সুন্দর, ধর্মীয় পরিবেশ নিশ্চিত করা স্বামীর দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট কাঙ্ক্ষিত আচরণ আশা করা অসম্ভব।

৪। সাধ্যমত ব্যয় করাঃ পরিবারের সদস্যদের জন্য সাধ্যমত ব্যয় করা উচিত। এক্ষেত্রে যেমনি মুক্ত হস্ত হওয়া যাবেনা তেমনিভাবে কৃপণতা করাও যাবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَجۡعَلۡ یَدَکَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِکَ وَلَا تَبۡسُطۡہَا کُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুণ তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে। (বনী-ইসরাঈল ১৭:২৯)

৫। ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করাঃ সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।  সন্তানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা পিতামাতার দায়িত্ব।  কেননা, ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। আর ধর্ম, নৈতিকতা শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে এই সন্তান সন্ততি একদিন পিতামাতার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৬। সকলের অধিকারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাঃ আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেকেই স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে পিতামাতার মনে কষ্ট দেয়। অনেকেই পিতামাতা এবং স্ত্রীকে এক সাথে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হলে পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। অনেকে আবার একাধিক সন্তানের মাঝে অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করতে পারেন না। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সন্তান একাধিক থাকলে সকলের অধিকারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

৭। সন্তানের সম্মুখে অন্তরঙ্গ না হওয়াঃ অনেক স্বামী স্ত্রী আছেন তারা সন্তানকে ছোট মনে করে তাদের সামনে অন্তরঙ্গ আচরণ করেন যা কচি বাচ্চার মনের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হাদিস শরিফে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».

 ১০ বছর হলেই ছেলেদের বিছানা আলাদা করে দিতে বলেছেন। বাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং আলাদা কক্ষ থাকলে ১০ বছরের আগেও আলাদা করে দেয়ায় বাঁধা নাই। তবে কন্যা সন্তানরা যেহেতু ছেলে সন্তানের তুলনায় আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তাই তাদেরকে আরো আগেই আলাদা করে দেয়া উচিত।

সমাপনীঃ জাতিসংঘ প্রতি বছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালন করে। তারা পরিবার বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং শান্তিময় জীবন লাভের স্বপ্ন নিয়ে এ দিবসের নানা আয়োজন করে। অথচ আমাদের প্রাণের ধর্ম ইসলাম শান্তিময় জীবন ও পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য শেখানোর জন্য দিয়েছে পরিবার ব্যবস্থা কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলেই কেবল আদর্শ পরিবার গঠন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর নির্দেশিত পথে আমাদের পরিবারগুলো গঠন করার তওফিক দিন।

পিডিএফ ডাউনলোড

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব, এবং এর প্রতিকার

জীবন রক্ষার জন্য আমাদেরকে পানহার করতে হয়। পানাহার এর উদ্দেশ্য হলো দেহের ক্ষয় পূরণ, তাপ ও শক্তি সঞ্চয়পূর্বক সুস্থতা বজায় রাখা। এমন অনেক বস্তু আছে যা পানাহার করলে দেহের সুস্থতা বজায় থাকে না। ফলে দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। আহার হিসেবে এমন বস্তুকে গ্রহণ করতে হবে যেটা পবিত্র এবং আমাদের জন্য উপকারী।  পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহার ৮১ নং আয়াতে বলেন,

کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَلَا تَطۡغَوۡا فِیۡہِ فَیَحِلَّ عَلَیۡکُمۡ غَضَبِیۡ ۚ وَمَنۡ یَّحۡلِلۡ عَلَیۡہِ غَضَبِیۡ فَقَدۡ ہَوٰی

বলেছিঃ আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়।

(সূরা ত্বহা ২০:৮১)

যে সব বস্তু মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় সেগুলোর মধ্যে মাদক অন্যতম। তাই মাদক সম্পর্কে সকলের সঠিক ধারণা লাভ করা অপরিহার্য।

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব

মদ বা মাদকদ্রব্য বলা হয় এমন এক অ্যালকোহলীয় পদার্থকে জাপান করা হলে নেশাগ্রস্ত হয় এবং ব্যক্তির বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। দ্বীনদারী নিঃশেষ হয় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক। মাদকতার আভিধানিক অর্থ

মাদকতার আরবি প্রতিশব্দ হলো الخمر

আরো কয়েকটি আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপঃ

ক। الطغطيه বা ঢেকে ফেলা।

খ। الاخفاء বা গোপন করা।

গ। Drug

ঘ। Alcohol

খ। মাদকতার পারিভাষিক অর্থ

মাদকতার পারিবাসিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল্লামা মুজিব (রঃ) বলেন,

الخمر هو ما ستر على العقل

মাদকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে  المعجم الوسيط এর গ্রন্থকার বলেন,

اَلْخَمر هو ما أسكر من عصير العنب لأنها خامرت العقل والتخمير التغطية

মাদক হল এমন এক ধরনের কেমিক্যাল। যা ব্যক্তির মনের মধ্যে সাময়িকভাবে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। পরবর্তীতে সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং আসক্তিতে পরিণত হয়।

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে,

Alcohol is a type of organic compound that carries at least one hydroxyl functional group bound to a saturated carbon atom. The term alcohol originally referred to the primary alcohol ethanol, which is used as a drug and is the main alcohol present in alcoholic drinks.

- according to Wikipedia

গ। মাদকতার অপকারিতা

মাদকের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মাদকের কয়েকটি উপকারিতা আলোচনা করা হলো।

১। শয়তানের কাজ

মহান আল্লাহ তা'আলা মাদককে শয়তানের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে সূরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সূরা আল মায়েদা ৫:৯০)

২। শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী  

মাদক মানুষের মাঝে শত্রুতাও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাবে মানুষ একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৯১ নং আয়াতে বলেন,

اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَالۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা আল মায়েদা ৫:৯১)

৩। ইবাদতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে

মাদকের একটি অত্যন্ত খারাপ দিক হলো ইবাদতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা সূরা মায়েদায় বলেন,

وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ

এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। (সূরা আল মায়েদা ৫:৯১)

৪। আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত  

মাদকাসক্ত ব্যক্তি আখিরাতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ বিষয়ে প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا حُرِمَهَا فِي الآخِرَةِ.

যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা-থেকে তওবা করে নি, সে আখিরাতে তা-থেকে বঞ্চিত থাকবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৭৫, মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩, আহমাদ ৪৬৯০ আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)

৫। মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না

মাদক সেবী জান্নাতে যাবে না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‏"‏ ‏.‏

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)

৬। কিয়ামতের দিন আল্লাহ মাদক সেবীর দিকে তাকাবেন না

হাদীস শরীফে এসেছে, তিন ব্যক্তির দিকে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না, তাদের এক শ্রেণী হলো মাদক সেবী, নাসায়ী শরীফের হাদিসে এসেছে,

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ، وَالدَّيُّوثُ، وَثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمُدْمِنُ عَلَى الْخَمْرِ، وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَ

সালিম এর পিতা আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি মহান মহিয়ান আল্লাহ্‌ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টি দিবেন না (রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না) পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), পুরুষের বেশধারী নারী এবং দায়ূছ (নিজ স্ত্রী কন্যার পাপাচারে যে ঘৃণাবোধ করেনা।) আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), মাদকাসক্ত ব্যক্তি (যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে) এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি (দান করার পর যে দানের উল্লেখ করে গঞ্জনা দেয়।) (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৫৬২)

৭। দৈহিক কুফল

মাদকদ্রব্য সেবনে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান মাদক থেকে বেঁচে থাকার জন্য নানা ভাবে মানুষকে মোটিভেট করে যাচ্ছে।

৮। মানসিক অপকারিতা

নিয়মিত মাদক সেবনের দ্বারা ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। মানুষের স্বাভাবিক আচরণে বাধা সৃষ্টি করে মাদকতা।

৯। মাদক দ্রব্য মাত্রই হারাম, অল্প বা বেশি

প্রিয় নবী (সাঃ) সকল প্রকার মাদককে হারাম ঘোষণা করেন। মুসলিম শরীফে এসেছে,

 عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সম্ভবত তিনি নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে জিনিসে নেশা উদ্রেক করে তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১১৬ (ই. ফা. ৫০৫১, ই. সে. ৫০৬১)

১০। সকল পাপের চাবিকাঠি

মাদকদ্রব্য কে সকল পাপের চাবিকাঠি উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ لاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ ‏"‏ ‏.‏

আবূ দারদা (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন : শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৭১)

মাদকতা প্রতিরোধের উপায়

মাদকদ্রব্য শুধুমাত্র সেবনকারীর ক্ষতি সাধন করে না বরং তার কাছের মানুষও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই মাদকতা সমাজ থেকে নির্মূলের কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো,

ক। ইচ্ছাশক্তি

মাদকতা বর্জনের সবচেয়ে বড় উপায় হল ইচ্ছা শক্তি। প্রবল ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ অনেক অসাধ্য সাধন করেছে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,

Where there is a will there is a way.

খ। ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা

মাদকতা নির্মূলের একটি অন্যতম উপায় হল ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা। কোরআন এবং হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡتُمۡ سُکٰرٰی

হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা। (সূরা নিসা ৪:৪৩)

গ। সামাজিক প্রতিরোধ

সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। অন্য কাজে সামাজিকভাবে বয়কট করার বেশি আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেন,

وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَیَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَیَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।

(সূরা আলে ইমরান ৩:১০৪)

ঘ। মাদক নির্মূলে মিডিয়ার ভূমিকা

মাদক নির্মূলে মিডিয়া অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। মাদকবিরোধী প্রচারণা, মাদকতার কুফল এবং বিশেষ করে মাদকদ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করার মাধ্যমে সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ঙ। ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা

সমাজ থেকে মাদকতা দূর করণে আলেম সমাজের ভূমিকা অনেক বেশি। মসজিদ-মাদ্রাসায়, ওয়াজ-মাহফিলে, বিভিন্ন সভা -সেমিনারে মাদকতার বিরুদ্ধে ইসলামের হুঁশিয়ারি উল্লেখ করে মানুষকে মাদক থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে পারে।

চ। চিকিৎসা

মাদক আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা বা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে না আনলে যখন কেউ মারাত্মকভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তখন তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় মাদক থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

ছ। আইনের প্রয়োগ / শাস্তি

মাদক গ্রহণ, মাদক বেচাকেনা এবং মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে অন্যরা সচেতন হয়ে যাবে।

সমাপনী

মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে সকলকে একসাথে এগিয়ে এসে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। একক প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে মাদকমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।