ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
![]() |
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা |
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ
জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট
দিকনির্দেশনা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ইসলামে অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ।
এই সম্পর্ক কেবল শারীরিক বা বৈষয়িক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয়; বরং এটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও আত্মিক বন্ধনের ভিত্তিতে
গড়ে ওঠা একটি পবিত্র চুক্তি। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্মান, দয়া ও ভারসাম্যপূর্ণ দায়িত্ববোধের উপর ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে বসবাস করো..." (সূরা আন-নিসা:
১৯)। অন্যদিকে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম।" (তিরমিজি)। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখে, যেখানে উভয়ের অধিকার ও কর্তব্য সুন্দরভাবে সংরক্ষিত হয়। পারস্পরিক
সহযোগিতা,
ধৈর্য্য ও বিশ্বাসের মাধ্যমে এই বন্ধন সুখী ও স্থিতিশীল হয়, যা সমাজের মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
এই প্রবন্ধে ইসলামের
আলোকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার গুরুত্ব, এর ধর্মীয় নির্দেশনা এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা
করা হবে। বিবাহ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ
أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَّرَحْمَةً
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর
একটি হল,
তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন যাতে
তোমরা তাদের নিকট শান্তি লাভ করতে পার। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও করুণার সঞ্চার
করে দিয়েছেন। (সূরা রুম ৩০:২১)
সূরা নিসার শুরুতেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّكُمُ الَّذِیۡ
خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ بَثَّ
مِنۡهُمَا رِجَالًا كَثِیۡرًا وَّ نِسَآءً ۚ
হে মানব সকল। তোমরা
তোমাদের সেই প্রভুকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং
তার থেকে তার জোড়া পয়দা করেছেন। অতঃপর উভয়ের সমন্বয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য
নারী ও পুরুষ। (সূরা নিসা ৪:১)
বিবাহ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন।
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ الْحَيَاءُ
وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ
চারটি জিনিস হল নবীদের
সুন্নত;
১। লজ্জাশীলতা, ২। সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৩। মেসওয়াক করা এবং
৪। বিবাহ করা। (তিরমিযি-১১০১)
বিবাহের প্রয়োজনীয়তা
ক। যৌবন ও চক্ষু হেফাযতের মাধ্যম। শয়তান মানুষকে নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি কুদৃষ্টি দানের জন্য
প্রতিনিয়ত প্ররোচিত করে থাকে। বিবাহই পারে এই কুদৃষ্টি থেকে মানুষকে বাঁচাতে। এ প্রসঙ্গে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ
مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ
لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ
فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
(হে যুব সমাজ।) তোমাদের
মধ্যে যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখে, সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ কার্যকরভাবে চক্ষু অবদমিত রাখে এবং লজ্জাস্থান
হেফাযত করে। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না, সে যেন সিয়াম পালন করে, কেননা এই সিয়াম তার
যৌন চাহিদাকে দমন করে। (বুখারী-১৯৩৯)
খ। বিবাহের মাধ্যমে ঈমানের পূর্ণতা লাভের
অর্ধেকই অর্জিত হয় । অন্তরের যে সব অস্থিরতার কারণে একজন লোক ইমান-আকিদা বিরোধী বিভিন্ন
কাজে জড়িয়ে পড়ে, তার অর্ধেকই যৌবনের সঙ্গে সম্পর্কীত।
বিবাহের মাধমে তার জীবনে স্থিরতা আসে এবং তার দ্বীনের অর্থেক এমনিতেই পরিপূর্ণ হয়ে
যায়। হাদীসে এসেছে:
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِذَا تَزَوَّجَ
الْعَبْدُ فَقَدْ اِسْتَكْمَلَ نِصْفَ الّدِيْنِ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِى النِّصْفِ
الْبَاقِى
কোন ব্যক্তি যখন
বিবাহ করে, সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে। দ্বীনের
অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। (বায়হাকী-৫৪৮৬)
গ। আল্লাহর সাহায্য অবধারিত হয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে
আল্লাহর পক্ষ হতে বারাকাহ ও সাহায্য আসে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللَّهِ عَوْنُهُمُ
الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِي يُرِيدُ الأَدَاءَ
وَالنَّاكِحُ الَّذِي يُرِيدُ الْعَفَافَ
তিন শ্রেণীর লোককে
সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর আবশ্যক করে নিয়েছেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী
(মুজাহিদ), মনিবের সাথে নিজের মুক্তির জন্য চুক্তিবদ্ধ
কৃতদাস,
যে চুক্তিবদ্ধ অর্থ পরিশোধ করতে আগ্রহী এবং নিজের যৌবন হেফাজতের
জন্য বিবাহিত পুরুষ। (তিরমিযি-১৬৫৫)
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনে করণীয়
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার পর স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের প্রতি উভয়ের সাধারণভাবে কিছু দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়।
বিবাহের পূর্বে ও পরে এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শ্রদ্ধা
ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে এবং স্থায়ীত্ব লাভ করে। নিম্নে সেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
ক। বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে
জেনে নেয়া। বিবাহের পূর্বেই একনজর পাত্র-পাত্রীকে
দেখে নেয়ার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
إِذَا أَلْقَى اللهُ فِي قَلْبِ امْرِئٍ خِطْبَةَ
امْرَأَةٍ فَلَا بَأْسَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا
যখন তোমাদের কারও
অন্তরে কোন মহিলাকে বিবাহের ইচ্ছা জাগ্রত হয়, তাহলে সে তাকে একনজর দেখে নিলে তাতে কোন গুনাহ হবে না। (ইবনে মাজাহ-১৯৩৭,
আহমাদ ১৫৫৯৮, সহীহাহ ৯৮)
অন্য হাদিসে
এসেছে,
عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّهُ خَطَبَ
امْرَأَةً مِنْ الْأَنْصَارِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَجْدَرُ أَنْ يُؤْدَمَ
بَيْنَكُمَا
মুগীরাহ ইবনু শুবাহ
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি এক আনসারী মহিলাকে
বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, “তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কেননা তা তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও
সহমর্মিতা অব্যাহত রাখতে অধিক সহায়ক হবে। (
ইবনু হিব্বান নং ৪০৪৩, হাদীস মুসলিম, নিকাহ ১৪২৪)
খ। সৎ ও ধার্মিক স্ত্রী নির্বাচন করা। দ্বীনদার নারীকে বিবাহ করা। মা দ্বীনদার হলে তার গর্ভে সুসন্তানেরই
আশা করা যায়। বিবাহে দীনদারীকে প্রাধান্য দিতে রাসূল (সাঃ) বলেন:
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبيِّ ﷺ قَالَ
تُنْكَحُ المَرْأَةُ لأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا
وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
চারটি বিষয়ের প্রতি
লক্ষ্য রেখে বিবাহ করা হয়। তা হল তার সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং দীনদারি।
তোমরা পাত্রী নির্বাচনে কনের ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দাও। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(বুখারি-৫০৯০, মুসলিম-১৪৬৬)
অন্য হাদিসে
এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ
قَالَ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
সমগ্র পৃথিবীটাই
সম্পদ,
আর পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ হল সৎকর্মপরায়ণা স্ত্রী। (মুসলিম-৩৭১৬)
দ্বীনদারীর চেয়ে
রূপ-সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিলে বিপদের কারণও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেন:
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَزَوَّجُوا النِّسَاءَ لِحُسْنِهِنَّ فَعَسَى
حُسْنُهُنَّ أَنْ يُرْدِيَهُنَّ وَلَا تَزَوَّجُوهُنَّ لِأَمْوَالِهِنَّ فَعَسَى
أَمْوَالُهُنَّ أَنْ تُطْغِيَهُنَّ وَلَكِنْ تَزَوَّجُوهُنَّ عَلَى الدِّينِ
وَلَأَمَةٌ خَرْمَاءُ سَوْدَاءُ ذَاتُ دِينٍ أَفْضَلُ
তোমরা কোন মহিলাকে
তার সৌন্দর্য দেখে বিবাহ কর না, কেননা তার সৌন্দর্য
হয়ত তাকে বিপথগামী করতে পারে। অনুরূপ কোন মহিলাকে তার অর্থ-সম্পদ দেখেও বিবাহ কর না, কেননা হয়ত তার অর্থ-সম্পদ তাকে বিদ্রোহী বানাতে পারে। বরং তাকে
তার দ্বীনদারী দেখে বিবাহ কর। আর কাল বর্ণের দ্বীনদার দাসীও উত্তম। (ইবনে
মাজাহ-১৯৩২)
গ। কুফু অর্থাৎ সমতা রক্ষা করা। শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থ-সম্পদ, পারিবারিক রীতি-নীতি, আকিদা-বিশ্বাস তথা দ্বীনদারী ইত্যাদি বিষয়ে কাছা-কাছি স্তরের
পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করা পরস্পরের একটি দায়িত্ব। এটাকে ফিকাহর পরিভাষায় কুফু বলা
হয়।
ঘ। বিবাহের অনুষ্ঠান জনসমক্ষে এবং মসজিদে
হওয়া সুন্নাহ। রাসূল (সাঃ) বিবাহ অনুষ্ঠান প্রকাশ্যে
ও ব্যাপক প্রচারের কথা বলেছেন। আর মসজিদ যেহেতু মুসলমানদের মিলন ক্ষেত্র সেই জন্য মসজিদেই
বিবাহের আয়োজন করার উপদেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " أَعْلِنُوا هَذَا النِّكَاحَ وَاجْعَلُوهُ فِي
الْمَسَاجِدِ وَاضْرِبُوا عَلَيْهِ بِالدُّفُوفِ
তোমরা বিয়ের ঘোষণা
প্রচার কর এবং মসজিদে বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন কর আর (এর প্রচারের জন্য) দফ বাজাতে পার।
(তিরমিযি-১১১২)
ঙ। মাহর নির্ধারণ ও তা যথাযথভাবে পরিশোধ
করা। স্বামীর উপর আল্লাহ তায়ালা মাহর ফরয করেছেন। বিবাহ
বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য এটি অন্যতম শর্ত। বাসর ঘরে প্রবেশের পূর্বেই পরিশোধ করা উত্তম।
হাদীসে এসেছে:
عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَمَّا تَزَوَّجَ فَاطِمَةَ بِنْتَ
رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَرَادَ أَنْ
يَدْخُلَ بِهَا فَمَنَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى يُعْطِيَهَا
شَيْئًا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَيْسَ لِي شَىْءٌ . فَقَالَ لَهُ
النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَعْطِهَا دِرْعَكَ " .
فَأَعْطَاهَا دِرْعَهُ ثُمَّ دَخَلَ بِهَا
রাসূল (সাঃ) এর জনৈক
সাহাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) কে বিবাহ করলেন এবং তাঁর নিকট গমন
করার ইচ্ছা করলেন। তখন রাসূল (সাঃ) তাঁকে মাহর হিসেবে কিছু না দেয়া পর্যন্ত তাকে বাধা
দিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল।
আমার নিকট তো কিছুই নেই। তিনি বললেন, তুমি তোমার বর্মটি দিয়ে দাও। অত:পর তিনি তাকে তাঁর বর্মটি দিয়ে দিলেন এবং তাঁর
নিকট গমন করলেন। (আবু দাউদ-২১২৮)
মাহরের পরিমাণ এমন
হওয়া উচিত যা পরিশোধ করা প্রত্যেকের জন্য সহজসাধ্য হয়। বস্তুত: অধিক পরিমাণে মাহর নির্ধারণ
করাতে কোন পরহিযগারী নেই। রাসূল (সাঃ) বলেন:
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم: «خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرُهُ». أَخْرَجَهُ أَبُو
دَاوُدَ, وَصَحَّحَهُ الْحَاكِمُ
(বিবাহের ক্ষেত্রে)
উত্তম মাহর হল সেটা যা সহজসাধ্য (অর্থাৎ কম পরিমাণের মাহর যা সহজেই আদায় যোগ্য)। (বায়হাকি-১৪১১০)
কোনরূপ চাপ প্রয়োগ
বা চাতুরীপনার আশ্রয় নেয়া ছাড়া স্ত্রী নিজের থেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে যদি মাহরের সম্পূর্ণ
ঢাকা অথবা এর কিছু অংশ ফেরত দেয় বা ছেড়ে দেয় তাহলে তা ভোগ করাতে কোন দোষ হবে না। আল্লাহ
তায়ালা বলেন
وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِهِنَّ نِحۡلَةً ؕ
فَاِنۡ طِبۡنَ لَكُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡهُ نَفۡسًا فَكُلُوۡهُ هَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا
আর তোমরা তোমাদের
স্ত্রীদেরকে তাদের মাহর সন্তুষ্টচিত্তে দিয়ে দাও। যদি তারা তাদের মাহর থেকে কিছু অংশ
ছেড়ে দেয় তাহলে তোমরা সন্তুষ্টি সহকারে ভোগ কর। (সূরা নিসা ৪:৪)
চ। ওলিমার ব্যবস্থা করা। বিবাহোত্তর উপস্থিত মেহমানদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করাকে
অলিমা বলা হয়। এটি একটি সুন্নত আমল। রাসূল (সাঃ) নিজেও ওলিমা করেছেন মর্মে হাদিসে এসেছে।
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم
رَأٰى عَلٰى عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ قَالَ مَا هٰذَا
قَالَ إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلٰى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ
بَارَكَ اللهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ.
রাসূল (সাঃ) একদা
আব্দুর রহমান বিন আওফের শরীরে হলুদ রংয়ের চিহ্ন দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক মহিলাকে এক খন্ড স্বর্ণের (মাহরের) বিনিময়ে বিবাহ করেছি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আল্লাহ তোমার দাম্পত্য জীবনে বরকত দান করুন আর একটি বকরী
দিয়ে হলেও তুমি ওলিমার ব্যবস্থা কর। (বুখারী-৫২১০)
ছ। স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সঠিকভাবে আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব স্বামীর উপরই
ন্যস্ত করেছে। এটা স্বামীর উপর ফরয। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَهٗ رِزۡقُهُنَّ وَ
كِسۡوَتُهُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ
সন্তানের পিতাকে
যথোচিতভাবে মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে হবে। (সূরা বাকারা ২:২৩৩)
وَعَن مُعَاوِيَةَ بنِ حَيدَةَ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُوْلَ
الله مَا حَقُّ زَوجَةِ أَحَدِنَا عَلَيهِ ؟ قَالَ أنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طعِمْتَ
وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلَا تَضْرِبِ الوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا
تَهْجُرْ إلاَّ في البَيْتِ حديثٌ حسنٌ
মুয়াবিয়াহ বিন হাইদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের কোন ব্যক্তির উপর তার স্ত্রীর কী অধিকার রয়েছে? তিনি (সাঃ) বললেন: তুমি যখন আহার কর, তাকেও আহার করাও, তুমি যখন পরিধান কর, তাকেও পরিধান করাও। (আবু দাউদ-২১৪৪)
জ। স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করা। স্বামীর কর্তব্য হল তার স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করা। রাসূল
(সাঃ) বলেন:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم اسْتَوْصُوْا بِالنِّسَاءِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ
ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ
تُقِيْمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوْا
بِالنِّسَاءِ
তোমরা আমার কাছ থেকে
মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার নসীহত গ্রহণ কর। কেননা, নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের
হাড় গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাঁকা। অতএব, তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যদি ফেলে রাখ তবে বাঁকাই থাকবে। অতএব, তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। (বুখারী-৩৩৬৬)
স্ত্রীর সাথে
থাকতে হবে আয়নার মত। যেন একজন আরেকজনের চরিত্রের নিশ্চয়তা দিতে পারে। রাসূলুল্লাহ
সাঃ বলেন,
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ
خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ
যে ব্যক্তির চরিত্র
ও ব্যবহার সবচেয়ে উত্তম ঈমানের দিক দিয়ে সে-ই পরিপূর্ণ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সেসব লোক
উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম। (তিরমিযী-১১৬২)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ عن النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قال خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِى
তোমাদের মধ্যে যে
নিজের পরিবারের নিকট ভাল সে-ই প্রকৃত ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট ভাল। (তিরমিযি-৩৮৯৫; ইবনে মাজাহ-১১৭৭)
ঝ। স্ত্রী একাধিক হলে তাদের মাঝে সমতা বিধান
করা। অপ্রয়োজনে একাধিক স্ত্রী না রাখা ভালো। স্ত্রীর
অসুস্থতা ও সন্তান লালন-পালনের বাস্ততার জন্য যদি স্বামীকে একাধিক বিবাহ করার প্রয়োজন
হয় তাহলে তারও অনুমতি ইসলামে রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীদের
মধ্যে সমতা বিধান করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
فَانۡكِحُوۡا مَا طَابَ لَكُمۡ مِّنَ النِّسَآءِ
مَثۡنٰی وَ ثُلٰثَ وَ رُبٰعَ ۚ فَاِنۡ خِفۡتُمۡ اَلَّا تَعۡدِلُوۡا فَوَاحِدَۃً
اَوۡ مَا مَلَكَتۡ اَیۡمَانُكُمۡ ؕ
তোমরা (প্রয়োজনে)
তোমাদের পছন্দনীয় নারীদের দুইজন অথবা তিনজন কিংবা চারজনকে বিবাহ করবে। তবে যদি আশংকা
থাকে যে তোমরা তাদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না তাহলে একজনই যথেষ্ট। (সূরা
নিসা ৪:৩)
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ فَيَعْدِلُ وَيَقُولُ اللَّهُمَّ هَذِهِ
قِسْمَتِي فِيمَا أَمْلِكُ فَلَا تَلُمْنِي فِيمَا تَمْلِكُ وَلَا أَمْلِكُ
আয়িশা (রাঃ) হতে
বর্ণিত,
রাসূল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের মাঝে দিন বন্টন করে দিতেন এবং তাতে
সুবিচার করতেন। অতঃপর প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ। এটিই আমার বন্টন, সুবিচার করার জন্য
এতটুকুরই আমি মালিক। অতএব, যে বিষয়ের মালিক
আমি নই;
সে বিষয়ে আমাকে দোষারোপ কর না। (তিরমিযি-১১৭০)
ঞ। স্ত্রীর বিনোদনের ব্যবস্থা করা। এটি রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা। হাদীসে এসেছে: স্বামীর কর্তব্য
মাঝে মাঝে শরীয়ত সম্মতভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا، قَالَتْ:
سَابَقْتُ رَسُولَ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَقْتُهُ،
فَلَمَّا حَمَلْتُ ٱللَّحْمَ سَابَقَنِي فَسَبَقَنِي، فَقَالَ: "هَذِهِ
بِتِلْكَ"
আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত,
একবার রাসুল (সাঃ) আমার সাথে দৌড়ের এক প্রতিযোগিতা করলেন এবং
সেদিন আমি তাঁর উপর জয়ী হলাম। অতঃপর যখন আমি মোটা হয়ে গেলাম, তখন আবার একদিন প্রতিযোগিতা করলেন কিন্তু এবার তিনি আমার উপর
জয়লাভ করলেন এবং বললেন, ঐ জয়ের পরিবর্তে
এই জয়। (মুসনাদে আহমদ-২২৯৮৯)
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا
أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا
خَرَجَ بِهَا مَعَهُ
আয়িশা (রাঃ) বলেন: নবী করীম (সাঃ) যখন কোন সফরে যেতে ইচ্ছা করতেন, স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন এবং তাতে যার নাম উঠত, তাঁকেই সাথে নিয়ে সফর করতেন। (বুখারী-৪৩৯১ ইফা)
ট। দ্বীন শিক্ষা দেয়া। স্ত্রীকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে দ্বীনদারী শিক্ষা দেয়াও স্বামীর
একটি পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ
وَ اَهۡلِیۡكُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ
হে মুমিনগণ! তোমরা
নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা
তাহরীম ৬৬:৬)
এই আয়াতটি যখন নাযিল
হয় তখন আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে বলেন:
عن ابن عمر رضي الله عنه قال لما نزلت هذه الآية: يَا
رَسُولَ اللهِ، نُقِي أَنْفُسَنَا فَكَيْفَ لَنَا بِأَهْلِينَا؟ فَقَالَ:
«تَنْهَوْنَهُمْ عَمَّا نَهَاكُمُ اللهُ وَتَأْمُرُونَهُمْ بِمَا أَمَرَ اللهُ
ইয়া রাসূলুল্লাহ।
আমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করব বুঝলাম, কিন্তু আমাদের পরিবার-পরিজনকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচাব? তিনি বললেন: এর পদ্ধতি হল আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে যে সব বিষয়
নিষেধ করেছেন, তাদেরকেও সেসব বিষয় নিষেধ কর আর যেসব
বিষয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আদেশ করেছেন, তাদেরকেও তোমরা তার আদেশ প্রদান কর। (সূরা তাহরীম-৬ এর তাফসীর,
তাফসীরে ইবন কাসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেন:
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «رَحِمَ اللهُ رَجُلاً
قَامَ مِنَ اللَّيْلِ، فَصَلَّى وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي
وَجْهِهَا المَاءَ، رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَصَلَّتْ
وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ المَاءَ».
আল্লাহ তায়ালা সে
ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে রাত্রিকালে উঠে
নিজে সালাত আদায় করে এবং স্বীয় স্ত্রীকেও জাগিয়ে তোলে, সেও সালাত আদায় করে। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তবে তার চোখে-মুখে
পানি ছিটিয়ে দেয়। অনুরূপভাবে আল্লাহ তায়ালা সে নারীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে নিজে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়
এবং সেও সালাত আদায় করে, যদি সে উঠতে অস্বীকার
করে তবে তার চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। (আবু দাউদ-১৩১০)
বিশেষত: স্ত্রীকে
হিজাব সম্পর্কে জ্ঞানদান এবং বাস্তব অনুশীলন প্রদান করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী
হিসেবে মহানবী (সাঃ) এর জীবনে আমরা এর দৃষ্টান্ত দেখতে পাই হাদিসে এসেছে:
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدَهُ مَيْمُونَةُ فَأَقْبَلَ ابْنُ أُمِّ
مَكْتُومٍ وَذَلِكَ بَعْدَ أَنْ أُمِرْنَا بِالْحِجَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم " احْتَجِبَا مِنْهُ " . فَقُلْنَا يَا رَسُولَ
اللَّهِ أَلَيْسَ أَعْمَى لاَ يُبْصِرُنَا وَلاَ يَعْرِفُنَا فَقَالَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم " أَفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا أَلَسْتُمَا
تُبْصِرَانِهِ "
উম্মে সালমা (রাঃ)
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূল (সঃ) এর নিকট অবস্থান করছিলাম, আর তাঁর নিকট উম্মে মাইমুনাহও ছিলেন। ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ
ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) আগমন করলেন, এটি পর্দার বিধান নাযিলের পরের ঘটনা। তখন নবীজি আমাদেরকে বললেন তোমরা উভয়ে তাঁর
কাছ থেকে পর্দা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল।
তিনি কি অন্ধ নয়, তিনি তো আমাদেরকে
দেখতে পাবেন না এবং আমাদেরকে চিনতেও পারবেন না! নবীজি বললেন, তোমরাও কি অন্ধ, তোমরাও কি তাঁকে দেখতে পাবে না। (আবু দাউদ-৪১১৪)
এই দায়িত্ব পালনে
যিনি যতটুকু অবহেলা প্রদর্শন করবেন আখিরাতে তিনি ততটুকুই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) ইবলেন:
ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى
عَلَيْهِمُ الْـجَنَّةَ : مُـدْمِنُ الْـخَمْرِ، وَالْعَاقُّ، وَالدَّيُّوْثُ
الَّذِيْ يُقِرُّ فِيْ أَهْلِهِ الْـخَبَثَ.
তিন শ্রেণীর লোকদের
জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। মদ পানকারী, পিতামাতার অবাধ্য সন্তান এবং দায়াস, যে তার পরিবারে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে (অর্থাৎ বেপর্দা চাল-চলনকে)
স্বীকৃতি প্রদান করে। (মুসনাদে আহমদ-৫১১৭)
ঠ। স্বামীর শরীয়তসম্মত যে কোন নির্দেশ স্বতস্ফূর্তভাবে
পালন করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পর স্ত্রীর
নিকট সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তি হলেন
তার স্বামী। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بما فضل الله
بَعْضَهُمْ عَلى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
পুরুষগণ নারীগণের
উপর কর্তৃত্বশীল কারণ আল্লাহ তায়ালা তাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং পুরুষগণ
স্ত্রীদের জন্য তাদের সম্পদ ব্যয় করেন। (সূরা নিসা ৪:৩৪)
এ প্রসঙ্গে রাসূল
(সাঃ) বলেন:
وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ
صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ كُنْتُ آمِراً أحَداً أنْ يَسْجُدَ لأحَدٍ
لأمَرْتُ المَرأةَ أنْ تَسْجُدَ لزَوجِهَا»
আমি যদি কারও প্রতি
অন্য কাউকে সিজদা করতে নির্দেশ প্রদান করতাম, তাহলে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম যেন তারা তাদের স্বামীদের সিজদা করে। (ইবনে
মাজাহ-১৯২৫)
স্বামীর অনুগত স্ত্রীর
জন্য পরকালীন জীবনে উত্তম পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেন:
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَرْأَةُ إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ
شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ
أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ»
স্ত্রীগণ যখন তার
উপর নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়বে, রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, নিজের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করবে এবং স্বামীর অনুগত থাকবে, তখন সে বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (মুসনাদে আহমাদ-১/১৯১)
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ :
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَيُّمَا اِمْرأَةٍ مَاتَتْ
وَزُوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ»
কোন স্ত্রী যখন তার
স্বামীর সন্তুষ্টি নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযি-১১৯৪)
স্বামীর অবাধ্যতার
পরিণাম সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله
عليه وسلم ـ قَالَ " ثَلاَثَةٌ لاَ تَرْتَفِعُ صَلاَتُهُمْ فَوْقَ
رُءُوسِهِمْ شِبْرًا رَجُلٌ أَمَّ قَوْمًا وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ وَامْرَأَةٌ
بَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَلَيْهَا سَاخِطٌ وَأَخَوَانِ مُتَصَارِمَانِ "
তিন শ্রেণীর লোক
এমন রয়েছে যাদের সালাত তাদের মাথার উপর এক বিঘত পরিমাণ উপরেও উঠে না। তাদের প্রথম শ্রেণী
হল ১. ঐ সব লোক যারা মানুষের উপর নেতৃত্ব প্রদান করে কিন্তু লোকেরা তার উপর অসন্তুষ্ট
২. ঐ নারী যে রাত্রি অতিবাহিত করে আর স্বামী তার প্রতি ক্রোধান্বিত ৩. বিবাদমান দু'মুসলিম ভাই। (ইবনে মাজাহ-১০২৪)
ড। নিজের সতীত্ব ও স্বামীর ঘর-সংসার হেফাযত
করবে। আয়-উপার্জনের স্বার্থে স্বামীকে দিনের অধিকাংশ
সময়ই বাহিরে অবস্থান করতে হয়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার বাড়ি ও যাবতীয় অর্থ-সম্পদ হেফাযত
করা স্ত্রীর দায়িত্ব। রাসূল (সাঃ) বলেন:
وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا
وَوَلَدِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
আর স্ত্রীগণ তাদের
স্বামীর গৃহ (ও তার সন্তানাদি) এর তত্ত্বাবধায়ক, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। (বুখারী-৯০১)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: أَربع من أعطيهن فقد
أعطي خير الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ: قَلْبٌ شَاكِرٌ وَلِسَانٌ ذَاكِرٌ وَبَدَنٌ
عَلَى الْبَلَاءِ صَابِرٌ وَزَوْجَةٌ لَا تَبْغِيهِ خَوْنًا فِي نَفسهَا وَلَا
مَاله
যাকে চারটি জিনিষ
প্রদান করা হয়েছে, তাকে যেন দুনিয়া
ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণই দান করা হয়েছে। ১. কৃতজ্ঞ অন্তর ২. যিকিরকারী জিহ্বা ৩.
বিপদে ধৈর্যশীল দেহ এবং ৪. এমন স্ত্রী যে নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে
খিয়ানত করে না। (মেশকাত ২৮৩ পৃষ্ঠা; বায়হাকী-৪২২৯)
স্ত্রীর যদি নিজস্ব
মালিকানাধীন কোন সম্পদ থাকে তাহলে সে অর্থের উপর স্বামীর কোন কর্তৃত্ব নেই। স্ত্রী
নিজের ইচ্ছামত সে অর্থ খরচ করার অধিকার রাখে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন:
لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ
نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ
পুরুষরা যা উপার্জন
করে তাতে তাদের অংশ রয়েছে আর নারীরা যা উপার্জন করে তাতে তাদেরও অংশ রয়েছে। (সূরা
নিসা ৪:৩২)
ঢ। পরস্পর উপহার প্রদান করা। যে কোন উপলক্ষ্যে অথবা কোন উপলক্ষ্য ছাড়াই স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে
বেশি বেশি উপহার প্রদান করবে। উপহার দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে তাদের মাঝে মধুর সম্পর্ক বিরাজ
করবে। উপহার প্রদান সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَة عن النبي صلى الله عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَقُولُ : تَهَادُوْا تَحَابُوْا -
আবু হোরায়রা (রাঃ)
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা পরস্পর
হাদিয়া তথা উপহার বিনিময় করো, তোমাদের পরস্পরের
মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। (আদাবুল মুফরাদ-৫৯৪)
উপসংহার। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনকে কেন্দ্র করেই একটি পরিবার গড়ে উঠে। তাদের সুসম্পর্কের মধ্যেই পরিবারের সুখ-শান্তি নিহিত। তাদের পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই একটি পরিবার সুখের নীড়ে পরিণত হয়। আবার কর্তব্য অবহেলার কারণেই পারিবারিক জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে। পারিবারিক সুখ, শান্তি ও কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য উভয়ের যে সব দায়িত্ব ইসলাম দিয়েছে তা পালন করা, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং আমল করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আজকের খুতবা বুঝা ও আমল করার তাওফিক দান করুন।
No comments