Wednesday, April 30.

Header Ads

ad728
  • ব্রেকিং

    হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি । জুমুয়ার খুতবা

     

    হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
    হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি

    ইসলামে উপার্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন চলে। তবে, উপার্জন শুধু পরিমাণে নয়, বরং উপার্জনের পন্থাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম হালাল উপার্জনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করেছে এবং হারাম উপার্জন থেকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।


    হালাল উপার্জন এমন উপার্জন যা ইসলামি নীতিমালা অনুযায়ী বৈধ ও সৎ পন্থায় অর্জিত হয়। এটি যেমন ব্যক্তি, তেমনি সমাজের কল্যাণে সহায়ক। হালাল উপার্জন ব্যক্তি তার সম্মান, আধ্যাত্মিক শান্তি এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সহায়তা করে। ইসলামে সৎ উপার্জনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি একদিকে যেমন নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করে, তেমনি সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

    অন্যদিকে, হারাম উপার্জন এমন উপার্জন যা অবৈধ, জালিয়াতি, রিবা (সুদ), বা অন্য কারো অধিকার ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটি শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর। হারাম উপার্জন গ্রহণ করলে ব্যক্তি যেমন ধর্মীয় শাস্তির সম্মুখীন হয়, তেমনি তার সামাজিক ও মানসিক শান্তিও নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং, ইসলাম আমাদের নির্দেশ দেয় হালাল উপার্জনের মাধ্যমে জীবনযাপন করতে এবং হারাম উপার্জন থেকে বাঁচতে।

    ফরয ইবাদতের পর উপার্জনে যোগদানের নির্দেশ

    পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষকে কোন না কোন পন্থায় উপার্জন করতেই হয়। আল্লাহ প্রদত্ত কর্মদক্ষতা ও প্রতিভাকে নিষ্ক্রিয় ও অকোজো করে রাখার অধিকার কারো নেই। সেই জন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনে সূরা আল জুমুআর ১০ নম্বর আয়াতে বলেছেন:

    فإِذَا قُضِيَتِ الصَّلوة فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

    অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর (রিযিক) অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা আল-জুমুআ ৬২:১০)

    উপার্জনকারীর প্রশংসা করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    الْكَاسِبُ حَبِيْبُ اللهِ

    "উপার্জনকারী আল্লাহর প্রিয়"

    তবে সেই উপার্জনটা হতে হবে হালাল পন্থায়। একজন মুসলমানের জন্য অবৈধ পন্থায় উপার্জনের কোন সুযোগ নেই। কারণ মুসলমানদের সব কাজ কর্মই পরিচালিত হয় আখিরাতের জবাবদিহিকে সামনে রেখে। আর যে ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে আয়-উপার্জন করে, তাকে অবশ্যই আখিরাতে জবাবদিহি করতে হবে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে সর্বনা হালাল উপার্জনের উপর সবিশেষ তাগিদ প্রদান করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন।

    عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ»

    অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। (শুআবুল ঈমান ৮৩৬৭)

    একজন মুমিন ব্যক্তির ইমান আনার পর অন্যতম ফরয কাজ হলো হালাল উপার্জন। সুস্থ-সুন্দর জীবন ও আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন হালাল উপার্জন।

    হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

    ক। হালাল খাদ্য গ্রহণ আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা হালাল রিযিক দিয়ে জীবন ধারণের এবং বৈধ পেশায় নিয়োজিত থেকে হালাল বস্তু খোঁজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন:

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا كُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰكُمۡ وَ اشۡكُرُوۡا لِلّٰهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ اِیَّاهُ تَعۡبُدُوۡنَ

    হে ইমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রিষিক হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর। (সূরা আল বাকারা ২:১৭২)

    আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন:

    یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ كُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

    হে মানব মণ্ডলী। পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু সামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নি:সন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা আল বাকারা ২:১৬৮)

    য। হালাল উপার্জন দোআ কবুলের পূর্বশর্ত। দোআ হচ্ছে একটি ইবাদত। যার মাধ্যমে বান্দার সাথে

    আল্লাহর গভীর প্রেম নিবেদন হয় এবং বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণে সহায়তা হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আল্লাহর নিকট গৃহীত হতে হলে উপার্জন অবশ্যই হালাল হতে হবে। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا

    আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। (মুসলিম-২৩৯৩)

    গ। হালাল উপার্জনে বরকত লাভ হয়। উপার্জনে বরকত লাভ করতে হলে একমাত্র হালাল পন্থায় হতে হবে। কেননা বরকত দেয়ার মালিক আল্লাহ। তিনি শুধু বৈধ উপার্জনেই বরকত দিয়ে থাকেন আর অবৈধ উপার্জনে বরকত নষ্ট করে দেন। হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে বরকতের কারণে খুব অল্প সময়েই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

    ঘ। জান্নাত লাভের উপায়। মানুষের দুটি জীবন রয়েছে। একটি ইহলৌকিক অপরটি পারলৌকিক। অতএব হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর হারাম পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে সম্পদের পাহাড় গড়লেও পরকালীন জীবনে তার জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন।

    عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَنْ أَكَلَ طَيِّبًا وَعَمِلَ فِي سُنَّةٍ وَأَمِنَ النَّاسُ بَوَائِقَهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ

    আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি হালাল রিযিক খাবে,সুন্নাতের উপর আমল করবে এবং যার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ থাকবে সে জান্নাতে যাবে। (আবু দাউদ-২৫২০)

    হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের শর্ত। মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে অথচ তার উপার্জন হালাল হবে না এটা মহান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না অতএব হালাল উপার্জন ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত।

    আল্লাহর রাসুল ও সাহাবাদের সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ হাতে হালাল উপার্জন করতেন। সাহাবাদের হালাল সম্পদ উপার্জনের প্রতি উৎসাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    عَن الْمِقْدَاد بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عمل يَدَيْهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

    মিকদাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন। কারো হাতে নিজের উপার্জনের আহারের চেয়ে আর কোন উত্তম আহার নেই। আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) নিজের হাতের উপার্জন আহার করতেন। (বুখারী-২০১৭)

    এছাড়া মুসা (আঃ) দীর্ঘ আট বছর ধরে শুআইব (আঃ) এর বাড়িতে কাজ করেছেন। জাকারিয়া (আঃ) কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন। নূহ (আঃ) জাহাজ নির্মাণ করেছেন। সাহাবাগণ নিজের হাতে কাজ করেছেন। আবু বকর (রাঃ) কাপড়ের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন।

    ছ। হালাল উপার্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। বান্দা যেসব ইবাদত করে হালাল উপার্জন তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন:

    فَابۡتَغُوۡا عِنۡدَ اللّٰهِ الرِّزۡقَ وَ اعۡبُدُوۡهُ وَ اشۡكُرُوۡا لَهٗ ؕ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ

    কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আন কাবুত ২৯:১৭)

    জ। হালাল উপার্জন করা আল্লাহর পথে বের হওয়ার শামিল। হালাল উপার্জন করার জন্য প্রয়োজনে বিদেশেও যেতে হতে পারে। সেজন্য কুরআন মাজীদে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সঙ্গে হালাল উপার্জনকে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:

    وَ اٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ  وَ اٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ

    কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমন করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত হবে। (সূরা আল মুয্যাম্মিল ৭৩:২০)

    ঝ। হালাল উপার্জন আখিরাত বিমুখিতা নয়। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে এ দুনিয়াতে হালাল উপার্জন করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। সেজন্য উপার্জন করতে বৈধভাবে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কিছু করা আখিরাত বিমুতা নয়। মহান আল্লাহ বলেন।

    وَ ابۡتَغِ فِیۡمَاۤ اٰتٰىكَ اللّٰهُ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ وَ لَا تَنۡسَ نَصِیۡبَكَ مِنَ الدُّنۡیَا وَ اَحۡسِنۡ كَمَاۤ اَحۡسَنَ اللّٰهُ اِلَیۡكَ وَ لَا تَبۡغِ الۡفَسَادَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الۡمُفۡسِدِیۡنَ

    আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তা দ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভুলে যেও না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আল কাসাস ২৮:৭৭)

    ঞ। হালাল উপার্জন অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। পৃথিবীতে জীবন নির্বাহে হালাল উপার্জন করার সুযোগ বা যোগ্যতা লাভ করা আল্লাহ তাআলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। সেজন্য হালাল পন্থায় উপার্জনকারী পরকালে জান্নাতে যাবে। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জনকারী ব্যক্তির জন্য পরকালে শান্তি ও ভয়াবহ আযাব অপেক্ষা করছে। হাদীসে এসেছে

    عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنْ الدُّنْيَا حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيثٍ وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ وَعِفَّةٌ فِي طُهْرٍ

    আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকলে দুনিয়ার আর কোন কিছু না হলেও তোমার চলবে, ১। আমানত রক্ষা করা, ২। সত্য কথা বলা, ৩। চরিত্র সুন্দর করা এবং ৪। হালাল খাদ্য খাওয়া। (আহমাদ-৬৬৫২)

    ট। মানুষের মনে আলো সৃষ্টি হয়। হালাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের মনে এক প্রকার আলো সৃষ্টি হয়, যা অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করে এবং সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে। ইবাদতে মনোযোগ আসে। পাপ কাজ করতে মনে ভয় সঞ্চার হয়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে ভালো লাগে। রাসূলদের উদ্দেশ্যে করে মহান আল্লাহ বলেন:

    یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ كُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ

    হে রাসূলগণ। পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। (সূরা আল মুমিনুন ২৩:৫১)

    বৈধ পন্থায় উপার্জনের মাধ্যম সমূহ

    ক। চাকুরি। সম্পদ উপার্জনের জন্য মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হবে। এ যুগে মান্না ও সালওয়া আসবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলিম উম্মাহকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পদ উপার্জনের শিক্ষা দিয়েছেন। পরিশ্রমের জন্য নিত্যনতুন উপায়ের মধ্যে একটি হচ্ছে চাকুরি। চাকুরির ক্ষেত্র হতে হবে হালাল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন:

    وَ اَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی -  وَ اَنَّ سَعۡیَهٗ سَوۡفَ یُرٰی -  ثُمَّ یُجۡزٰىهُ الۡجَزَآءَ الۡاَوۡفٰی

    নিশ্চয় মানুষ যা চেষ্টা করবে তাই পাবে। তার চেষ্টার ফসল অবশ্যই দেখতে পাবে এবং তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করা হবে। (সূরা আন নাজম ৫৩:৩৯-৪১)

    খ। কৃষিকাজ। নিজ ভাগ্যকে গড়ার লক্ষ্যে মানুষকে কষ্ট করে রিযিকের ব্যবস্থ্য করতে হয়। আদম (আঃ) কৃষিকাজ করেছেন। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

    وَعَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " سَبْعٌ يَجْرِي لِلْعَبْدِ أَجْرُهُنَّ وَهُوَ فِي قَبْرِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ: مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا، أَوْ كَرَى نَهَرًا، أَوْ حَفَرَ بِئْرًا، أَوْ غَرَسَ نَخْلًا، أَوْ بَنَى مَسْجِدًا، أَوْ وَرَّثَ مُصْحَفًا، أَوْ تَرَكَ وَلَدًا يَسْتَغْفِرُ لَهُ بَعْدَ مَوْتِهِ

    সাতটি বিষয়ে আমলের প্রতিদান মৃত ব্যক্তির কবরেও প্রদান করা হবে। তা হল, জ্ঞান শিক্ষা দেয়া, নদী ও কূপ খনন করা, খেজুর গাছ লাগানো, মসজিদ নির্মাণ করা, বই পুস্তক রেখে যাওয়া এবং এমন সন্তান দুনিয়ায় রেখে যাওয়া যে সন্তান ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (বায়হাকী ৩১৭৫)

    গ। শ্রম। কুরআনে শ্রমের উল্লেখ রয়েছে। কোন পুঁজি ছাড়া এর মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতে পারে। কুরআনে দু'জন নবীকে মালিক ও শ্রমিক হিসেবে পেশ করা হয়েছে। মুসা (আঃ) মোহরের বিনিময়ে তার স্ত্রীর বকরী চরিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ শুয়াইব (আঃ) এর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:

    قَالَ اِنِّیۡۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اُنۡكِحَكَ اِحۡدَی ابۡنَتَیَّ هٰتَیۡنِ عَلٰۤی اَنۡ تَاۡجُرَنِیۡ ثَمٰنِیَ حِجَجٍ ۚ فَاِنۡ اَتۡمَمۡتَ عَشۡرًا فَمِنۡ عِنۡدِكَ ۚ وَ مَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اَشُقَّ عَلَیۡكَ ؕ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ- قَالَ ذٰلِكَ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَكَ ؕ اَیَّمَا الۡاَجَلَیۡنِ قَضَیۡتُ فَلَا عُدۡوَانَ عَلَیَّ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی مَا نَقُوۡلُ وَكِیۡلٌ

    তিনি (শুয়ায়েব আঃ) মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ্ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে। মুসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এ চুক্তি স্থির হল। দু'টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৭-২৮)

    ঘ। বুদ্ধিভিত্তিক শ্রম। ঐ সমস্ত পেশা যেখানে দেহের চেয়ে মস্তিষ্কের প্রয়োগ বেশী। মিসরের বাদশাহ, ইউসুফ (আঃ) এর প্রসঙ্গে বলেছিলেন:

    وَ قَالَ الۡمَلِكُ ائۡتُوۡنِیۡ بِهٖۤ اَسۡتَخۡلِصۡهُ لِنَفۡسِیۡ ۚ فَلَمَّا كَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّكَ الۡیَوۡمَ لَدَیۡنَا مَكِیۡنٌ اَمِیۡنٌ

    বাদশাহ বললঃ ইউসুফকে আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে একান্ত সহচর নিযুক্ত করব। অতঃপর বাদশাহ যখন তার সাথে কথা বলল তখন রাজা বললঃ আজ তুমি আমাদের কাছে মর্যাদাবান ও বিশ্বাস ভাজন হলে। (সূরা ইউসুফ ১২:৫৪)

    তখন ইউসুফ (আঃ) তার প্রস্তাবিত চাকুরিকে গ্রহণ করে বলেছিলেন:

    قَالَ اجۡعَلۡنِیۡ عَلٰی خَزَآئِنِ الۡاَرۡضِ ۚ اِنِّیۡ حَفِیۡظٌ عَلِیۡمٌ

    ইউসুফ বলল: আমাকে দেশের ধন-ভান্ডারে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান। (সূরা ইউসুফ ১২:৫৫)

    এ আয়াতদ্বয় থেকে বুঝা যায়, মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। শ্রম, চাকুরি ও অন্যান্য পেশার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

    وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أصْحَابُهُ : وأنْتَ ؟ قَالَ نَعَمْ كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ

    আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তাঁর সাহাবীগণ বললেন, আর আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমিও কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।  (বুখারী ২২৬২)

    ঙ। ব্যবসা।  আল কুরআনে ব্যবসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

    وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

    এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সুদ হারাম করেছেন আর ব্যবসা হালাল করেছেন। (সূরা আল বাকারা ২:২৭৫)

    চ। শেয়ার ব্যবসা। কোন কোম্পানীর মালিকানার আংশিক অংশীদারিত্বের নিমিত্তে অন্যকে সুযোগ করে দেয়া। এটা বৈধ, তবে শর্ত হল কোম্পানীর ব্যবসাটি শরীয়ত সম্মত হতে হবে।

    ছ। ঠিকাদারী ব্যবসা। সিডিউল মোতাবেক কাজ করলে এবং প্রদত্ত শর্ত ভঙ্গ না করলে ঠিকাদারী ব্যবসা জায়েয। শর্ত ভঙ্গ কিংবা কম কাজ করে বেশী বিল করা হারাম হবে।

    জ। আইন পেশা। কোন মামলায় সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য উকালতি (আইন পেশা) করে তার ফিস নেয়া হালাল হবে। আর যদি এর ব্যতিক্রম কিছু করে অর্থাৎ সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে তাহলে হারাম হবে।

    অবৈধ পন্থায় উপার্জনের মাধ্যমসমূহ

    ক। হারাম মালের ব্যবসা। হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন:

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

    হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শয়তানের অপবিত্র  কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সূরা আল মায়েদা ৫:৯০)

    حُرِّمَتۡ عَلَیۡكُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَ الدَّمُ وَ لَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ

    তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস। (সূরা আল মায়েদা ৫:৩)

    খ। প্রতারণামূলক বেচাকেনা। হাদিস শরিফে প্রতারণামূলক লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়েছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَيْعِ الْحَصَاةِ وَعَنْ بَيْعِ الْغَرَرِ

    রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাথর নিক্ষেপ করে বেচাকেনা করতে এবং প্রতারণামূলক লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম-২৮৫৪)

    গ। বেচাকেনায় জালিয়াতি / অবৈধ দালালী করা।

    عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ النَّجْشِ

    ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ক্রেতার উপর দিয়ে অন্য ক্রেতার দরাদরি করতে নিষেধ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৯২)

    ঘ। সুদের কারবার। সুদকে স্পষ্ট ভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا

    আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। (সুরা আল-বাকারা ২:২৭৫)

    অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡكُلُوا الرِّبٰۤوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَۃً ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

    হে মুমিনগণ। তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না এবং আল্লাহকে ভয় কর। তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩০)

    সুদের সাথে জড়িত সকল কিছুই হারাম। রসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদিস,

    عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَعَنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ الرِّبَا وَمُوَكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ: «هُمْ سَوَاءٌ» . رَوَاهُ مُسلم

    জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সুদখোর, সুদের হিসাব রক্ষক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি লা'নত করেছেন এবং তিনি বলেছেন, তারা সকলেই সমান অপরাধী। (মুসলিম-২৮০৭)

    ঙ। ওজনে কম দেয়া, প্রতারণা ও খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাধ্যমে উপার্জন করা হারাম। পবিত্র কুরআনের সূরা আল মুতাফফিফিন এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:

    وَیۡلٌ لِّلۡمُطَفِّفِیۡنَ - الَّذِیۡنَ اِذَا اكۡتَالُوۡا عَلَی النَّاسِ یَسۡتَوۡفُوۡنَ - وَ اِذَا كَالُوۡهُمۡ اَوۡ وَّزَنُوۡهُمۡ یُخۡسِرُوۡنَ

    যারা মাপে (ওজনে) কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। (সূরা আল মুতাফফিফিন,৮৩:-) 

    চ। ধোঁকা দেয়া। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে উপার্জন করা বৈধ নয়, হাদিস শরিফে এসেছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، ‏.‏ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ ‏"‏ مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي ‏"‏ ‏.‏

    আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন খাদ্যস্তুপের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় স্তুপে হাত ঢুকিয়ে ভিতরে ভেজা দেখতে পান। তখন তিনি বললেন, হে খাদ্য মালিক এ কি? জবাবে সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল। বৃষ্টির কারণে এরূপ হয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাহলে তুমি এটা উপরে রাখলেনা কেন? যাতে মানুষ দেখতে পায়, যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না। (মুসলিম-২৮৬০)

    অন্য হাদিসে এসেছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تَنَاجَشُوا

    রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমরা ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দাম বাড়াবে না। (তিরমিজী-২১৭৪)

    ছ। ঘুষ গ্রহণ। ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই নিষিদ্ধ।

    عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الرَّاشِىَ وَالْمُرْتَشِىَ

    রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের প্রতি আল্লাহ তাআলার লা'নত। (ইবনে মাজাহ-২৩১৩)

    জ। চুরি করা। মহান আল্লাহ বলেন:

    وَ السَّارِقُ وَ السَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَكِیۡمٌ

    যে পুরুষ বা নারী চুরি করে, তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়। (সূরা আল মায়েদা ৫:৩৮)

    ঝ। ডাকাতি,ছিনতাই ও জবরদখল। মহান আল্লাহ বলেন:

    اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ یَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ اَرۡجُلُهُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ ؕ ذٰلِكَ لَهُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

    যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের  তাদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে,অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্যে পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সুরা আল মায়েদা ৫:৩৩)

    ঞ। লুটতরাজ করা।

    وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ عَلَى الْمُنْتَهِبِ قَطْعٌ وَمَنِ انْتَهَبَ نُهْبَةً مَشْهُورَةً فَلَيْسَ مِنَّا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

    রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: কেউ যদি প্রকাশ্যে লুটপাট করে, তবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (আবু দাউদ-৩৫৯৬)

    ট। মজুতদারী ও কালোবাজারি।

    عَن معمر قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

    রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: পণ্যদ্রব্য আটক করে। অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী। (মুসলিম-৩৯৭৭)

    হারাম উপার্জনের পরিণতি

    হারাম উপার্জন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يُبَالِي الْمَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ أَمِنَ الْحَلَالِ أم من الْحَرَام» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

    মানুষের সামনে এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ মোটেই পরওয়া (খেয়াল) করবে না যে, সে যা নিচ্ছে বা গ্রহণ করছে, তা কি হালাল উপায়ে হচ্ছে না হারাম উপায়ে। (অর্থাৎ মানুষ হালাল হারামের মধ্যে কোনই তারতম্য করবে না) (বুখারী-২০৯৮)

    নিম্নে হারাম উপার্জনের পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

    ক। ইবাদত কবুল হয় না। আল্লাহর ইবাদত করার সময় যে সব উপকরণ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো যদি অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয় তাহলে ঐ হারাম উপকরণগুলো যতক্ষণ দেহে থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দাদের কোন ইবাদত-বন্দেগী কবুল করবে না। যেমন বান্দার দেহ, পোশাক, বাহন ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    وَعَن ابنِ عُمَرَ قَالَ: مَنِ اشْتَرَى ثَوْبًا بِعَشَرَةِ دَرَاهِمَ وَفِيهِ دِرْهَمٌ حَرَامٌ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهَ صَلَاةً مَا دَامَ عَلَيْهِ

    কোন ব্যক্তি যদি দশ দিরহাম দ্বারা একটি কাপড় ক্রয় করে, যার এক দিরহাম হারাম পন্থায় অর্জিত, তবে ঐ কাপড় যতদিন তার পরনে থাকবে ততদিন আল্লাহ তা'য়ালা তার কোন প্রকার সালাত কবুল করবেন না। (মুসনাদে আহমাদ-৫৪৭৩)

    খ। দোআ কবুল হয় না। বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চেয়ে অথবা মনের কোন চাওয়া-পাওয়া জানিয়ে প্রায়ই আল্লাহ তা'য়ালার নিকট আমরা প্রার্থনা বা দো'আ করে থাকি। আমাদের উপার্জন যদি হয় অবৈধ, তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সেই দো'আ গ্রহণ করবে না। হাদীসে এসেছে:

    ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ

    বাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। ফলে তার চেহারা হয়ে গেছে উচু-খুষ্ঠু ও ধূলি-ধূসরিত। এ অবস্থায় সে তার হাত দু'খানি আসমানের দিকে তুলে বলতে থাকে, হে প্রভৃ! হে প্রভৃ! (এ বলে দু'আ করতে থাকে) অথচ সে যা কিছু পানাহার করে (খাদ্য), যা কিছু পরিধান করে (বস্ত্র). যা কিছু ব্যবহার করে, তার সবটাই হারাম। কাজেই কিভাবে তার দু'আ কবুল হবে? (মুসলিম-২২১৮, তিরমিযি-৩২৫৭)

    গ। হারাম উপার্জনে সদকা করলে কোন সওয়াব মিলে না। দান সদকা করার মধ্যে মানুষের মনে প্রধান যেই আশাটিই লালিত থাকে সেটি হলো সওয়াব লাভ করা। আমরা অনেক সময় পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে অনাথ-এতিমদের দেখে টাকা দান করে থাকি। কখনও কখনও মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণকর কোন সংস্থায় অনুদান দিয়ে থাকি। অনেক সময় মরহুম পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ইত্যাদি নিকটাত্মীয়দের জন্য সাদকার ব্যবস্থা করে থাকি। যদি এসব ব্যয় হারাম উপার্জন থেকে করা হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে কোন সওয়াব দান করবেন না।

    হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يكْسب عبد مَال حرَام فتيصدق مِنْهُ فَيُقْبَلُ مِنْهُ وَلَا يُنْفِقُ مِنْهُ فَيُبَارَكُ لَهُ فِيهِ وَلَا يَتْرُكُهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ إِلَّا كَانَ زَادَهُ إِلَى النَّارِ. إِنَّ اللَّهَ لَا يَمْحُو السَّيِّئَ بِالسَّيِّئِ وَلَكِنْ يَمْحُو السَّيِّئَ بِالْحَسَنِ إِنَّ الْخَبِيثَ لَا يَمْحُو الْخَبِيثَ»

    কোন বান্দা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ যদি সাদকা করে, তবে উহা কবুল হবে না। যদি ঐ মাল (সংসারের অন্যান্য কাজে) খরচ করে, তবে তাতে বরকত হবে না। যদি হারাম সম্পদ রেখে সে মারা যায় তবে উহা তাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার পাথেয় হবে। আল্লাহ তায়ালা মন্দ দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না বরং ভাল দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন। খারাপ জিনিস অপর খারাপ জিনিসকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। (মিশকাত-হাদীস নং ২৭৭১)

    ঘ। হারামে বর্ধিত দেহ জান্নাতে যাবে না। কোন লোক ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত আবেদ বা পরহেজগারই হউক না কেন, আয়-উপার্জন যদি তার হালাল না থাকে, হারাম খাদ্য যদি তার দেহের সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় তাহলে সে দেহ নিয়ে জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব। হাদিসে রয়েছে:

    عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نبَتَ منَ السُّحْتِ وكلُّ لحمٍ نبَتَ منَ السُّحْتِ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ

    জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে দেহের মাংস হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন (আহমাদ, দারেমী, বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৭২)।

    عَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ.

    আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)।

    এক কথায় হারামে বর্ধিত দেহ জান্নাতে যাবে না বরং জাহান্নামই তার জন্য অধিক উপযোগী। কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর আসবাব পত্র দেখাশুনার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল। সে যখন মারা গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন:

    هُوَ فِي النَّار - (بخاری)

    সে জাহান্নামী। (বুখারী-হাঃ নং-৩১১২)

    পরে সাহাবীগণ কারণ অনুসন্ধানের জন্য তার বাড়িতে গিয়ে দেখেন আ'বা নামক একটি বিশেষ ধরণের পোশাক যা সে আত্মসাৎ করেছিল। অন্য হাদীসে রয়েছে।

    لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ فُلاَنٌ شَهِيدٌ حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ فَقَالُوا فُلاَنٌ شَهِيدٌ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ كَلاَّ إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ غَلَّهَا أَوْ عَبَاءَةٍ ‏"‏

    যখন খায়বরের যুদ্ধের দিন আসল তখন রাসূলুল্লাহর একদল সাহাবী আগমন করলেন এবং বলতে লাগলেন: অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। একপর্যায়ে তারা (যুদ্ধে নিহত) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে বললেন: অমুক শহীদ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: কখনো নয়। আমি তাকে একটি চাদরের কারণে জাহান্নামে যেতে দেখেছি যা সে আত্মসাৎ করেছিল। অথবা একটি আ'বার কারণে (একটি বিশেষ পোশাক) (রিয়াদুস সালিহীন-২১৪, মুসলিম-২১০)

    إنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُونَ فِي مَالِ الله بغَيرِ حَقٍّ فَلَهُمُ النَّارُ يَومَ القِيَامَةِ رواه البخاري

    কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহর সম্পদে (বায়তুল-মাল, গণীমতের মাল, যাকাত ইত্যাদি) অন্যায় ভাবে তছরুপ করে থাকে। (অর্থাৎ শাসনকর্তার অনুমতি ব্যতিত, কিংবা নিজের প্রাপ্য হত্ত্ব বা প্রাপ্য পারিশ্রমিকের চেয়ে অধিক গ্রহণ করে) কিয়ামতের দিন এদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শান্তি। (বুখারী-৩১১৮)

    ঙ। চুরি করা জিনিস নিয়েই চোরের হাশর-নশর। কোন লোক যদি দুনিয়াতে কোন বস্তু আত্মসাৎ করে তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ বস্তুটি কাঁধে নিয়েই সে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে। হাশরবাসীরা সকলেই সেদিন জানতে পারবে যে অমুক সাধু লোকটি আসলে ছিল একটি চোর বা আত্মসাৎ কারী। হাদিসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ فكتمنا محيطا فما فوقة كان غُلُولاً يَأْتِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ أسود من الأنصار كأني الظرُ إِلَيْهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ قَالَ وَمَا لَكَ قَالَ سَمِعْتُكَ تَقُولُ كذا وكذا قال وأنا أقوله الآن مَنِ اسْتَعْمَلْناهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَجِيُّ بِقَلِيلِهِ وَكَثِيرِهِ فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أَخَذُ وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى (مسلم)

    আমরা তোমাদের কাউকে যদি সরকারী পদে নিয়োগ দেই এবং সে যদি তারপর একটা সুই পরিমান বস্তু অথবা তার চেয়েও বেশি কিছু আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারী রূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়েই হাশরের ময়দানে হাজির হবে। তখন আনসার গোত্রের জনৈক কালো ব্যক্তি তাঁর সামনে দাড়িয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আপনি আমার নিকট থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন। (বর্ণনাকারী) বলেন: (আমি যেন দৃশ্যটি দেখতে পাচ্ছি) তিনি বললেন: তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি আপনাকে এভাবে এভাবে বলতে শুনেছি। তিনি বললেন: আমি এখনও তাই বলব। আমরা তোমাদের কাউকে কোন পদে নিয়োগ করলে সে কম-বেশি কিছু নিয়ে আসবে। তা থেকে তাকে যা দেয়া হবে, সে যেন শুধু তাই নেয়, আর যা থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা থেকে সে যেন বিরত থাকে। (মুসলিম-৪৮৪৮)

    চ। আত্মসাৎকৃত বস্তু আগুনের রূপ ধারণ করবে।

    اهدى رجل لرسول الله صلى الله عليه وسلم غلاما يُقَالُ لَهُ مِدْعَمُ، فَبَيْنَمَا هُوَ يَحُطُّ رَحْلَ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم إذْ جَاءَهُ سَهُمْ غَائِرٌ حَتَّى أَصَابَ ذَلِكَ الْعَبْدَ، فَقَالَ النَّاسُ هَنِيئًا لَهُ الشَّهَادَةُ . فَقَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَصَابَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْمَغَائِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَسْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا فَجَاءَ رَجُلٌ حِينَ سَمِعَ ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بشراك أو بشراكين، فقال هذا شيء كنت أصبته . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " شراك أو شِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ (بخار)

    এক ব্যক্তি মিদআম নামক একটি গোলামকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট হাদিয়া প্রদান করল। একদা সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সওয়ারীর উপর থেকে হাওদা (গদী) নামিয়ে রাখছিল। এমন সময় অজ্ঞাত ব্যক্তি থেকে একটি তীর এসে তাকে বিদ্ধ করল। ফলে সে মারা গেল। লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, তার জন্য জান্নাত মোবারক হোক। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: কখনও নয়, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, খায়বর যুদ্ধের গণীমতের মাল থেকে বন্টন বাতিত সে যে চাদরখানা হস্তগত করেছে, তা অবশ্যই আগুন হয়ে তাকে দগ্ধ করছে। লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এই কঠোর বাণী শ্রবণ করার পর এক ব্যক্তি জুতার একটি কিংবা দুটি ফিতা এনে নবীজীর খেদমতে হাজির করল। (এটা সে বন্টন ছাড়াই নিয়েছিল) তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: এই একটি অথবা দুটি ফিতা আগুনের। (বুখারী-৪২৮১)

    إِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرَةً حُلْوَةٌ مَنْ أَصَابَهُ بِحَقَّةٍ يُورك لهُ فِيهِ وَرُبُ مُتَخَوَضٍ فِيمَا شَاءَتْ بِهِ نَفْسُهُ مِنْ مَالِ اللهِ وَرَسُولِهِ لَيْسَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا النَّارُ - (ترمذی)

    এই সব অর্থ-সম্পদ সজীব ও মধুর। যে ব্যক্তি ইহা হক ভাবে (হালাল পন্থায়) অর্জন করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেয়া হবে। আর অনেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্পদে সতর্কতা অবলম্বন করে না। কিয়ামতের দিন তার জন্য হবে আগুন। (তিরমিযি-২৫৪৮)

    সাবধানী ব্যক্তিদের লক্ষণ

    যে ব্যক্তির মধ্যে আখেরাতের জবাবদিহির অনুভূতি প্রকট, তার স্বভাব হবে এরূপ যে তিনি কখনও স্পষ্ট হারাম বিষয়ের আশ-পাশে তো আসবেই না; বরং হারামে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে অনেক সময় তিনি হালাল বিষয়ও বর্জন করে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

    لا يَبْلُغُ الْعَبْدُ أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُتَّقِينَ حَتَّى يَدَعْ مَا لا بَأْسَ بِهِ حَدْرًا لِمَا بِهِ الْبَأْسُ -

    কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীর স্তরে উপনিত হতে পারবে না, যতক্ষণ না অবৈধ জিনিসে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ জিনিসও ত্যাগ না করেছে। (তিরমিযি-২৬৩৯)

    الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَ ذلِكَ أُمُورٌ مُسْتَبِهَاتٌ لا يَدْرِي كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ أمِنَ الْحَلَالِ هِيَ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاء لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ وَمَنْ وَاقعَ شَيْئًا مِنْهَا يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَ الْحَرَامَ

    হালাল সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট। আর এদুয়ের মাঝখানে রয়েছে কিছু সন্দেহজনক জিনিস। অধিকাংশ লোকেরা অবগত নয় যে, এগুলো হালাল নাকি হারাম। কাজেই যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক জিনিস থেকে দূরে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে হেফাযত করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ল, সে হারামের মধ্যে ফেঁসে গেল। (তিরমিযি-১৩৪০)

    كان لأبي بكر الصديق غُلامٌ يُخْرِجُ لَهُ الخراج ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأْكُلْ مِنْ خَرَاجِهِ ، فَجَاءَ يَوْماً بشيء . فأَكَلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ لَهُ الغُلامُ : تَدْرِي مَا هَذا ؟ فقال أبو بكر : وَمَا هُوَ ؟ قَالَ : كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لإِنْسَانٍ في الجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الكهانة ، إلا أنّي خَدَعْتُهُ ، فَلَقِيَنِي ، فَأَعْطَانِي لِذلِكَ ، هَذَا الَّذِي أَكَلْتَ مِنْهُ ، فَأَدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنِهِ (رياض الصالحين ، بخاری

    আবু বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। সে প্রত্যহ তাঁকে রোজগার করে এনে দিত। আবু বকর (রাঃ) তার রোজগার থেকে যেতেন। একদিন সে কিছু সামগ্রী নিয়ে এল। আবু বকর (রাঃ) তার থেকে কিছু খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে জিজ্ঞেস করল: আপনি কি জানেন, এটা কী ছিল? আবু বকর পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন। কী ছিল এটা? ক্রীতদাসটি বলল: জাহিলিয়াতের যুগে আমি জনৈক ব্যক্তির হাত গুনেছিলাম। তখন অবশ্য গননাও আমি তেমন জানতাম না, আমি বরং তাকে ফাঁকিই দিয়েছিলাম। সে আমাকে (পূর্বের গণনার বিনিময়ে) এই জিনিসটি দিয়েছিল, যা আপনি এই মাত্র খেলেন। এ কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) মুখের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং পেটে যা কিছু ছিল সব বমি করে ফেলে দিলেন। (বুখারী-৩৮৪২. রিয়াদুস সালিহীন- ৫৯২)

    উপসংহার কল্যাণকর জীবন ব্যবস্থার নামই হলো ইসলাম। এ জীবন ব্যবস্থায় সেসকল বিষয়ই বৈধ বা হালাল যা মানুষের জন্য কল্যাণকর। আর যা অকল্যাণকর বা ক্ষতিকারক তা অবৈধ বা হারাম। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বা পরকালে জান্নাত লাভের জন্য আমাদেরকে সর্বদা হালাল উপার্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে নতুবা হারাম উপার্জনের জন্য পরকালে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।

    পিডিএফ ডাউনলোড

    সকল খুতবার তালিকা দেখুন


    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728