সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী: মহান ইসলামী নেতা ও জেরুজালেম বিজয়ীর জীবনকথা
![]() |
সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবীর জীবনী |
- জন্ম ও বংশপরিচয়: কোথায় জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পারিবারিক পটভূমি, কুর্দি বংশের পরিচয়।
- শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা: তাঁর শৈশবকালীন পরিবেশ, কোরআন-হাদীসের শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শে বেড়ে ওঠা।
- সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রাথমিক অভিজ্ঞতা: কৈশোর থেকে কীভাবে যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশল শিখেছিলেন।
- নুরুদ্দীন জাঙ্গীর প্রভাবে গড়ে ওঠা: নুরুদ্দীন জাঙ্গীর শাসনামলে তাঁর ভূমিকা ও দীক্ষা।
- মিসরে প্রেরণ ও প্রথম দায়িত্ব: ফাতেমী খেলাফতের পতনের প্রাক্কালে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
- মিসরের ওয়াজির হওয়া: কীভাবে তিনি মিসরের ওয়াজির নিযুক্ত হন এবং ফাতেমী প্রভাব কমান।
- খিলাফতের ঐক্য রক্ষা: আব্বাসীয় খলিফার আনুগত্যে আসা এবং ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।
- শক্তিশালী ইসলামী সেনাবাহিনী গঠন: সৈন্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা, ধর্মপ্রাণতা এবং জিহাদের স্পৃহা সৃষ্টি করা।
- ব্যক্তিগত চরিত্র ও জীবনযাপন: তাঁর বিনয়, সাদাসিধে জীবন, আল্লাহভীরুতা ও আমানতদারিত্ব।
- ক্রুসেডারদের সঙ্গে প্রথম সংঘর্ষ: ইউরোপীয় খ্রিস্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিজ্ঞতা।
- হাত্তিন যুদ্ধ (Battle of Hattin): ১১৮৭ সালের এই বিখ্যাত যুদ্ধ ও এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য।
- বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়: কীভাবে দীর্ঘ অবরোধের পর মুসলমানরা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করল।
- বিজয়ের পর খ্রিস্টানদের সঙ্গে আচরণ: ক্ষমাশীলতা, দয়ার্দ্রতা ও মানবিক আচরণ।
- সামরিক কৌশল ও নৌবাহিনী উন্নয়ন: তাঁর কৌশলী নেতৃত্ব ও ইসলামী সেনাবাহিনীর অগ্রগতি।
- খ্রিস্টান নেতাদের সঙ্গে কূটনীতি: রিচার্ড দ্য লায়নহার্টসহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক।
- তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি: ইবাদত, কুরআন-হাদীসের প্রতি ভালোবাসা ও আলেমদের সম্মান করা।
- ইসলামী বিশ্বে ঐক্যের ডাক: মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তি থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা।
- শেষ জীবন ও অসুস্থতা: তাঁর রোগভোগ, শেষ বয়সের সংগ্রাম ও ইবাদতে সময় ব্যয়।
- ইন্তিকাল ও জানাজা: ১১৯৩ সালে দামেস্কে তাঁর মৃত্যু এবং মুসলিম বিশ্বের শোক।
- ঐতিহাসিক প্রভাব ও উত্তরাধিকার: ইসলামী
ইতিহাসে তাঁর স্থান, পরবর্তী প্রজন্মের
অনুপ্রেরণা।
১। জন্ম ও বংশপরিচয়: কোথায় জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর পারিবারিক পটভূমি, কুর্দি বংশের পরিচয়।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ১১৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের তিকরিত নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম
ছিল ইউসুফ ইবনে আইয়ুব। তিনি কুর্দি বংশের অন্তর্গত এক সম্ভ্রান্ত ও ধার্মিক পরিবারে
জন্মেছিলেন। কুর্দিরা তাদের সাহস, বীরত্ব ও ধর্মনিষ্ঠার
জন্য সুপরিচিত ছিল, আর এ গুণাবলি পরবর্তীতে
সালাহ উদ্দীনের ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়। তাঁর পিতা নাজিমুদ্দীন
আইয়ুব ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, পরহেযগার ও ইসলামনিষ্ঠ
শাসকপ্রকৃতির মানুষ, যিনি কুর্দি সমাজে
নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করতেন। মা-ও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও সৎচরিত্রা নারী, যিনি ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ইসলামী আদর্শে লালন-পালন করেন।
সালাহ উদ্দীনের পরিবার
রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। তাঁর চাচা আসাদ উদ্দীন শিরকুহ ছিলেন দক্ষ সেনাপতি
এবং পরবর্তীতে সালাহ উদ্দীনের সামরিক জীবনে পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। শৈশব থেকেই সালাহ
উদ্দীন নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা ও সামরিক কৌশলে দীক্ষিত
হন। কুর্দি বংশের স্বাভাবিক বীরত্ব, পারিবারিক পরিবেশের ধর্মীয় চেতনা এবং শক্তিশালী সামরিক ঐতিহ্য তাঁর চরিত্র ও মানসিকতায়
এক অসাধারণ সমন্বয় ঘটায়। ফলে তিনি শুধু একজন মহান যোদ্ধাই নন, বরং একজন আদর্শ শাসক ও ইসলামের রক্ষক হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে
আছেন।
২। শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা – তাঁর শৈশবকালীন পরিবেশ, কোরআন-হাদীসের শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শে বেড়ে ওঠা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবীর শৈশব ছিল ধর্মীয় আদর্শ ও পারিবারিক নৈতিকতার আলোকে গড়ে ওঠা এক মহৎ সময়। তিনি
১১৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের তিকরিত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ছিল কুর্দি বংশোদ্ভূত, যাদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা, ন্যায়বোধ ও বীরত্বের দীর্ঘ ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। ছোটবেলা থেকেই সালাহ উদ্দীনকে
এক ইসলামী পরিবেশে লালন-পালন করা হয়। তাঁর পিতা নাজমুদ্দীন আয়ূব ও চাচা আসাদ উদ্দীন
শীরকুহ ছিলেন দৃঢ় ঈমানদার এবং সাহসী সামরিক নেতা। পরিবারের এই ধর্মীয় ও সামরিক আবহ
সালাহ উদ্দীনের শৈশব মানসগঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
তিনি অল্প বয়সেই
কুরআন তিলাওয়াত শিখে নেন এবং হাদীস অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করেন।
তাঁর শিক্ষকরা তাঁকে শুধু ধর্মীয় জ্ঞানই দেননি, বরং ইসলামী নীতি-নৈতিকতা, ন্যায়বিচার, বিনয় ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দিয়েছিলেন। শৈশবেই তাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি, সরলতা, পরোপকারিতা ও ইসলামের
প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয়। পাশাপাশি তিনি ফিকহ, আরবি সাহিত্য ও ইতিহাস অধ্যয়ন করেন, যা তাঁর চিন্তাশক্তি ও নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।
এই প্রাথমিক শিক্ষা
ও ইসলামী আদর্শেই তাঁর চরিত্র দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। পরবর্তীকালে যখন তিনি ইসলামের পতাকা
উঁচু করতে ও জেরুজালেম মুক্ত করতে সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন, তখন শৈশবকালীন এই ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক আদর্শই তাঁকে পথপ্রদর্শক
হিসেবে শক্তি যুগিয়েছিল।
৩। সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রাথমিক অভিজ্ঞতা – কৈশোর থেকে কীভাবে যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশল শিখেছিলেন।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশলের প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত
ছিলেন। কৈশোরকাল থেকেই তিনি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, অশ্বচালনা, তীরন্দাজি, তরবারি চালনা এবং সামরিক শৃঙ্খলার কঠোর অনুশীলন করেন। তাঁর চাচা
আসাদ উদ্দীন শিরকুহ ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি, যিনি কিশোর সালাহ উদ্দীনকে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার
সুযোগ দেন। এতে তিনি শুধু অস্ত্র চালানো শিখেননি, বরং যুদ্ধের পরিকল্পনা, সেনাবাহিনীর অবস্থান
নির্ধারণ,
শত্রুর দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং কৌশলগতভাবে আক্রমণ-প্রতিরক্ষা
গড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো গভীরভাবে রপ্ত করেন।
কৈশোরে তিনি বেশ
কয়েকটি অভিযানে অংশ নেন, যা তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতাকে
আরও সমৃদ্ধ করে। বিশেষ করে মিসর ও সিরিয়ার বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি মুসলিম সেনাদের
ঐক্য,
ধৈর্য ও কৌশলগত শক্তি প্রত্যক্ষ করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সাহস, ধৈর্য ও নেতৃত্বের গুণাবলি প্রদর্শন করতে শুরু করেন, যা পরবর্তীতে তাঁকে অসাধারণ সেনানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
কুর্দি বংশের স্বাভাবিক বীরত্ব, পারিবারিক সামরিক
ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিগত অধ্যবসায় তাঁকে এক অনন্য কৌশলী যোদ্ধায় রূপ দেয়। এভাবেই কৈশোরকালেই
তাঁর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সেনাপতিত্বের ভিত্তি গড়ে ওঠে।
৪। নুরুদ্দীন জাঙ্গীর প্রভাবে গড়ে ওঠা – নুরুদ্দীন জাঙ্গীর শাসনামলে তাঁর ভূমিকা ও দীক্ষা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ)-এর জীবনে নুরুদ্দীন জাঙ্গীর (রহঃ) ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
নুরুদ্দীন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ, ধর্মপ্রাণ ও দূরদর্শী মুসলিম শাসক, যিনি ইসলামের
স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সালাহ উদ্দীন কৈশোরকাল থেকে তাঁর শাসনামলে বেড়ে ওঠেন
এবং তাঁর তত্ত্বাবধানেই নেতৃত্ব ও শাসনের প্রকৃত শিক্ষা লাভ করেন। নুরুদ্দীন জাঙ্গীর
শুধু সামরিক কৌশল নয়,
বরং ইসলামী ন্যায়নীতি, শাসনব্যবস্থা এবং
উম্মাহর ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সালাহ উদ্দীনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন।
নুরুদ্দীনের অধীনে
কাজ করার সময় সালাহ উদ্দীন বুঝতে পারেন, ইসলামী রাষ্ট্রের
প্রকৃত শক্তি কেবল যুদ্ধ জয়ে নয়, বরং ন্যায়, ধর্মীয় অনুশাসন
ও জনগণের আস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর শাসননীতিতে দীনদারী, জিহাদের গুরুত্ব, ক্রুসেডারদের
মোকাবেলায় ঐক্য এবং দুর্বল মুসলিম রাজ্যগুলোকে একত্রিত করার আদর্শ সালাহ উদ্দীনের মনোজগতে
স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
নুরুদ্দীনের কাছ
থেকেই সালাহ উদ্দীন শিখেছিলেন, একজন নেতার মূল শক্তি হলো আল্লাহর
উপর ভরসা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, এবং জনগণের সাথে
আন্তরিক সম্পর্ক। এই শিক্ষার ফলেই সালাহ উদ্দীন পরবর্তীতে শুধু একজন সেনানায়ক নন, বরং একজন
আদর্শবাদী ইসলামী শাসক হিসেবে ইতিহাসে খ্যাতি লাভ করেন।
৫। মিসরে প্রেরণ ও প্রথম দায়িত্ব – ফাতেমী খেলাফতের পতনের প্রাক্কালে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মিসরে প্রেরণ। সেই সময় মিসর ছিল
ফাতেমী খেলাফতের অধীনে,
কিন্তু অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও রাজনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে
পড়েছিল। ক্রুসেডাররা এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মিসরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
নুরুদ্দীন জাঙ্গীর এই পরিস্থিতি অনুধাবন করে তাঁর দক্ষ সেনাপতি আসাদ উদ্দীন শিরকুহকে
মিসরে পাঠান এবং তাঁর সাথে তরুণ সালাহ উদ্দীনকেও প্রেরণ করেন।
মিসরে গিয়ে সালাহ
উদ্দীন প্রথমে শিরকুহের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। শিরকুহের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব ও সামরিক
দক্ষতা তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং দ্রুত শিখতে থাকেন। শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে
কৌশল, স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন, এবং দুর্বল প্রশাসনিক
কাঠামোকে সামলে নেওয়ার কাজে সালাহ উদ্দীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কয়েক দফা
অভিযানের পর অবশেষে মুসলিম বাহিনী ফাতেমী শাসনব্যবস্থার ভেতরে প্রভাব বিস্তার করে।
শিরকুহের মৃত্যুর
পর ১১৬৯ খ্রিষ্টাব্দে সালাহ উদ্দীনকে মিসরের ওয়াজির নিযুক্ত করা হয়। এটি ছিল তাঁর প্রথম
বড় রাজনৈতিক দায়িত্ব। তরুণ বয়সেই তিনি দৃঢ় প্রশাসনিক দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা
ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদর্শন করেন। ফাতেমী শাসন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকায় তাঁর প্রজ্ঞা
ও প্রভাবই পরবর্তীতে ফাতেমী খেলাফতের পতন এবং সুন্নি খেলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সুগম
করে।
৬। মিসরের ওয়াজির হওয়া – কীভাবে তিনি মিসরের ওয়াজির নিযুক্ত হন এবং ফাতেমী প্রভাব কমান।
সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী
(রহঃ) মিসরে প্রথমে চাচা আসাদ উদ্দীন শিরকুহের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েকটি সফল
সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মুসলিম বাহিনী মিসরের অভ্যন্তরে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। কিন্তু
১১৬৯ খ্রিষ্টাব্দে শিরকুহের আকস্মিক মৃত্যুর পর নুরুদ্দীন জাঙ্গীরের সমর্থন ও মিসরের
প্রভাবশালী মহলের সম্মতিতে সালাহ উদ্দীনকে ওয়াজির নিযুক্ত করা হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল
মাত্র ৩২ বছর। তরুণ বয়স হলেও তিনি স্বচ্ছ চরিত্র, ন্যায়পরায়ণতা এবং
অসাধারণ সামরিক যোগ্যতার কারণে দ্রুত সবার আস্থা অর্জন করেন।
মিসরের ওয়াজির হওয়ার
পর তাঁর প্রধান দায়িত্ব ছিল দুর্বল ফাতেমী শাসনকে সামলে নেওয়া এবং ক্রুসেডারদের আগ্রাসন
প্রতিহত করা। ফাতেমী খেলাফত ছিল শিয়াপন্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত, তাই সালাহ
উদ্দীন ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব কমাতে উদ্যোগ নেন। তিনি প্রশাসনে বিশ্বস্ত সুন্নি ব্যক্তিদের
নিয়োগ দেন, ইসলামী শরীয়তের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং জনগণের মাঝে আস্থা
ফিরিয়ে আনেন। পাশাপাশি ফাতেমী সেনাদের শৃঙ্খলায় আনতে সক্ষম হন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
হলো, তিনি খুতবায় ফাতেমী খলিফার নাম বাদ দিয়ে বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার
নাম ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা ফাতেমী খেলাফতের পতনের সূচনা
ঘটে এবং মিসরে সুন্নি প্রভাব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭। খিলাফতের ঐক্য রক্ষা – আব্বাসীয় খলিফার আনুগত্যে আসা এবং
ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।
সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী
(রহঃ) মিসরের ওয়াজির হওয়ার পর ইসলামী খিলাফতের ঐক্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ
করেন। ফাতেমী খেলাফতের সময় মিসরে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভাজন
গভীর ছিল। সালাহ উদ্দীন লক্ষ্য করেন, মুসলিম উম্মাহর শক্তি
ঐক্য ও একত্রিত নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করে। তিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফার আনুগত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা
করতে উদ্যোগ নেন। ওয়াজির হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি খুতবায় ফাতেমী খলিফার নাম
বাদ দিয়ে আব্বাসীয় খলিফার নাম ঘোষণা করেন। এটি ছিল সুন্নি মুসলিম সমাজে ঐক্য স্থাপনের
একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সালাহ উদ্দীন কেবল
শীর্ষ রাজনৈতিক পদক্ষেপেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি প্রশাসন ও সামরিক
ক্ষেত্রে সুন্নি নীতি প্রবর্তন করে ইসলামী ঐক্যকে শক্তিশালী করেন। তিনি স্থানীয় শাসক
ও সেনাদের মধ্যে সুন্নি প্রভাব বাড়ান, জনগণের আস্থা অর্জন
করেন এবং ধর্মীয় বিভাজন হ্রাসের জন্য ন্যায়পরায়ণ নীতি প্রয়োগ করেন। ফাতেমী প্রভাব কমানো
ও আব্বাসীয় খলিফার আনুগত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি ক্রুসেডারদের বিপরীতে মুসলিম সমাজকে
একত্রিত রাখার ভিত্তি গড়ে তোলেন।
ফলে, সালাহ উদ্দীনের
নেতৃত্বে মিসরে সুন্নি প্রভাব দৃঢ় হয় এবং মুসলিম খিলাফতের ঐক্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত
হয়। তাঁর এই উদ্যোগ কেবল মিসর নয়, সমগ্র ইসলামী বিশ্বে ঐক্য ও স্থিতিশীলতার
পথ সুগম করে।
৮। শক্তিশালী ইসলামী সেনাবাহিনী গঠন – সৈন্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা, ধর্মপ্রাণতা এবং জিহাদের স্পৃহা সৃষ্টি করা।
সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী
(রহঃ) মিসরের ওয়াজির ও পরে শাসক হওয়ার পর শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রিত ইসলামী সেনাবাহিনী
গঠনের উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বুঝেছিলেন, মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তা
এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু অস্ত্রের মধ্যে নয়, সৈন্যদের
নৈতিকতা ও একাগ্রতাতেও নিহিত। তাই তিনি সৈন্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা, ধার্মিকতা
এবং জিহাদের স্পৃহা সৃষ্টি করতে মনোযোগী হন। প্রতিটি সৈন্যকে আল্লাহর জন্য লড়াই করার
গুরুত্ব বোঝানো হতো।
সালাহ উদ্দীন সৈন্যদের
প্রশিক্ষণকে কেবল শারীরিক দক্ষতায় সীমাবদ্ধ রাখেননি; তারা কোরআন ও হাদীসের
শিক্ষা গ্রহণ করতেন,
যাতে লড়াই শুধু সামরিক উদ্দেশ্যেই না হয়ে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে
পরিগণিত হয়। তিনি সৈন্যদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, সাহস ও ধৈর্য বৃদ্ধি
করতে নিয়মিত অনুশীলন করাতেন। সামরিক শৃঙ্খলা কঠোরভাবে রক্ষা করা হতো, এবং আনুগত্য, সততা ও দায়িত্ববোধকে
সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হতো।
ফলে, সালাহ উদ্দীনের
নেতৃত্বে গঠিত সেনাবাহিনী শুধু শক্তিশালী অস্ত্রশক্তি নয়, বরং নৈতিক
ও ধর্মপ্রাণ সৈন্যদের সমন্বয়ে গঠিত এক অনন্য দল হিসেবে পরিচিত হয়। এই বাহিনী ক্রুসেডারদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করে এবং ইসলামের প্রতিরক্ষা ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
৯। ব্যক্তিগত চরিত্র ও জীবনযাপন – তাঁর বিনয়, সাদাসিধে জীবন, আল্লাহভীরুতা ও আমানতদারিত্ব।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ব্যক্তিগত জীবন ও চরিত্রে ছিলেন অনন্য উদাহরণ। তিনি সম্পূর্ণ বিনয়ী ও
নম্রচিত্ত ব্যক্তি ছিলেন,
এমনকি শাসক পদে থাকলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজভাবে আচরণ করতেন।
অহংকার ও অভিমান তাঁর জীবন থেকে দূরে ছিল। দৈনন্দিন জীবনযাপনেও তিনি সাদাসিধে জীবন
ধারণ করতেন—অত্যধিক বিলাসিতা ও সমৃদ্ধির প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তিনি
সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে সন্তুষ্ট থাকতেন এবং প্রয়োজনের বাইরে সম্পদ সঞ্চয় করতেন না।
আল্লাহভীরুতা সালাহ
উদ্দীনের জীবনের মূল ভিত্তি ছিল। তিনি সব কাজেই আল্লাহর নির্দেশ ও সন্তুষ্টি প্রাধান্য
দিতেন। নামাজ, ইবাদত ও কোরআনের পাঠ তাঁর নিয়মিত জীবনের অংশ ছিল। সেনাপতি ও
শাসক হলেও তিনি ন্যায্যতা ও ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করতেন, যা তার নেতৃত্বকে
আরও প্রভাবশালী করেছিল।
সালাহ উদ্দীন ছিলেন
অত্যন্ত আমানতদার। দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পদ, সেনা ও রাজ্য পরিচালনায়
তিনি সর্বদা সততা ও ন্যায্যতা বজায় রাখতেন। অনৈতিক বা অনৈতিক প্রলোভনের কাছে তিনি কখনো
নত হননি। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা, সৈন্যদের প্রতি ন্যায়পরায়ণতা
এবং শত্রুদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একজন মহান নেতা নন, বরং সৎ ও
ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবেও ইতিহাসে অমর।
১০। ক্রুসেডারদের সঙ্গে প্রথম সংঘর্ষ – ইউরোপীয় খ্রিস্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক অভিজ্ঞতা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ক্রুসেডারদের সঙ্গে তাঁর প্রথম
সংঘর্ষ। তরুণ বয়সে মিসরে প্রেরণ হওয়ার পর তিনি চাচা আসাদ উদ্দীন শিরকুহের অধীনে সামরিক
অভিযানে অংশ নেন। এই সময় তিনি ইউরোপীয় খ্রিস্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বাস্তব যুদ্ধের
অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ক্রুসেডাররা তখন ফাতেমী খেলাফতের দুর্বলতা এবং মুসলিম অঞ্চলে বিভাজনকে
কাজে লাগিয়ে আগ্রাসন চালাচ্ছিল।
প্রথম সংঘর্ষে সালাহ
উদ্দীন শিখেন কৌশলগত পরিকল্পনা, সৈন্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং শত্রুর
দুর্বলতা চিহ্নিত করে আক্রমণ চালানোর কলা। তিনি কেবল অস্ত্র চালনার দক্ষতাই অর্জন করেননি, বরং যুদ্ধের
সময় নেতৃত্ব, ধৈর্য এবং সাহসের মূল্যও উপলব্ধি করেন। তিনি সৈন্যদের মধ্যে
আত্মবিশ্বাস ও জিহাদের উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে মনোযোগী ছিলেন। এই সংঘর্ষ তাকে বোঝায়
যে, শুধু শক্তিশালী বাহিনী নয়, বরং সুসংগঠিত, নৈতিক ও ঐক্যবদ্ধ
সৈন্যদলই যুদ্ধের সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে।
এই প্রথম অভিজ্ঞতা
পরবর্তীতে সালাহ উদ্দীনের সামরিক কৌশল, নেতৃত্ব ও নীতি তৈরিতে
মৌলিক ভূমিকা রাখে। ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে অর্জিত শিক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা
তাঁকে এক দক্ষ সেনানায়ক এবং পরবর্তীতে ইসলামের রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
১১। হাত্তিন যুদ্ধ (Battle of Hattin) – ১১৮৭ সালের এই বিখ্যাত যুদ্ধ ও এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য।
হাত্তিন যুদ্ধ (১১৮৭
খ্রিষ্টাব্দ) সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবীর (রহঃ) সামরিক কৌশল ও নেতৃত্বের সর্বোচ্চ
উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্রুসেডার রাজারা মুসলিম ভূখণ্ড দখল করতে চেষ্টা করছিল, বিশেষ করে
জেরুসালেম পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে। সালাহ উদ্দীন তাঁর শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সেনা নিয়ে
ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে হাত্তিনের সমভূমিতে অবস্থান নেন। তিনি মাঠের পরিবেশ, জলাশয় ও
আক্রমণের কৌশল ব্যবহার করে শত্রুকে অতীব চাপের মধ্যে ফেলে দেন।
যুদ্ধে সালাহ উদ্দীন
সৈন্যদের মধ্যে অসীম আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য এবং জিহাদের উদ্দীপনা সৃষ্টি
করেছিলেন। ক্রুসেডার বাহিনী, যারা জল-অভাব ও তীব্র তাপের সম্মুখীন
হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম বাহিনী কৌশলগতভাবে
তাদের চারপাশ ঘিরে ধরে,
ক্রুসেডারদের নেতৃত্ব বিনষ্ট করে এবং অধিকাংশ সৈন্যকে বন্দি
করে। এই জয় কেবল সামরিকভাবে নয়, ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ
ছিল।
হাত্তিন যুদ্ধে জেরুসালেম
পুনরুদ্ধারের পথ সুগম হয় এবং সালাহ উদ্দীন মুসলিম বিশ্বে অদম্য সেনানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
হন। এই যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে ইসলামী একতার, নেতৃত্ব ও কৌশলের
প্রতীক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এছাড়া ক্রুসেডারদের মানসিক ও সামরিক শক্তিকে
ভেঙে দেয়া এই যুদ্ধের অন্যতম তাৎপর্য।
১২। বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় – কীভাবে দীর্ঘ অবরোধের পর মুসলমানরা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করল।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবীর (রহঃ) নেতৃত্বে ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) মুসলিমদের
কাছে পুনরুদ্ধার করা হয়। হাত্তিন যুদ্ধে ক্রুসেডার বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর, সালাহ উদ্দীন
ইসলামী ঐক্য বজায় রেখে জেরুজালেমের দিকে অগ্রসর হন। শহরটি তখন কঠিন অবস্থায় ছিল, ক্রুসেডারদের
শাসন দুর্বল এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন গভীর। সালাহ উদ্দীন দীর্ঘ পরিকল্পনা ও কৌশলগত অবরোধ
প্রয়োগ করেন, যাতে শহরের লোক ও প্রতিরক্ষাবলকে অতিরিক্ত ক্ষতি না হয়।
জেরুজালেম অবরোধের
সময় তিনি মানবিক নীতি মেনে চলেন। শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, শত্রু সৈন্যদেরকে
উত্তম প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেন। অবরোধ ও রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয়ে
ক্রুসেডাররা অবশেষে শহর ছাড়তে বাধ্য হয়। সালাহ উদ্দীন মুসলিমদের জন্য শহর পুনরুদ্ধার
করেন, কিন্তু অধিনস্থ জনগণের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন এবং অযথা হত্যাযজ্ঞ
বা ধ্বংসকার্য না করেন।
এই বিজয় কেবল সামরিক
কৌশলের ফল নয়, বরং ন্যায়পরায়ণতা, মানবিক দৃষ্টি ও
ইসলামী নীতির প্রতিফলন। বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধার মুসলমানদের মধ্যে আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা
জাগিয়ে তোলে এবং সালাহ উদ্দীনকে ইতিহাসে একজন মহান নেতা ও ধার্মিক রক্ষক হিসেবে অমর
করে।
১৩। বিজয়ের পর খ্রিস্টানদের সঙ্গে আচরণ – ক্ষমাশীলতা, দয়ার্দ্রতা ও মানবিক আচরণ।
জেরুজালেম বিজয়ের
পর সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী (রহঃ) মুসলিম এবং খ্রিস্টান উভয় পক্ষের প্রতি মানবিক
ও ন্যায়পরায়ণ আচরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি শহর দখলের পর কোনও হত্যাযজ্ঞ
বা ধ্বংসাত্মক কাজ করতে চাননি। খ্রিস্টানদের ওপর ক্ষমাশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে তাদেরকে
মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। শহরের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপদ আবাস, খাদ্য ও অন্যান্য
প্রয়োজনীয় সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়।
সালাহ উদ্দীন যুদ্ধে
বন্দি হওয়া ক্রুসেডারদের জন্য মুক্তিপণ নির্ধারণ করেন, যাতে তারা
শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তি পেতে পারে। সাধারণ জনগণ, নারী ও শিশুদের ওপর
কোনও অত্যাচার চালানো হয়নি। তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ প্রদর্শন
করেন, যা মুসলিম এবং খ্রিস্টান উভয় সমাজে প্রশংসিত হয়। এই মানবিক
দৃষ্টিভঙ্গি শুধু যুদ্ধজয়কে মহিমান্বিত করেনি, বরং ইসলামী নৈতিকতা
ও ন্যায়পরায়ণতার শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়েছে।
তার এই ক্ষমাশীল
এবং দয়ার দৃষ্টান্ত মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ইসলামের ন্যায়, সহমর্মিতা
ও মানবিক মূল্যবোধের উচ্চমাত্রার পরিচায়ক হিসেবে স্মরণীয়। এটি শুধু জেরুজালেম বিজয়কে
নয়, সালাহ উদ্দীনের চরিত্রকে চিরস্থায়ীভাবে মহান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
করেছে।
১৪। সামরিক কৌশল ও নৌবাহিনী উন্নয়ন – তাঁর কৌশলী নেতৃত্ব ও ইসলামী সেনাবাহিনীর অগ্রগতি।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) তাঁর নেতৃত্বে সামরিক কৌশল ও নৌবাহিনী উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেন। তিনি বুঝেছিলেন, ইসলামী রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং
ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরক্ষা শুধুমাত্র স্থলবাহিনীর শক্তি নির্ভর করে না, বরং সমুদ্রপথেও
দৃঢ় নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাই তিনি সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত সেনা গঠন করার পাশাপাশি নৌবাহিনীও
শক্তিশালী করেন।
সালাহ উদ্দীন যুদ্ধ
কৌশলে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি প্রতিটি অভিযান আগে থেকে পরিকল্পনা করতেন, শত্রুর দুর্বলতা
বিশ্লেষণ করে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। সৈন্যদের শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাস
ও জিহাদের উদ্দীপনা তৈরি করতেন, যাতে তারা একতাবদ্ধভাবে এবং লক্ষ্যভেদীভাবে
লড়তে পারে। তিনি স্থল ও নৌবাহিনীর সমন্বয় নিশ্চিত করে শত্রুদের ওপর অতুলনীয় চাপ প্রয়োগ
করতেন।
নৌবাহিনীর উন্নয়নের
মাধ্যমে তিনি ক্রুসেডারদের সামুদ্রিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন, যা যুদ্ধের
পরিস্থিতিকে ইসলামের পক্ষে পরিবর্তন করে। এই কৌশলিক নেতৃত্ব ও আধুনিক পরিকল্পনার ফলে
ইসলামী সেনাবাহিনী শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং ধারাবাহিকভাবে সফল হয়ে
ওঠে। সালাহ উদ্দীনের সামরিক কৌশল ও নৌবাহিনী উন্নয়ন ইতিহাসে ইসলামী প্রতিরক্ষা ও নেতৃত্বের
এক অসাধারণ অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।
১৫। খ্রিস্টান নেতাদের সঙ্গে কূটনীতি – রিচার্ড দ্য লায়নহার্টসহ ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) কেবল একজন দক্ষ সেনানায়কই ছিলেন না, বরং কূটনীতি ও কৌশলী
কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষাতেও অনন্য প্রতিভা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ক্রুসেডারদের সঙ্গে
লড়াই চালানো সত্ত্বেও কখনও অপ্রয়োজনীয় বিরোধ তৈরি করতেন না। বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
ও ইসলামের স্বার্থ নিশ্চিত করতে তিনি কূটনৈতিক উপায় অবলম্বন করতেন।
১১৯১ খ্রিষ্টাব্দের
তৃতীয় ক্রুসেডের সময় রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট এবং অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে
সালাহ উদ্দীনের সম্পর্ক কূটনৈতিক শৈলীর নিদর্শন। তিনি যুদ্ধের মধ্যেও খ্রিস্টান নেতাদের
সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুযোগ রাখতেন। বন্দিদের মুক্তি, প্রয়োজনীয়
চুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতেন।
সালাহ উদ্দীনের কূটনীতি ছিল ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে, যা তাকে সৈনিক
এবং কূটনীতিবিদ উভয় হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
এই সম্পর্কের মাধ্যমে
তিনি ক্রুসেডারদের দমন ও ইসলামী ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। তার কূটনৈতিক
দক্ষতা যুদ্ধকৌশলের সাথে সমন্বয় করে মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় পক্ষের জন্য সম্মান ও
মর্যাদাপূর্ণ সমাধানের পথ সুগম করে। সালাহ উদ্দীনের এই নীতি ইতিহাসে চিরস্মরণীয়, যা নেতৃত্ব
ও কূটনীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
১৬। তাঁর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি – ইবাদত, কুরআন-হাদীসের প্রতি
ভালোবাসা ও আলেমদের সম্মান করা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) তাঁর ধর্মীয় চেতনা ও ইবাদতের প্রতি নিবেদিত জীবনযাপনের জন্য মুসলিম ইতিহাসে
চিরস্মরণীয়। তিনি কেবল একজন শক্তিশালী সেনাপতি ও শাসক ছিলেন না, বরং অত্যন্ত
ধার্মিক ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিত্ব ছিলেন। দৈনন্দিন জীবনে নামাজ, রোজা ও কোরআনের
পাঠ তাঁর নিত্যকর্মের অংশ ছিল। এই ইবাদত তাঁকে মানসিক দৃঢ়তা, ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতা
প্রদান করত, যা সামরিক ও প্রশাসনিক কাজে তাকে অতুলনীয় করে তুলেছিল।
সালাহ উদ্দীন কুরআন-হাদীসকে
তাঁর জীবন পরিচালনার মূল দিক হিসেবে গ্রহণ করতেন। প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কৌশল ইসলামি
নীতি ও ন্যায়বোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো। তিনি আলেম ও ধর্মীয় শিক্ষাবিদদের সম্মান
করতেন এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর
উন্নয়নে তিনি বিশেষ মনোযোগ দিতেন, যাতে সাধারণ মানুষ
ও সৈন্যরা ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
কেবল ব্যক্তিগত পুণ্যপরায়ণতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং প্রশাসন, যুদ্ধ কৌশল
এবং জনগণের সঙ্গে আচরণেও প্রতিফলিত হতো। আল্লাহভীরুতা, ন্যায়পরায়ণতা
ও ইবাদতে নিয়মানুবর্তিতা সালাহ উদ্দীনের চরিত্রকে চিরস্থায়ী মহিমায় আলোকিত করেছে, যা তাঁকে
মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্য ও আদর্শ নেতায় পরিণত করেছে।
১৭। ইসলামী বিশ্বে ঐক্যের ডাক – মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তি থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ইসলামী বিশ্বে ঐক্যের দৃঢ় প্রবক্তা ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, মুসলিম উম্মাহ
ক্রমশ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভাজনের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা ক্রুসেডারদের
আক্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করছিল। তাই তিনি মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল
অবলম্বন করেন। তিনি শাসক ও সেনাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ন্যায়, ধর্মীয় নীতি
ও ইসলামী শরীয়তের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যা মুসলিমদের মধ্যে
আস্থা এবং আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করত।
সালাহ উদ্দীন স্থানীয়
শাসক, সেনাপতি ও সাধারণ মুসলিম জনগণের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করার চেষ্টা
করেছিলেন। তিনি ধর্মীয় বিভাজন হ্রাসে উদ্যোগ নেন, সুন্নি নীতি প্রতিষ্ঠা
করেন এবং শিয়াপন্থীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টার
মাধ্যমে তিনি মুসলিম উম্মাহকে ক্রমশ রাজনৈতিক ও সামরিক ঐক্যের দিকে পরিচালিত করেন।
তিনি বুঝতেন যে ইসলামের
প্রতিরক্ষা কেবল যুদ্ধজয়ের ওপর নির্ভর করে না, বরং উম্মাহর মধ্যে
ঐক্য ও নৈতিক দৃঢ়তার মধ্যেও নিহিত। সালাহ উদ্দীনের এই উদ্যোগ মুসলিম সমাজে ঐক্য এবং
আত্মবিশ্বাস স্থাপন করে,
যা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরক্ষা এবং ইসলামের স্থিতিশীলতা
নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব ইসলামী
ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
১৮। শেষ জীবন ও অসুস্থতা – তাঁর রোগভোগ, শেষ বয়সের সংগ্রাম ও ইবাদতে সময় ব্যয়।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) জীবনের শেষ পর্যায়ে নানা অসুস্থতা ও রোগভোগের সম্মুখীন হন। বৃদ্ধ বয়সে
শরীরের দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ, প্রশাসনিক
দায়িত্ব ও কঠোর জীবনযাপনের কারণে। এ সময়েও তিনি ইবাদত ও আল্লাহভীরুতা থেকে এক মুহূর্তও
অব্যাহতি নেননি। প্রতিদিনের নামাজ, কোরআনের পাঠ এবং
রোজা তাঁর জীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল। অসুস্থতা থাকলেও তিনি ধৈর্য, নম্রতা ও
আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ ভরসা বজায় রাখতেন।
শেষ সময়েও সালাহ
উদ্দীন সেনা, প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে মনোযোগ সরাননি। তিনি সুস্থতার
সঙ্গে সৈন্যদের তদারকি,
জনগণের কল্যাণ এবং ইসলামী ন্যায়বোধ রক্ষা করতেন। অসুস্থতার
মধ্যেও তিনি আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন এবং ইসলামের নীতি অনুসারে
রাজ্য পরিচালনা নিশ্চিত করতেন।
সালাহ উদ্দীনের জীবনশেষ
প্রমাণ করে যে, তিনি শুধু একজন মহান নেতা নন, বরং ধার্মিক, ধৈর্যশীল
ও আল্লাহভীরু ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর রোগভোগ ও শেষ বয়সের সংগ্রাম তাঁর ধৈর্য, ইমান ও নৈতিক
দিকের প্রতিফলন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত
রাখেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য ন্যায়, শান্তি ও ঐক্যের
উদাহরণ স্থাপন করেন। তাঁর এই জীবন ও মৃত্যু ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ও অনুপ্রেরণার উৎস
হয়ে আছে।
১৯। ইন্তিকাল ও জানাজা – ১১৯৩ সালে দামেস্কে তাঁর মৃত্যু এবং মুসলিম বিশ্বের শোক।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে দামেস্কে ইন্তিকাল করেন। তাঁর মৃত্যু মুসলিম উম্মাহর
জন্য এক গভীর শোকের সময় ছিল। তিনি দীর্ঘজীবন যুদ্ধ, প্রশাসন ও ইসলামের
সেবায় কাটিয়েছিলেন,
তাই তাঁর প্রয়াণ মুসলিম সমাজে বিশাল শূন্যতা তৈরি করে। সালাহ
উদ্দীনের মৃত্যুতে মুসলিম জনগণ, সৈন্য এবং আলেমরা গভীর শোক প্রকাশ
করে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শাসক ও সেনাপতি পর্যন্ত সবাই তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, মানবিকতা
এবং আল্লাহভীরুতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
জানাজা অনুষ্ঠিত
হয় ইসলামি বিধান অনুসারে,
যেখানে হাজার হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। সালাহ উদ্দীনের জীবনের
সমস্ত কীর্তি এবং অবদান স্মরণ করে মুসলিমরা তাঁর জন্য দোয়া করেন। তাঁর জানাজায় উপস্থিত
সবাই তাঁকে শুধু একজন মহান সেনাপতি নয়, বরং একজন ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ
এবং মানবিক নেতা হিসেবে সম্মান জানায়।
মৃত্যুর পরও সালাহ
উদ্দীনের প্রভাব মুসলিম সমাজে দীর্ঘস্থায়ী হয়। জেরুজালেম পুনরুদ্ধার, ইসলামী ঐক্য
প্রতিষ্ঠা, ক্ষমাশীল নেতৃত্ব এবং ন্যায়পরায়ণ শাসনের কারণে তিনি ইতিহাসে
চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। তাঁর ইন্তিকাল মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি দার্শনিক ও নৈতিক
পাঠ হয়ে যায়, যা নেতৃত্ব, ধর্মীয় নীতি এবং
মানবিকতার সঙ্গে মিলিত হলে কীভাবে একজন সত্যিকারের নেতা হওয়া যায়, তা প্রমাণ
করে।
২০। ঐতিহাসিক প্রভাব ও উত্তরাধিকার – ইসলামী ইতিহাসে তাঁর স্থান, পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা।
সুলতান সালাহ উদ্দীন
আইয়ুবী (রহঃ) ইসলামী ইতিহাসে একজন অসামান্য নেতা ও সেনানায়ক হিসেবে স্থায়ী স্থান
অধিকার করেছেন। তিনি কেবল ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় নিশ্চিত করেননি, বরং ইসলামী
ঐক্য, ন্যায়পরায়ণ শাসন এবং ধর্মীয় সহনশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
করেন। জেরুজালেম পুনরুদ্ধার, সৈন্য ও সাধারণ জনগণের প্রতি দয়া, বন্দিদের
মুক্তি, এবং প্রশাসনে সততা ও ন্যায়পরায়ণতা তাঁর নেতৃত্বকে ইতিহাসে
অনন্য করে তোলে। এই সব কীর্তি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা
করে।
সালাহ উদ্দীনের নেতৃত্ব, কৌশল এবং
মানবিক আচরণ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা। মুসলিম শাসক ও সৈন্যরা তাঁকে আদর্শ
হিসেবে গ্রহণ করে যুদ্ধ,
প্রশাসন ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা নেন। তাঁর জীবনপথ দেখায় কিভাবে
একজন নেতা আল্লাহভীরুতা,
ন্যায়পরায়ণতা এবং ধৈর্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণ
নিশ্চিত করতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে সালাহ
উদ্দীনের প্রভাব শুধু সামরিক জয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইসলামী সমাজের
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মান বৃদ্ধি, প্রশাসনিক দক্ষতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার
ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী শিক্ষা প্রদান করে। তাই তিনি মুসলিম ইতিহাসে একজন চিরস্মরণীয়
নেতা ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে অমর।
No comments