নেককার সন্তান লাভের কয়েকটি কুরআনিক দু'য়া
দোয়া-১
হযরত জাকারিয়া আঃ এর দোয়া
সন্তান লাভের কুরআনিক দু’আ |
رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً
طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী। [সূরা আল-ইমরান ৩:৩৮]
তাফসিরঃ
হযরত যাকারিয়া (আঃ) দেখেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মারইয়াম (আঃ)-কে অসময়ের ফল দান করছেন। শীতকালে গ্রীষ্মকালের ফল এবং গ্রীষ্মকালে শীতকালের ফল তাঁর নিকট বিদ্যমান থাকছে। সুতরাং তিনিও স্বীয় বার্ধক্য ও স্বীয় সহধর্মিণীর বন্ধ্যাত্ব জানা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলার নিকট অসময়ে ফল অর্থাৎ সুসন্তান লাভের প্রার্থনা জানাতে থাকেন। আর যেহেতু এটা বাহ্যতঃ অসম্ভব জিনিস ছিল, তাই তিনি অতি সন্তর্পণে এ প্রার্থনা জানান। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ‘নেদায়ান খাফীয়া অর্থাৎ ‘গোপন প্রার্থনা।' (তাফসিরে ইবনে কাসির।)
হযরত ইব্রাহিম আঃ এর দোয়া
দোয়া-২
সন্তান লাভের কুরআনিক দু’আ |
رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ
مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ
وَمِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ٭ۖ
رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ
دُعَآءِ
হে
আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের
মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা,
এবং
কবুল করুন আমাদের দোয়া। [সুরা ইব্রাহিম ১৪:৪০]
তাফসির
ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ এখানে আল্লাহ তাআলা স্বীয় বন্ধু ইবরাহীম খালীলের (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার ইচ্ছা ও মনের বাসনা আমার চেয়ে আপনিই ভাল জানেন। আমি চাই যে, এখানকার অধিবাসীরা যেন আপনার সন্তুষ্টি কামনাকারী হয় এবং শুধুমাত্র আপনারই প্রতি অনুরাগী হয়। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই আপনার কাছে পূর্ণরূপে জ্বাজ্জল্যমান। যমীন ও আসমানের প্রতিটি জিনিসের অবস্থা সম্পর্কে আপনি ওয়াকিফহাল। এটা আমার প্রতি আপনার বড় অনুগ্রহ যে, এই বৃদ্ধ বয়সেও আপনি আমাকে ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাকের (আঃ) । নয় দু’টি সুসন্তান দান করেছেন। আপনি প্রার্থনা কবুলকারী বটে। আমি চেয়েছি আর আপনি দিয়েছেন। সুতরাং হে আমার প্রতিপালক! এজন্যে আমি আপনার নিকট বড়ই কৃতজ্ঞ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি নামায প্রতিষ্ঠিতকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্যেও এই সিলসিলা বা ক্ৰম কায়েম রাখুন! আমার সমস্ত প্রার্থনা কবুল করুন।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)
দোয়া-৩
সন্তান লাভের কুরআনিক দু’আ |
رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
অর্থাৎ হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৮৯ ]
তাফসির
আল্লাহ
তাআলা স্বীয় বান্দা হযরত যাকারিয়্যার (আঃ) খবর দিচ্ছেন যে, তিনি
প্রার্থনা করেছিলেনঃ “আমাকে একটি সন্তান দান করুন, যে
আমার পরে নবী হবে।” সূরায়ে
মারইয়াম ও সূরায়ে আল-ইমরানে এই ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি এই দুআ’
নির্জনে
করেছিলেন।
‘আমাকে একা ছেড়ে দিয়েন না, এই উক্তির তাৎপর্য হচ্ছেঃ আমাকে সন্তানহীন করবেন না। দুআ ও চাওয়ার জন্যে তিনি আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রার্থনা কবূল করেন এবং তার যে স্ত্রী বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন তাকে তিনি সন্তানের যোগ্যা করে তোলেন। হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, তিনি বন্ধ্যা ছিলেন, অতঃপর তিনি সন্তান প্রসব করেন। (তাফসির ইবনে কাসির)
নেককার সন্তানের জন্য দোয়া
দোয়া-৪
সন্তান লাভের কুরআনিক দু’আ |
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا
قُرَّةَ أَعْيُنٍ
وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ
إِمَامًا
অর্থাৎ
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততিদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদেরকে সংযমীদের আদর্শস্বরূপ
করো।” [সুরা ফুরকান ২৫:৭৪]
তাফসির
তারা আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্যে এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্যে নয়ন প্রীতিকর হয়। অর্থাৎ তারা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে যে, তাদের সন্তান-সন্ততিও যেন তাদের মত একত্ববাদী হয় এবং মুশরিক না হয়, যাতে দুনিয়াতেও ঐ সুসন্তানদের কারণে তাদের অন্তর ঠাণ্ডা থাকে এবং আখিরাতেও তাদের ভাল অবস্থা দেখে তারা খুশী হতে পারে। এই প্রার্থনার উদ্দেশ্য তাদের দৈহিক সৌন্দর্য নয়, বরং সততা ও সুন্দর চরিত্রই উদ্দেশ্য। মুসলমানদের প্রকৃত আনন্দ এতেই রয়েছে যে, তারা তাদের সন্তানদেরকে ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে আল্লাহর অনুগত বান্দারূপে দেখতে পায়। তারা যেন যালিম না হয়, দুষ্কৃতিকারী না হয়, বরং খাটি মুসলমান হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
হযরত ইব্রাহিম আঃ এর দোয়া
দোয়া-৫
সন্তান লাভের কুরআনিক দু’আ |
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থাৎ হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দাও৷ [সুরা সফফাত ৩৭:১০০]
তাফসির
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ প্রদান করছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমান আনয়ন হতে নিরাশ হয়ে গেলেন, কারণ তারা আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশক বহু নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনলো না, তখন তিনি সেখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে ইচ্ছা করে প্রকাশ্যভাবে তাদেরকে বললেনঃ “আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম। তিনি অবশ্যই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আর তিনি প্রার্থনা করলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন!” অর্থাৎ ঐ সন্তান যেন একত্ববাদে তাঁর সঙ্গী হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।” ইনিই ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথম সন্তান। (তফসির ইবনে কাসির)
কুরআনিক দোয়া (সুরা আল ইমরান, সুরা নিসা, সুরা আল মায়িদাহ, সুরা আনআম, সুরা আরাফ)
কুরআনিক দু’আ |
নেককার সন্তানের জন্য হযরত যাকারিয়া (আঃ) এর দোয়াঃ
ہُنَالِکَ دَعَا زَکَرِیَّا رَبَّہٗ ۚ قَالَ رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ
সেখানেই যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেন, হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল ইমরান – 3:38)
নিরাপত্তার চাদরঃ আয়াতুল কুরসী
আয়াতুল কুরসি |
পবিত্র এ আয়াতটি পরকালীন সফলতার বাতিঘর। হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেন, ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠকারী মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পাবে জান্নাত- (সুনানে নাসায়ি : ৯৯১৮)।
কবর জিয়ারতের সুন্নাহ পদ্ধতি
কবর জিয়ারত |
শুধু এসব উদ্দেশ্যেই শরিয়তে কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুবা ইসলামের সূচনালগ্নে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)
মাত্র এক মিনিটে যেসব আমল করতে পারেন।
১) সূরা ফাতিহা দ্রুতগতিতে মনে মনে তিন বার পড়তে পারেন।
কুরআন-সুন্নাহর যেসব দোয়া ও আমল করার সময় এখনই
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা অপরাধীদের শাস্তি ও অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে অবাধ্যতার পাপে কী ধরনের মহামারি, দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় মানুষের অবগতির জন্য তা এভাবে তুলে ধরেছেন-
কুরআনের দোয়া (সুরাহ বাক্বারা) QURANIC DUA- Surah Al-BAQARAH (البقرة) (VL-01)
QURANIC DUA- Surah Al-BAQARAH (البقرة) |
০১। এলাকাবাসীদের জন্য দোয়াঃ
رَبِّ اجۡعَلۡ ہٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّارۡزُقۡ اَہۡلَہٗ مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنۡ اٰمَنَ مِنۡہُمۡ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ
হে পরওয়ারদেগার! এ স্থানকে তুমি শান্তি দান
কর এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা
রিযিক দান কর।
০২। দোয়া কবুলের জন্যঃ
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
হে পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি
শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
কুরআনের দোয়া (সুরাহ আল ইমরান) Quranic Dua- Surah Al Imran (Vl-02)
Quranic Dua- Surah Al Imran V-2 |
০১ হেদায়াতের দোয়াঃ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
হে
আমাদের প্রতিপালক! সরলপথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সকল প্রকার সংশয় ও বিভ্রান্তি
থেকে মুক্ত রেখো। তোমার রহমতের ছায়ায় আমাদের রেখো। নিশ্চয়ই তুমি সব কিছুর দাতা (ইমরান 3:8)
০২ কুরআনের দোয়াঃ
رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি মানবজাতিকে একদিন একইস্থানে সমবেত করবে,এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (ইমরান 3:9)