মৃত্যু ও পরকালীন জীবন: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ, কুরআন-হাদিসের আলোকে
![]() |
মৃত্যু ও পরকালীন জীবন |
মানুষের জীবন দুটি
অংশে বিভক্ত—ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবী জীবন ও অনন্ত পরকালীন জীবন। দুনিয়ার জীবন অতি সংক্ষিপ্ত, যা মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়; কিন্তু মৃত্যুই প্রকৃত জীবনের শুরু। ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যু কোনো চূড়ান্ত শেষ
নয়,
বরং এটি এক জীবন থেকে অন্য জীবনের উত্তরণ। মৃত্যুর পরেই শুরু
হয় মানুষের প্রকৃত ও চিরস্থায়ী জীবন, যার কোনো শেষ নেই।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে
মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কবর, হাশর, মিযান, পুলসিরাত—এসবই পরকালীন জীবনের ধাপ, যা পার হয়ে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জান্নাতবাসীরা আল্লাহর নৈকট্য
ও অনন্ত সুখ লাভ করবে, আর জাহান্নাম হবে
অবিশ্বাসী ও পাপীদের জন্য চিরন্তন শাস্তির স্থান।
যেহেতু পরকালীন জীবন
অনন্ত,
তাই দুনিয়ার এই স্বল্প সময়েই এর প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। ঈমান, সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিই হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। মৃত্যুকে স্মরণ
করে দুনিয়ার জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, প্রকৃত সফলতা নির্ভর করে পরকালীন জীবনের মুক্তির উপর।
মৃত্যুঃ এক মহা প্রস্থান
এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া
হতে প্রত্যেক প্রাণী আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত সময় শেষ হবার পর আল্লাহর দরবারে চলে যাওয়ার
নামই হল মৃত্যু। প্রতিটি প্রানীর মৃত্যু আল্লাহ তায়ালার কাছে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুত্যুর
দিন তারিখ, সময় নির্ধারিত। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে
কোন প্রানীর মৃত্যু হবেনা, আর নির্দিষ্ট সময়ের
পরও কেউ জীবিত থাকবেনা। মৃত্যু যে অনিবার্য সত্য সে সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন।
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ
أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ
الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রানীকেই
মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।
তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ
كِتَابًا مُؤَجَّلًا ۗ وَمَنْ يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَنْ
يُرِدْ ثَوَابَ الْآخِرَةِ نُؤْتِهِ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া
কোনো প্রাণীর মৃত্যু হওয়ার নয়; (এটি) একটি নির্ধারিত
সময়ের লিখিত বিষয়। যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনের পুরস্কার কামনা করে, আমি তাকে তা থেকে দেই এবং যে আখিরাতের পুরস্কার কামনা করে, আমি তাকে তা থেকে দেই। আর আমি কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করব। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৪৫)
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ
مُشَيَّدَةٍ ۗ وَإِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ
ۖ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِنْدِكَ ۚ قُلْ كُلٌّ مِنْ
عِنْدِ اللَّهِ ۖ فَمَالِ هَٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ
حَدِيثًا
তোমরা যেখানেই থাক
না কেন,
মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই - এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও
অবস্থান কর। আর যদি তাদের কোনো কল্যাণ হয়, তারা বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তারা বলে এটা তোমার (মুহাম্মদের) পক্ষ থেকে। বল, সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতএব, এই সম্প্রদায়ের কী হয়েছে যে, তারা কোনো কথাই ঠিকমতো
বুঝতে চায় না? (সূরা আন নিসা
৪:৭৮)
إِنَّكَ
مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ
নিশ্চয় আপনি মরণশীল
এবং নিশ্চয় তারাও মরণশীল। (সূরা যুমার ৩৯:৩০)
এছাড়া মৃত্যু সর্ম্পকে আরও অনেকে আয়াত রয়েছে যেমন সূরা জুমায়ার
৮ সূরা মুনাফেকুন এর ১১ নম্বর আয়াত।
মৃত্যু সৎকাজের পরীক্ষা
মহান আল্লাহ সূরা
মুলুকের ২ নাম্বার আয়াতে বলেন।
ٱلَّذِي
خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ
وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
তিনি মৃত্যু ও জন্ম
সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে
পারেন যে,
কর্মক্ষেত্রে কে তোমাদের মধ্যে উত্তম।
মৃত্যু সম্পর্কে রাসুল
(সাঃ) এর বাণী
মৃত্যু সম্পর্কে
রাসুল (সাঃ)-কতিপয় বাণী:
ক। মৃত্যুকে
স্মরণ করার আদেশ
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ:
الْمَوْتِ
আবু হুরায়রা (রাযি.)
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: দুনিয়ার সুখ-সম্পদ ও স্বাদ ধ্বংসকারী
মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। (সুনান আত-তিরমিযি ২৩০৭)
খ। অন্য হাদীস শরীফে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ مَوْتِهِ بِثَلَاثَةِ
أَيَّامٍ يَقُولُ: «لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا
وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ»
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর মৃত্যুর
তিন দিন আগে বলতে শুনেছি: 'তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ ছাড়া মৃত্যুবরণ
না করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৩১১৩)
পরকালীন জীবন
পরকালীন জীবনকে আরবীতে
বলে আখিরাত যার শাব্দিক অর্থ শেষ পরিনতি, শেষ ফল, আর পরিভাষায়- মৃত্যুর পর হতে মানুষের
যে অনন্ত জীবনকাল আরম্ভ হবে তাই পরকাল বা আখিরাত অথবা পরকালীন জীবন।
পরকালীন জীবনের ধাপ
সমূহ বর্ণিত হলো:
ক। কবরের জগৎ বা আলমে বরযখ।
মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর তাকে কবর দেয়া হয় অন্য ধর্মাবলম্বীদের
ভিন্নভাবে সৎকার করা হয়। মানুষের মৃত্যুর পর থেকে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত
সময় কালকে করব জগৎ বা আলমে বরযখ বলে। এ বিষয়ে কুরআনের বাণী:
وَمِن
وَرَآئِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
আর তাদের পেছনে রয়েছে
এক অন্তরায় (বারযাখ), যে দিন তারা পুনরুত্থিত
হবে সেই দিন পর্যন্ত। (সূরা মুমিনুন ২৩:১০০)
কবর জগৎ হলো পরকালের
প্রথম মনজিল বা ধাপ। যার ব্যাপারে মহা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন:
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: "إِنَّ
الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنْ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا
بَعْدَهُ أَيْسَرُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ"
আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু
আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আখিরাতের
মনজিল সমূহের মধ্যে থেকে কবর হচ্ছে প্রথম মনজিল। যদি কেউ এ মনজিল মুক্তি লাভ করে তাহলে
পরবর্তী মনজিল বা ধাপগুলো তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর যদি মুক্তি না পায় তবে পরবর্তী
ধাপগুলো আরও কঠিন হবে।" (তিরমিযি- ২৩০৮)
কবরের
প্রশ্নঃ
قَالَ هَنَّادٌ: قَالَ: وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ
فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ:
مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا
الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولَانِ: وَمَا يُدْرِيكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ
كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ
হান্নাদ (রহঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
অতঃপর তার নিকট দুজন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব
কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ।
তারা উভয়ে তাকে প্রশ্ন করে,
তোমার দীন কি? সে বলে, আমার দীন
হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর
রাসূল। তারপর তারা উভয়ে আবার বলে, তুমি কি করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর
কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।
করবের আজাবের কারনঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ:
«إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ: أَمَّا أَحَدُهُمَا
فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي
بِالنَّمِيمَةِ»
ইবনে আব্বাস (রা.)
থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) দুটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে বললেন:
নিশ্চয় এ দুজনকে
শাস্তি দেওয়া হচ্ছে,
অথচ তারা বড় কোনো গুনাহের কারণে শাস্তি পাচ্ছে না। তাদের একজন
প্রস্রাব থেকে (পরিষ্কার) না হয়ে চলাফেরা করত, আর অন্যজন চুগলি
করত (পরনিন্দা করত)। (সহিহ বুখারি: ২১৮, সহিহ মুসলিম: ২৯২)
«تَنَزَّهُوا
مِنَ الْبَوْلِ، فَإِنَّ عَامَّةَ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنْهُ»
প্রস্রাব (এর ছিটা)
থেকে পবিত্র থাকো,
কারণ কবরের অধিকাংশ শাস্তি এ থেকেই হয়। (সুনান আবু দাউদ: ১৯, হাদিসটি সহিহ)
কবরের
আজাব থেকে মাপের আমল
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:
«مَنْ قَرَأَ {تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ} كُلَّ لَيْلَةٍ، مَنَعَهُ
اللَّهُ بِهَا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَكُنَّا فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ
نَسَمِّيهَا الْمَانِعَةَ»
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রা.) বলেন: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সূরা মুলক)
পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আমরা রাসূলুল্লাহ
(ﷺ)-এর যুগে এ সূরাকে আল-মানিয়া (রক্ষাকারী)
নামে ডাকতাম। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস
নং ৩৭৮৬ )
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ
عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ
فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার
কাছে কবরের আযাব, জাহান্নামের আযাব,
জীবন-মরণের ফিতনা এবং দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, মুসলিম: ৫৮৯)
খ।
কিয়ামত বা পুনরুত্থান। পৃথিবীর সকল মানুষ মৃত্যুর পর
কবর জগৎ থেকে হাশরের ময়দানের দিকে ছুঁটে চলবে এক শিংগার ফুৎকার শুনে। ধ্বংস হয়ে যাবে
পৃথিবীর সকল কার্যক্রম আর এই ফাংস লীলাকে বলে কিয়ামত। মহান আল্লাহ বলেন:
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي
الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ
قِيَامٌ يَنظُرُونَ
(যখন প্রথমবার) শিংগায়
ফুৎকার দেয়া হবে তখন আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তার (সব কিছুই) বেহুশ হয়ে যাবে। অবশ্য
আল্লাহ তায়ালা যা চান (তা আলাদা) অতঃপর আবার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন তার সবাই দাঁড়িয়ে যাবে (এবং সে বীভৎস। দৃশ্য) তারা দেখতে
থাকবে। (সূরা আয-যুমার ৩৯:৬৮)
এ প্রসংগে নবী করীম
(সঃ) বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: "يُبْعَثُ
النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَا مَاتُوا عَلَيْهِ"
হযরত আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু
আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কিয়ামতের
দিন মানুষকে যে অবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেছে, সে অবস্থায়ই
উঠানো হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস
নং ২৮৬৮)
কিছু আলেম এ হাদিসকে
কাফনের সাথে সম্পর্কিত করেন, তবে মূল বিষয় হলো মৃত্যুর সময়ের
আমল। এজন্যই ইসলামে শেষ সময়ে তাওবা, কলেমা পাঠ ও নেক
আমলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গ। হাশর। হাশর শব্দটি আরবী এর আভিধানিক অর্থ একত্র করা, জমা করা, ইত্যাদি। পরিভাষায়- কিয়ামতের দিবসে
সকল মানুষকে বিচার ফয়সালা করার জন্য একটি ময়দানে হাজির করা হবে আর এর নামই হাশর।
হযরত আয়িশা (রাঃ)
বলেন,
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ:
سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَوْلِهِ
تَعَالَى: ﴿يَوْمَ يُبْعَثُونَ﴾، فَقَالَ: «يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا» فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ
جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟ فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ، الْأَمْرُ
أَشَدُّ مِنْ أَنْ يُهِمَّهُمْ ذَاكَ»
আমি রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) কে বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন লোকদের খালি পা উলঙ্গ শরীর এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়
সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সমস্ত নারী পুরুষ একসাথে? তারাতো একে অপরকে দেখতে থাকবে। তিনি বললেন: হে আয়িশা। মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের
পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ রূপে ধারণ করবে। (সহীহ আল-বোখারী; সহীহ মুসলীম ৭৩৭৭)
হাশরের নানা ধাপ
১।
সূর্য মাথার উপর থাকবে
হাশরের কঠিন অবস্থায় সূর্য থাকবে মাথার উপর। রসূলুল্লাহ সাঃ
এর হাদিস,
عَنْ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ مِنْ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ،
فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ، فَمِنْهُمْ مَنْ
يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ،
وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ الْعَرَقُ
إِلْجَامًا»
মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ
(রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি:
কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টির এত নিকটে আনা হবে যে তা তাদের থেকে মাত্র এক মাইল দূরত্বে
থাকবে। মানুষ তাদের আমলের পরিমাণ অনুযায়ী ঘামে নিমজ্জিত হবে। কারো ঘাম গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হাঁটু
পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো তা সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করবে (মুখ
পর্যন্ত)।(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮৬৪; সহিহ বুখারি, হাদিস
নং ৬৫৩১)
২।
হাউজে কাওসার
প্রতেক নবীর জন্য
একটি ঝর্ণা থাকবে যা থেকে তারা নিজ নিজ পিপাসার্ত উম্মাতকে পানি পান করাবেন, আর কর্ণার পানকারীদের সংখ্যা নিয়ে তারা গর্ব প্রকাশ করলেন। আমাদের
নবীর সেই ঝর্ণাটির নাম হল হাউজে কাউসার আল্লাহ বলেন:
إنَّا
أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে
দান করেছি কাওসার। (সুরা আল-কাওসার ১০৮:১)
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّ لِكُلِّ نَبِيٍّ حَوْضًا، وَإِنَّهُمْ يَتَبَاهَوْنَ
أَيُّهُمْ أَكْثَرُ وَارِدَةً، وَإِنِّي أَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ
وَارِدَةً» رواه الترمذي وحسنه الألباني
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: প্রত্যেক নবীর জন্য একটি হাউজ থাকবে, তারা তাদের ঝর্ণায় পান কারীদের সংখ্যার আধিকা নিয়ে গর্ব বোধ
করবেন। আমি আশা করি আমার হাউজে পান কারীদের সংখ্যা হবে অধিক। (আত-তিরমিযী-২৪৪৩)
৩।
বিচার ও হিসাব-নিকাশ গ্রহণ
হাশরের ময়দানে সমবেত
করার পর বান্দাদের বিচার কার্য আরম্ভ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إنَّ
إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ -
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُم -
নিশ্চয় আমার দিকেই
তাদের প্রত্যাবর্তন এরপর তাদের হিসাব গ্রহণ আমারই দায়িত্বে। (সুরা আল গাশিয়া, আয়াত ৮৮:২৫-২৬)
৪।
আমলনামা হস্তান্তর
হিসাব নিকাশের পর
প্রত্যেকের হাতে নিজ নিজ আমলনামা তথ্য কর্মের রেকর্ড প্রদান করা হবে। যারা সৎকর্মশীল
তাদের আমল ডান হাতে আর যারা অসৎ কর্মশীল এবং অবিশ্বাসী তাদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া
হবে। মহান আল্লাহ বলেন।
فأَمَّا مَنْ أُوتِي كِتَابَة بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ
هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابية - إني ظننت أبي خلاق حسنابية - فهو في عيشة راضية - في
جنة عالية .
সেদিন যার আমলনামা
তার ডান হাতে দেয়া হবে সে খুশিতে (লোকজনকে ডেকে) বলবে তোমরা এসো আমার আমল পড়ে দেখো।
(সুরা হাকাহ ৬৯:১৯-২২)
একই সূরার ২৫-২৭
নম্বর আয়াতের অপরাধীদের আমলনামা প্রদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ ۖ فَمَنْ أُوتِيَ
كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَٰئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ
فَتِيلًا
সেদিন আমি প্রত্যেক
সম্প্রদায়কে তাদের নেতাসহ ডাকব। যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পড়বে এবং তাদের প্রতি সামান্যতম অবিচার করা
হবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৭১)
সেদিন আমলনামা
দেয়ার পর বলা হবে, তুমিই তোমার আমলনামা পড়ে দেখ, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা বানী
ইসরাইলে বলেন,
اِقۡرَاۡ
كِتٰبَكَ ؕ كَفٰی بِنَفۡسِكَ الۡیَوۡمَ عَلَیۡكَ حَسِیۡبًا
তুমি তোমার কিতাব
পাঠ কর;
আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিকাশের জন্য যথেষ্ট। (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:১৪)
৫।
সিরাত
জান্নাতে যাবার জন্য
জাহান্নামের উপর একটা সেতু স্থাপন করা হবে তাকে পুলসিরাত বা সিরাত বলে। এটি পরকালীন
জীবনে আরো একটি স্টেশন যা অতিক্রম করে জান্নাতে যাবে আবার কেউ কেউ কেটে পড়ে জাহান্নামের
প্রবেশ করবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেন।
عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ:
يُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُ
مِنَ الرُّسُلِ بِأُمَّتِه
জাহান্নামের উপর
সিরাত স্থাপন করা হবে। সর্বপ্রথম আমিও আমার উম্মত তা অতিক্রম করব। (সহিহ মুসলিম-১৮২)
সিরাত ইমানদারদের
জন্য নূর বা আলো থাকবে কুরআনের ভাষায়,
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُم
بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن
تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
সেই দিন আপনি মুমিন
পুরুষ ও মুমিন নারীদের দেখবেন, তাদের আলো তাদের
সামনে ও ডান দিকে ছুটে চলবে। (তাদের বলা হবে,) আজ তোমাদের জন্য
সুসংবাদ জান্নাতের, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা হাদীদ ৫৭:১২)
ঘ। জান্নাতঃ চির শান্তির আবাস
জান্নাত আরবী শব্দ।
যার অর্থ বাগান। ফারসী ভাষায় তাকে বেহেশত বলে। পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবনের অবসানের পর
মুমিনের অনন্ত সুখময় চিরস্থায়ী জীবনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সুসজ্জিত আবাস
প্রস্তুত করে রেখেছেন ভাকে জান্নাত বা বেহেশত বলে। আল কুরআনের অনেক আয়াত জান্নাতের
চিত্র তুলে ধরেছে, মহান আল্লাহ বলেন:
وَسَارِعُوا
إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
আর তোমরা দ্রুত ধাবিত
হও তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৩)
এছাড়া সূরা নাবা
এর ৩১- থেকে ৩৪ নম্বর আয়াতেও জান্নাতের নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
ঙ। জাহান্নামঃ চিরন্তন শাস্তির স্থান
জাহান্নাম আরবী শব্দ।
যার অর্থ শাস্তির স্থান। আরবীতে জান্নাতের বিপরীতে জাহান্নাম। ব্যবহৃত হয়। কুরআনে নার
বা আগুন দ্বারাও জাহান্নামের বর্ণনা এসেছে পরিভাষায় শেষ বিচারের দিন যারা অপরাধী বলে
সাব্যস্ত হবে তাদের জন্য যে স্থান নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে তাকেই বলে জাহান্নাম। মহাগ্রন্থ
আল কুরআনে এসেছে:
إِن
جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا - لِّلطَّاغِينَ مَـَٔابًا
নিশ্চয়ই জাহান্নাম
সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রতীক্ষায় থাকবে। সেখায় তারা যুগযুগ ধরে অবস্থান করবে। (সূরা নাবা ৭৮:২১-২২)
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার
বিশেষ দোয়া ও আমল
১. জাহান্নামের
আগুন থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শিখানো
দোয়া
اللَّهُمَّ
أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ
অর্থ: হে আল্লাহ!
আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সুনান আবু দাউদ: ৫০৭৯)
২. জাহান্নাম
থেকে বাঁচার আরো একটি দোয়া,
اللَّهُمَّ
إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
অর্থ: হে আল্লাহ!
আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। (সুনান ইবনে মাজাহ: ৯১০)
৩. জাহান্নাম থেকে
মুক্তির বিশেষ দোয়া
رَبَّنَا
اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
অর্থ: হে আমাদের
রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি সরিয়ে দিন, নিশ্চয় এর শাস্তি
চিরস্থায়ী।
(সুরা আল-ফুরকান ২৫:৬৫)
৪. নামাজের শেষে
পড়ার দোয়া
اللَّهُمَّ
حَرِّمْ لَحْمِي وَدَمِي وَعَظْمِي عَلَى النَّارِ
অর্থ: হে আল্লাহ!
আমার গোশত, রক্ত ও হাড়কে জাহান্নামের উপর হারাম করে দিন। (মুসনাদ আহমাদ: ১৭১৯)
৫. ঘুমানোর আগের
দোয়া
اللَّهُمَّ
قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
অর্থ: হে আল্লাহ!
আপনার বান্দাদের পুনরুত্থিত করার দিন আমাকে আপনার শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুনান তিরমিজি: ৩৩৯৮)
৬. প্রতিদিনের আমল,
সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার:
"بِسْمِ
اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي
السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ"
হাদিস শরিফে এসেছে,
مَنْ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ
اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ،
ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُصْبِحَ، وَمَنْ
قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى
يُمْسِيَ
যে ব্যক্তি সকালে
তিনবার এই দোয়া পড়বে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত
আকস্মিক বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। আর যে সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে, সে সকাল পর্যন্ত আকস্মিক বিপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (সুনান আবু দাউদ ৫০৮৮ নং, সুনান ইবনে মাজাহ ৩৮৬৯ নং, সুনান তিরমিজি ৩৩৮৮ নং)
দোয়াটির ফজিলত
আকস্মিক বিপদ থেকে হিফাজত: হাদিসে উল্লেখ আছে যে এটি পড়লে হঠাৎ রোগ, দুর্ঘটনা, জিন-শয়তানের
ক্ষতি বা অন্যান্য বিপদ থেকে আল্লাহ রক্ষা করবেন।
শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা: এটি একটি শক্তিশালী যিকির, যা শয়তানের কুমন্ত্রণা
ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচায়।
সুন্নত অনুযায়ী আমল:
নবী (ﷺ) নিয়মিত এ ধরনের দোয়া পড়তেন, যা মুসলিমদের
জন্য একটি উত্তম সুন্নত।
কখন পড়বেন?
১। সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার (হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী)।
২। বিপদ বা ভয়ের সময় বেশি পড়া উত্তম।
৩। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পড়লে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
প্রতিটি মানুষের জন্য মৃত্যুই বড় সত্য আর পরকালই আসল ঠিকানা:
তাই এর জন্য প্রস্তুতি নেয়া জরুরী। দুনিয়ার সফলতার জন্য মানুষের চেষ্টার কমতি নেই, কিন্তু পরকালীন জীবনের ব্যাপারে মানুষ বড়ই উদাসীন। আসুন আল্লাহর
দেয়া এই জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে পরকালীন সুখ শান্তি নিশ্চিত করি (আমিন)।
ডাউনলোড করুন
আরো কিছু জুমুয়ার খুতবার আলোচনা নোট পড়তে পারেন,
(১) ইসলামে স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা
(২) হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
(৩) আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলামের নীতিমালা
No comments