বইয়ের তালিকা Book List

কুরআন, তাফসির, হাদিস, ইসলামী সাহিত্য, কিশোর উপন্যাস, সাইন্স ফিকশন, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, জীবনী

Book List 


সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ । জুমুয়ার খুতবা । Order of righteous deeds Prohibition of unrighteous deeds

الامر بالمعروف والنهي عن المنكر  Order of righteous deeds Prohibition of unrighteous deeds  সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ: এ কাজটি দীনের অবশ্য করণীয় বিষয়। দীনের মৌলিক স্তম্ভবিশেষ, এর মাধ্যমে উম্মতের সদস্যগণ নিজেরা সঠিক থাকবে অপরকে সঠিক রাখবে। এর মাধ্যমে হক্ব উপরে উঠবে, বাতিল বিচূর্ণ হবে, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে। এ প্রবন্ধ সংক্ষেপে তা তুলে ধরেছে।

আখলাকে হামিদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র | জুমুয়ার খুতবা

আখলাক্বে হামিদা বা প্রশংসনীয় আচরণ

আখলাক্বে হামিদা বা প্রশংসনীয় আচরণ

আখলাক বা চরিত্র মানুষের আসল চিত্র। মানুষের মূল্যায়ন হয় চরিত্রে। চারিত্রিক মূল্যবোধ যার যত বেশি সে তত উন্নত। এজন্য ইসলামে বিশেষ করে আখলাকে হামিদা বা প্রশংসনীয় চরিত্রের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এমনকি ইহাই দ্বীন ইসলামের মূল কথা। মহানবী (সাঃ) এ পৃথিবীতে আগমনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবিক চরিত্রের সংশোধন। হাদীস শরীফে এসেছে,

عن أبي هريرة: إنّما بعثتُ لأتمِّمَ مَكارِمَ الأخلاقِ.

নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমাকে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীকে পূর্ণতায় পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন। (মিশকাত ৫৭৭০)

আখলাকে হামিদা

আখলাকে হামিদা বা প্রশংসনীয় চরিত্র বলতে মানুষের মানবিক সুকুমার বৃত্তির বিকাশ বা মৌলিক মানবীয় গুণাবলী কে বুঝায়। যা মানব সমাজের সভ্যতা ও শান্তির জন্য একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে সে প্রশংসনীয় মানবীয় চারিত্রিক গুণাবলী গুলো আলোচনা করা হলোঃ

ক) তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি

মানুষের মাঝে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির বিকাশ হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। কেননা আল্লাহ ভীরু মানুষ কোন অন্যায় করতে পারে না। প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তার সামনে উপস্থিত থাকেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ

নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। (আল হুজরাত ৪৯:১৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَلَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَاَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (আল ইমরান ৩:১০২)

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْحَسَبُ الْمَالُ وَالْكَرَمُ التَّقْوَى ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ سَمُرَةَ ‏.‏ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ سَلاَّمِ بْنِ أَبِي مُطِيعٍ وَهُوَ ثِقَةٌ ‏.‏

সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধন-সম্পদ হল আভিজাত্যের প্রতীক এবং পরহেজগারী হল সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩২৭১)

খ) সততা ও সত্যবাদিতা

সততা ও সত্যবাদিতা নিজের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে। সত্যবাদী ও সৎ মানুষের সমাজ হয় শান্তিপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَقُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا ۙ یُّصۡلِحۡ لَکُمۡ اَعۡمَالَکُمۡ وَیَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَمَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। (আল আহ্‌যাব ৩৩:৭০-৭১)

وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقاً . وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّاباً». متفقٌ عَلَيْهِ

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পথ নির্দেশনা করে। আর মানুষ সত্য কথা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে মহাসত্যবাদী রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তাকে মহামিথ্যাবাদী রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৫৫০)

ফুটনোটঃ (সহীহুল বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৬, ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাউদ ৪৯৮৯, ইবনু মাজাহ ৪৬, আহমাদ ৩৫৩১, ৩৭১৯, ৩৮৩৫, ৩৮৮৬, ৪০১২, ৪০৮৪, ৪০৯৭, ৪১৭৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৫৯, দারেমী ২৭১৫)

গ) মানুষকে কষ্ট না দেয়া

সব মানুষই এক আল্লাহর বান্দা এবং আদম (আঃ) এর সন্তান। কেউ কাউকে কষ্ট দেবে না এটাই ইসলামের অভিপ্রায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ ‏"‏‏.‏

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৯, মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪০, আহমাদ ৬৭৬৫)

ঘ) ধৈর্যধারণ করা

ধৈর্য মানুষের একটি মহৎ গুণ। ধৈর্যধারণকারীরা ধৈর্যধারণের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ লাভ করেন। মহান আল্লাহ তাআলা ধৈর্যধারণ সম্পর্কে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَالصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ

হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (আল বাকারা ২:১৫৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَصَابِرُوۡا وَرَابِطُوۡا ۟  وَاتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (আল ইমরান ৩:২০০)

ঙ) ক্ষমা ও উদারতা

ক্ষমা ও উদারতা এমন একটি মহৎ গুণ যার দ্বারা মানুষের মনের রাজ্য জয় করা যায়। মহানবী (সাঃ) মক্কা বিজয় করে চরম শত্রুদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন,

قَالَ لَا تَثۡرِیۡبَ عَلَیۡکُمُ الۡیَوۡمَ ؕ یَغۡفِرُ اللّٰہُ لَکُمۡ ۫ وَہُوَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ

বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের কে ক্ষমা করুন। তিনি সব মেহেরবানদের চাইতে অধিক মেহেরবান। (ইউসুফ ১২:৯২)

চ) বিনয় ও নম্রতা

বিনয় ও নম্রতা মানুষকে মানবতার উচ্চতম শিখরে পৌঁছে দেয়। আল্লাহর প্রকৃত বান্দাহ হতে শেখায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ ۚ وَلَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَاسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ

আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। (আল ইমরান ৩:১৫৯)

বান্দার গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَعِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ ہَوۡنًا وَّاِذَا خَاطَبَہُمُ الۡجٰہِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا

রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (আল ফুরকান ২৫:৬৩)

ছ) আমানতদারিতা

আমানতদারি মমিন জীবনের অন্যতম প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণ। মানুষের মাঝে বিশ্বাসী ও ভালোবাসার পাত্র হবার এবং মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার উত্তম পন্থা হচ্ছে আমানতদারীতা। আমানতদারীতার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَہۡلِہَا ۙ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। (আন নিসা ৪:৫৮)

সুরা মুমিনুনের অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِاَمٰنٰتِہِمۡ وَعَہۡدِہِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ

এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে। (আল মুমিনূন ২৩:৮)

আমানতদারিতা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِلاَّ قَالَ لاَ إِيْمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন, যাতে একথাগুলি বলেননি যে, যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দ্বীন-ধর্ম নেই।'

(ঊপদেশ, হাদিস নং ১৭, আহমাদ হা/১১৯৩৫, মিশকাত হা/৩৫, বাংলা মিশকাত হা/৩১)

জ) অঙ্গীকার পূর্ণ করা

অঙ্গীকার পূর্ণ করা সৎ চরিত্রবান লোকদের একটি উত্তম গুন। আল্লাহ নিজেই অঙ্গীকার পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

وَلَا تَقۡرَبُوۡا مَالَ الۡیَتِیۡمِ اِلَّا بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ حَتّٰی یَبۡلُغَ اَشُدَّہٗ ۪ وَاَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ الۡعَہۡدَ کَانَ مَسۡـُٔوۡلًا

আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৪)

ঝ) লজ্জাশীলতা

লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ ও আখলাকে হামিদা বা প্রশংসনীয় চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যার লজ্জা নেই সে যা খুশি তাই করতে পারে, হাদীস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ إِذَا لَمْ تَسْتَحِي فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ ‏"‏‏

আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী‎ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রথম যুগের আম্বিয়া-এ-কিরামের উক্তিসমূহ যা মানব জাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হল, যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৮৪)

লজ্জা কি ঈমানের শাখা হিসেবে উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা।

(মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৮)

ঞ) দানশীলতা

মানুষের প্রতি মানুষের দয়া, ভালবাসা, অনুগ্রহ এবং অর্থনৈতিক সাহায্য ও সহযোগিতা উত্তম মানবিক গুণ। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِیۡمٌ

কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (আল ইমরান ৩:৯২)

ট) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

মানুষের প্রতি আল্লাহ তাআলার দান ও অনুগ্রহের শেষ নেই। তাই সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একান্ত কর্তব্য। এছাড়া মানুষ যার দ্বারা উপকৃত ও অনুগ্রহিত হয় তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একটি মহৎ ব্যক্তিত্বের ব্যাপার। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আল্লাহ তাআলা খুশি হন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَلَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইব্রাহীম ১৪:৭)

ঠ) ন্যায় বিচার

উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ন্যায়বিচার করা। এই গুনটি হলো মানব চরিত্রের সকল গুণের সমষ্টি। ন্যায় বিচার করতে পারলেই সমাজে আর কোন অশান্তি থাকে না। কেননা ন্যায় বিচার হবে নিজের প্রতি, পরিবার, সমাজ ও জাতির প্রতি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ بِالۡقِسۡطِ شُہَدَآءَ لِلّٰہِ وَلَوۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ اَوِ الۡوَالِدَیۡنِ وَالۡاَقۡرَبِیۡنَ ۚ اِنۡ یَّکُنۡ غَنِیًّا اَوۡ فَقِیۡرًا فَاللّٰہُ اَوۡلٰی بِہِمَا ۟ فَلَا تَتَّبِعُوا الۡہَوٰۤی اَنۡ تَعۡدِلُوۡا ۚ وَاِنۡ تَلۡوٗۤا اَوۡ تُعۡرِضُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا

হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। (আন নিসা ৪:১৩৫)

আখলাকে হামিদা এর গুরুত্ব

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে

When money is lost nothing is lost, health is lost something is lost but character is lost everything is lost.

আর ইসলামের প্রশংসনীয় চরিত্র হচ্ছে সর্বোত্তম সম্পদ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

صِبۡغَۃَ اللّٰہِ ۚ وَمَنۡ اَحۡسَنُ مِنَ اللّٰہِ صِبۡغَۃً ۫ وَّنَحۡنُ لَہٗ عٰبِدُوۡنَ

আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা তাঁরই এবাদত করি। (আল বাকারা ২:১৩৮)

হাদীস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا ‏"‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। (হাসান সহীহ্, সহীহা ২৮৪, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১১৬২)

আখলাকে হামিদা বা প্রশংসনীয় চরিত্র অর্জনের উপায়

সৎ চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার আর কোন কিছু নেই। তাই এ গুণ অর্জন করা প্রতিটি মানুষের একান্ত প্রয়োজন। নিম্নোক্তভাবে আমরা এগুণ অর্জন করতে পারি,

ক) আল কুরআনের শিক্ষা

আল-কুরআন ইসলামী শরীয়তের প্রধান উৎস। এতে মানব জীবনের সকল বিষয়ে পূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কোরআনের যাবতীয় আহকাম পালনের মাধ্যমে একজন মানুষ উত্তম ও প্রশংসনীয় চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَہۡدِیۡ لِلَّتِیۡ ہِیَ اَقۡوَمُ وَیُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَبِیۡرًا ۙ

এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। (বনী-ইসরাঈল ১৭:৯)

খ) বিশ্ব নবীর আদর্শ গ্রহণ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ, আদর্শ ও হাদিস অনুসরণের মাধ্যমে এ মহৎ চরিত্রের অধিকারী হওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্রের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَاِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ

আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (আল ক্বলম ৬৭:৪)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰہَ وَالۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَذَکَرَ اللّٰہَ کَثِیۡرًا ؕ

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (আল আহ্‌যাব ৩৩:২১)

গ) আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে

মানুষের শরীরের একটি অংশ আত্মা তা কলুষিত হলে গোটা দেহই কলুষিত হয়ে যায়। আর এটি পরিশুদ্ধ হলে গোটা দেহই পরিশুদ্ধ হয়। সুতরাং আত্মার পরিশুদ্ধি উত্তম চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی ۙ

নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। (আল আ'লা ৮৭:১৪)

ঘ) শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে

অসৎপ্রবনণ ব্যক্তিদের নসিহতের মাধ্যমে সংশোধন করা না গেলে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কঠোরতা আরোপ করে, প্রয়োজনে শাস্তি প্রয়োগ করে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নৈতিকতা ও উত্তম চারিত্রিক মূল্যবোধের দিকে ফিরিয়ে আনা যায়। আল্লাহ তাআলার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ও শাসকদের চারটি প্রধান কাজের কথা উল্লেখ করে বলেন,

اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَلِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি- সামর্থবান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত। (আল হাজ্জ্ব ২২:৪১)

সমাপনী

ইসলামে আখলাক বা চারিত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অনেক বেশি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আখলাকে হামিদা প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণগুলো অর্জন করার তাওফীক দান করুন আমীন।

খুতবা পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

লিংক ১ | লিংক ২

আলোচনা পিডিএফ ডাউনলোড লিংক

লিংক ১ | লিংক ২


ইসলামে পানাহারের আদব | জুমুয়ার খুতবা

ইসলামে পানাহারের আদব | জুমুয়ার খুতবা

ইসলামে পানাহারের আদব 

পবিত্র বস্তু দ্বারা আহার

فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا ۪ وَّاشۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ

অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।

(আন নাহল 16:114)

 বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ قَالَ الْوَلِيدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنِي أَنَّه“ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ كَيْسَانَ أَنَّه“ سَمِعَ عُمَرَ بْنَ أَبِي سَلَمَةَ يَقُوْلُ كُنْتُ غُلاَمًا فِي حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا غُلاَمُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ.

উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহন করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা।

(আ.প্র. ৪৯৭৫, ই.ফা. ৪৮৭১) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৭৬

 খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ هِشَامٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الدَّسْتَوَائِيَّ - عَنْ بُدَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ امْرَأَةٍ، مِنْهُمْ يُقَالُ لَهَا أُمُّ كُلْثُومٍ عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ " .

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৭)

বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করলে শয়তান প্রশ্রয় পায় না

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ فَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ " .

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোর সুযোগই পেলে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৫

হালাল খাবার খাওয়া

یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَاعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ  اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ؕ

হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।

(আল মুমিনূন - 23:51)

ডান হাতে খাওয়া

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ، أَبِي عُمَرَ - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ نُمَيْرٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عُبَيْدِ، اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ جَدِّهِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ " .

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাদ্য খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান  করে, সে যেন ডান হাতে পান করে  কারণ শাইতান বাম হাতে খায় ও পান করে।

(ই.ফা. ৫০৯৩, ই.সে. ৫১০৪) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৬০

একতাবদ্ধভাবে আহার করো

حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، قَالَ حَدَّثَنِي وَحْشِيُّ بْنُ حَرْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ أَصْحَابَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَأْكُلُ وَلاَ نَشْبَعُ . قَالَ " فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُونَ " . قَالُوا نَعَمْ . قَالَ " فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ إِذَا كُنْتَ فِي وَلِيمَةٍ فَوُضِعَ الْعَشَاءُ فَلاَ تَأْكُلْ حَتَّى يَأْذَنَ لَكَ صَاحِبُ الدَّارِ .

ওয়াহশী ইবনু হারব হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ একদা নাবী (সাঃ) এর সাহাবীগণ বললেনহে আল্লাহর রাসূল! আমরা খাবার খাই, কিন্ত পরিতৃপ্ত হতে পারি না।তিনি বললেনঃ হয়ত তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে খাও। তারা বললেনহাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা একত্রে আহার করো এবং খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করোতাহলে তোমাদের খাদ্যে বরকত দেয় হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনযদি তোমাকে কোথাও দাওয়াত করা হয় এবং খাবার সামনে রাখা হয় তাহলে বাড়ির কর্তা অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া শুরু করবে না। 

ইবনু মাজাহআহমাদ। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৪

খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা

مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ إِنْ اشْتَهَاه“ أَكَلَه“ وَإِنْ كَرِهَه“ تَرَكَهُ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন।

(আধুনিক প্রকাশনী- ৫০০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯০২) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪০৯

মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ أَبُو رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلاَ تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ إِنَّمَا يُعْرَفُ مِنْ حَدِيثِ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ . وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ وَالثَّوْرِيُّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ . وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ .

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্যের মাঝখানে বারকাত নাযিল হয়   অতএব তোমরা এর কিনারা হতে খাওয়া আরম্ভ কর, মাঝখান হতে খেও না 

সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৩২৭৭) জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮০৫

হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا شَرِيكٌ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ الأَقْمَرِ ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَمَّا أَنَا , فَلا آكُلُ مُتَّكِئًا " .

আবু জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। 

ব্যাখ্যা : আমি হেলান দিয়ে আহার করি না এ উক্তিটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ জন্য বলেছেন, মানুষ যেন তার অনুসরণ করে।

শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ১০০

আঙ্গুল ও পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا بَهْزٌ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي فِي أَيَّتِهِنَّ الْبَرَكَةُ " .

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। 

(ই.ফা. ৫১৩৫, ই.সে. ৫১৪৬) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২০২

পেটের একভাগ খাদ্য এক ভাগ পানি ও এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখা

وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَامِ بنِ مَعدِ يكَرِبَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرّاً مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإنْ كانَ لاَ مَحالةَ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن

আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মাদীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়র জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’

(তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫) রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫২১

খাবার গ্রহণের শুরু ও শেষে হাত ধৌত করা

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنِ ابْنٍ لِكَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " يَأْكُلُ بِأَصَابِعِهِ , الثَّلاثِ وَيَلْعَقُهُنَّ " .

কাব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিন অঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন এবং তা চুষে নিতেন।

ব্যাখ্যাঃ সাধারণত আহারের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করতেন এবং খাওয়ার পর সেগুলো চেটে খেতেন। আঙ্গুল তিনটি হলো বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যম।

কাব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)  কে বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা এ আঙ্গুলত্রয় দ্বারা পানাহার করতে দেখেছি। আরো দেখেছি যে, তিনি হাত ধৌত করার আগে তিন আঙ্গুল চেটে খেয়েছেন। প্রথমে মধ্যমা অতঃপর তর্জনী অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল চেটেছেন।

উল্লেখ্য যে, নবী (সঃ) এর সময় খেজুর, রুটি, গোশত অথবা তরকারীই ছিল প্রধান খাদ্য। এসব খাদ্য গ্রহণের সময় সব আঙ্গুল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বিধায় নবী (সঃ) তিন আঙ্গুল দ্বারা খেতেন। কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় পাঁচ আঙ্গুলই ব্যবহার করতে হয়। বিধায় সৰ আঙ্গুলই চেটে খাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ আহার কর, তখন যেন আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।

মুসন্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হা/২৪৯৫৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৮২০। সহীহ ইবনে হিব্বান,হা/৫২৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬১। শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ১০৫

তিন শ্বাসে এ পানি পান করা

أَبُو عَاصِمٍ وَأَبُو نُعَيْمٍ قَالاَ حَدَّثَنَا عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ أَنَسٌ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ ثَلاَثًا.

সুমামা ইবনু আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্র হতে পানি পান করতেন। তিনি মনে করতেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। 

আধুনিক প্রকাশনী- ৫২২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৬)

তিন শ্বাসে পানি পান না করলে নিম্নে বর্ণিত রোগ ব্যাধি জন্ম নিতে পারেঃ

১। শ্বাসনালীতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।

২। এমন বিঘ্নতা অধিক হলে মাথার খুলির ভিতর চাপ পড়ে। কারণ পানির শিরাসমূহ মাথার পর্দার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আবার মাথার ভিতর ফ্লয়েড আছে যার সম্পর্ক থাকে পানির সাথে। যদি চুষে বা ধীরে ধীরে পানি পান করা হয় তবে বিপদ ও ক্ষতিকর প্রভাব কখনও মাথার উপর পড়ে না।

৩। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পানি বেশী পরমিাণ জমা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়। যথা পানি যখন ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে তখন উপর থেকে চাপ পড়লে হার্ট ও লান্সের ক্ষতি হয়। ডান দিক থেকে চাপ হলে যকৃত এবং বাম থেকে চাপ পড়লে নাড়ি-ভূড়ি উল্টেপাল্টে যায়, এভাবে নানাবিধ ক্ষতি হয়।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩১

পানির পাত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস না ছাড়া  

أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيٰى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ وَإِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ ذَكَرَه“ بِيَمِينِه„ وَإِذَا تَمَسَّحَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ.

আবদুল্লাহ্‌র পিতা আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে। 

(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৫)

ফুটনোটঃ

হাদীসে পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতইনা সূক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এর কারণ হল, পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালীর মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস আদান-প্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপভাবে নাকের নালীর মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে নাক ও মাথার পর্দার মধ্যে ফুলা ধরতে পারে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩০

খাবার শেষে দোয়া পড়া

وَعَن مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « مَنْ أكَلَ طَعَامَاً، فَقَالَ: الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن »

মুআয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দোআ পড়বেঃ- আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী  অলা ক্বুউওয়াহ। (অর্থাৎ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’

ফুটনোটঃ

( আবূ দাউদ  ৪২০৩, দারেমী ২৬৯০) রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৭৩৯

 খুতবাটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন।