মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব, এবং এর প্রতিকার

জীবন রক্ষার জন্য আমাদেরকে পানহার করতে হয়। পানাহার এর উদ্দেশ্য হলো দেহের ক্ষয় পূরণ, তাপ ও শক্তি সঞ্চয়পূর্বক সুস্থতা বজায় রাখা। এমন অনেক বস্তু আছে যা পানাহার করলে দেহের সুস্থতা বজায় থাকে না। ফলে দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। আহার হিসেবে এমন বস্তুকে গ্রহণ করতে হবে যেটা পবিত্র এবং আমাদের জন্য উপকারী।  পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা ত্বহার ৮১ নং আয়াতে বলেন,

کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَلَا تَطۡغَوۡا فِیۡہِ فَیَحِلَّ عَلَیۡکُمۡ غَضَبِیۡ ۚ وَمَنۡ یَّحۡلِلۡ عَلَیۡہِ غَضَبِیۡ فَقَدۡ ہَوٰی

বলেছিঃ আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়।

(সূরা ত্বহা ২০:৮১)

যে সব বস্তু মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় সেগুলোর মধ্যে মাদক অন্যতম। তাই মাদক সম্পর্কে সকলের সঠিক ধারণা লাভ করা অপরিহার্য।

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব

মদ বা মাদকদ্রব্য বলা হয় এমন এক অ্যালকোহলীয় পদার্থকে জাপান করা হলে নেশাগ্রস্ত হয় এবং ব্যক্তির বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। দ্বীনদারী নিঃশেষ হয় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক। মাদকতার আভিধানিক অর্থ

মাদকতার আরবি প্রতিশব্দ হলো الخمر

আরো কয়েকটি আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপঃ

ক। الطغطيه বা ঢেকে ফেলা।

খ। الاخفاء বা গোপন করা।

গ। Drug

ঘ। Alcohol

খ। মাদকতার পারিভাষিক অর্থ

মাদকতার পারিবাসিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আল্লামা মুজিব (রঃ) বলেন,

الخمر هو ما ستر على العقل

মাদকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে  المعجم الوسيط এর গ্রন্থকার বলেন,

اَلْخَمر هو ما أسكر من عصير العنب لأنها خامرت العقل والتخمير التغطية

মাদক হল এমন এক ধরনের কেমিক্যাল। যা ব্যক্তির মনের মধ্যে সাময়িকভাবে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। পরবর্তীতে সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং আসক্তিতে পরিণত হয়।

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে,

Alcohol is a type of organic compound that carries at least one hydroxyl functional group bound to a saturated carbon atom. The term alcohol originally referred to the primary alcohol ethanol, which is used as a drug and is the main alcohol present in alcoholic drinks.

- according to Wikipedia

গ। মাদকতার অপকারিতা

মাদকের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মাদকের কয়েকটি উপকারিতা আলোচনা করা হলো।

১। শয়তানের কাজ

মহান আল্লাহ তা'আলা মাদককে শয়তানের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে সূরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতে বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সূরা আল মায়েদা ৫:৯০)

২। শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী  

মাদক মানুষের মাঝে শত্রুতাও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাবে মানুষ একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৯১ নং আয়াতে বলেন,

اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَالۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা আল মায়েদা ৫:৯১)

৩। ইবাদতের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে

মাদকের একটি অত্যন্ত খারাপ দিক হলো ইবাদতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা সূরা মায়েদায় বলেন,

وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ

এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। (সূরা আল মায়েদা ৫:৯১)

৪। আখিরাত ক্ষতিগ্রস্ত  

মাদকাসক্ত ব্যক্তি আখিরাতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ বিষয়ে প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ لَمْ يَتُبْ مِنْهَا حُرِمَهَا فِي الآخِرَةِ.

যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করেছে অতঃপর তা-থেকে তওবা করে নি, সে আখিরাতে তা-থেকে বঞ্চিত থাকবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৭৫, মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩, আহমাদ ৪৬৯০ আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)

৫। মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না

মাদক সেবী জান্নাতে যাবে না। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‏"‏ ‏.‏

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)

৬। কিয়ামতের দিন আল্লাহ মাদক সেবীর দিকে তাকাবেন না

হাদীস শরীফে এসেছে, তিন ব্যক্তির দিকে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকাবেন না, তাদের এক শ্রেণী হলো মাদক সেবী, নাসায়ী শরীফের হাদিসে এসেছে,

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ، وَالدَّيُّوثُ، وَثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ، وَالْمُدْمِنُ عَلَى الْخَمْرِ، وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَ

সালিম এর পিতা আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি মহান মহিয়ান আল্লাহ্‌ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টি দিবেন না (রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না) পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), পুরুষের বেশধারী নারী এবং দায়ূছ (নিজ স্ত্রী কন্যার পাপাচারে যে ঘৃণাবোধ করেনা।) আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা পিতা মাতার অবাধ্য (সন্তান), মাদকাসক্ত ব্যক্তি (যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে) এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি (দান করার পর যে দানের উল্লেখ করে গঞ্জনা দেয়।) (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৫৬২)

৭। দৈহিক কুফল

মাদকদ্রব্য সেবনে ব্যক্তির স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান মাদক থেকে বেঁচে থাকার জন্য নানা ভাবে মানুষকে মোটিভেট করে যাচ্ছে।

৮। মানসিক অপকারিতা

নিয়মিত মাদক সেবনের দ্বারা ব্যক্তি মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। মানুষের স্বাভাবিক আচরণে বাধা সৃষ্টি করে মাদকতা।

৯। মাদক দ্রব্য মাত্রই হারাম, অল্প বা বেশি

প্রিয় নবী (সাঃ) সকল প্রকার মাদককে হারাম ঘোষণা করেন। মুসলিম শরীফে এসেছে,

 عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সম্ভবত তিনি নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে জিনিসে নেশা উদ্রেক করে তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১১৬ (ই. ফা. ৫০৫১, ই. সে. ৫০৬১)

১০। সকল পাপের চাবিকাঠি

মাদকদ্রব্য কে সকল পাপের চাবিকাঠি উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ لاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ ‏"‏ ‏.‏

আবূ দারদা (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন : শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৭১)

মাদকতা প্রতিরোধের উপায়

মাদকদ্রব্য শুধুমাত্র সেবনকারীর ক্ষতি সাধন করে না বরং তার কাছের মানুষও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই মাদকতা সমাজ থেকে নির্মূলের কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো,

ক। ইচ্ছাশক্তি

মাদকতা বর্জনের সবচেয়ে বড় উপায় হল ইচ্ছা শক্তি। প্রবল ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ অনেক অসাধ্য সাধন করেছে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,

Where there is a will there is a way.

খ। ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা

মাদকতা নির্মূলের একটি অন্যতম উপায় হল ইসলামী মূল্যবোধের শিক্ষা। কোরআন এবং হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡتُمۡ سُکٰرٰی

হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা। (সূরা নিসা ৪:৪৩)

গ। সামাজিক প্রতিরোধ

সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। অন্য কাজে সামাজিকভাবে বয়কট করার বেশি আল্লাহ তায়ালা সূরা আল ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেন,

وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَیَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَیَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।

(সূরা আলে ইমরান ৩:১০৪)

ঘ। মাদক নির্মূলে মিডিয়ার ভূমিকা

মাদক নির্মূলে মিডিয়া অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। মাদকবিরোধী প্রচারণা, মাদকতার কুফল এবং বিশেষ করে মাদকদ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করার মাধ্যমে সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ঙ। ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা

সমাজ থেকে মাদকতা দূর করণে আলেম সমাজের ভূমিকা অনেক বেশি। মসজিদ-মাদ্রাসায়, ওয়াজ-মাহফিলে, বিভিন্ন সভা -সেমিনারে মাদকতার বিরুদ্ধে ইসলামের হুঁশিয়ারি উল্লেখ করে মানুষকে মাদক থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে পারে।

চ। চিকিৎসা

মাদক আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা বা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে না আনলে যখন কেউ মারাত্মকভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তখন তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় মাদক থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

ছ। আইনের প্রয়োগ / শাস্তি

মাদক গ্রহণ, মাদক বেচাকেনা এবং মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে অন্যরা সচেতন হয়ে যাবে।

সমাপনী

মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে সকলকে একসাথে এগিয়ে এসে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। একক প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে মাদকমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।

জুমুয়ার সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত | জুমুয়ার খুতবা

জুমুআর দিন মুসলমানদের একটি বিশেষ দিন। জাহেলি যুগে এদিনকে ইয়াওমুল আরবা বলা হত। ইসলামের আবির্ভাবের পর এদিনকে ইয়াওমুল জুমুয়া বলে নামকরণ করা হয়। জুমুআ অর্থ একত্রিত করা, একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবন্দী হওয়া। এ হিসেবে ইয়াওমুল জুমুয়া অর্থ একত্রিত হবার দিন। এটিকে সম্মেলন ও বলা যেতে পারে।

ক। জুমুয়ার দিনের গুরুত্ব

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আল জুমুআহ ৬২:৯-১০)

অন্য হাদিস শরিফে এসেছে,

عن أنس بن مالك -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «أتاني جبريلُ بمثل هذه المرآة البيضاء فيها نُكْتة سوداء، قلت: يا جبريلُ ما هذه؟ قال: هذا الجُمُعة جعلها الله عيدًا لك ولأمتك فأنتم قبل اليهود والنصارى، فيها ساعةٌ لا يوافقها عبدٌ يسأل الله فيها خيرًا إلا أعطاهُ إياه، قال: قلت: ما هذه النُكْتةُ السوداء؟ قال: هذا يوم القيامة تَقُوم في يوم الجمعة، ونحن ندعوه عندنا (المزيد) قال: قلت: ما يومُ المزيد؟ قال: إنَّ الله جعل في الجنة واديًا أفيح، وجعل فيه كُثْبانًا من المسك الأبيض، فإذا كان يومُ الجمعة ينزلُ الله فيه فوضعت فيه منابر من ذهب للأنبياء وكراسي من درٍّ للشهداءٍ، وينزلن الحورُ العينُ من الغُرف فحمدوا الله ومَجَّدوه، قال: ثم يقول الله: اكسوا عبادي فيكسون، ويقول: أطعموا عبادي فيطعمون، ويقول: اسقوا عبادي فيسقون، ويقول: طيِّبوا عبادي فيطيبون، ثم يقول: ماذا تُريدون؟ فيقولون: ربنا رضوانك، قال: يقول: رضيت عنكم ثم يأمرهم فينطلقون وتصعدُ الحورُ العين الغرفَ، وهي من زمردةٍ خضراء ومن ياقوتةٍ حمراء » . ( يع ) صحيح

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাদা এ আয়নার ন্যায় অনুরূপ আয়না নিয়ে জিবরিল আমার নিকট এসেছে তাতে কালো একটি ফোঁটা। আমি বললামঃ হে জিবরিল এটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে জুমা, আল্লাহ যা তোমার ও তোমার উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন, তোমরাই ইহুদি ও খৃস্টানদের পূর্বে, (অর্থাৎ তাদের সাপ্তাহিক ঈদের পূর্বদিন তোমাদের ঈদের দিন) তাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করবে না, যা তিনি তাকে দিবেন না। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ এ কালো ফোঁটা কি? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে কিয়ামত জুমার দিন কায়েম হবে, আমরা একে মাযিদ বলি। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়াওমুল মাযিদ কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ জান্নাতে প্রশস্ত ময়দান তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি সাদা মিশকের স্তূপ রেখেছেন, যখন জুমার দিন হয় আল্লাহ সেখানে অবতরণ করবেন, সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের মিম্বার রাখা হয়, আর শহীদদের জন্য মুক্তোর চেয়ার এবং (জান্নাতের) প্রাসাদসমূহ থেকে হূরুল ঈন বা ডাগর নয়না হূর অবতরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-গান করবে। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দাদের কাপড় পরিধান করাও, তাদের কাপড় পরিধান করানো হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের খাদ্য দাও, তাদের খাদ্য দেয়া হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের পান করাও, তাদের পান করানো হবে। তিনি বলবেনঃ আমার বান্দাদের সুগন্ধি দাও, তাদের সুগন্ধি দেয়া হবে। অতঃপর বলবেনঃ তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব তোমার সন্তুষ্টি। তিনি বলেনঃ তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছি, অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যাবে ও হূরল ঈন প্রাসাদসমূহে প্রবেশ করবে যা সবুজ মণি-মুক্তা ও লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি। (সহিহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নং ৯০)

খ। জুমুয়ার দিনের কিছু ঘটনা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ ‏"‏

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমুআর দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে, জুমুআর দিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৪৭, ইসলামীক সেন্টার, ১৮৫৪) ( সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ ১৮৬২)

গ। জুমুয়ার দিন জান্নাতিদের অবস্থা

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ سُوْقاً يَأتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ . فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ، فَتَحْثُو في وُجُوهِهِم وَثِيَابِهِمْ، فَيَزدَادُونَ حُسناً وَجَمَالاً فَيَرْجِعُونَ إلَى أَهْلِيهِمْ، وَقَد ازْدَادُوا حُسْناً وَجَمَالاً، فَيقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ : وَاللهِ لقدِ ازْدَدْتُمْ حُسْناً وَجَمَالاً ! فَيقُولُونَ : وَأنْتُمْ وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْناً وَجَمالاً !» . رواه مسلم

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতিগণ প্রত্যেক শুক্রবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা তাদের চেহারায় ও কাপড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা-সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, আল্লাহর কসম! আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে! তারাও বলে উঠবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’’ (মুসলিম ২৮৩৩, আহমাদ ১৩৬২১, দারেমী ২৮৪১, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৮৯৮)

ঘ। মুসলিম উম্মাহর জন্য উপহার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা উম্মতে মোহাম্মদী কে বছরের একটি দিন দিয়েছে শ্রেষ্ট,  সে দিনটি হল আরাফার দিন। বছরে একটি রাত দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ, আর সে রাত হল লাইলাতুল ক্বদর। সপ্তাহে একটি দিন দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ,  আর সেদিন হল জুমুয়ার দিন। এই দিনকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন।

ঙ। কুরবানির সাওয়াব পাওয়ার দিন

জুমুয়ার সালাত আদায়ের দ্বারা কুরবানি করার সাওয়াব পাওয়া যায়। প্রিয়নবী (সাঃ) এর হাদিসের আলোকে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ غُسْلَ الْجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الْخَامِسَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ الْمَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুত্‌বা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮৮১)

চ। গুনাহ মাপের দিন

জুমুয়ার দিন বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

وَعَنْ سَلمَانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَومَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِن طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى». رواه البخاري

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে কোন ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল ও সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, নিজস্ব তেল গায়ে লাগায় অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) গিয়ে দুজনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করেই (যেখানে স্থান পায়, বসে যায়) এবং তার ভাগ্যে যত রাকআত নামায জোটে, আদায় করে । তারপর ইমাম খুতবা আরম্ভ করলে নীরব থাকে, সে ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট জুমআহ থেকে পরবর্তী জুমআহ পর্যন্ত কৃত সমুদয় (সাগীরা) গুনাহরাশিকে মাফ করে দেওয়া হয় ।” (সহীহুল বুখারী ৮৮৩, ৯১০, নাসায়ী ১৪০৩, আহমাদ ২৩১৯৮, ২৩২০৬, ২৩২১৩, দারেমী ১৫৪১, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১১৬১)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমুআহ্ হতে অপর জুমুআহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ ৫৬৪, মুসলিম ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪)

ছ। জুমুয়ার সালাত না পড়ার পরিণাম

নবী কারিম (সা.) বলেন,

من ترك الجمعة ثلاث مرات متواليات من غير ضرورة طبع الله على قلبه

অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া পর পর তিন জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। [সুনানে বাইহাকি, হাদিস: ৫৭৮৫]

আবূ ইয়ালা (রহঃ) বিশুদ্ধ সানাদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,

من ترك الجمعة ثلاث جمع متواليات فقد نبذ الإسلام وراء ظهره.

অর্থাৎ যে ব্যক্তি তিন জুমুআহ্ লাগাতার বর্জন করল সে ইসলাম থেকে নিজেকে দূরে ঠেলে দিলো।

(আবূ য়্যালা ২৭১২, সহীহ তারগীব ৭৩৩)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُمَا قَالَا: سَمِعْنَا رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ عَلَى اعْوَادِ مِنْبَرِه: «لِيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللّهُ عَلى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁরা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা যেন জুমুআর সলাত ছেড়ে না দেয়। (যদি ছেড়ে দেয়) আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরসমূহে মুহর মেরে দেবেন। অতঃপর সে ব্যক্তি অমনোযোগীদের মধ্যে গণ্য হবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩৭০)

عَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ قَالَ: قُلْتُ نَعَمْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلاَةُ».

আবূ মূসা আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ইমামের বসা থেকে সলাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহূর্তটি নিহিত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৬০)

জুমার দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলসমূহ

 ১) গোসল করা: জুমার দিন গোসল করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ.

 ২) মেসওয়াক করা মেসওয়াক দ্বারা অথবা ফেস্ট দ্বারা দাঁত ব্রাশ করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে.

 ৩) সুগন্ধি ব্যবহার করা আতর সুগন্ধি তেল মাখা সুন্নত

 ৪) উত্তম পোষাক পড়া এই দিনে উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত

 ৫) জুম'আর সালাতের জন্য দ্রুত ও আগে আগে মসজিদে যাওয়ার সওয়াবের কাজ

 ৬) ধীর স্থির ও গাম্ভীর্যের সাথে মসজিদের দিকে যাওয়া

 ৭) ইমামের নিকটবর্তী বসা তবে কারো অসুবিধা করে নয়

 ৮) জুমার দিনে ও রাত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরুদ পড়া

 ৯) জুমার দিন গোসলের পূর্বে হাত ও পায়ের নখ কাটা চুল কাটা বড় নাভির নিচের লোম কাটার সুন্নত

 ১০) জুমার দিন সালাতের পূর্বে বা পরে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা

 ১১) মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত সালাত আদায় করা

 ১২) মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করা এবং নীরবতা বজায় রাখা

 ১৩) জুমার দিনে বেশি বেশি দুআ করা

 (বুখারী, জুমুআ অধ্যায়)

 ১৪) সিয়াম পালন করা

 عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ غُرَّةِ كُلِّ شَهْرٍ، وَقَلَّمَا يُفْطِرُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ»

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক মাসের শুরুতে তিন দিন সাওম (রোযা) পালন করতেন, আর শুক্রবার দিন খুব কমই সাওম (রোযা) ভঙ্গ করতেন। ( সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৬৮)

উপসংহার

জুমুয়ার সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি সপ্তাহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলন। যাতে খুতবার মাধ্যমে একটি দেশ, একটি সমাজ তথা মুসলিম উম্মাহকে সামাজিক, ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। এতে ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধন ছাড়াও দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়।