পরকীয়াঃ কারন ও প্রতিকার

পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং নৈতিক অবক্ষয়রোধে ইসলামের নির্দেশনা
পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

বর্তমান সময়ে এক মহামারির নাম পরকীয়া। পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া। বিকৃত মানসিকতার কাজ। শরিয়তের পরিভাষায় পরকীয়া বলা হয় বিবাহ-পরবর্তী কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রেম-ভালোবাসাকে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে। পরকীয়া মানবতাবিরোধী একটি অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরকীয়া নামের অসামাজিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অশুভ থাবায় বিপর্যয়ের মুখে সংসার ও পরিবার প্রথা।

উদ্দেশ্যঃ আজকের ক্লাশের উদ্দেশ্য হল পরকীয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা এবং পরকীয়া নির্মূলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা

পরকীয়ার পরিচয়ঃ পরকীয়া বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। পরকীয়া হল বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া। সমাজে এটি নেতিবাচক হিসাবে গণ্য।

মূলত পরকীয়া হল- বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে পর পুরুষ বা পর নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।

পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণ

বর্তমানে সমাজে পরকীয়ার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল তাঁর দ্য স্টেট অব অ্যাফেয়ার গ্রন্থে পরকীয়াকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (কালের কণ্ঠ)

বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল।-

১. ইসলামী শিক্ষার অভাব

ইসলাম মানব জাতির চরিত্রের হিফাযতের জন্য নারী-পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে  এবং বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ককে হারাম ঘোষণা করেছে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ

প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, (সূরা আনআম ৬:১৫১)

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম ও এর ভয়াবহ শাস্তি না জানার কারণে মানুষ পরকীয়ার মত নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে।

২. সামাজিক কারণ

ইসলাম সামর্থ্যবান পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও (নিসা ৪/৩) অনেক পুরুষ সামাজিক কারণে একাধিক বিয়ে করতে পারেন না। কারণ সমাজ বহু বিবাহকে ভাল চোখে দেখে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন চাহিদার অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। অপরদিকে দুর্বল ও অসুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রেও নারী সামাজিক ভয়ে তালাক না নিয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

৩. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা

পুরুষ-নারীর অবাধ মেলামেশার সুযোগে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর আলাপচারিতা ও পরবর্তীতে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মহিলারা আজকাল চাকুরী, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে। আর পর পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও ঠাট্টা-মশকরার মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি ঝুকে পড়ছে। অথচ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ؟ قَالَ: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ»

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোনো নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দেবর তো মরণসম বা মরণের ন্যায়। (বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৭৩৪৭, দারিমী ২৬৮৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৯০৮)

স্বামীর ভাইয়ের ব্যাপারে যদি ইসলাম এত কঠোরতা আরোপ করে তাহলে অপরিচিত বা সাময়িক পরিচিতদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি হতে পারে? নিঃসন্দেহে তা আরো কঠোর হবে।

৪. পর্দাহীনতা

পরকীয়ার অন্যতম কারণ হল পর্দাহীনতা। এর ফলে নারী-পুরুষ একে অপরের দেখা-সাক্ষাৎ করার ও কথা বলার সুযোগ পায়। এতে তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর শয়তান এটাকে আরো সুশোভিত করে উপস্থান করে এবং পরকীয়ার দিকে নিয়ে যায়। এজন্য ইসলাম পর্দাহীনতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন

,الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

মহিলারা হচ্ছে আবৃত বস্ত্ত। সে বাইরে বের হলে শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে। (তিরমিযী হা/১১৭৩)

সুতরাং যে পোষাকে নারীর চুল, গ্রীবা, বক্ষ, পেট, পিঠ ও আবৃত অঙ্গ প্রকাশিত থাকে তা পরিধান করা হারাম।

৫. ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া

পরকীয়ার আকেরটি কারণ হল, ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের অমতে বিয়ে দেওয়া। অভিভাবকরা নিজেদের কথা ভাবেন এবং অনেক তাড়াহুড়া করে তাদের সন্তানদের বিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ের পসন্দ বা মতামতকে অনেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন না। ফলে এসব ছেলে-মেয়েদের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। ছেলে-মেয়ে প্রথমে মেনে নিলেও পরে তাদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। পরিবারের ভয়ে কিছু না বললেও এক সময়য়ে তারা উভয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।

৬. দৈহিক অক্ষমতা

নারী-পুরুষ জৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু এই চাহিদা পূরণ না হলে নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়।

৭. প্রযুক্তির সহজলভ্যতা

প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিময় করেছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এর অপকারিতা জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। হাতের নাগালে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত অনেকের সাথে পরিচয় হচ্ছে এ পরিচয় থেকে অনেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

১। পরিবারে অশান্তি

পরকীয়ার প্রধান ক্ষতিকর প্রভাব হল পরকীয়ার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুখের পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়।

২। ব্যভিচারের পথ সুগম হয়

পরকীয়ার আরো একটি বড় কুফল হল এর মাধ্যমে সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। সমাজে ব্যভিচারের অসংখ্য রাস্তা খুলে যায়।

৩। ছেলেমেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যত

পরকীয়ার মাধ্যমে যখন একটি পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় তখন সে পরিবারের ছোটছোট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নিজেদের চোখে সামনে যখন পিতামাতার নৈতিক অবক্ষয় দেখতে পায় তখন তাদের মনের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় পরকীয়ার সঙ্গীর সহায়তায় নিজ সন্তানকেও অনেক মা বাবা হত্যা করতে দ্বিধা করেনা।

পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে যেসব নীতিমালা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবধর্মী। ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে-

১. খোদাভীরুতা

ইসলাম প্রথম স্বামী-স্ত্রীকে খোদাভীরুতা, দুনিয়াবিমুখতা ও কৃতকর্মের জবাবদিহিতার ভয় অর্জনের প্রতি জোর তাকিদ করেছে। কারণ তারা এসব গুণে গুণান্বিত হলে দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ বিধানকে লঙ্ঘন করবে না। পর নারী ও পর পুরুষে আসক্ত হবে না। আল্লাহ পাক বলেন, হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার জীবনসঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা-১)

২. নৈতিক শিক্ষা

ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে নৈতিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তাদের আত্মিক কলুষতামুক্ত হয়ে কষ্ট সহিষ্ণুতা, ধৈর্যশীলতা, অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতার মতো মহৎ গুণাবলি অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ মানুষের চাহিদা অসীম। সসীম জগতে তা মেটানো সম্ভব নয়। তাই দাম্পত্য জীবনে তারা যদি পরস্পর ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হয়, সুখ-দুঃখ খুশি মনে মেনে নেয়, আল্লাহর দেওয়া আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থ্যের ওপর তুষ্ট থাকে, তাহলে তারা কখনো পরকীয়ায় জড়াবে না। দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ উপহার হিসাবে মনে করবে।

৩. পরস্পরে ভালোবাসা

পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং পরস্পরের আকর্ষণ হ্রাস না পায় এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বামী-স্ত্রীকে ইসলাম আদেশ দিয়েছে। যেমন কখনো একই পাত্র থেকে আহার গ্রহণ করা। একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। স্বামীকে চিন্তিত দেখলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ও সাহস জোগানো। আম্মাজান খাদিজা (রা.) রাসূল (সা.)-এর দুঃখের সময় তার পাশে ছিলেন। তাকে সাহস জুগিয়েছেন। কর্মস্থল থেকে ফিরে হাস্যোজ্জ্বল ও সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা। স্ত্রীও মুচকি হাসি দিয়ে বরণ করা, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। অফিসে যাওয়ার সময় হলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া, মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি হাতে তুলে দেওয়া। স্বামী স্ত্রীর কপালে কিংবা হাতে চুমু দেওয়া। বাসা-বাড়িকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা। নিজে সেজেগুজে থাকা। সাংসারিক কাজকর্মে স্ত্রীকে সাহায্য করা। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দেওয়া। কিছু সময় একান্তে কাটানো। রোমান্টিক কথাবার্তা বলে ভালোবাসা প্রকাশ করা। মোটকথা পারস্পরিক সম্পর্ককে দৃঢ় ও মজবুত করা। নিজেদের মধ্যে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া।

৪. দৃষ্টি সংযত রাখা

পর নারী কিংবা পর পুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া, তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, অবাধে মেলামেশা ইত্যাদি থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ পাক বলেন : হে নবি! মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ইহাই তাদের জন্য উত্তম। ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর ৩০-৩১)

৫. অবাধে মেলামেশা না করা

কর্মস্থলে নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোযোগী থাকবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। একাকিত্বে খোশ গল্পে মেতে উঠবে না। প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। আকর্ষণীয়, কোমল ও নম্র কণ্ঠে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুবাসনা করে। তোমরা সঙ্গত কথা বল। (সূরা আহযাব ৩২)

৬. অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত না হওয়া

মহানবি (সা.) বলেন, হে লোক সকল তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে। দুনিয়ার তিনটি পরিণাম হলো- শ্রীহীনতা, দরিদ্র ও আয়ুষ্কাল হ্রাস। পরকালের তিনটি পরিণাম হলো-আল্লাহর ক্রোধ, মন্দ হিসাব, দোজখের শাস্তি (শুয়াবুল ইমান, বায়হাকী) যে অপরকে পরকীয়ার জন্য ফুসলায় তার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে অন্যের স্ত্রীকে অথবা ক্রীতদাসকে ফুসলিয়ে তার বিরুদ্ধে উসেক দেবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ)

পরকীয়ার শাস্তি

ইসলাম ধর্মে পরকীয়াকে অত্যান্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)

ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। (সুরা নুর, ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেন না এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(১) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(৩) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(১) আল্লাহর অসন্তোষ,

(২) কঠিন হিসাব ও

(৩) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো। (বুখারিঃ ৭৬৫৮)

উপসংহারঃ আমাদের সমাজ থেকে পরকীয়া দূর করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো ফলো করতে হবে। বিশেষত দেশের প্রতিটি নাগরিককে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তাদের মধ্যে খোদাভীরুতা, দুনিয়া বিমুখিত ও জবাবদিহিতার ভয় সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি পরকীয়া সম্পর্ককারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। 

আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলামের নীতিমালা

 

আদর্শ পরিবার গঠনে আমাদের করণীয়
আদর্শ পরিবার গঠনে আমাদের করণীয়

ইসলাম মানুষকে নির্ধারিত নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক পরিবার গঠনের আদেশ দিয়েছে। কেননা পরিবারহীন জীবন নোঙ্গরবিহীন নৌকার মত। ইসলামের নির্দেশিত পরিবার হলো বস্তুত এমন এক দূর্গ যেখানে ব্যক্তির ইমান আমল আখলাক নৈতিকতা সামাজিকতা ইত্যাদির সবই থাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও শান্তিময়। পবিত্র কুরআনে এজন্য সধবা নারীকে "আল মুহসানাত' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুহসানাত মানে হলো দুর্গে অবস্থানকারী নারী

বিবাহ সাদী পরিবার গঠনপূর্বক জীবন পরিচালনার মধ্যে অনেক কষ্ট বিদ্যমান থাকলেও এটিই নবীগনের সুন্নাত, এরই মধ্যে নিহিত আছে জীবনের আসল আনন্দ। মহান আল্লাহ মানুষের জন্য জীবন-যাত্রার এই পদ্ধতিকেই বেশি পছন্দ করেন। নবীগন বিশেষতঃ শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজে ঘর সংসার করার মাধ্যমেই জীবন অতিবাহিত করেছেন। মানে আল্লাহর হাবীব পারিবারিক জীবনের প্রতি পরতে পরতে অজস্র সুন্নাতের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে গিয়েছেন। অতএব আমাদের করণীয় হবে মহানবী সেই সুন্নাতগুলি যত বেশি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করব ততই আমরা সফলতা অর্জন করব।

উল্লেখ্য, ইসলাম প্রয়োজনের তাগিদে সর্বোচ্চ ০৪ টি বিবাহের অনুমতি দিলেও অপ্রয়োজনে একাধিক বিবাহ করাও পছন্দ করে না মহানবী (সাঃ) বস্তুত একটি বিবাহের উপরই জীবনের ৫৩ বছর পার করেছেন। তার পরিবার বলতে যা বুঝায় মানে সন্তান সম্প্রতি ঐ একই স্ত্রী হযরত খাদীজা (রাঃ) থেকে জন্মলাভ করেছেন। হযরত খাদীজা (রাঃ) এর জীবনকালে আল্লাহর হাবীর দোসরা কোন বিবাহের চিন্তাও করেননি। হযরত খানীজা (রাঃ) এর ওফাতের পর রাজনৈতিক, সামাজিক যুদ্ধ বা শান্তি, শিক্ষা-প্রচার ইত্যাদি প্রয়োজনে আল্লাহর নির্দেশে অন্যান্য বিবাহ তাকে করতে হয়েছে-যা কখনোও তার জাগতিক ইচ্ছা আকাংখার কারণে নয়। এজন্য একাধিক বিবাহের অংশটি উম্মতের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিধান হিসাবে পরিগনিত।

পরিবারের সংজ্ঞা

পরিবারের ইংরেজী প্রতিশব্দ Familyরক্ত বা বৈবাহিক সম্পর্ক পরিবারের ভিত্তি। পরিবার স্নেহ, মায়া-মমতা ও সহযোগিতার বন্ধনে সংগঠিত ক্ষুদ্র ও শাশ্বত সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর পৌর বিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার বলতে বুঝায়, সম্পর্কের ওপর গড়ে ওঠা সেই সংগঠন যেখানে এক বা একাধিক পুরুষ ও তাদের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও অন্যান্য পরিজনের বসবাস।

যে পরিবারের গঠন, কাঠামো ও কার্যাবলী পুরোপুরি আল কুরআন ও আল হাদিস ভিত্তিক তাকে ইসলামী পরিবার বলে। ইসলামী পরিবার বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের দিক দিয়ে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার। ইসলামী পরিবারে সদস্যদের পার্থিব কল্যাণ সাধনের পাশাপাশি পরকালীন জীবনের সুখ শান্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।

পরিবারের ভিত্তি

প্রাচীন কাল থেকেই পরিবার দুটি ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়ে এসেছে। একটি হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি নিহিত স্বভাবজাত প্রবণতা। পরিবারহীন জীবনে মানুষ নোঙ্গরহীন নৌকা বা বৃত্তচ্যুত পত্রের মত স্থিতিহীন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সমকালীন অর্থনৈতিক অবস্থা। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ خَلَقۡنَا زَوۡجَیۡنِ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

আমি প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (আয-যারিয়াত ৫১:৪৯)

ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব

ইসলামে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বিভিন্নভাবে এ গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। নিম্নে তা আলোকপাত করা হলো।।

ক। পরিবার একটি দুর্গসম

পবিত্র কুরআনে পরিবারকে দূর্গের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে।

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ

এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ। ( সূরা নিসা-২৪)

অর্থাৎ যেসব মহিলা দূর্গের মধ্যে আবদ্ধ তথা পারিবারিক বন্ধনে স্বামীর অধীনে রয়েছে তাদেরকে বিবাহ করা হারাম। দূর্গ যেমন শত্রুর পক্ষে দুর্ভেদ্য, তার ভেতরে জীবনযাত্রা যে রকম নিরাপদ, তেমনি পরিবারের নারী পুরুষ ও ছেলে-মেয়ে নৈতিকতা বিরোধী পরিবেশ ও অসৎ অশ্লীল জীবনের হাতছানি আক্রমন থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে।

খ। আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার অধিকার

বিয়ে ও দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে প্রেমের জালে আটকে পড়ে পারিবারিক গতির মধ্যে জীবন পরিচালনা করা বিশ্ব প্রকৃতির এক স্বভাবসম্মত বিধান। এটা কার্যকর রয়েছে বিশ্বজগতের পরতে পরতে। মহান আল্লাহর বাণী।

 وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। (সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

গ। সুস্থ পরিবারই সুস্থ সমাজ

ইসলামী সমাজ বিধানের দৃষ্টিতে পরিবার এবং পারিবারিক জীবন হচ্ছে সমাজ জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর। ইসলামী বিধানে ব্যক্তিদেহে এর যে গুরুত্ব, ইসলামী সমাজ জীবনে ঠিক সেই গুরুত্ব পরিবারের এবং পারিবারিক জীবনের। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"إِنْ كَانَ الشُّؤْمُ فِي شَيْءٍ فَفِي الدَّارِ وَالْمَرْأَةِ وَالْفَرَسِ".

কোন কিছুর মধ্যে যদি অশুভ থাকে, তা হলো: বাড়ি-ঘর, স্ত্রীলোক এবং ঘোড়া। (বুখারী-৫০৯৪)

وَلا تَرْفَعْ عَنْهُمْ عَصَاكَ أدبا

পরিবারের লোকদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষার জন্য কখনো শাসন হতে বিরত থাকবে না। (মিশকাত-৬১)

ঘ। পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদানের উত্তম ক্ষেত্র

পরিবারের সদস্যরা খুব কাছাকাছি অবস্থানের কারণে পরস্পরের প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করার দ্রুত সুযোগ পায়। আর এ সহযোগিতা প্রদান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَ اٰتِ ذَاالۡقُرۡبٰی حَقَّهٗ وَ الۡمِسۡکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ وَ لَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِیۡرًا

আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। (সূরা বনী ইসরাঈল-২৬)

وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্গনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কর না। (সূরা মায়িদাহ-০২)

ঙ। পরিবার থেকে মানবজাতির সম্প্রসারণ হয়ে থাকে।

পৃথিবীতে প্রথমে মানুষ ছিল না। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। তারপর তাঁরই বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করলেন হযরত হাওয়া (আঃ) কে। এর থেকেই পারিবারিক জীবনের যাত্রা। এ বন্ধনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে বৃদ্ধি পেতে থাকে আদম সন্তান। এ মর্মে আল্লাহ বলেনঃ

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ بَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالًا کَثِیۡرًا وَّ نِسَآءً ۚ

হে মানব সমাজ। তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনিকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা-০১)

«تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ. إِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأَنْبِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

তোমরা অধিক সন্তান প্রসবা মমতাময়ী নারীকে বিবাহ করবে। কেননা আমি কেয়ামতের দিন তোমাদের দ্বারা সংখ্যাধিক্যের গর্ব করব। (নাসায়ী-৩২২৭)

চ। পৃথিবীর শোভা বর্ধনকারী

একটি পরিবার সারা পৃথিবীর মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর আবেগ উচ্ছাসপূর্ণ প্রেম ভালোবাসার মাধ্যমে মিলনের ফলে যে নেক সন্তান জন্মলাভ করে পৃথিবীবাসী এর মাধ্যমে বহুবিধ কল্যাণ লাভ করতে পারে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন:

اَلۡمَالُ وَ الۡبَنُوۡنَ زِیۡنَۃُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। (সূরা কাহফ -৪৬)

ছ। বিশ্ব নবীর পরিবার।

ইসলামী জীবনাদর্শের রূপকার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জন্মগ্রহণের পর থেকে চাচা আবু তালেব, দাদা আবদুল মুত্তালিব আর মায়ের স্নেহমাখা পারিবারিক বন্ধনে বড় হতে থাকেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবনের অনুপম আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। বিশ্ব নবীর জীবনটাই পারিবারিক জীবনের প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ বহন করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمْ الْأُمَمَ وَمَنْ كَانَ ذَا طَوْلٍ فَلْيَنْكِحْ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَعَلَيْهِ بِالصِّيَامِ فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَاءٌ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মোতাবেক কাজ করলো না সে আমার নয়। তোমরা বিবাহ করো, কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মাতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন রোযা রাখে। কারণ রোযা তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী। (সহীহাহ ২৩৮৩)

পরিবারের বৈশিষ্ট্য

পরিবারের উপরোক্ত গুরুত্ব বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়।

ক। পরিবার স্থায়ী সংস্থা

কুরআন অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানব যেমন আদম (আঃ) তেমনি মানবজাতির প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল আদম ও হাওয়াকে কেন্দ্র করে। মহান আল্লাহ বলেন।

وَ قُلۡنَا یٰۤاٰدَمُ اسۡکُنۡ اَنۡتَ وَ زَوۡجُکَ الۡجَنَّۃَ وَ کُلَا مِنۡهَا رَغَدًا حَیۡثُ شِئۡتُمَا

আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং যা চাও, সেখান থেকে পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক। (সূরা আল বাকারাহ-৩৫ )

খ। বৈবাহিক বন্ধনে গঠিত

বৈবাহিক বন্ধনের মধ্যদিয়ে পরিবারের শুভ সুচনা হয় এবং আকার ও পরিধি বড় হতে থাকে। হাদিসে এসেছে

وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ: الْحَيَاءُ وَيُرْوَى الْخِتَانُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি বিষয় নবী-রসূলদের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত- (১) লজ্জাশীলতা, (২) সুগন্ধি ব্যবহার করা; (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) বিয়ে করা। (তিরমিজি-১০৮০)

وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمْ الْأُمَمَ

তোমরা বিবাহ কর, আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গৌরব করবো। (ইবনে মাজাহ-১৮৬৩)

গ। বাসস্থান

পরিবারের সদস্যদের বসবাস করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আবাসন থাকে। এখানে তারা লালিত-পালিত হতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

وَعَنْ أَبِيْ عَمْرٍو، وَيُقَاُلُ: أَبُوْ عَبْدِ الله، وَيُقَالُ: أَبُوْ لَيْلىٰ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّصلى الله عليه وسلم قَالَ: « لَيْسَ لِإِبْنِ آدَمَ حَقٌّ فِيْ سِوٰى هٰذِهِ الْخِصَالِ: بَيْتٌ يَسْكُنُهُ، وَثَوْبٌ يُوَارِي عَوْرَتَهُ وَجِلْفُ الخُبْزُ، وَالمَاءِ » رواه الترمذي

আবূ আমর উসমান ইবনু আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু (তাকে আবূ আব্দুল্লাহ ও আবূ লাইলাও বলা হয়) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আদম সন্তানের তিনটি বস্তু ব্যতীত কোন বস্তুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাস করার জন্য একটি বাড়ি, শরীর আবৃত করার জন্য কিছু কাপড় এবং কিছু রুটি ও পানি। (তিরমিযী-২৩৪১)

ঘ। জবাবদিহীতামূলক

প্রত্যেক পরিবারের একজন করে কর্তা থাকে। তিনি পরিবারের সকল সদস্যের সুখ শান্তির দিকে সর্বদা খেয়াল রাখে। তাকে পরিবারের সবাই সম্মান করে। মহান আল্লাহ বলেন:

اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوۡنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللّٰهُ بَعۡضَهُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ وَّ بِمَاۤ اَنۡفَقُوۡا مِنۡ اَمۡوَالِهِمۡ

পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের মর্যাদা দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। (সূরা নিসা ৩৪)

ঙ। পারস্পরিক দায়িত্ব।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের কতিপয় দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। যেমন- নিরাপত্তা, ভরণপোষন, বিপদমুক্তি, গৌরব সংরক্ষণ ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالأَمِيرُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‏"‏

তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের ব্যাপারে (দায়িত্ব) জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম বা নেতা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ( বুখারী-৮৯৩)

পারিবারিক জীবনের উদ্দেশ্য

সমাজে পরিবারের ভূমিকা কেমন? পারিবারিক জীবনের উদ্দেশ কি? এই বিষয় নিম্নে সাম্যক আলোচনা করা হলঃ

ক। বংশ বিস্তার

পরিবারই হচ্ছে মানব বংশ বৃদ্ধির মূল প্রতিষ্ঠান। আল্লহর বাণী:

وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ بَنِیۡنَ وَ حَفَدَۃً وَّ رَزَقَکُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ

আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণি থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। (সুরা নাহল ১৬:৭২)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ. إِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأَنْبِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

এমন নারীকে বিয়ে করো যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারিণী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করবো। (আবু দাউদ-২০৫০)

খ। মানব বংশ সংরক্ষন

পরিবারের মাধ্যমেই মানব বংশ সুরক্ষিত থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ مِنَ الۡمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهٗ نَسَبًا وَّ صِهۡرًا ؕ وَ کَانَ رَبُّکَ قَدِیۡرًا

তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম। (সূরা ফুরকান আয়াত ২৫:৫৪)

গ। পারস্পরিক শান্তি ও স্বস্তিলাভ।

পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একান্তে শান্তি ও স্বস্তির নিরাপদ পরিবেশ লাভ করে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগীনিদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রুম ৩০:২১)

إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهِ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যার চরিত্র ভালো এবং যে নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে দয়াদ্র ব্যবহার করে সে-ই ইমানের দিক হতে পরিপূর্ণ মু'মিন। (তিরমিজি-২৬১২)

ঘ। জৈবিক চাহিদা পূরণ ও লজ্জা সংরক্ষণ

পরিবারই নারী পুরুষের বৈধ জৈবিক চাহিদা পূরণ ও লজ্জা সংরক্ষনের পরিবেশ নিশ্চিত করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

وفي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ قَالُوْا : يَا رَسُولَ اللهِ أيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُوْنُ لَهُ فِيهَا أجْرٌ ؟ قَالَ أرَأيتُمْ لَوْ وَضَعَهَا في حَرامٍ أَكَانَ عَلَيهِ وِزرٌ ؟ فكذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا في الحَلالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ رواه مسلم

নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ সাহাবীগন আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ করে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে (স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে) কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়ার পাবে। (মিশকাত-১৮৯৮)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। সাওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (বুখারী-১৯০৫)

আদর্শ পরিবার গঠনে আমাদের করণীয়

আদর্শ পরিবার গঠনে আমাদের করণীয় সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলঃ

ক। উত্তম জীবন সঙ্গীনি নির্বাচন

একটি আদর্শ পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত একজন উত্তম, নেককার ও পরহেযগার জীবন সঙ্গীনি নির্বাচন। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ يَقُولُ: «مَا اسْتَفَادَ الْمُؤْمِنُ بَعْدَ تَقْوَى اللَّهِ خَيْرًا لَهُ مِنْ زَوْجَةٍ صَالِحَةٍ إِنْ أَمْرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا سرته وَإِن أقسم عَلَيْهِ أَبَرَّتْهُ وَإِنْ غَابَ عَنْهَا نَصَحَتْهُ فِي نَفْسِهَا وَمَاله» . روى ابْن مَاجَه

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পূণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে; সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে। আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে তার সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাযত- করে।  (ইবনে মাজহা-১৮৫৭)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ

দুনিয়ার সবই হলো জীবনের জন্য উপকরণ। আর দুনিয়ায় অবস্থিত সকল উপকরণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (অতি গুরুত্বপূর্ণ) উপকরণ হলো পুণ্যময়ী নারী। (বুখারী-৫০৯৩)

عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয় তার সম্পদ, বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (বুখারী-৫০৯০)

খ। সালামের প্রচলন

পরিবারে শান্তি ও বরকত লাভের জন্য সকল সদস্যের মাঝে ব্যাপক ভাবে সালামের প্রচলন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন।

فَاِذَا دَخَلۡتُمۡ بُیُوۡتًا فَسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ تَحِیَّۃً مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ مُبٰرَکَۃً طَیِّبَۃً ؕ

অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। (সূরা নূর আয়াত ২৪:৬১)

গ। পর্দা পালন

পরিবারে স্ত্রী সন্তানদের মধ্যে পর্দা পালনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی

তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (সূরা আহযাব আয়াত-৩৩)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ؟ قَالَ: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ»

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোনো নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দেবর তো মরণসম বা মরণের ন্যায়। বুখারী ৫২৩২, (মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৭৩৪৭, দারিমী ২৬৮৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৯০৮)

ঘ। কুরআন তেলাওয়াত।

সংসারে শয়তানের প্ররোচনা দূর করতে কুরআন তেলাওয়াতের চর্চা রাখতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِى تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না (অর্থাৎ কবরে যেমন নামায বা তেলাওয়াত হয় না তেমনি বিনা নামায ও তেলাওয়াতে ঘরকেও তার মত করো না; বরং তাতে নামায ও তেলাওয়াত করতে থাক।) অবশ্যই শয়তান সেই ঘর হতে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়। (মুসলিম-১৭০৯)

ঙ। একত্রে আহার করা

পরিবারের সকলে একত্রে আহার করলে সংসারে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। মহান আল্লাহর বাণী:

لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَاۡکُلُوۡا جَمِیۡعًا اَوۡ اَشۡتَاتًا ؕ

তোমরা একরে আহার কর অথবা পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। (সূরা নূর আয়াত ২৪:৬১)

চ। পারস্পরিক পরামর্শ গ্রহন

ছোট বড় সকল ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ গ্রহন করার মাঝে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَ شَاوِرۡهُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ

কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা'আলার উপর ভরসা করুন। আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন। (সূরা আল-ইমরান ৩:১৫৯)

ছ। দ্বীনদারীর চর্চা

কিছু কিছু এবাদত-বন্দেগী ঘরের মধ্যে আদায় করার ব্যাপারে শরিয়ত উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسٰی وَ اَخِیۡهِ اَنۡ تَبَوَّاٰ لِقَوۡمِکُمَا بِمِصۡرَ بُیُوۡتًا وَّ اجۡعَلُوۡا بُیُوۡتَکُمۡ قِبۡلَۃً وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

আর আমি নির্দেশ পাঠালাম মূসা এবং তার ভাইয়ের প্রতি যে, তোমরা তোমাদের জাতির জন্য মিসরের মাটিতেবাসস্থান নির্ধারণ কর। আর তোমাদের ঘরগুলো বানাবে কেবলামুখী করে এবং সালাত কায়েম কর আর যারা ইমানদার তাদেরকে সুসংবাদ দান কর। (সূরা ইউনুস-৮৭)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই (জাহান্নামের) অগ্নি থেকে রক্ষা কর। (সূরা তাহরিম ৬৬:০৬)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اجْعَلُوا فِي بُيُوتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ وَلاَ تَتَّخِذُوهَا قُبُورًا

ইবনু উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না। (বুখারী-১১৮৭)

জ। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সদ্ব্যবহার

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সদ্ব্যবহার সংসারের শান্তি ও উন্নতির মূলমন্ত্র। মহান আল্লাহ বলেন:

هُنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ؕ

তারা তোমাদের পরিচ্ছন এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। (সূরা বাকারা আয়াত-১৮৭)

وَ لَهُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡهِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ

আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। (সূরা বাকারা আয়াত-২২৮)

ঝ। আদব-আখলাক শিক্ষা

সন্তানদেরকে আদব-আখলাক ও সচ্চরিত্র শিক্ষা দেওয়া পিতা-মাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং উত্তম পরিবার গঠনের সহায়ক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

 أكرموا أَوْلادَكُمْ وَأَحْسِنُوا أدبهم

তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাথে উত্তম আচরন করো এবং তাদেরকে উত্তমরূপে সদাচার শিক্ষা দাও। (ইবনে মাজাহ- ৩৬৭১)

مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدًا مِنْ نَحْلٍ أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ

কোন পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চেয়ে বেশী উত্তম কোন জিনিস দিতে পারে না। (তিরমিজি -১৯৫২)

وَعَنْ جَابِرِبْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَأَنْ يُؤَدِّبَ الرَّجُلُ وَلَدَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিজের সন্তানকে শিষ্টাচার ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া এক 'সা' পরিমাণ বস্তু দান করার চেয়েও উত্তম। ( তিরমিজি -১৯৫১)

ঞ। পারস্পরিক সহনশীলতা

পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানদের মাঝে সহনশীলতা বজায় রাখা ইসলামের শিক্ষা। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ وَ اَوۡلَادِکُمۡ عَدُوًّا لَّکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَعۡفُوۡا وَ تَصۡفَحُوۡا وَ تَغۡفِرُوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

হে মুমিনগণ! তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। আর যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (সূরা তাগাবুন ৬৪:১৪)

ট। দোয়া করা

সংসারের শান্তি-সমৃদ্ধি এবং স্ত্রী-সন্তানের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে সাহায্য কামনা করতে হবে। আল-কুরআনে এসেছে।

رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ٭ۖ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ

হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। (সূরা ইব্রাহিম ১৪:৪০)

وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا ﴿۷۴

এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। (সূরা ফুরকান ২৫:৭৪)

عَنْ عَبْدِ، اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا سَافَرَ يَتَعَوَّذُ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمُنْقَلَبِ وَالْحَوْرِ بَعْدَ الْكَوْرِ وَدَعْوَةِ الْمَظْلُومِ وَسُوءِ الْمَنْظَرِ فِي الأَهْلِ وَالْمَالِ‏.‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ-দোয়া থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (রিয়াদুস সালেহীন ৯৮০)

ঠ। সময়ের সচেতনতা

নিয়মিত সালাত আদায়ে যত্নবান হওয়ার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মাঝে সময় সচেতনতা সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ বলেন:

حٰفِظُوۡا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوۃِ الۡوُسۡطٰی ٭ وَ قُوۡمُوۡا لِلّٰهِ قٰنِتِیۡنَ ﴿۲۳۸

সমস্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। (সূরা বাকারা ২:২৩৮)

اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ﴿۱۰۳

সালাত ঠিক করে পড়। নিশ্চয় সালাত আদায় করা মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (সূরা নিসা ৪:১০৩)

উপসংহার

পরিবার প্রথা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিরাট নিয়ামত। এর যথাযথ সংরক্ষণের মধ্যেই সামাজিক ও জাতীয় জীবনের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এজন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে একটি কাঙ্খিত ও আদর্শ পরিবারার গঠনের জন্য সর্বদা সাহায্য কামনা ও নির্ভর করাই আমাদের কতর্ব্য।

পিডিএফ ডাউনলোড

Direct Download | Google Drive