আত্মহত্যার কারন ও পরিণাম । মোটিভেশন ক্লাস

আত্মহত্যার কারন ও পরিণাম
আত্মহত্যা

দেশে মহামারীর মতো বাড়ছে আত্মহত্যা। বিশেষ করে করোনা মহামারীতে বিদ্যুৎ বেগে বাড়ছে আত্মহত্যা। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে চলমান মহামারীর মধ্যে যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে সে সময় ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।

কারবালা / আশুরা / ১০ই মুহাররাম

কারবালা, আশুরা বা ১০ই মুহাররম
কারবালা, আশুরা বা ১০ই মুহাররম 

আশুরা বা ১০ই মুহাররম মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই আশুরার আলোচনা দুই ভাবে করা যায়।

১) হাদিসের আলোকে।

২) ইতিহাসের আলোকে।

হাদিসের আলোকেঃ অর্থাৎ মুহাররম মাসের দশ তারিখে রাসুল (সাঃ) কোন আমল করতেন কিনাএই দিন সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর কোন দিকনির্দেশনা আছে কিনা?


ইতিহাসের আলোকেঃ রাসুল (সাঃ) ইন্তিকাল করার পরে যেহেতু ঐতিহাসিক কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছিল তাই কারবালার ইতিহাসের বিষয়টি রাসুল সাঃ এর হাদিসের আলোকে আলোচনা করার সুযোগ নেই। সেটা আলোচনা করতে হবে ইতিহাসের আলোকে।

আমলঃ ইসলামে যে কোন ফরজওয়াজিবসুন্নত নফল আমল সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কুরআন এবং হাদিসের দলিল প্রয়োজন হয়। 

যেহেতু রাসুল (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন ১১ হিজরি সালে এবং কারবালার ঘটনা ঘটেছিল ৬১ হিজরিতে। অর্থাৎ প্রায় ৫০ বছর পর। তাই কারবালার ইতিহাস নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর মুখ নিঃসৃত কোন হাদিস না থাকাই স্বাভাবিক এবং নির্ভরযোগ্য সনদে কোন ভবিষ্যতবাণী ও পাওয়া যায়না। 

সে অনুযায়ী কারবালার ইতিহাস নিয়ে ইসলামে কোন আমল চালু হতে পারেনা। একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই রাসুল সাঃ এর পরিবারের প্রতি সকলের ভালোবাসা থাকবে,  কারবালার দুঃখজনক ইতিহাস নিয়ে একজন মুসলমানের মন কাঁদবে  এটাই ঈমানি দাবী। কিন্তু সেটার জন্য নতুন কোন আমল চালু করা কুরআন হাদিস সম্মত নয়।

যারা বলেন রাসুলের পরিবার পরিজনকে(আহলে বায়েত)  শহিদ করা হয়েছে তাই আমরা উনাদের ভালোবাসায় নিজেকে আঘাত করি। উনাদের স্মৃতিতে তাজিয়া মিছিল করে দুঃখ প্রকাশ করি।

তাদের নিকট আমার প্রশ্নঃ আপনি রাসুল সাঃ কে বেশি ভালোবাসেননাকি উনার নাতিদেরকেহযরত হুসাইন রাঃ এর কারনে আপনি নিজেকে আঘাত করছেন। যুদ্ধে রাসুল সাঃ এর দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল সেদিন এর কথা স্বরণ করে আপনি নিজের কয়টা দাঁত ভেঙ্গেছেন?

হাদিসের আলোকে আশুরাঃ হাদিসের আলোকে জানা যায় হযরত মুসা (আঃ) কে মুহাররম এর দশ তারিখে আল্লাহ তা'য়ালা ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেন। তাই ইহুদীরা এই দিনে সিয়াম পালন করতো। রাসুল সাঃ তাই সাহাবাদের আদেশ করেন তারা যেন এই দিন সিয়াম পালন করে কারন মুসা (আঃ) তাদের চাইতে আমাদের কাছে বেশি প্রিয়। তবে সিয়াম পালন করার ক্ষেত্রে ইহুদিদেরকে অনুস্বরণ করা যাবেনা। অর্থাৎ তারা দশ তারিখে রোজা থাকলে মুসলমানরা যেন নয় তারিখেও একটি রোজা রাখে। তাহলে ইহুদীদের সাথে মিল থাকলোনা।

নয় তারিখ+ দশ তারিখ। মোট দুইটি রোজা রাখতে হবে।

হাদিসের আলোকে জানা যায় রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। সুতরাং এই রোজার গুরুত্ব অনেক বেশি। 

হাদিসের আলোকে আরো একটি আমল হল পরিবার পরিজনের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। যদিও এটার সনদ কিছুটা দুর্বল।

সাহাবারা তাদের ছোট ছোট বাচ্চাকে এই আশুরার রোজা রাখার জন্য উৎসাহ দিতেন। তাদের হাতে খেলনা দিতেন। যেন খেলতে গিয়ে ক্ষুধার কথা ভুলে যায়। 

২০২১ সালে আশুরার দশ তারিখ হল শুক্রবার। তাই কেউ রোজা রাখতে চাইলে আগামি কাল বৃহস্পতিবার  এবং শুক্রবার রোজা রাখতে পারেন। মনে রাখবেন এই রোজা (এবং দুর্বল সনদে) ভালো খাবার  ছাড়া আশুরার অন্য কোন আমল হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয়।

 


অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা


অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা

অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা

اِنَّ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَہۡدِیۡ لِلَّتِیۡ ہِیَ اَقۡوَمُ وَیُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَبِیۡرًا ۙ

এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে।

(বনি ইসরাইল ১৭:৯)

নেককার সন্তান লাভের কয়েকটি কুরআনিক দু'য়া

দোয়া-১

হযরত জাকারিয়া আঃ এর দোয়া

নেককার সন্তান লাভের কুরআনিক দু'য়া

সন্তান লাভের কুরআনিক দুআ 


رَبِّ
هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী। [সূরা আল-ইমরান ৩:৩৮]

তাফসিরঃ

হযরত যাকারিয়া (আঃ) দেখেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মারইয়াম (আঃ)-কে অসময়ের ফল দান করছেন। শীতকালে গ্রীষ্মকালের ফল এবং গ্রীষ্মকালে শীতকালের ফল তাঁর নিকট বিদ্যমান থাকছে। সুতরাং তিনিও স্বীয় বার্ধক্য ও স্বীয় সহধর্মিণীর বন্ধ্যাত্ব জানা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলার নিকট অসময়ে ফল অর্থাৎ সুসন্তান লাভের প্রার্থনা জানাতে থাকেন। আর যেহেতু এটা বাহ্যতঃ অসম্ভব জিনিস ছিল, তাই তিনি অতি সন্তর্পণে এ প্রার্থনা জানান। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ নেদায়ান খাফীয়া অর্থাৎ গোপন প্রার্থনা।(তাফসিরে ইবনে কাসির।)

হযরত ইব্রাহিম আঃ এর দোয়া

দোয়া-২

নেককার সন্তান লাভের কুরআনিক দু'আ

সন্তান লাভের কুরআনিক দুআ 


رَبِّ
اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَمِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ٭ۖ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ 

হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। [সুরা ইব্রাহিম ১৪:৪০]

তাফসির

ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ এখানে আল্লাহ তাআলা স্বীয় বন্ধু ইবরাহীম খালীলের (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তিনি বলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার ইচ্ছা ও মনের বাসনা আমার চেয়ে আপনিই ভাল জানেন। আমি চাই যে, এখানকার অধিবাসীরা যেন আপনার সন্তুষ্টি কামনাকারী হয় এবং শুধুমাত্র আপনারই প্রতি অনুরাগী হয়। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই আপনার কাছে পূর্ণরূপে জ্বাজ্জল্যমান। যমীন ও আসমানের প্রতিটি জিনিসের অবস্থা সম্পর্কে আপনি ওয়াকিফহাল। এটা আমার প্রতি আপনার বড় অনুগ্রহ যে, এই বৃদ্ধ বয়সেও আপনি আমাকে ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাকের (আঃ) । নয় দুটি সুসন্তান দান করেছেন। আপনি প্রার্থনা কবুলকারী বটে। আমি চেয়েছি আর আপনি দিয়েছেন। সুতরাং হে আমার প্রতিপালক! এজন্যে আমি আপনার নিকট বড়ই কৃতজ্ঞ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনি নামায প্রতিষ্ঠিতকারী বানিয়ে দিন এবং আমার সন্তানদের মধ্যেও এই সিলসিলা বা ক্ৰম কায়েম রাখুন! আমার সমস্ত প্রার্থনা কবুল করুন।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)

 দোয়া-৩

সন্তান লাভের কুরআনিক দুআ 


رَبِّ
لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

অর্থাৎ হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৮৯ ]

তাফসির

আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দা হযরত যাকারিয়্যার (আঃ) খবর দিচ্ছেন যে, তিনি প্রার্থনা করেছিলেনঃ আমাকে একটি সন্তান দান করুন, যে আমার পরে নবী হবে। সূরায়ে মারইয়াম ও সূরায়ে আল-ইমরানে এই ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি এই দুআ নির্জনে করেছিলেন। 

আমাকে একা ছেড়ে দিয়েন না, এই উক্তির তাৎপর্য হচ্ছেঃ আমাকে সন্তানহীন করবেন না। দুআ ও চাওয়ার জন্যে তিনি আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রার্থনা কবূল করেন এবং তার যে স্ত্রী বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন তাকে তিনি সন্তানের যোগ্যা করে তোলেন। হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, তিনি বন্ধ্যা ছিলেন, অতঃপর তিনি সন্তান প্রসব করেন। (তাফসির ইবনে কাসির)

নেককার সন্তানের জন্য দোয়া

দোয়া-৪

সন্তান লাভের কুরআনিক দুআ 


رَبَّنَا
هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদেরকে সংযমীদের আদর্শস্বরূপ করো। [সুরা ফুরকান ২৫:৭৪]

তাফসির

তারা আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্যে এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্যে নয়ন প্রীতিকর হয়। অর্থাৎ তারা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে যে, তাদের সন্তান-সন্ততিও যেন তাদের মত একত্ববাদী হয় এবং মুশরিক না হয়, যাতে দুনিয়াতেও ঐ সুসন্তানদের কারণে তাদের অন্তর ঠাণ্ডা থাকে এবং আখিরাতেও তাদের ভাল অবস্থা দেখে তারা খুশী হতে পারে। এই প্রার্থনার উদ্দেশ্য তাদের দৈহিক সৌন্দর্য নয়, বরং সততা ও সুন্দর চরিত্রই উদ্দেশ্য। মুসলমানদের প্রকৃত আনন্দ এতেই রয়েছে যে, তারা তাদের সন্তানদেরকে ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে আল্লাহর অনুগত বান্দারূপে দেখতে পায়। তারা যেন যালিম না হয়, দুষ্কৃতিকারী না হয়, বরং খাটি মুসলমান হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

হযরত ইব্রাহিম আঃ এর দোয়া

দোয়া-৫

সন্তান লাভের কুরআনিক দুআ 

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

অর্থাৎ হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল  সন্তান দাও৷ [সুরা সফফাত ৩৭:১০০]

তাফসির

আল্লাহ তা'আলা সংবাদ প্রদান করছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমান আনয়ন হতে নিরাশ হয়ে গেলেন, কারণ তারা আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশক বহু নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনলো না, তখন তিনি সেখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে ইচ্ছা করে প্রকাশ্যভাবে তাদেরকে বললেনঃ আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম। তিনি অবশ্যই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আর তিনি প্রার্থনা করলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন! অর্থাৎ ঐ সন্তান যেন একত্ববাদে তাঁর সঙ্গী হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। ইনিই ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথম সন্তান। (তফসির ইবনে কাসির)

 


হাদিসের আলোকে আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা । জুমুয়ার খুতবা

আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা
আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মদীর প্রতি দয়া পরবশ হয়ে তাদের জন্য এমন কতগুলো স্থান, সময়, দিন ও মাস মনোনীত করেছেন যে, যে সময়গুলো ইবাদত, বন্দেগীতে মশগুল হতে পারলে আল্লা তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মহররম মাস এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। আল্লাহ তাআলা নিজেই এ মাসকে সম্মানিত মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তাআলার নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যথা, মহররম, জিলকদ, জিলহজ্জ্ব ও রজব। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, 

اِنَّ عِدَّۃَ الشُّہُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰہِ اثۡنَا عَشَرَ شَہۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ مِنۡہَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡہِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَقَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ

নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। (সুরা তাওবা ৯:৩৬)

আশুরার সম্মান ও গুরুত্ব

হিজরী বছরের প্রথম মাস মুহররম এর ১০ম দিবসটি আশুরা হিসেবে পরিচিত। মূলত আশুরা শব্দটি আরবী আশারা থেকে এসেছে। আর আশারা শব্দের অর্থ দশ। আশুরার দিবসকে জাহিলী যুগেও আরবের অধিবাসীরা অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হিসেবে বিবেচনা করতো। তারা মহররম মাসে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি, হানাহানি এবং যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বিরত থাকতো। আর আশুরার দিনে তারা সাওম পালন করতো। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু হাদিস উপস্থাপন করা হলোঃ 

১। আশুরার ঐচ্ছিক সিয়াম

أَنَّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهُ أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُفْطِرْهُ ‏"‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শরা জাহিলী যুগে 'আশুরার দিন সওম পালন করত। রমযানের সিয়াম (রোজা/রোযা) ফারয (ফরয) হওয়ার পূর্বে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা সে এদিন সওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা, সে তা ছেড়ে দিবে।  (সহীহ মুসলিম , ২৫৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫০৮, ইসলামীক সেন্টার ২৫০৭)

অন্য হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رضى الله عنهما أَنَّهُ ذُكِرَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمُ عَاشُورَاءَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَانَ يَوْمًا يَصُومُهُ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَرِهَ فَلْيَدَعْهُ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, আশুরার দিন সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, এ দিনে জাহিলী যুগে লোকেরা সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন করত। তোমাদের মধ্যে যে এ দিনে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন করতে আগ্রহী, সে এ দিনে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালন করতে পারে। আর যে অপছন্দ করে, সে ছেড়ে দিতে পারে। (সহীহ মুসলিম ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫১১, ইসলামীক সেন্টার ২৫১০)

২। রমাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিন রসূলুল্লাহ (সাঃ) সিয়াম পালন করতেন।

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلَ الأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ وَهُوَ يَتَغَدَّى فَقَالَ يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ إِلَى الْغَدَاءِ ‏.‏ فَقَالَ أَوَلَيْسَ الْيَوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ قَالَ وَهَلْ تَدْرِي مَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ قَالَ وَمَا هُوَ قَالَ إِنَّمَا هُوَ يَوْمٌ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فَلَمَّا نَزَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ تُرِكَ ‏.‏ وَقَالَ أَبُو كُرَيْبٍ تَرَكَهُ ‏.

আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আশআস ইবনু ক্বায়স (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবূ মুহাম্মাদ! তুমি খাওয়ার জন্য কাছে এসো। তিনি বললেন, আজ কি আশূরার দিন নয়? তিনি বললেন, তুমি কি জান আশূরা দিন কী? আশআস (রাঃ) বললেন, সে আবার কী? তিনি বললেন, রমাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিয়াম পালন করতেন। যখন রমাযানের সিয়াম ফরয হল তখন তা ছেড়ে দেয়া (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৩৮, ই.ফা. ২৫১৫, ই.সে. ২৫১৪)

৩। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَالْيَهُوْدُ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فَسَأَلَهُمْ فَقَالُوْا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِيْ ظَهَرَ فِيْهِ مُوْسَى عَلَى فِرْعَوْنَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَحْنُ أَوْلَى بِمُوْسَى مِنْهُمْ فَصُوْمُوْهُ

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মদিনায় এলেন, তখন ইয়াহূদীরা আশুরার দিন সওম পালন করত। তিনি তাদের (সওমের কারণ) জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এ দিনে মূসা (আ.) ফিরআউনের ওপর জয়ী হয়েছিলেন। তখন নাবী বললেন, আমরাই তো তাদের চেয়ে মূসা (আ.)-এর নিকটবর্তী। কাজেই (মুসলিমগণ) তোমরা এ সিয়াম পালন কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৭৩৭ আ.প্র. ৪৩৭৬, ই.ফা. ৪৩৭৮)

অন্য হাদিসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، - رضى الله عنهما - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ ‏"‏ ‏.‏ فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ‏.

 ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় হিজরত করে ইয়াহূদীদেরকে আশূরার দিন সওম পালনরত দেখতে পেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমারা কোন দিনের সওম পালন করছ, তারা বলল, মহান দিনে আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফিরআওন ও তার কওমকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূসা (আঃ) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার লক্ষ্যে এ দিনে সওম পালন করেছেন। তাই আমরাও এ দিনে সওম পালন করছি। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমরা তো তোমাদের থেকে মূসা (আঃ)- এর অধিক নিকটবর্তী এবং হাক্বদার। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করলেন এবং সওম পালন করার জন্য সকলকে নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৪৮, ই. ফা. ২৫২৫, ই. সে. ২৫২৪)

৪। রমাদ্বানের পরে শ্রেষ্ঠ সিয়াম

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي يَزِيدَ، سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، - رضى الله عنهما - وَسُئِلَ عَنْ صِيَامِ، يَوْمِ عَاشُورَاءَ ‏.‏ فَقَالَ مَا عَلِمْتُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَامَ يَوْمًا يَطْلُبُ فَضْلَهُ عَلَى الأَيَّامِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ وَلاَ شَهْرًا إِلاَّ هَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي رَمَضَانَ ‏.

উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে আশূরার দিনে সিয়াম পালন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, এ দিন ব্যতীত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মাসকে অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে সিয়াম পালন করেছেন করেও আমার জানা নেই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৫২(ই. ফা. ২৫২৯, ই. সে. ২৫২৮)

৫। নবম তারিখে সিয়াম পালন

عَنِ الْحَكَمِ بْنِ الأَعْرَجِ، قَالَ انْتَهَيْتُ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ رِدَاءَهُ فِي زَمْزَمَ فَقُلْتُ لَهُ أَخْبِرْنِي عَنْ صَوْمِ عَاشُورَاءَ ‏.‏ فَقَالَ إِذَا رَأَيْتَ هِلاَلَ الْمُحَرَّمِ فَاعْدُدْ وَأَصْبِحْ يَوْمَ التَّاسِعِ صَائِمًا ‏.‏ قُلْتُ هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ قَالَ نَعَمْ ‏.

হাকাম ইবনু আরাজ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)- এর কাছে পৌছলাম। এ সময় তিনি যমযমের কাছে চাদর বিছানো অবস্থায় বসা ছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমাকে আশূরা দিবসের সিয়াম পালন সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে তিনি বললেনমুহাররম মাসের চাঁদ দেখার পর তুমি এর তারিখগুলো গুণে রাখবে। এরপর নবম তারিখে সওম অবস্থায় তোমার যেন ভোর হয়। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সেদিন সিয়াম পালন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা, করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৫৪, ই.ফা. ২৫৩১, ই.সে. ২৫৩০)

৬। ইহুদিদের সাথে সামঞ্জস্য না রাখা

عن ابْنَ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ - إِنْ شَاءَ اللَّهُ - صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আশূরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়াহুদ এবং নাসারা এই দিনের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। বর্ণনাকারী বললেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্হায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৫৬, ই. ফা. ২৫৩৩ ই. সে. ২৫৩২)

৭। আশুরার সিয়ামের প্রতি ছোটদের উদ্ভুদ্ধ করা

عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذِ بْنِ عَفْرَاءَ، قَالَتْ أَرْسَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ الَّتِي حَوْلَ الْمَدِينَةِ ‏ "‏ مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ ‏"‏ ‏.‏ فَكُنَّا بَعْدَ ذَلِكَ نَصُومُهُ وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا الصِّغَارَ مِنْهُمْ إِنْ شَاءَ اللَّهُ وَنَذْهَبُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهَا إِيَّاهُ عِنْدَ الإِفْطَارِ ‏.

রুবায়ই বিনতু মু'আব্‌বিয ইবনু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরার দিন ভোরে এক ব্যাক্তিকে মাদীনার পার্শ্ববর্তী আনসারী সাহাবীগণের জনপদে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, সে যেন করে ঘোষনা করে দেয় যে, সিয়ামরত অবস্হায় যার ভোর হয়েছে, সে যেন তার সওমকে পূর্ণ করে। আর যার ইফত্বার অবস্হায় ভোর হয়েছে, সে যেন তার দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত অবস্হায় পূর্ণ করে। এরপর আমরা এ দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট ছোট সন্তানদেরকেও আল্লাহ চাহে তো সওম পালনে অভ্যস্ত করে তুলতাম। আমরা তাদেরকে মাসজিদে নিয়ে যেতাম এবং তাদের জন্য পশমের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাওয়ার জন্য কাঁদত, তখন আমরা তাদেরকে সে খেলনা প্রদান করতাম। এমনি করে ইফত্বারের সময় হয়ে যেত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৫৯, ই. ফা. ২৫৩৬ ই. সে. ২৫৩৫)

৮। রমাজানের সিয়াম ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার সিয়াম পালন করা হত

عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَانَ عَاشُوْرَاءُ يُصَامُ قَبْلَ رَمَضَانَ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ قَالَ مَنْ شَاءَ صَامَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ.

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রমাযানের সওমের (আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার) পূর্বে আশুরার সওম পালন করা হত। এরপর যখন রমাযানের (সম্পর্কিত বিধান) অবতীর্ণ হল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ইচ্ছা করে (আশুরার) সওম পালন করবে, আর যে চায় সে সওম পালন করবে না। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৫০২, আ.প্র. ৪১৪৪, ই.ফা. ৪১৪৭)

৯। মুহাররম মাসের মর্যাদা

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم«أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ: شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعدَ الفَرِيضَةِ: صَلاَةُ اللَّيْلِ» . رواه مسلم

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাহে রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা, আল্লাহর মাস মুহাররম। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায। (মুসলিম ১১৬৩)  রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১২৫৪

১০। পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারা

عن أنس بن مالك: صومُ يومِ عاشوراءَ يكفِّرُ العامَ الَّذي قبلَه وصومُ يومِ عرفةَ يُكفِّرُ العامَ الَّذي قبلَه. ابن عساكر (ت ٥٧١)، معجم الشيوخ ٢‏/٧٤٧ 

আশা করি আশুরার সাওমের কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারা করে দিবেন। (সুনানে আবু দাউদ)

১১। ইহুদিদের সাথে অমিল রেখে রোজা রাখা

عن عطاء: أنه سمِع ابنَ عباسٍ يقولُ في يومِ عاشوراءَ خالِفوا اليهودَ وصوموا التاسعَ والعاشرَالسفاريني الحنبلي (ت ١١٨٨)، شرح ثلاثيات المسند ٢‏/٧٢٣  •  صحيح  •  شرح رواية أخرى

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার সাওমে ইহুদীদের বিপরীত করো। দশম দিবসের সাথে নবম অথবা একাদশ দিবসেও সিয়াম পালন কর। (মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিসটি মাওকুফ হিসেবে সহীহ) 

পূর্ব যুগে সংগঠিত কিছু ঘটনা

পূর্ববর্তী নবীগণের যুগে ঘটেছে এমন অনেক সত্য ঘটনা আশুরার দিনের সাথে সম্পর্ক করা হয়। যার সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি বলে আমরা এখানে উল্লেখ করলাম না। তবে মুসা (আঃ) ফিরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং ফিরাউন ও তার দলবল নবীতে ডুবে মরেছিল। এই ঘটনা আশুরা দিনের সাথে সম্পৃক্ত  বলে সহিহ হাদিসে পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য যেসব ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো সত্য ঘটনা কিন্তু আশুরার দিনের সাথে সম্পৃক্ত এমন তথ্য সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

১। কারবালার ঘটনা

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরী সালে কারবালার ময়দানে জান্নাতি যুবকদের নেতা রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রাঃ) আশুরার দিনে তথা ১০ই মহররম শাহাদাতবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। ইমাম হোসাইন (রাঃ) সত্য, ন্যায় তথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই ৭২ জন সাথী সহ সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। নবী পরিবারের উপর এটি ছিল বড় নির্মম, নিষ্ঠুর ঘটনা।

২। আশুরার শিক্ষা

ক) মুসা (আঃ) এর ঘটনা হতে শিক্ষাঃ আশুরার দিবসের সংগঠিত মুসা (আঃ) ও ফেরাউনের ঘটনা থেকে আল্লাহর কুদরত বা অসীম ক্ষমতার কথা অনুভব করতে পারি। যারা আল্লাহর হুকুম পালন করে তাদেরকে তিনি সাহায্য করেন এবং যারা তার হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সাময়িকভাবে খুব ক্ষমতাসীন হলেও শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায় না। এজন্য আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করতে হবে। কারণ মুক্তি আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যে। যেমন মুসা (আঃ) এর লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করায় আল্লাহ তাআলা নদীতে রাস্তা করে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। সকল মুসিবতে আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে তারই কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

খ) কারবালার ঘটনা হতে শিক্ষাঃ কারবালার ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, সর্বদা নিজের জান বাঁচানো ফরজ নয় বরং প্রয়োজনে সত্য ন্যায়ের জন্য জীবন দেওয়া ফরজ। যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা হারাম। অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হতে পারে। কারণ ইমাম হোসাইন (রাঃ) যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন তারা সবাই ছিল মুসলিম। দ্বীন ইসলামের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা নিজের জীবন বিলিয়ে দেন তাদের জন্য ও মাতাম করা যাবে না। কারণ সাহাবীগণ ইমাম হুসাইনের জন্য কোন মাতম করেননি।

মুহাররম মাসে আমাদের করণীয় এবং বর্জনীয় কাজ

১। করণীয় কাজঃ মুহাররম মাসে বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার এবং সিয়াম পালন করা। বিশেষ করে আশুরার দিনে এবং সেই সাথে তার আগে বা পরে একদিন সিয়াম পালন করা।

২। মুহাররম উপলক্ষে বর্জনীয় কাজ সমূহ

ক) তাজিয়া

আশুরাকে কেন্দ্র করে তাজিয়া বর্জন করা। এই তাজিয়া বহুবিধ ফাসেকী ও মুশরেকী চিন্তাধারার ফসল। এসব পরিহার করা বাঞ্চনীয়।

খ) ঢাকঢোল ও বাজনা বাজানো

আশুরার দিনে এবং তার আগে ঢাকঢোল আর বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন শরীয়ত বিরোধী কাজ। এ দিবসকে কেন্দ্র করে ঢোল তবলার আওয়াজ আর জারি ও কাওয়ালীর সুর নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ফেরেশতাগণ ওইসব লোকদের সাথী হন না, যাদের সাথে কুকুর ও বাদ্যযন্ত্র থাকে। (আবু দাউদ)

গ) আহাজারি করা বা মর্সিয়া (শোক গাথা) পাঠ

কিছু লোক এই দিনে "হায় হোসেন" "হায় হোসেন" বলে আহাজারি করতে থাকে। বুক চাপড়াতে থাকে। এটাও গোনাহের কাজ। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বিপদের সময় নিজের গালে চপেটাঘাত করে, বুকের কাপড় ছিড়ে মাতম করে এবং জাহেলি যুগের মানুষের ন্যায় কথাবার্তা বলে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (ইবনে মাজাহ)

ঘ) শোকের পোশাক পরা

আশুরা উপলক্ষে বিশেষ ধরনের, বিশেষ রঙের পোশাক পরে শোক প্রকাশ করা। এছাড়াও শোক পালনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাজ ধারণ করা ও প্রথা পালন করা হয়ে থাকে। এটাও নিষিদ্ধ ও শরীয়ত বিরোধী কাজ। কারণ শোক পালানোর ব্যাপারে হাদিস শরীফে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীদের জন্য চারমাস দশদিন এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের মৃত্যুতে তিন দিন পর্যন্ত শোক পালনের বিধান রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে আমার ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে মৃত্যুর জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা জায়েজ নয়। শুধু স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। ( সহিহ বুখারী ১২৯২)

উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মুহাররম মাস একটি মর্যাদাবান মাস। আর এই মাসের উল্লেখযোগ্য দিন হলো ১০ই মুহাররম বা আশুরার দিন। উপরের বর্ণনা মোতাবেক আমরা এই মাস ও দিনের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে চলবো এবং যাবতীয় কুসংস্কার থেকে বিরত থাকবো। মহান আল্লাহ আমাদের তাউফিক দিন। 

ডাউনলোড পিডিএফ  

আলোচনা পিডিএফ ডাউনলোড

লিংক ১ | লিংক ২

আরো পড়ুন,

কারবালা / আশুরা / ১০ ই মুহাররম নিয়ে কিছু কথা