অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা । জুমুয়ার খুতবাহ

অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা

অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে আল কুরআনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কুরআনে মানব জীবন সমাজ ব্যবস্থার জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এটি আমাদেরকে সৎ,ন্যায়পরায়ণ এবং অপরাধ মুক্ত জীবনযাপনের জন্য প্রেরণা দেয় কুরআন মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি আস্থা শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে, যা সমাজে অপরাধ কমাতে সহায়ক সততা, মাধুর্য, এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব পবিত্র কুরআনের ভাষায়:

اِنَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَهدِیۡ لِلَّتِیۡ ہِیَ اَقۡوَمُ وَیُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا کَبِیۡرًاۙ

নিশ্চয়ই এই কুরআন সেই পথই দেখায় যা সঠিক এবং যে সকল মুমিন ভাল কাজ করে তাদেরকে মহান পুরস্কারের সুসংবাদ দেয়(সূরা-বনি ইসরাঈল ১৭:)

অপরাধ মুক্ত সমাজ

অপরাধমুক্ত সমাজ সকলেরই কাম্য যে সমাজে কোনো অন্যায়-অবিচার, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, ব্যভিচার, দূর্নীতি, ধোকাবাজী, ছিনতাই, প্রতারণা এসব থাকবে না, এমন একটি সুন্দর সমাজ কে না চায়? তবে কিভাবে এমন একটি সমাজ গঠন করা যায় তা নিয়ে মানুষের চিন্তাধারায় ভিন্নতা রয়েছে আমরা পবিত্র কুরআন থেকে এমন একটি সমাজ গঠনের সঠিক ধারণা লাভ করতে পারি অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে কুরআনিক পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ:

মনে আল্লাহর ভীতি সৃষ্টি করা মানুষের মন খারাপ কাজের দিকেই বেশী ঝুঁকে পড়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ

নিশ্চয়ই নফস খারাপ কাজের নির্দেশ করে(সূরা-ইউসুফ ১২:৫৩)

মানুষ হঠাৎ করেই কোনো অন্যায় করে না প্রথমে মনের মধ্যে খারাপ কাজের চিন্তা উঁকি মারে এরপর পরিকল্পনা হয়, তারপর তা বাস্তবে রূপ নেয় মানুষের এই মনকে যদি আল্লাহভীতির লাগাম পরানো যায় তবে তাকে অপরাধ থেকে বিরত রাখা সম্ভব আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

وَاَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّہٖ وَنَہَی النَّفۡسَ عَنِ الۡہَوٰیۙ فَاِنَّ الۡجَنَّۃَ ہِیَ الۡمَاۡوٰیؕ

যে ব্যক্তি স্বীয় রবের সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং নিজের নফসকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে নিশ্চয়ই তার ঠিকানা হবে জান্নাত (সূরা-নাযিয়াত ৭৯:৪০-৪১)

সৎসঙ্গ গ্রহণ অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা মানুষ যে প্রকৃতির লোকের সাথে চলা ফেরা করে সাধারণত তাদের স্বভাবই গ্রহণ করে থাকে সালাত আদায়কারী লোকের সাথে থাকলে সালাত আদায়কারী হবে, ধূমপায়ীর সাথে থাকলে ধূমপায়ী হবে, চোরের সাথে থাকলে চোর হবে এটাই স্বাভাবিক এজন্যে খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের প্রয়োজন একজন ভাল সাথী তাই মহান আল্লাহর বলেছেন:

يا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ

হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর কে ভয় কর এবং সৎ লোকের সংস্পর্শে থাক (সূরা তাওবা-:১১৯)

সঙ্গ দোষে মানুষের স্বভাব নষ্ট হয় প্রবাদ আছে "সৎসঙ্গে স্বর্গে বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ" মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসৎ লোকের সঙ্গ ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে সমাজে অপরাধের বিস্তার না ঘটে

فلا تطع المكذبين

তোমরা মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ কর না (সূরা কলাম ৬৮:)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:

وَ لَا تُطِعۡ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِیۡنٍ، هَمَّازٍ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِیۡمٍ، مَّنَّاعٍ لِّلۡخَیۡرِ مُعۡتَدٍ اَثِیۡمٍ، عُتُلٍّۭ بَعۡدَ ذٰلِكَ زَنِیۡمٍ، اَنۡ كَانَ ذَا مَالٍ وَّ بَنِیۡنَ

যারা বারবার শপথ করে, নীচুপ্রকৃতির, পরনিন্দাকারী, চোগলখোর, ভালকাজে বাধাদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, অপরাধী, অহংকারী, তদুপরি দূরাচার এসকল লোকের অনুসরণ করো না যদিও তারা প্রচুর ধনসম্পদ সন্তানাদির মালিক হয় (সূরা কলাম ৬৮:১০-১৪)

গ। অপরাধ মূলক কাজে সহযোগীতা না করা অপরাধ মূলক কাজের সহযোগিতা করা বা অপরাধ করার সূযোগ করে দেয়া সমান অপরাধ অপরাধীরা যদি কোন দিক থেকে সহযোগীতা না পায়, কারো আশ্রয় না পায়, তবে অপরাধ করতে তেমন সাহস পায় না এভাবে সমাজে অপরাধ কমে যায় আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلٰى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

তোমরা অপরাধ এবং সীমালংঙ্গনের কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো না আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শান্তিদাতা (সূরা মায়িদা :)
ঘ। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপরাধের গতি কমানো যায় অপরাধের বিচার না হলে, অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে যায় অপরাধী আপনজন, নিজ পরিবারের লোক, নিজ বংশের বা দলের লোক ইত্যাদি বিবেচনা করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ব্যাপারে কুরআনের অবস্থান খুবই কঠোর পবিত্র কুরআনের ভাষায়,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أو فَقِيْرًا فَاللهُ أَوْلٰى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَاى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

হে ঈমানদারগণ তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর তাতে যদি তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের ক্ষতি হয় তবুও কেউ যদি ধনী অথবা দরিদ্র হয়, তবে তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চেয়ে বেশী অতএব তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত (সূরা- নিসা :১৩৫)

এই নির্দেশ মোতাবেক রাসূল (সাঃ) খোলাফায় রাশেদীনগণ নিজ সন্তানদের বিচার করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না হাদীসে বর্ণিত হয়েছে

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها أَنَّ قُرَيْشًا، أَهَمَّهُمْ شَأْنُ الْمَرْأَةِ الْمَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالَ وَمَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلاَّ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، حِبُّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ "‏‏. ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ " إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ، وَايْمُ اللَّهِ، لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ ابْنَةَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا

মাখযুমা গোত্রীয় জনৈকা মহিলার ব্যাপারটি কুরাইশদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল যে চুরি করেছিল তারা বলল, কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে কথা বলার সাহস রাখে, রাসূলুল্লাহ প্রিয় পাত্র ওসামা বিন যায়েদ ব্যতীত অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে কথা বললেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি কি আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সুপারিশ করছ? এরপর তিনি দাঁড়ালেন, খুতবা দিলেন বললেন, হে লোক সকল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়েছিল, কারণ তাদের সম্মানিত ব্যক্তিরা চুরি করলে ছেড়ে দিত আর গরীব দূর্বল লোকেরা চুরি করলে শাস্তি দিত আল্লাহর শপথ মুহাম্মদ (সাঃ) এর মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করত তবে আমি মুহাম্মদ (সাঃ) তার হাত কেটে দিতাম (বুখারী-৩৪৭৫)

এভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে অপরাধীরা পার পাওয়ার কোন সুযোগই পেত না মানুষ যখন দেখল আপনজন হলেও তাকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না, তখন আর তারা অপরাধ করতে সাহস পেত না এভাবে আস্তে আস্তে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হয়ে যেত

ঙ। পরকালে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা মানুষের প্রত্যেকটি কর্মের জন্য পরকালে জবাব দিতে হবে এবং মন্দ কাজের জন্য শান্তি ভোগ করতে হবে পবিত্র কুরআনে ব্যাপারে বহুবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যাতে মানুষ কোনো প্রকারের অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত না হয় আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:

وَلَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌؕ اِنَّ السَّمۡعَ وَالۡبَصَرَ وَالۡفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنۡہُ مَسۡـُٔوۡلًا

যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার পিছনে পড়োনা নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা বনি ইসরাঈল ১৭:৩৬)

وَاتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡہِ اِلَی اللّٰہِ٭۟ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ وَہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ

সেই দিনকে ভয় কর, যেই দিন তোমরা আল্লাহর নিকট ফিরে যাবে অতঃপর প্রত্যেককে তার কর্মানুযায়ী পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে, কোনো অনিয়ম করা হবে না (সূরা বাকারা :২৮১)

আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেন:

اِنَّہٗ مَنۡ یَّاۡتِ رَبَّہٗ مُجۡرِمًا فَاِنَّ لَہٗ جَہَنَّمَؕ لَا یَمُوۡتُ فِیۡہَا وَلَا یَحۡیٰی

নিশ্চয়ই যে তার পালন কর্তার কাছে অপরাধী হয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম সেখানে সে মরবেও না এবং বাঁচবেও না (সূরা ত্বোহা ২০:৭৪)

চ। সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের বাধা প্রদান পবিত্র কুরআনে অন্যায় কাজে বাধা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কারণ অপরাধীরা যদি বিনা বাধায় অন্যায় কাজ করার সুযোগ পায় তবে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হবে না নিজে অপরাধ করব না অন্য কেউ করলে তাতে আমার কি আসে যায় এই মানসিকতা পরিহার করে অসৎ কাজে বাধা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আল-কুরআন

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَتَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَتُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ

তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে (সূরা আলে ইমরান :১১০)

ছ। অপরাধীদের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রকাশ অপরাধীদের প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রকাশের মাধ্যমে অপরাধীদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে আল কুরআনে বলা হয়েছে:

یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَیُرۡبِی الصَّدَقٰتِؕ وَاللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ

আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে(সূরা বাক্বারা :২৭৬)

وَیۡلٌ لِّکُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍۙ

দুর্ভোগ প্রত্যেক চরম মিথ্যুক পাপাচারীর জন্য (সূরা জাসিয়া ৪৫:০৭)

ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান যে সমাজে গুণীজনের কদর করা হয় না, সে সমাজে গুণীজন জন্মায় না আবার অপরাধীরা যে সমাজে সম্মান কদর পায় সেখানে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক পক্ষান্তরে যদি ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া হয়, ভালো মানুষের কদর করা হয়, তবে ভালো মানুষের সংখ্যা সমাজে বেড়ে যাবে এবং অপরাধীরা কোনঠাসা হবে দেখুন আল্লাহ্ তা'আলা কীভাবে ভালো কাজে নেকী বেশি দিয়ে তাতে উৎসাহ দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:

مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَہٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِہَاۚ وَمَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَلَا یُجۡزٰۤی اِلَّا مِثۡلَہَا وَہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে হাজির হবে সৎকাজ নিয়ে তার জন্যে রয়েছে দশগুণ প্রতিফল আর যে ব্যক্তি অসৎকাজ নিয়ে আসবে সে ততটুকু প্রতিফল পাবে, যতটুকু অপরাধ সে করেছে এবং কারো প্রতি জুলুম করা হবে না(সূরা আনআম :১৬০)

ঝ। উপার্জনের সকল অবৈধ পন্থা নিষিদ্ধ করণ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি অপরাধ করেতাই ইসলাম সংক্রান্ত যাবতীয় পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে যেমনঃ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ-ঘুষ, মাপে কম দেয়া, খাদ্যে ভেজাল দেয়া মিথ্যার আশ্রয় নেয়া ইত্যাদি সমস্ত কাজকে নিষেধ করে তার শান্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে
ঙ। শাস্তি নিশ্চিত করা চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনী তাই যতই শান্তির বিধান দেয়া হোক, যদি তা কার্যকর করা না হয়, তবে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয় তাই আল্লাহ রাসূল শান্তি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেছেন মহান আল্লাহ বলেন:

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَہُمَا جَزَآءًۢ بِمَا کَسَبَا نَکَالًا مِّنَ اللّٰہِؕ وَاللّٰہُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ

আর পুরুষ চোর নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাব স্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সূরা মায়েদা :৩৮)

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

مِنۡ اَجۡلِ ذٰلِکَۚ کَتَبۡنَا عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَنَّہٗ مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًاؕ وَمَنۡ اَحۡیَاہَا فَکَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعًاؕ وَلَقَدۡ جَآءَتۡہُمۡ رُسُلُنَا بِالۡبَیِّنٰتِ۫ ثُمَّ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنۡہُمۡ بَعۡدَ ذٰلِکَ فِی الۡاَرۡضِ لَمُسۡرِفُوۡنَ

اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَاَرۡجُلُہُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِؕذٰلِکَ لَہُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌۙ

যারা আল্লাহ তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জমিনে ফ্যাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা আযাব (সূরা মায়েদা :৩৩)

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

اَلزَّانِیَۃُ وَالزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ۪ وَّلَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِہِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِۚ وَلۡیَشۡہَدۡ عَذَابَہُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

ব্যভিচারিণী ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ'টি করে বেত্রাঘাত কর আর যদি তোমরা আল্লাহ শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শান্তি প্রত্যক্ষ করে (সূরা- নূর ২৪:০২)

কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, মানুষকে হত্যা করা, হাত কাটা ইত্যাদি কি অমানবিক কাজ নয়? এর জবাবের জন্যে কারো গ্যাংরিন বা পচন রোগ হলে ডাক্তার কর্তৃক তা কেটে ফেলার উদাহরণটি বুঝে নেয়ার আহবান থাকবে ডাক্তার মূলত রোগীর ক্ষতি করতে চান না, বরং পচন ধরা অংশকে কেটে পুরো শরীর রক্ষা করতে চান এভাবে সমাজের পচন অংশ কেটে পুরো সমাজকে রক্ষা করার চিকিৎসা ইসলাম দিয়েছে যেমন মহান আল্লাহ্ খুনীদের মৃত্যুদন্ডণ্ড প্রদান করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন:

وَلَکُمۡ فِی الۡقِصَاصِ حَیٰوۃٌ یّٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে (সূরা-বাকারা :১৭৯)

উপসংহার। সূতরাং আমরা ইসলামের নির্দেশনা বিশ্বাস করলে খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারব যে, ইসলামই অপরাধ মুক্ত সমাজের ব্যবস্থা করেছে রাসূল (সাঃ) সাহাবীগণ তা বাস্তবায়ন করে বিশ্বের কাছে নজির রেখে গেছেন আমরাও তাদের পথে অগ্রগামী হলে এর সুফল অবশ্যই পাব

Download PDF


Powered by Blogger.