কুরআনিক দোয়া (সুরা আল ইমরান, সুরা নিসা, সুরা আল মায়িদাহ, সুরা আনআম, সুরা আরাফ)

  

কুরআনিক দু’আ
কুরআনিক দু

নেককার সন্তানের জন্য হযরত যাকারিয়া (আঃ) এর দোয়াঃ

ہُنَالِکَ دَعَا زَکَرِیَّا رَبَّہٗ ۚ قَالَ رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ

সেখানেই যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেনহেআমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।  (আল ইমরান  3:38)

মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব


মাদকদ্রব্য
মাদকদ্রব্য 

ভূমিকাঃ একটি সুন্দর ফুল বাগানকে বিনষ্ট করার জন্য যেমনি একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট। তেমনি তরুণ সমাজকে বিনষ্ট করার জন্য মাদকই যথেষ্ট। মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করছে। আজকাল তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি সহজেই মাদকদ্রব্য পৌঁছে গেছে। সাধারণত মানুষ নেশার জন্য যা ব্যাবহার করে তাই মাদক দ্রব্য।আবার সেটা হতে পারে ইনজেকশন, ধুমপান, বা যে কোন মাধ্যমে।

কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে সুন্নতের গুরুত্ব ও ফজিলত । জুমুয়ার খুতবা


সুন্নাতে রাসূল (সাঃ) এর গুরুত্ব

সুন্নাতে রাসূল (সাঃ) এর গুরুত্ব

ইসলামী জীবন বিধান তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে দুটি মৌল বুনিয়াদের উপর স্থাপিত। একটি পবিত্র কুরআন, অপরটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ। পবিত্র কুরআন ইসলামের একটি মৌল কাঠামো উপস্থাপন করেছে,  আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহ সেই কাঠামোর উপর একটি পূর্ণাঙ্গ ইমারত গড়ে তুলেছে। তাই ইসলামী জীবন বিধানে পবিত্র কুরআনের পরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুন্নাহই ইসলামী জীবন বিধানের বিস্তৃত রূপরেখার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এ কারণে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ও মর্ম উপলব্ধি এবং তদানুসারে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গঠনের জন্য সুন্নাহর বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। পবিত্র কুরআনের শিক্ষানুসারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন ও কর্মধারা মুসলিমগণের জন্য "উসওয়ায়ে হাসানাহ' বা সর্বোত্তম আদর্শ। মুসলিমগণের জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতি সকল অঙ্গনেই এই আদর্শের পরিধি বিস্তৃত। এই আদর্শের সঠিক ও নির্ভুল বিবরণ সংরক্ষিত রয়েছে সুন্নাহর বিশাল ভান্ডারে। কাজেই প্রকৃত মুসলিম রূপে জীবন যাপন ও উত্তম দায়িত্ব পালনের জন্য সুন্নাহর গুরুত্ব অপরিসীম।

১। সুন্নাহ কী

সুন্নাহর সংজ্ঞা সম্পর্কে হাদীস বিশারদগণ বলেন:

ক।     হাদীসের অপর নাম হলো সুন্নাহ। সুন্নাহ শব্দের অর্থ হল চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। এটি ফিকাহ শাস্ত্রে প্রচলিত সুন্নাত নয় ।

খ।      ইমাম রাগেব লিখেছেন: "সুন্নাতুন্নবী বলতে সে পথ ও রীতি-পদ্ধতি বুঝায়, যা নবী করীম (সাঃ) বাছাই করে নিয়েছেন ও অবলম্বন করে চলেছেন।

গ।      অন্য কথায়, নবী করীম (সাঃ) এর প্রচারিত সেই মহান আইন ও বিধান যাতে আল্লাহ্ তাআলা রাজী ও খুশি রয়েছেন, তাই সুন্নাহ। আর কুরআনের ভাষায় উসওয়াতুন হাসানাহ বা উত্তম আদর্শ বলতে তাই বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যে মহানতম আদর্শ অনুসরণ করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, তা এই হাদীস হতেই জানতে পারা যায়। এ কারণে মুহাদ্দিসগণ বিশেষ করে শেষ পর্যায়ের মুহাদ্দিসগণ হাদীস ও সুন্নাহকে একই অর্থে ব্যবহার করেছেন।

ঘ।      আল্লামা আল জাফরী লিখেছেন: "সুন্নাহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে কথিত বাণী, কাজ ও সমর্থন বুঝায় এটি বিশেষজ্ঞদের মতে হাদীসের সমার্থবোধক

ঙ।      আল্লামা আল আজীজ আল-হানাফী লিখেছেনঃ সুন্নাহ শব্দটি দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী ও কাজ বুঝায় এবং এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীগণের অনুসৃত বাস্তব কর্মনীতি অর্থেও ব্যবহৃত হয়"।

সফীউদ্দীন আল-হাম্মানী লিখেছেন: "সুন্নাহ শব্দটি সম্পূর্ণরূপে ও সর্বতোভাবে হাদীস শব্দের সমান নয়। কেননা সুন্নাহ হলো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাস্তব কর্মনীতি, আর হাদীস বলতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাজ ছাড়াও বাণী ও সমর্থন বুঝায়অবশ্য আমরা এখানে এ দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করে উপস্থাপন করব।

২। হাদীসের বিষয়বস্তু

হাদীসের বিষয়বস্তু কী? এ বিষয়ে ইলমে হাদীসের বিশেষজ্ঞ সকল মনীষীই একমত হয়ে লিখেছেন যে, ইলমে হাদীসের বিষয়বস্তু বা আলোচ্য বিষয় হলো রাসূল (সাঃ) এর মহান সত্তা। তিনি আল্লাহ তাআলার রাসূল। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তাআলার মনোনীত রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, করেছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন তাই ইলমে হাদীসের বিষয়বস্তু। বস্তুত হাদীস কোন সংকীর্ণ সীমাবদ্ধ একদেশদর্শী ও ক্ষুদ্র পরিসর সম্পদ নয়। এটি মূলত অত্যন্ত ব্যাপক ও বিপুল ভাবধারা সমন্বিত, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মহান নেতৃত্বে আরব ভূমিতে যে বিরাট বিপ্লবী আন্দোলন উত্থিত হয়েছিল তার সম্যক ও বিস্তারিত রূপ হাদিস হতেই সুপরিস্ফুট হয়ে উঠে। রাসূল (সাঃ) জীবনের পূর্ণাঙ্গ কাহিনী, তাঁর ও সাহাবায়ে কিরামের বিপ্লবাত্মক কর্মতৎপরতা, তদানীন্তন সমাজ সভ্যতা ও আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যাপকতা অনস্বীকার্য, এর যথার্থতা হৃদয়ঙ্গম করাও কিছুমাত্র কঠিন নয়। পূর্বকালের মনিষীগণও হাদীসের এ ব্যাপক রূপ বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণেই ইমাম বুখারী (রাঃ) তার সংকলিত হাদীস গ্রন্থ যা বুখারী শরীফ নামে খ্যাত, তার নাম রেখেছেনঃ আল জামিউস সহীহুল মুসনাদুল মুখতাসারু মিন উমুরি রাসূলিল্লাহ (সাঃ) ওয়া সুন্নাতিহী ওয়া আয়্যামিহীযার অর্থঃ রাসূলে করীমের কার্যাবলী ও তাঁর সমসাময়িক যুগের সকল অবস্থা ও ব্যাপার সমূহের বিশুদ্ধ সনদযুক্ত বিবরণের ব্যাপক সংকলন।

৩। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হাদীস

ইসলামী জীবন ব্যবস্হায় হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদীস ছাড়া আমাদের কোনো আমলই সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি কুরআনকে মান্য করতে হলে হাদীসকে মান্য করতে হবে। আল্লাহ তাআলাও সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:

ক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যই হিদায়াত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَ اِنۡ تُطِیۡعُوۡهُ تَهۡتَدُوۡا ؕ وَمَا عَلَی الرَّسُوۡلِ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ

তোমরা তাঁর আনুগত্য করলেই হিদায়াত লাভ করবে, আর স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়াই হলো রাসূল (সাঃ) এর কাজ। (সূরা নূর ২৪:৫৪)

খ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পথ নির্দেশ অলংঘনীয় আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَمَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ ٭ وَمَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ

রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন, তা হতে বিরত থাক । আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। (সূরা হাশর ৫৯:০৭)

গ। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইমানের প্রতি আহবান করার দায়িত্ব প্রাপ্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ شَاهِدًا وَّ مُبَشِّرًا وَّ نَذِیۡرًا ۙ  لِّتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُعَزِّرُوۡهُ وَ تُوَقِّرُوۡهُ ؕ وَ تُسَبِّحُوۡهُ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا

আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তাঁর রাসূলকে শক্তি যোগাও, তাকে সম্মান কর এবং সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিম ঘোষনা কর। (সূরা ফাতহ ৪৮:০৮-০৯)

ঘ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন।

وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذۡنِ اللّٰهِ

আমি এ উদ্দেশ্যই রাসূল প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশই তাঁর আনুগত্য করা হবে। (সূরা নিসা ৪:৬৪)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্য ও আল্লাহর আনুগত্য অবিচ্ছেদ্য। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰهَ ۚ وَ مَنۡ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ عَلَیۡهِمۡ حَفِیۡظًا

যে কেউ রাসুলের আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহর ই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের উপর আমি তোমাকে প্রহরী বানিয়ে পাঠাইনি। (সূরা নিসা ৪: ৮০),

আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেছেন:

وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ واَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ

তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। (সূরা- নুর-২৪: ৫৬)

চ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণীও অহী। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

مَا ضَلَّ صَاحِبُکُمۡ وَمَا غَوٰی ۚ وَمَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی ؕ اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی ۙ

তোমাদের সাথী বিভ্রান্ত নয়, বিপদগামীও নয় এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এতো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম ৫৩:২-৪)

শুধু তাই নয় আল্লাহ্ তাআলা আরো ঘোষণা করেছেন :

وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَیۡنَا بَعۡضَ الۡاَقَاوِیۡلِ ۙ لَاَخَذۡنَا مِنۡہُ بِالۡیَمِیۡنِ ۙ لَاَخَذۡنَا مِنۡہُ بِالۡیَمِیۡنِ ۙ ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡہُ الۡوَتِیۡنَ ۫ۖ فَمَا مِنۡکُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ عَنۡہُ حٰجِزِیۡنَ

সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত, আমি অবশ্যই তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম এবং তার জীবন ধমনী কেটে দিতাম। এরপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে রক্ষা করতে পারত। (সূরা হাক্কাহ ৬৯:৪৪-৪৭)

ছ। হালাল হারাম নির্ণয়ের দায়িত্ব আল্লাহ্ তাআলারতবে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কেও সেই অধিকার দিয়ে ঘোষণা করেছেন:

اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَهٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَهُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ۫ یَاۡمُرُهُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهٰهُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡهِمُ الۡخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنۡهُمۡ اِصۡرَهُمۡ وَ الۡاَغۡلٰلَ الَّتِیۡ کَانَتۡ عَلَیۡهِمۡ ؕ فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِهٖ وَ عَزَّرُوۡهُ وَ نَصَرُوۡهُ وَ اتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَهٗۤ ۙ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজেদের কাছে থাকা তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সূরা-আরাফ ৭:১৫৭)

জ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিকমাত শিক্ষাদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

لَقَدۡ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡحِکۡمَۃَ ۚ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

আল্লাহর মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট এই রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করে তাদেরকে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেয় যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৬৪)

ঝ। বিবাদ বিসংবাদে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

فَلَا وَرَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَیُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। (সূরা নিসা ৪:৬৫)

ঞ। আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফায়সালা অভিন্ন। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

اِنَّمَا کَانَ قَوۡلَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذَا دُعُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ لِیَحۡکُمَ بَیۡنَهُمۡ اَنۡ یَّقُوۡلُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

মুমিনের উক্তি তো এই যে, যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তার রাসূলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম, আর তারাই তো সফলকাম। (সূরা নূর ২৪:৫১)

৪। সুন্নাতের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা

সুন্নাতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার জন্যে আমরা নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করতে পারি

ক। ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় ভিত্তি। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَلَا تَوَلَّوۡا عَنۡہُ وَاَنۡتُمۡ تَسۡمَعُوۡنَ ۚ وَلَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَہُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শুনে না। (সূরা আনফাল ৮:২০-২১)

সূরা আলে ইমরানের অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰہَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰہُ وَیَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ কে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ করে চল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গুনাহ মার্জনাকারী, দয়াশীল। (সূরা আলে ইমরান ৩:৩১)

খ। আল কুরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যাদান ও বিশ্লেষণকারী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে লোক নিজের ইচ্ছামত কুরআন মাজীদের অর্থ করে তার ব্যাখ্যা নির্ভূল হলেও সে ভুল করে। (তিরমিযী)

গ। হাদীসের মাধ্যমে সুন্নাতে রাসুলের গুরুত্ব। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِه. رَوَاهُ فى المُوَطَّا

আমি তোমাদের মাঝে দু'টি জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তভাবে ধারণ করে থাকলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ। (মুয়াত্ত ইমাম মালিক, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৮৬))

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন:

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ.

তোমাদের কোন ব্যক্তি মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যে পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি তার অধীনতা স্বীকার করে নেবে। (মিশকাত)

ঘ। সুন্নাহর গুরুত্বের কারণেই এর ধারক, বাহক ও প্রচারকদের মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

نَضَّرَ اللَّهُ امْرَأً سَمِعَ مَقَالَتِي فَحَفِظَها وَوَعَاهَا وَبَلَّغَهَا مَنْ لَمْ يَسْمَعْهَا

আল্লাহর সে ব্যক্তিকে চির সবুজ, চির তাজা করে রাখবেন, যে আমার নিকট হতে কোন কিছু শুনতে পেল ও তা অন্য লোকের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছে দিল। কেননা পরে যার নিকট তা পৌঁছিয়েছে সে প্রথম শ্রোতার তুলনায় অধিক সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে। (তিরমিযী- ২৬৫৮; ইবনে মাজাহ-২৩৬)

 

ইসলামী শরীয়াহর পূর্ণতাকারী। ইসলামী শরীয়ায় এমন অনেক হুকুম আহকাম রয়েছে যে সম্পর্কে আল কুরআনে কিছুই পাওয়া যায় না। মূলত হাদীস দ্বারাই তা প্রমাণিত হয়েছে। এ প্রসংগে এখানে কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হলো:

১) দাদী ও নানীকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা।

)  স্ত্রীর সাথে তার খালা অথবা ফুফুকে একই সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখাকে অবৈধ ঘোষণা।

)  মৃত মাছ, পঙ্গপাল, কলিজা ও প্লীহা ভক্ষণ বৈধ করণ।

) ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মাতাপিতা ও সন্তানের উত্তরাধিকার না হওয়া।

৫) তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর সাথে পুণঃ বিবাহ সংক্রান্ত আইন।

) চোরের হাত কাটার পরিমান নির্ধারণ।

) সালাতের রাকআত সংখ্যা নির্ধারণ ইত্যাদি।

সুন্নাত বর্জন ইমানের পরিপন্থীআল্লাহ তাআলা বলেছেন:

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ وَ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّفَرِّقُوۡا بَیۡنَ اللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ وَ یَقُوۡلُوۡنَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٍ وَّ نَکۡفُرُ بِبَعۡضٍ ۙ وَّ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَّخِذُوۡا بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ حَقًّا ۚ وَ اَعۡتَدۡنَا لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابًا مُّهِیۡنًا

যারা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলগণকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের মধ্যে (ইমানের ব্যাপারে) পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি, আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, এরাই প্রকৃত কাফির এবং কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনাদায়ক শান্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা ৪:১৫০-১৫১)

সুতরাং রাসুল (সাঃ) কে বাদ দিয়ে শুধু আল্লাহর প্রতি আনুগত্য দেখানোর যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি হাদীস না মেনে শুধু আল কুরআন মেনে মুমিন থাকারও কোন সুযোগ নেই।

উপসংহার

কুরআন ও সুন্নাহ ইসলামী জীবন বিধানের মূলভিত্তি। কুরআন যেখানে জীবন ব্যবস্থার মৌলিক নীতি পেশ করে, সেখানে হাদীস ও সুন্নাহ হতে খুটিনাটি বিধানের বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও কুরআনী মূলনীতি বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা লাভ করা যায়। কুরআন ইসলামের প্রদীপ স্তম্ভ, হাদীস তার বিচ্ছুরিত আলোর বন্যা। কুরআনকে বলা যায় ইসলাম নামক বৃক্ষের মূল ও কান্ড, হাদীস তার শাখা-প্রশাখা। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃদপিন্ড আর সুন্নাহ এই হৃদপিন্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে এ ধমনী প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিত ধারা প্রবাহিত করে উহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় করে রাখে। হাদীস ও সুন্নাহ একদিকে যেমন কুরআনের নির্ভুল ব্যাখা দান করে, অনুরূপভাবে উহা কুরআনের বাহক বিশ্ব নবীর পবিত্র জীবন চরিত্র কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ হেদায়েত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করে। এ কারণেই ইসলামী জীবন বিধানে কুরআন মাজীদের পরেই হাদীস ও সুন্নাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।


কুরআন পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত | জুমুয়ার খুতবা

কুরআন পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত | জুমুয়ার খুতবা

 

কুরআন পাঠের এর গুরুত্ব ও ফজিলত
কুরআন পাঠের এর গুরুত্ব ও ফজিলত

الحمد لله رب العالمين، والعاقبه للمتقين، والصلاه والسلام على سيد الانبياء والمرسلين وعلى اله واصحابه اجمعين، اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله

 সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য

আর আল্লাহ ভীরুদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম দুরুদ সালাম প্রিয় নবী (সাঃ), তাঁর পরিবারবর্গ সমস্ত সাহাবা কেরামের প্রতি

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা ডাকতেন খোকা বলে। তার শৈশব কাটে টুঙ্গিপাড়ায়। ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ৯ বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।

রক্তদান Donate Blood

রক্তদান Donate Blood

রক্তদান Donate Blood
রক্তদান

ভূমিকা  মানুষের জীবন রক্ষায় রক্তের কোনো বিকল্প নেই। বেঁচে থাকার এ বিকল্পহীন একধরনের তরল যোজক কলা তৈরির মানব শরীর ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো উৎসও নেই। ফলে অন্যের রক্তের ওপর নির্ভর করতে হয় কোটি কোটি মানুষকে। বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটি ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু প্রয়োজন অনেক বেশি।