অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন | জুমুয়ার খুতবা

অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন | জুমুয়ার খুতবা
অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন

মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনেই মানবজাতিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন। প্রকৃতির বৈষয়িক প্রভাবে বা আবহাওয়া ও ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে এবং কালের আবর্তন বিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন আকৃতি, প্রকৃতি, ভাষা, বর্ণ ও গোত্রে বিভক্ত হয়েছে। কালের আবহে নানা রীতি-নীতি রসম-রেওয়াজ পালন করতে গিয়ে নানা জাতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মূল সত্ত্বার দিক থেকে পৃথিবীর সকল মানুষই প্রথম মানব মানবী হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّاُنۡثٰی وَجَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

বর্ণ গোত্র ও প্রকৃতিতে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা এই মানবজাতিকে সকল সৃষ্টির উপর মর্যাদা ও সম্মান দিয়েই তৈরি করেছেন বিধায় সকল সৃষ্টিই মানুষের খেদমতে নিয়োজিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ وَحَمَلۡنٰہُمۡ فِی الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنٰہُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَفَضَّلۡنٰہُمۡ عَلٰی کَثِیۡرٍ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِیۡلًا ٪

নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সূরা বনি ইসরাইল ১৭:৭০)

মানবজাতিকে দেয়া আল্লাহ তাআলার এই মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের একান্ত দায়িত্ব হল একে অন্যের প্রতি যথার্থ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।

ইসলাম সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনে উদারতার পরিচয় দিয়েছে

ক) ইসলাম সকল নবীদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَمَلٰٓئِکَتِہٖ وَکُتُبِہٖ وَرُسُلِہٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِہٖ ۟ وَقَالُوۡا سَمِعۡنَا وَاَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَاِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ

রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতে ঈমান এনেছে, যা তাঁর উপর তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে এবং (তাঁর সাথে) মুমিনগণও। তাঁরা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনও পার্থক্য করি না (যে, কারও প্রতি ঈমান আনব এবং কারও প্রতি আনব না)। এবং তাঁরা বলে, আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশীমনে) পালন করছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মাগফিরাতের ভিখারী, আর আপনারই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন। (আল বাকারা ২:২৮৫)

শানে নুজুলঃ যখন মনের কল্পনার হিসেবে গ্রহণের কথা বর্নিত হল, তখন হযরত আবু বকর (রাজিঃ), ওমর (রাজিঃ), মো'আজ ইবনে জাবাল (রাজিঃ) প্রমুখ সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে হতভম্ব হয়ে উপস্থিত হলেন এবং উক্ত  অবস্থায় নিষ্কৃতির কোন উপায় না থাকার কথা বল্লেনঃ কেননা, মন কারও আয়ত্তে থাকে না, ওতে মনে অনেক কু-ধারনার সৃষ্টি হয়। হুযুর (সাঃ)  তখন ইহুদীদের ন্যায় তাঁদেরকে হজ্জত করতে বারন করলেন এবং মনিবের হুকুম মেনে নিতে উপদেশ দিলেন। ফলে তাঁরা মেনে নিলেন। তাঁদের এ আনুগত্যের প্রশংসা করে আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়।

খ) একবার মহানবী (সাঃ) সাহাবিদের সাথে আলাপরত ছিলেন এমন সময় একজন মহিলা তার কাছে এলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে নিজের চাদর বিছিয়ে বসতে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), ইনি কোন মহিলা, যার সম্মানার্থে আপনার চাদর বিছিয়ে দিলেন? উত্তরের রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তিনি আমার দুধ মাতা হালিমা। মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার এই নজির বিশ্ববাসীর জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

গ) একবার একই ইহুদির লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন। সাহাবারা বললেন ইয়া রাসুলূল্লাহ (সাঃ), এটি ইহুদির লাশ। তিনি বললেন,  "মৃতের সাথে কোন শত্রুতা নেই।" যে ইহুদিরা সারা জীবনভর তার বিরুদ্ধে শত্রুতা করেছে তিনি তার মৃত্যুর পরও তাকে সম্মান করতে একটু কুণ্ঠাবোধ করলেন না। মানুষকে সম্মান করার কি অনুপম আদর্শ তিনি রেখে গেলেন।

ঘ) মক্কা বিজয়ের সময় মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করলেন, যে ব্যক্তি কাবা ঘরে আশ্রয় নিবে সে নিরাপদ আর যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নিবে সেও নিরাপদে থাকবে। তাঁর এই ঘোষণার মূল কারণ হলো আবু সুফিয়ানের মান মর্যাদাকে সমুন্নত রাখা। অথচ তিনি তখনও মুসলিম ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে প্রবল শত্রুর বাড়িকে safe zone ঘোষণা করার নজির আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। মানুষকে সম্মান করার কি বিরল দৃষ্টান্ত তিনি বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করলেন।

অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ক। মানুষকে যোগ্য মর্যাদা দেয়া আল্লাহ ও রাসুলের (সাঃ) নির্দেশ। তিনি বলেন,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫

আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। (সূরা তীন ৯৫:৪)

তাই এই মানুষের অন্তিমকালেও তাকে সুন্দর পোশাকে সজ্জিত করে আতার সুগন্ধি লাগিয়ে সম্মানের সাথে সমাহিত করা হয়। জীবন মৃত্যুর এই মাঝের সময় ও আল্লাহ চান মানুষ অন্য মানুষকে তার যোগ্য মর্যাদা দান করুক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، يَرْوِيهِ - قَالَ ابْنُ السَّرْحِ - عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا ‏"‏

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৪৩)

অন্য হাদিসে এসেছে,

عنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لَيْسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَمْ يُجِلَّ كَبِيرَنَا وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقَّهُ

উবাদাহ বিন স্বামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সে ব্যক্তি আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান দেয় না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার চেনে না। (আহমাদ ২২৭৫৫, ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৯৫, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৫৫)

মানুষ জীবনধারণের জন্য সমাজে নানা পেশা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ সমাজপতি, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাষি তবে সে যেই পেশাতেই থাকুক না কেন প্রত্যেকেরই নিজস্ব মান মর্যাদা আছে। ইসলামও সেভাবেই তাদেরকে যার যতটুকু প্রাপ্য মর্যাদা তাকে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِذَا أَتَاكُمْ كَرِيمُ قَوْمٍ فَأَكْرِمُوهُ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো। (সহীহাহ ১২০৫, রাওদুন নাদীর ২৬৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭১২)

অন্য হাদিসের রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

اَنْزِلُ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ

তোমরা মানুষকে তাদের মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান করবে। (আবু দাউদ ৪৮৪৪)

খ। একটি মর্যাদাশীল জাতি গঠনের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রয়োজন

যে মানুষ তার জাতিকে সম্মান করতে জানে না আল্লাহ তায়ালাও সে জাতিকে ইজ্জতের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন না। প্রত্যেক মানুষই তার কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতিকে পছন্দ করে। মানুষ ভালো কাজের প্রশংসা করলে, তাকে প্রশংসিত করলে তিনি সমাজ গঠনে অধিকতর ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হন। তাই রাসূলুল্লাহ  (সাঃ) আবু বক্কর (রাঃ) কে সত্যবাদী, ওমর (রাঃ) কে ফারুক, আলী (রাঃ) কে আসাদুল্লাহ, খালিদ বিন ওয়ালিদকে সাইফুল্লাহ, উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এভাবে সমাজের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ যখন অন্য মানুষ কর্তৃক শ্রদ্ধা ও সম্মান লাভ করবে তখন সে সমাজ হয়ে উঠবে একটি আদর্শ, সুন্দর ও কল্যাণময়ী সমাজ। 

গ। নিজেদের কল্যাণের জন্যই অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা প্রয়োজন

আমি নিজে চাই যারা আমার ঘনিষ্ঠ তারা আমাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করুক আর এই কামনা সকল মানুষই করে থাকে। অতএব আমি নিজের জন্য যেটা পছন্দ করি অন্যের জন্যও সেটা আমার পছন্দ করা উচিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২, মুসলিম ১/১৭ হাঃ ৪৫, আহমাদ ১২৮০১, ১৩৮৭৫)

কাজেই কেউ আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান ও ইজ্জত লাভ করতে চাইলে অন্যকে সম্মান করতে হবে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যুবকরা যদি কোন বৃদ্ধকে সম্মান করে আল্লাহ তাআলা তার বৃদ্ধকালে এমন একজনকে সৃষ্টি করবে যে তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে। (তিরমিযি, মিশকাত)

ঘ। আখিরাতে মুক্তির জন্য প্রয়োজন অন্যকে সম্মান করা

একজন মুমিন তার দুনিয়ার জীবনের সাথে আখেরাতের মুক্তির চিন্তা করবে। সেই আখেরাতে নাজাতের জন্য তার দায়িত্ব হল অন্যকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করা। হাদিস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّي ‏"‏ ‏.‏

 

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেনআমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৪২, ই.ফা. ৬৩১৫, ই.সে. ৬৩৬৫)

অন্য হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

 عن أبي الدرداء: مَن ردَّ عن عِرضِ أخيه ردَّ اللهُ عن وجهِه النّارَ يومَ القيامةِ. الترمذي (ت ٢٧٩)، سنن الترمذي ١٩٣١ أخرجه الترمذي (١٩٣١)، وأحمد (٢٧٥٤٣)  •  شرح رواية أخرى

যে ব্যক্তি তার অন্য ভাইয়ের ইজ্জত সম্মান রক্ষা করল আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন। (তিরমিজি, মুসলিম)

যেভাবে আমরা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারি

ক) হাসিমুখে কথা বলা

 وَقُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا 

 মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে,  (সূরা বাকারা ২:৮৩)

 খ) সালামের প্রচলন

 عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ»

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে তোমার আহার করানো এবং সালাম দেয়া। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১০৬০)

গ) বড়দের আদেশ-নির্দেশ মান্য করা

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَاَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَاُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় তাদের। (সূরা নিসা ৪:৫৯)

ঘ) বিশেষ ছয়টি দায়িত্ব পালন

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَمُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى الْمَخْزُومِيُّ الْمَدَنِيُّ ثِقَةٌ رَوَى عَنْهُ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ وَابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ ‏.‏

আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুমিনের জন্য আরেক মুমিনের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছেঃ (১) সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে , (২) মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে , (৩) ডাকলে তাতে সাড়া দিবে ,(৪) তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে (৫) সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে এবং (৬) তার অনুপস্হিতিতে কিংবা উপস্থিতি সকল অবস্হায় তার শুভ কামনা করবে। (মুসলিম অনুরুপ, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৩৭)

ঙ) উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللَّهَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَالأَشْعَثِ بْنِ قَيْسٍ وَالنُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

 

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞ নয় আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞ নয়। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৯৫৫)

চ) অহংকার পরিহার করা

وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ  اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ۚ وَاقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَاغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ  اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ

অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। (সূরা লোকমান ৩১:১৮-১৯)

ছ) নিজেকে বিশুদ্ধ না ভাবা

 ۚفَلَا تُزَکُّوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ  ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنِ اتَّقٰی

অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী। (সূরা নজম ৫৩:৩২)

জ) কারো প্রতি হিংসা পোষণ না করা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ ‏"‏ ‏.‏ أَوْ قَالَ ‏"‏ الْعُشْبَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯০৩)

ঝ) বিনয় বিনয় ও নম্র ভাবে চলা

وَعِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ ہَوۡنًا وَّاِذَا خَاطَبَہُمُ الۡجٰہِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا

রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (সূরা ফুরকান ২৫:৬৩)

উপসংহার একজন মানুষ যাকে আল্লাহ তাআলা আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ গুণের সমাহারে তৈরি করে তারই নিজস্ব প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সে যদি নিজের খেয়ালের অনুসরণে জীবন কাটিয়ে দেয় তখন সে মানুষের পর্যায়ে থাকে না বরং পশুর চেয়েও অধম হয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের ধিক্কার পেতে থাকে। আর সে যদি মানবিক সকল গুনে গুণান্বিত হয়ে আল্লাহর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে এবং ঈমান ও আত্মচেতনার বলে বলিয়ান হয়ে জীবন গঠনের সচেষ্ট হয়। তবে আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করেন। তখন সমগ্র সৃষ্টি তাকে ভালোবাসে। দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন হয় ধন্য। মৃত্যুর পরও তার রেখে যাওয়া কীর্তিতে সে হয় চির অমর। জাতি তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে হৃদয়ের গভীর থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই সৌভাগ্য অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

গুগল ড্রাইভ হতে ডাউনলোড


পীর বা মাজারে সেজদা দেয়া যাবে কি?

পীর বা মাজারে সেজদা দেয়া যাবে কি?
পীর বা মাজারে সেজদা দেয়া যাবে কি?

- স্যার, আপনি তো বলেছেন আমাদের জন্য দলিল হল কুরআন এবং হাদিস।

- - হ্যাঁ বলেছিলাম

সূরা ইউসুফ এর ১০০ নং আয়াতে দেখা যায় হযরত ইউসুফ (আঃ) কে তাঁর পিতা এবং ভাইগণ সেজদা দিয়েছেন। তাহলে এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা মাজারে এবং ওলীদেরকে সেজদা দিতে সমস্যা কি?

-  - সুন্দর যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন করেছো। আপনার প্রশ্ন হল তুমি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর শরীয়ত অনুসরণ কর? নাকি শেষ নবির (সাঃ) শরীয়ত অনুসরণ কর?

প্রেম, পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক

 

পরকীয়া ও এর পরিণতি

পরকীয়া ও এর পরিণতি

ভালোবাসা এবং প্রেম দুটি শব্দের অর্থই বোঝায় ইংরেজি Love শব্দে। অন্যদিকে দুটি শব্দের মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ভালোবাসা সার্বজনীন। প্রেম বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ। মানুষের আবেগ অনুভূতির স্বাভাবিক রূপ ভালোবাসা। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার জন্ম। অবশ্য ভালোবাসার সংজ্ঞা আরো ব্যাপক। যেকোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির প্রতি ভালোবাসা হতে পারে।

বিখ্যাত ৮০টি আবিষ্কার ও তার আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক

বিখ্যাত ৮০টি আবিষ্কার ও তার আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক
বিখ্যাত ৮০টি আবিষ্কার ও তার আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক
বিখ্যাত ৮০টি আবিষ্কার ও তার আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক

1) অক্সিজেন কে আবিস্কার করেন ? জে বি প্রিস্টলি

2) অণুবীক্ষণ যন্ত্র কে আবিস্কার করেন ? জেড ভ্যানসেন

3) ইউরিয়া কে আবিস্কার করেন ? উহলার

4) ইউরেনিয়াম কে আবিস্কার করেন ? ক্লাপ্রথ

5) ইলেক্ট্রন কে আবিস্কার করেন ? স্যার জোসেফ জন থমসন

6) এক্সরে কে আবিস্কার করেন ? ডব্লিউ কে রন্টজে

200 টি গুরুত্বপূর্ণ Phrases and idioms for daily use

দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় ২০০ টি Phrases and idioms
দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় ২০০ টি Phrases and idioms

 200 টি গুরুত্বপূর্ণ Phrases and idioms for daily use

1) All of a sudden হঠাৎ, আকস্মিকভাবে,

2) All the same একই রুপ, একই কথা,

3) Above board প্রকাশ্য, সন্দেহাতীত,

4) After all তত্সত্ত্বেও,

5) All the while সর্বক্ষণ,

6) At last অবশেষে,

7) At random এলোমেলো,

8) As it were যেন, বলতে গেলে,

ইন্টারনেট জগতের জনপ্রিয় কিছু আবিস্কার ও সময়

ইন্টারনেট জগতের জনপ্রিয় কিছু আবিস্কার ও সময়
ইন্টারনেট জগতের জনপ্রিয় কিছু আবিস্কার ও সময়
ইন্টারনেট জগতের জনপ্রিয় কিছু আবিস্কার

Google : চালু হয় Sept 4, 1998.

Facebook : চালু হয় Feb 4,2004.

YouTube : চালু হয় Feb 14,2005.

Yahoo! : চালু হয় March 1994.

Baidu : চালু হয় Jan 1, 2000.

মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয় কোড সমূহ

মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয় কোড সমূহ
মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয় কোড সমূহ
গ্রামীণফোন

Balance Check : *566#
Data (MB) Check : *121*1*4#
Internet Pack : *121*3#
Minute Check : *121*1*2#
PPU Off : None
Show SIM Number : *2#
SMS Check : *121*1*2#
Top Offer : *777#
Tracking Check : *#62#
Tracking Off : ##002#
VAS Off : *121*6*1#