দারসুল কুরআন, সূরা বাক্বারা, ১১-১৬ |
وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُوۡنَ
اَلَاۤ اِنَّہُمۡ ہُمُ الۡمُفۡسِدُوۡنَ وَلٰکِنۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ
وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ اٰمِنُوۡا کَمَاۤ اٰمَنَ النَّاسُ قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ کَمَاۤ اٰمَنَ السُّفَہَآءُ ؕ اَلَاۤ اِنَّہُمۡ ہُمُ السُّفَہَآءُ وَلٰکِنۡ لَّا یَعۡلَمُوۡنَ
وَاِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚۖ وَاِذَا خَلَوۡا اِلٰی شَیٰطِیۡنِہِمۡ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مَعَکُمۡ ۙ اِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَہۡزِءُوۡنَ
اَللّٰہُ یَسۡتَہۡزِئُ بِہِمۡ وَیَمُدُّہُمۡ فِیۡ طُغۡیَانِہِمۡ یَعۡمَہُوۡنَ
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اشۡتَرَوُا الضَّلٰلَۃَ بِالۡہُدٰی ۪ فَمَا رَبِحَتۡ تِّجَارَتُہُمۡ وَمَا کَانُوۡا مُہۡتَدِیۡنَ
সরল অনুবাদ
(১১) আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
(১২) মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি
করে না।
(১৩) আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে
না।
(১৪) আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি।
আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো
(মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।
(১৫) বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে
দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
(১৬) তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান
হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি।
নামকরণ
বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত
পর্যন্ত হযরত মুসা এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে
এর এই নামকরণ করা হয়েছে।
শানে নুযুল
এ সূরার বেশীর ভাগ আয়াত মহানবী-এর মদীনায় হিজরতের
পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয়। আর এর কিছু অংশ পরে নাযিল হয়।
আলোচ্য বিষয়
সুরা বাকারার আলোচ্য আয়াত সমূহের মধ্যে জমিনে
দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি কারি তথা মুনাফিকদের পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ঈমান
আনার ক্ষেত্রে সাহাবাদের অনুসরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যারা মুমিনদের সাথে উপহাস
করে তাদের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৬ নং আয়াতে তাদের এই গোমরাহী কে ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যবসার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
১১,১২ নং আয়াত
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আরও
কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতেও মুনাফিকদের বর্ণনা রয়েছে এবং এই ধূলির ধরণীতে তাদের বিবাদ বিপর্যয়
সৃষ্টি,
কুফর এবং অবাধ্যতা সম্পর্কে মুসলমানদেরকে হুঁশিয়ার ও সতর্ক
করা হচ্ছে। (তাফসীরে ইবনে কাসির)
মুনাফিকদের পরিচয়
মুনাফিকদের বাহ্যিক আচরণ ভাল ছিল বলে মুসলমানদের
নিকট তাদের প্রকৃত অবস্থা গোপন থেকে যায়। তারা মু'মিনগণকে মুখমিষ্টি অথচ অবাস্তব কথা দিয়ে ধোঁকা দেয় এবং তাদের মিথ্যা দাবী ও কাফিরদের
কাছে তাদের গোপন বন্ধুত্বের ফলে মুসলমানগণকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং
বিবাদ ও হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী এই মুনাফিকরাই।
পবিত্র কুরআনের নানা জায়গায় মুনাফিকের আচরণ স্বভাব
আলোচনা করা হয়েছে। হাদীসে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ، إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ "
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি।
১। কথা বললে মিথ্যা কথা বলে,
২।
আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং
৩। প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৪৯)
একজন মুমিনের নিকট অবিশ্বাসীদের চাইতেও মুনাফিক
ব্যক্তি বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ অবিশ্বাসীরা সরাসরি অবিশ্বাস করে কিন্তু মুনাফিক ব্যক্তি
আপনজনের মুখোশ পরে গোপন কথা জেনে নিয়ে সময়-সুযোগ অনুযায়ী আঘাত করে।
এরা এমন এক শ্রেণী তারা নিজেদেরকে সঠিক মনে করে
এবং নিজেদের কাজকে মনে করে ভালো কাজ। তারা নিজেদেরকে পৃথিবীতে শান্তির দূত মনে করে
কিন্তু আল্লাহ তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়ে বলেন “সাবধান।! এটাই মূলত জমিনে ফাসাদ
সৃষ্টি কারি।“
দুই শ্রেনীর মুনাফিক
সুরা বাকারার ১৭ এবং ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা
দুই শ্রেণীর মুনাফিকের কথা উল্লেখ করেন।
১) প্রথম শ্রেণী হল তারা মুসলমানদের সাথে থেকে
সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে কিন্তু মনের মধ্যে সর্বদা মুনাফিক লালন করে।
২) আর দ্বিতীয় শ্রেণীর হচ্ছে তারা ইসলামের সত্যতা
প্রভাবিত হয় কখনো কখনো প্রকৃত মুমিন হতে ইচ্ছা করত কিন্তু দুনিয়ার উদ্দেশ্যে তারা
এই মহা সত্য হতে বিরত থেকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করত। (তাফসীরে
মারেফুল কোরআন)
মুনাফিকের পরিণতি
সকল অপরাধের শাস্তি যে আখেরাতে দেয়া হবে বিষয়টি
এমন নয়। অনেক অপরাধের শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতে দিয়ে থাকেন। মুনাফিকরা তাদের দ্বিমুখী
আচরণ মিথ্যাচার এবং ওয়াদা ভঙ্গের কারণে দুনিয়াতে অনেক সময় মানুষের সামনে অপদস্ত
হয় এবং তাদের জন্য আখিরাতের শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন।
بَشِّرِ الۡمُنٰفِقِیۡنَ بِاَنَّ لَہُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمَۨا ۙ
সেসব মুনাফেককে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
(সূরা নিসা ৪:১৩৮)
اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ فِی الدَّرۡکِ الۡاَسۡفَلِ مِنَ النَّارِ ۚ وَلَنۡ تَجِدَ لَہُمۡ نَصِیۡرًا ۙ
নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না। (সূরা নিসা ৪:১৪৫)
১৩ নং আয়াত
অত্র আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা মুনাফিকদের কে উদ্দেশ্য করে বলেন তোমরা মানুষদের মত ঈমান আনয়ন কর। এখানে মানুষ বলতে সাহাবাদের কে বুঝানো হয়েছে। কেননা ওহী অবতরণের যুগে সাহাবারা একাগ্রতার সাথে ঈমান এনেছিলেন। (তাফসীরে মারেফুল কোরআন)
সাহাবাদের মর্যাদা
নবী-রাসুলদের পরে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মানুষ
ছিল সাহাবারা। তারা সার্বক্ষণিক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থেকে
রাসুলের আদর্শকে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিফলিত করেছেন এবং তার সত্যায়ন রাসূল সাল্লাহু
সাল্লাম নিজেই করেছেন। সুরা বাকারার ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ মুনাফিকদের বিপরীতে সাহাবাদের
কথা উল্লেখ করে সাহাবীদের মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সাহাবাদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি সাল্লাম বলেন
عَنْ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِيْنَهُ وَيَمِيْنُهُ شَهَادَتَهُ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ وَكَانُوْا يَضْرِبُوْنَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ وَالْعَهْدِ وَنَحْنُ صِغَارٌ
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর এমন লোকদের আগমন হবে যাদের কেউ সাক্ষ্য দানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য দান করবে। ইব্রাহীম (নাখ্য়ী; রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহ্র নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করতেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৬) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬৫১
১৪ নং আয়াত
মুনাফিকদের দ্বিমুখী নীতি আলোচনা করে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা
এ আয়াতে বলেন তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলে আমরা ঈমান এনেছি। এবং
যখন গোপনে শয়তানের অনুসারীদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা তো তাদের সাথে উপহাস করি
মাত্র।
(তাফসীরে মারেফুল কোরআন)
১৫ নং আয়াত
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলেন "আমি নিজেই তাদের
সাথে উপহাস করি এবং তাদের শাস্তি আরো কঠিন করার জন্য তাদেরকে আরো বেশি অবকাশ দিয়ে
থাকি।"
তাদেরকে অবকাশ দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা সূরা আল-ইমরানে বলেন
وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّمَا نُمۡلِیۡ لَہُمۡ خَیۡرٌ لِّاَنۡفُسِہِمۡ ؕ اِنَّمَا نُمۡلِیۡ لَہُمۡ لِیَزۡدَادُوۡۤا اِثۡمًا ۚ وَلَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ
কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে, অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি। (সূরা আল ইমরান ৩:১৭৮)
দুনিয়ার জীবনে অনেক অবিশ্বাসীকে খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ
জীবনযাপন করতে দেখা যায়। এটা মূলত তাদের জন্য কল্যাণকর নয়। পরকালে তাদের শাস্তি আরো
বাড়িয়ে দেয়ার জন্যই তাদেরকে এসবের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়।
১৬ নং আয়াত
মুনাফিকরা যে একটি নির্বোধ গোষ্ঠী এ আয়াত দ্বারা
প্রমাণিত। কারণ তারা ঈমানদারদেরকে খুব কাছে থেকে দেখেও ঈমানদার হতে পারেনি। তাইতো আল্লাহ
বলেন তারা হেদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী কে গ্রহণ করেছে। তাদের এই কাজকে আল্লাহ ব্যবসার
সাথে তুলনা করেছেন যেহেতু এই ব্যবসায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এর দ্বারা বুঝা গেল তাদের ব্যবসা করার কোনো
যোগ্যতাই নেই অর্থাৎ তারা নির্বোধ।
তাদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ সূরা মুনাফিকুন
এ বলেন
ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ اٰمَنُوۡا ثُمَّ کَفَرُوۡا فَطُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ فَہُمۡ لَا یَفۡقَہُوۡنَ
এটা এজন্য যে, তারা বিশ্বাস করার পর পুনরায় কাফের হয়েছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না। (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৩)
পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ মুনাফিকদের
বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। এমনকি মোনাফেক নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন
اِذَا جَآءَکَ الۡمُنٰفِقُوۡنَ قَالُوۡا نَشۡہَدُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُ اللّٰہِ ۘ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُہٗ ؕ وَاللّٰہُ یَشۡہَدُ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَکٰذِبُوۡنَ ۚ
মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (আল মুনাফিকূন - ৬৩:১)
হাদিসের আলোকে মুনাফিকের পরিচয়
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ ". تَابَعَهُ شُعْبَةُ عَنِ الأَعْمَشِ.
‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আম্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ চারটি
স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব
থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি করে।
শু‘বা আ‘মাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফিয়ান (রহঃ)-এর
অনুসরণ করেছেন।
(২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামী
ফাউন্ডেশনঃ ৩৩) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪
শিক্ষা
সুরা বাকারার অত্র আয়াতগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ
করে প্রতিটি মুমিনের উচিত মুনাফিকদের থেকে বেঁচে থাকা এবং তারা যেন কোন মুমিন মুসলমান
কে ধোঁকায় ফেলতে না পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। মুনাফিকদের ধোঁকা থেকে মুমিন যেন
বেঁচে থাকতে পারে তাই আল্লাহ মুনাফিকদের চিনার জন্য অনেকগুলো লক্ষণ কোরআনে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসেও মুনাফিকের আলামত বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন।
সেগুলো যথাযথভাবে অধ্যায়ন করে সে অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করে মুনাফিকের ধোঁকা থেকে
বেঁচে থাকা মুমিনের কর্তব্য।