পরকীয়া ও এর পরিণতি |
ভালোবাসা এবং প্রেম দুটি শব্দের অর্থই বোঝায় ইংরেজি Love শব্দে। অন্যদিকে দুটি শব্দের মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ভালোবাসা সার্বজনীন। প্রেম বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ। মানুষের আবেগ অনুভূতির স্বাভাবিক রূপ ভালোবাসা। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার জন্ম। অবশ্য ভালোবাসার সংজ্ঞা আরো ব্যাপক। যেকোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির প্রতি ভালোবাসা হতে পারে।
উদ্দেশ্যঃ প্রেম, পরকীয়া এবং এর পরিণতি সম্পর্কে সেনাসদস্যদেরকে অবহিত করা।
প্রেম । প্রচলিত অর্থে প্রেম বলতে বুঝায় দুজন নরনারীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে। সামরিক বাহিনীতে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কই কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।
পরকীয়া । বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার
সাথে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। পরকীয়া প্রেমের কয়েকটি কারন হলো:
ক. সময়ের সাথে সংসার জীবনের প্রতি
অনাগ্রহ বা তিক্ততা চলে আসা।
খ. শারীরিক চাহিদা পূরণে স্বামী বা
স্ত্রীর প্রতি একঘেঁয়েমি চলে আসা।
গ. শারীরিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে
স্বামী বা স্ত্রীর অক্ষমতা বা অপূর্ণতা।
ঘ. নিতান্তই এ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়তা, লুকিয়ে প্রেম করার স্বাদ অনুভব করা।
পরিনতি
(ক) পারিবারিক ভাবে
বিবাহ বহির্ভূত প্রেম বা পরকীয়া যেটাই বলা হোক না কেন তা একটি সুখী সমৃদ্ধ পরিবারের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। পরকীয়ার দ্বারা পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। পরকীয়ার করুন পরিণতি হলো বিবাহ বিচ্ছেদ। আর বিবাহবিচ্ছেদের দ্বারা শুধুমাত্র যে দুজন নারী-পুরুষের বিচ্ছেদ বিষয়টা তা নয়। বরং দুইটি পরিবারের বিচ্ছেদ, সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
(খ) সামাজিকভাবে
সামাজিকভাবে পরকীয়াকে বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কি অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে দেখা হয়। তাই যখন কোন নারী বা পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হয় সমাজের অন্যান্য মানুষ তাদেরকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে এমনকি এর জন্য তাদের সন্তান এবং আত্মীয়স্বজন কে ও অন্যান্য মানুষের কটু কথা শুনতে হয়।
(গ) সেনা আইনে প্রেম বা
পরকীয়ার পরিণতি
যে তিনটি বিষয়ের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তার একটি হল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের পরিণতি হলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং চাকরীচ্যুত।
(ঘ) ধর্মীয় দৃষ্টিতে
পৃথিবীর কোন ধর্মই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক
তথা পরকীয়াকে উৎসাহিত করেনা। বরং সকল ধর্মই এই পাপের ক্ষেত্রে
হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে পরকীয়াকে অত্যান্ত ঘৃণিত
কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে
ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট
আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর, ২)
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির
কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেন না এর ছয়টি শাস্তি
রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(১) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট
হয়ে যাবে,
(২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে
এবং
(৩) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ
পাবে তা হচ্ছে,
(১) আল্লাহর অসন্তোষ,
(২) কঠিন হিসাব ও
(৩) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)
পরকীয়া থেকে বিরত রাখতে কিছু দিকনির্দেশনা
(ক) স্বামীর সঙ্গে থাকা
(খ) ধৈর্যধারণ করবে,
(গ) স্বামীর –স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা
(ঘ) অশ্লীল বিনোদন পরিহার করা
ডাউনলোড করুন
পাওয়ারপয়েন্ট | পিডিএফ | ওয়ার্ড