পীর বা মাজারে সেজদা দেয়া যাবে কি? |
- স্যার, আপনি তো বলেছেন আমাদের জন্য দলিল হল কুরআন এবং হাদিস।
- - হ্যাঁ বলেছিলাম
- সূরা ইউসুফ এর ১০০ নং আয়াতে দেখা যায় হযরত ইউসুফ (আঃ) কে
তাঁর পিতা এবং ভাইগণ সেজদা দিয়েছেন। তাহলে এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা মাজারে এবং
ওলীদেরকে সেজদা দিতে সমস্যা কি?
- - সুন্দর যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন করেছো। আপনার প্রশ্ন হল তুমি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর শরীয়ত অনুসরণ কর? নাকি শেষ নবির (সাঃ) শরীয়ত অনুসরণ কর?
- শেষ নবির (সাঃ)।
- - তাহলে তোমার জন্য প্রথম কথা হল শেষ নবির শরীয়তে আল্লাহ ছাড়া
অন্য কাউকে সেজদা দেয়া জায়েজ নাই, শিরক। আচ্ছা এই সূরা ইউসুফ সহ পুরো কুরআন যাঁর উপর নাজিল
হয়েছে তিনি বা তাঁর সাহাবারা এই আয়াত গুলো পড়েছেন?
- অবশ্যই পড়েছেন।
- - তারা এই আয়াত গুলোর ব্যাখ্যা বেশি বুঝতেন নাকি বর্তমানের
পীর সাহেবরা?
- অবশ্যই রাসুল (সাঃ) বুঝতেন এবং উনার সাহাবাদেরকে বুঝাতেন।
- - রাসুল (সাঃ) থেকে বড় কোন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু পৃথিবীতে
কখনো ছিলেন?
- না স্যার।
- - এমন একটি প্রমাণ ও নাই যে কোন সাহাবা রাসুল (সাঃ) কে সেজদা
করেছেন এবং উনি তাতে রাজি ছিলেন। এখন তোমার পীর সাহেব কি রাসূল (সাঃ) এর চাইতে বড়
ওলি হয়ে গেলেন? নাউজুবিল্লাহ!
- না স্যার।
- - তাহলে মনে রাখবে তাজিমি সেজদা বলে কিছু নাই। সব হল ভন্ড পীর
আর কিছু কিছু মাজার ব্যবসায়ীদের তৈরি করা। ঠিক আছে?
- জ্বি স্যার।
-
বিস্তারিত
তাফসিরে
ইবনে কাসিরে আছেঃ
হযরত
ইউসুফ (আঃ) স্বীয় পিতা-মাতাকে রাজ সিংহাসনে বসিয়ে দেন। সেই সময় তাঁর পিতা-মাতা
এবং এগারোটি ভাই সবাই তাঁর সামনে সিজদায় পড়ে যান। তখন তিনি পিতাকে সম্বোধন করে
বলেনঃ “আব্বাজান! দেখুন,
এতো দিনে আমার
পূর্বের সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রকাশিত হলো। এই হচ্ছে এগারোটি তারকা এবং এই হচ্ছে
সূর্য ও চন্দ্র যা আমার সামনে সিজদায় পতিত রয়েছে।
তাদের
শরীয়তে এটা বৈধ ছিল যে, বড়দেরকে তারা সালামের সাথে সিজদা করতেন। এমন কি হযরত আদম
(আঃ) থেকে নিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সমস্ত নবীর উম্মতদের জন্যে এটা জায়েয ছিল।
কিন্তু মিল্লাতে মুহাম্মদিয়াতে (সঃ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআ’লা নিজের পবিত্র সত্ত্বা ছাড়া অন্য কারো
জন্যে সিজদাকে বৈধ করেন নাই। বরং তিনি ওটা একমাত্র নিজের জন্যেই নির্দিষ্ট করেছেন।
হযরত কাতাদা’ (রঃ) প্রভৃতি গুরুজনের উক্তির সারমর্ম এটাই।
হাদীস
শরীফে রয়েছে যে, হযরত মুআ’য
(রাঃ) সিরিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, সিরিয়াবাসী তাদের বড়দেরকে সিজদা করে
থাকে। তিনি ফিরে এসে রাসূলুল্লাহকে (সা) সিজদা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে মুআ’য (রাঃ)! এটা কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি
সিরিয়াবাসীদেরকে দেখেছি যে, তারা তাদের বড় ও সম্মানিত লোকদেরকে সিজদা করে থাকে। তা হলে
আপনি তো সর্বাপেক্ষা এর বড় হকদার।” একথায়
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “যদি
আমি কাউকেও কারো জন্যে সিজদার হুকুম দিতাম তবে স্ত্রীলোককে হুকুম করতাম যে,
সে যেন তার
স্বামীকে সিজদা করে। কারণ এই যে, তার বড় হক রয়েছে।”
অন্য
এক হাদীসে রয়েছে যে, হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) তাঁর ইসলাম গ্রহণের শুরুতে
রাসূলুল্লাহকে (সঃ) পথে দেখে সিজদা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে সালমান (রাঃ)! আমাকে সিজদা করো না। সিজদা
ঐ আল্লাহকে কর যিনি চিরঞ্জীব যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।”
عَنْ
عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
أَبِي
أَوْفَى
قَالَ
لَمَّا
قَدِمَ
مُعَاذٌ
مِنْ
الشَّامِ
سَجَدَ
لِلنَّبِيِّ
صلى
الله
عليه
وسلم
قَالَ
مَا
هَذَا
يَا
مُعَاذُ
قَالَ
أَتَيْتُ
الشَّامَ
فَوَافَقْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِأَسَاقِفَتِهِمْ وَبَطَارِقَتِهِمْ فَوَدِدْتُ فِي نَفْسِي أَنْ نَفْعَلَ ذَلِكَ بِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَلَا تَفْعَلُوا فَإِنِّي لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا تُؤَدِّي الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِيَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
আবদুল্লাহ
বিন আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি
বলেন, মুআয
(রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিজদা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
হে মুআয! এ কী?
তিনি বলেন,
আমি সিরিয়ায়
গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে।
তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমরা তা করো
না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম,
তাহলে স্ত্রীকে
নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই স্বত্তার শপথ,
যাঁর হাতে
মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার
প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায়
স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা
অনুচিত।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৫৩)
وَعَنْ
أَبِي
هُرَيرَةَ
رضي
الله
عنه،
عَنِ
النَّبيِّ
صلى
الله
عليه
وسلم،
قَالَ:
«لَوْ
كُنْتُ
آمِراً
أحَداً
أنْ
يَسْجُدَ
لأحَدٍ
لأمَرْتُ
المَرأةَ
أنْ
تَسْجُدَ
لزَوجِهَا».
رواه
الترمذي،
وَقالَ:
حديث
حسن
صحيح
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।’’
(তিরমিযী হাসান সূত্রে) (তিরমিযী ১১৫৯, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ২৯১)
কবরে
সেজদা করার বিষয়ে
الصَّلْتُ
بْنُ
مُحَمَّدٍ
حَدَّثَنَا
أَبُوْ
عَوَانَةَ
عَنْ
هِلَالٍ
الْوَزَّانِ
عَنْ
عُرْوَةَ
بْنِ
الزُّبَيْرِ
عَنْ
عَائِشَةَ
رَضِيَ
اللهُ
عَنْهَا
قَالَتْ
قَالَ
النَّبِيُّ
صلى
الله
عليه
وسلم
فِيْ
مَرَضِهِ
الَّذِيْ
لَمْ
يَقُمْ
مِنْهُ
لَعَنَ
اللهُ
الْيَهُوْدَ
اتَّخَذُوْا
قُبُوْرَ
أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ قَالَتْ عَائِشَةُ لَوْلَا ذَلِكَ لَأُبْرِزَ قَبْرُهُ خَشِيَ أَنْ يُتَّخَذَ مَسْجِدًا.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সেই রোগাবস্থায় যাত্থেকে তিনি আর সেরে উঠেননি- বলেন, ইয়াহুদীদের প্রতি আল্লাহ লা'নত করেছেন। তারা তাদের নাবীদের কবরগুলোকে সাজদাহ্র জায়গা করে নিয়েছে। 'আয়িশাহ (রাঃ)মন্তব্য করেন,তা না হলে তবে তাঁর কবরকেও সাজদাহ্র জায়গা বানানোর আশঙ্কা ছিল।
(আ.প্র. ৪০৯১, ই.ফা. ৪০৯৪) (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪৪১)
عَن
جندب
عَنِ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
أَلاَ
فَلاَ
تَتَّخِذُوا
الْقُبُورَ
مَسَاجِدَ
إِنِّى
أَنْهَاكُمْ
عَن
ذَلِكَ
জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়ো না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি।”
(মুসলিম ১২১৬নং) ( হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৫৮০)
وَعَنْ
جُنْدُبٍ
قَالَ
سَمِعْتُ
النَّبِيَّ
ﷺ
يَقُولُ
أَلَا
وَإِنَّ
مَنْ
كَانَ
قَبْلَكُمْ
كَانُوا
يَتَّخِذُونَ
قُبُورَ
أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذلِكَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
জুনদুব
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি,
সাবধান! তোমাদের
আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে।
সাবধান! তোমরা ক্ববরসমূহকে মাসজিদে পরিণত কর না। আমি তোমাদেরকে একাজ হতে
নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি।
(মুসলিম ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি‘ ২৪৪৫। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৭১৩)