Showing posts with label Blog. Show all posts
Showing posts with label Blog. Show all posts

পরকীয়াঃ কারন ও প্রতিকার

পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ এবং নৈতিক অবক্ষয়রোধে ইসলামের নির্দেশনা
পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

বর্তমান সময়ে এক মহামারির নাম পরকীয়া। পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া। বিকৃত মানসিকতার কাজ। শরিয়তের পরিভাষায় পরকীয়া বলা হয় বিবাহ-পরবর্তী কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রেম-ভালোবাসাকে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে। পরকীয়া মানবতাবিরোধী একটি অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরকীয়া নামের অসামাজিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অশুভ থাবায় বিপর্যয়ের মুখে সংসার ও পরিবার প্রথা।

উদ্দেশ্যঃ আজকের ক্লাশের উদ্দেশ্য হল পরকীয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা এবং পরকীয়া নির্মূলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা

পরকীয়ার পরিচয়ঃ পরকীয়া বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। পরকীয়া হল বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া। সমাজে এটি নেতিবাচক হিসাবে গণ্য।

মূলত পরকীয়া হল- বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে পর পুরুষ বা পর নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।

পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার কারণ

বর্তমানে সমাজে পরকীয়ার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল তাঁর দ্য স্টেট অব অ্যাফেয়ার গ্রন্থে পরকীয়াকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (কালের কণ্ঠ)

বিবাহিত নারী-পুরুষের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল।-

১. ইসলামী শিক্ষার অভাব

ইসলাম মানব জাতির চরিত্রের হিফাযতের জন্য নারী-পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে  এবং বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ককে হারাম ঘোষণা করেছে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ لَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ

প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, (সূরা আনআম ৬:১৫১)

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম ও এর ভয়াবহ শাস্তি না জানার কারণে মানুষ পরকীয়ার মত নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে।

২. সামাজিক কারণ

ইসলাম সামর্থ্যবান পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও (নিসা ৪/৩) অনেক পুরুষ সামাজিক কারণে একাধিক বিয়ে করতে পারেন না। কারণ সমাজ বহু বিবাহকে ভাল চোখে দেখে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন চাহিদার অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। অপরদিকে দুর্বল ও অসুস্থ পুরুষের ক্ষেত্রেও নারী সামাজিক ভয়ে তালাক না নিয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

৩. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা

পুরুষ-নারীর অবাধ মেলামেশার সুযোগে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর আলাপচারিতা ও পরবর্তীতে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মহিলারা আজকাল চাকুরী, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে। আর পর পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও ঠাট্টা-মশকরার মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি ঝুকে পড়ছে। অথচ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ؟ قَالَ: «الْحَمْوُ الْمَوْتُ»

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোনো নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দেবর তো মরণসম বা মরণের ন্যায়। (বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৭৩৪৭, দারিমী ২৬৮৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৯০৮)

স্বামীর ভাইয়ের ব্যাপারে যদি ইসলাম এত কঠোরতা আরোপ করে তাহলে অপরিচিত বা সাময়িক পরিচিতদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি হতে পারে? নিঃসন্দেহে তা আরো কঠোর হবে।

৪. পর্দাহীনতা

পরকীয়ার অন্যতম কারণ হল পর্দাহীনতা। এর ফলে নারী-পুরুষ একে অপরের দেখা-সাক্ষাৎ করার ও কথা বলার সুযোগ পায়। এতে তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর শয়তান এটাকে আরো সুশোভিত করে উপস্থান করে এবং পরকীয়ার দিকে নিয়ে যায়। এজন্য ইসলাম পর্দাহীনতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন

,الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ

মহিলারা হচ্ছে আবৃত বস্ত্ত। সে বাইরে বের হলে শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে। (তিরমিযী হা/১১৭৩)

সুতরাং যে পোষাকে নারীর চুল, গ্রীবা, বক্ষ, পেট, পিঠ ও আবৃত অঙ্গ প্রকাশিত থাকে তা পরিধান করা হারাম।

৫. ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া

পরকীয়ার আকেরটি কারণ হল, ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের অমতে বিয়ে দেওয়া। অভিভাবকরা নিজেদের কথা ভাবেন এবং অনেক তাড়াহুড়া করে তাদের সন্তানদের বিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে-মেয়ের পসন্দ বা মতামতকে অনেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন না। ফলে এসব ছেলে-মেয়েদের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। ছেলে-মেয়ে প্রথমে মেনে নিলেও পরে তাদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। পরিবারের ভয়ে কিছু না বললেও এক সময়য়ে তারা উভয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।

৬. দৈহিক অক্ষমতা

নারী-পুরুষ জৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু এই চাহিদা পূরণ না হলে নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়।

৭. প্রযুক্তির সহজলভ্যতা

প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিময় করেছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এর অপকারিতা জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। হাতের নাগালে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত অনেকের সাথে পরিচয় হচ্ছে এ পরিচয় থেকে অনেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব

পরকীয়ার ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

১। পরিবারে অশান্তি

পরকীয়ার প্রধান ক্ষতিকর প্রভাব হল পরকীয়ার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুখের পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়।

২। ব্যভিচারের পথ সুগম হয়

পরকীয়ার আরো একটি বড় কুফল হল এর মাধ্যমে সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। সমাজে ব্যভিচারের অসংখ্য রাস্তা খুলে যায়।

৩। ছেলেমেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যত

পরকীয়ার মাধ্যমে যখন একটি পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় তখন সে পরিবারের ছোটছোট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নিজেদের চোখে সামনে যখন পিতামাতার নৈতিক অবক্ষয় দেখতে পায় তখন তাদের মনের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় পরকীয়ার সঙ্গীর সহায়তায় নিজ সন্তানকেও অনেক মা বাবা হত্যা করতে দ্বিধা করেনা।

পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে যেসব নীতিমালা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবধর্মী। ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে-

১. খোদাভীরুতা

ইসলাম প্রথম স্বামী-স্ত্রীকে খোদাভীরুতা, দুনিয়াবিমুখতা ও কৃতকর্মের জবাবদিহিতার ভয় অর্জনের প্রতি জোর তাকিদ করেছে। কারণ তারা এসব গুণে গুণান্বিত হলে দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ বিধানকে লঙ্ঘন করবে না। পর নারী ও পর পুরুষে আসক্ত হবে না। আল্লাহ পাক বলেন, হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার জীবনসঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সূরা নিসা-১)

২. নৈতিক শিক্ষা

ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে নৈতিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তাদের আত্মিক কলুষতামুক্ত হয়ে কষ্ট সহিষ্ণুতা, ধৈর্যশীলতা, অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতার মতো মহৎ গুণাবলি অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ মানুষের চাহিদা অসীম। সসীম জগতে তা মেটানো সম্ভব নয়। তাই দাম্পত্য জীবনে তারা যদি পরস্পর ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হয়, সুখ-দুঃখ খুশি মনে মেনে নেয়, আল্লাহর দেওয়া আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থ্যের ওপর তুষ্ট থাকে, তাহলে তারা কখনো পরকীয়ায় জড়াবে না। দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ উপহার হিসাবে মনে করবে।

৩. পরস্পরে ভালোবাসা

পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এবং পরস্পরের আকর্ষণ হ্রাস না পায় এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বামী-স্ত্রীকে ইসলাম আদেশ দিয়েছে। যেমন কখনো একই পাত্র থেকে আহার গ্রহণ করা। একে অপরের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। স্বামীকে চিন্তিত দেখলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ও সাহস জোগানো। আম্মাজান খাদিজা (রা.) রাসূল (সা.)-এর দুঃখের সময় তার পাশে ছিলেন। তাকে সাহস জুগিয়েছেন। কর্মস্থল থেকে ফিরে হাস্যোজ্জ্বল ও সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা। স্ত্রীও মুচকি হাসি দিয়ে বরণ করা, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। অফিসে যাওয়ার সময় হলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া, মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি হাতে তুলে দেওয়া। স্বামী স্ত্রীর কপালে কিংবা হাতে চুমু দেওয়া। বাসা-বাড়িকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা। নিজে সেজেগুজে থাকা। সাংসারিক কাজকর্মে স্ত্রীকে সাহায্য করা। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দেওয়া। কিছু সময় একান্তে কাটানো। রোমান্টিক কথাবার্তা বলে ভালোবাসা প্রকাশ করা। মোটকথা পারস্পরিক সম্পর্ককে দৃঢ় ও মজবুত করা। নিজেদের মধ্যে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া।

৪. দৃষ্টি সংযত রাখা

পর নারী কিংবা পর পুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া, তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, অবাধে মেলামেশা ইত্যাদি থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ পাক বলেন : হে নবি! মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ইহাই তাদের জন্য উত্তম। ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর ৩০-৩১)

৫. অবাধে মেলামেশা না করা

কর্মস্থলে নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি মনোযোগী থাকবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। একাকিত্বে খোশ গল্পে মেতে উঠবে না। প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। আকর্ষণীয়, কোমল ও নম্র কণ্ঠে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুবাসনা করে। তোমরা সঙ্গত কথা বল। (সূরা আহযাব ৩২)

৬. অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত না হওয়া

মহানবি (সা.) বলেন, হে লোক সকল তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে। দুনিয়ার তিনটি পরিণাম হলো- শ্রীহীনতা, দরিদ্র ও আয়ুষ্কাল হ্রাস। পরকালের তিনটি পরিণাম হলো-আল্লাহর ক্রোধ, মন্দ হিসাব, দোজখের শাস্তি (শুয়াবুল ইমান, বায়হাকী) যে অপরকে পরকীয়ার জন্য ফুসলায় তার ব্যাপারে হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে অন্যের স্ত্রীকে অথবা ক্রীতদাসকে ফুসলিয়ে তার বিরুদ্ধে উসেক দেবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ)

পরকীয়ার শাস্তি

ইসলাম ধর্মে পরকীয়াকে অত্যান্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)

ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ বলেন, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। (সুরা নুর, ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেন না এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(১) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(৩) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(১) আল্লাহর অসন্তোষ,

(২) কঠিন হিসাব ও

(৩) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো। (বুখারিঃ ৭৬৫৮)

উপসংহারঃ আমাদের সমাজ থেকে পরকীয়া দূর করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো ফলো করতে হবে। বিশেষত দেশের প্রতিটি নাগরিককে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। তাদের মধ্যে খোদাভীরুতা, দুনিয়া বিমুখিত ও জবাবদিহিতার ভয় সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি পরকীয়া সম্পর্ককারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। 

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

কোন্ কোন্ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা :  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যে কোন অংশে অংশীদার হওয়া জায়েয। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ-  যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই।  -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। -হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; আলমগীরী ৫/২৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানী করা যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪; আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; মুসনাদে আহমাদ ১/৬১০; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫২; আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; কাযীখান ৩/৩৫২

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; আলমগীরী ৫/৩০১

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্র করা

মাসআলা : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

মাসআলা : কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। -আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬; ইমদাদুল মুফতীন পৃ. ৮০২

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : কুরবানীর পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

সংকলকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া


ডাউনলোড করুনঃ

ঈদুল আযহার প্রথম খুতবার পিডিএফ ফাইল

ঈদুল আযহার দ্বিতীয় খুতবার পিডিএফ ফাইল


আদর্শ পরিবার ও পারিবারিক জীবন | পিডিএফ ডাউনলোড | মোটিভেশন ক্লাশ

ভূমিকাঃ সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় পারিবারিক জীবনের প্রাথমিক শর্ত হলো বিয়ে। বিয়ে হচ্ছে একটি পবিত্র বন্ধন। এটা কারও অজানা নেই, একজন পুরুষ এবং একজন নারীর একত্রে জীবনযাপনে ধর্ম এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত যে বন্ধন স্থাপিত হয়, তারই নাম বিয়ে। বিয়ে-বন্ধন কেবল গতানুগতিক বা কোনো সামাজিক প্রথা নয়, এটা মানবজীবনের ইহকাল ও পরকালের মানবীয় পবিত্রতা রক্ষার জন্য আল্লাহ পাকের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। সুতরাং এটা যে কেবল পার্থিব জীবনের গুরুত্বই বহন করে এমন নয়, বরং পারলৌকিক জীবনের জন্যও অনেক গুরুত্ব বহন করে।

উদ্দেশ্যঃ আজকের ক্লাসের উদ্দেশ্য হল সকলকে বৈবাহিক জীবন এবং পারিবারিক মূল্যবোধ বিষয়ে প্রেষণা প্রধান করা।

আলোচনার সুবিধার্থে আজকের ক্লাশকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিঃ

ক) বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি / সঠিক সঙ্গী নির্বাচন

খ) বৈবাহিক জীবন / দাম্পত্য জীবন

গ) পারিবারিক জীবন

ক। বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি / সঠিক সঙ্গী নির্বাচন

বিবাহ পূর্ব প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম বিষয় হল সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা। কেননা এই নির্বাচন একবার ভুল হলে আজীবন এর মাশুল দিতে হবে। বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি ও সঠিক সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলঃ

১। হাদিসের নীতিমালাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে কেমন কনে বাছাই করতে হবে এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস থেকে জানতে পারি,

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)

‘কুফু’ সমতা রক্ষা করাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে সমতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বর্তমানে অনেকেই এই বিষয়ে অবহেলা করার কারনে পারিবারিক জীবনে নেমে আসে নানা প্রকার অশান্তি। বিবাহে কুফুর বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৬৮)

বয়সঃ দাম্পত্য জীবনে সুখের একটি অন্যতম শর্ত হল বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের প্রার্থক্য। অনেকে এই বিষয়ে নানা মতামত ব্যক্ত করলেও বিয়ের ক্ষেত্রে সম-বয়স এবং বয়সের বড় ধরণের দূরত্ব দুইটিই ক্ষতিকর। সমবয়সী হলে উভয়ের মাঝে সম্মান এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক খুব কমই দেখা যায়। আবার বয়সে দূরত্ব বেশি হলে উভয়ের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো হয়না। একে অন্যের মানসিক অবস্থা, চাহিদা অনুধাবন করতে পারেনা। তখনই সংসারে শুরু হয় নানা অশান্তি।

পাত্রী নির্বাচনে 4B  

B blood (স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা)

B Brain (মেধাবী সঙ্গী বাছাই করা)

B Bank (আর্থিক অবস্থার দিকে খেয়াল করা।)

B Beauty (সঙ্গীর সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করা। )

মহরের নির্ধারণে সতর্কতাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে মহর একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু কিছু যায়গায় মহরের টাকা এত বেশি নির্ধারণ করা হয় যা পরিশোধ করা পাত্রের পক্ষে অনেক কঠিন হয়ে যায়। যা ইসলাম সম্মত নয়। মহর আদায়ের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِہِنَّ نِحۡلَۃً ؕ فَاِنۡ طِبۡنَ لَکُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡہُ نَفۡسًا فَکُلُوۡہُ ہَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا

নারীদেরকে খুশী মনে তাদের মাহর আদায় কর। তারা নিজেরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা সানন্দে, স্বচ্ছন্দভাবে ভোগ করতে পার। (আন নিসা - ৪:৪)

বিয়েতে অপচয় না করাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে বিয়ে যত সহজ এবং স্বল্প ব্যয়ে হয়; সেই বিয়ে ততই শান্তি ও বরকতময় হয়।(মিশকাত)

খ) বৈবাহিক জীবন / দাম্পত্য জীবন

দাম্পত্য জীবনের সুখ অনেক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। কয়েকটি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

১। পারস্পরিক বোঝাপড়াঃ সুখি দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বোঝাপড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অন্যজনকে ভালোভাবে না বুঝলে। অন্যজনের মন খারাপের কারণ না জানলে সে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি লেগে থাকা স্বাভাবিক।

২। পারস্পরিক শ্রদ্ধা/ ভালোবাসা/ সম্মানঃ স্বামী- স্ত্রী একজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান থাকা অপরিহায্য। কেননা  শ্রদ্ধা সম্মান না থাকলে সেখানে আনুগত্যের প্রশ্নই আসেনা। আর যেখানে আনুগত্য নাই সেখানে অশান্তি লেগে থাকাই স্বাভাবিক।

৩। ধৈর্য্যধারন, ক্ষমাঃ দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য্য এবং ক্ষমার কোন বিকল্প নাই। একজনের আচরণে আরেকজন ধৈর্য্যধারণ করতে না পারলে তখনই সংঘাত হা অশান্তি শুরু। ছাড় দেয়ার মন মানসিকতা ছাড়া সুখি পারিবারিক জীবন কল্পনা করা অসম্ভব।

৪। উত্তম আচরণঃ স্বাভাবিক ভাবেই ভালো আচরন, উত্তম আচরণ মানুষের স্বাভাবিক গুণ। যেকোন মানুষ অন্যজনের নিকট উত্তম আচরণ আশা করে। আর যার সাথে সারা জীবন এক সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সাথে উত্তম আচরণ না করে একসাথে থাকা কিভাবে সম্ভব? আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَعَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। (আন নিসা ৪:১৯)

প্রিয়নবী (সাঃ) তার স্ত্রীদের সাথে হাসি তামাশা করতেন, রাতের অন্ধকারে দৌঁড় প্রতিযোগীতা করতেন। তাদের ঘরের কাজে সাহায্য করতেন।

৫। স্ত্রীর ভরণপোষণঃ সামর্থ অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করাও এক ধরণের সদকাহ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِي رَقَبَةٍ وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِي أَنْفَقْتَهُ عَلَى أَهْلِكَ ‏"‏ ‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আযাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদেরকে দান করলে এবং আর একটি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে। এর মধ্যে (সাওয়াবের দিক থেকে) ওই দীনারটিই উত্তম যা তুমি পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করলে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২০১)

৬। উপহার বিনিময় করাঃ দাম্পত্য জীবনের ছোট ছোট আনন্দের মূহুর্ত গুলো দাম্পত্য জীবনের সুখ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাওয়ার একটা অন্যতম পদ্ধতি হল একে অন্যের মাঝে উপহার বিনিময়। উপহার যত ছোটই হোক এর দ্বারা মানুষ আনন্দিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَهَادُوا تَحَابُّوا»

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা পরস্পর উপহারাদি বিনিময় করো, তোমাদের পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টি হবে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৫৯৭)

গ) পারিবারিক জীবন

পারিবারিক জীবন বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে পরিবারের সকলকে নিয়ে আমাদের  বসবাসের বিষয়টি। পারিবারিক জীবনে সুখ লাভ করতে হলেও আমাদেরকে কিছু বিষয় অনুস্মরণ করতে হবে।

১। পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ আমাদের সমাজে অনেকেই পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদেরকে মূল্যায়ন করে না। অথচ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় স্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের ছোটরাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে। আল্লাহ তাআলা সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে বলেন,

وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ

অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনি পরামর্শ করুন।

২। জীবন সঙ্গীর পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালনঃ একটি সুন্দর পারিবারিক জীবন পরিচালনার জন্য পরিবারের সাথে সংযুক্ত অন্য পরিবারের সদস্যদের সাথেও ভালো আচরণ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি সহ স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের সাথেও ভালো আচরণের দ্বারা আপনার পিতামাতা আত্মীয় স্বজনের প্রতিও আপনার স্ত্রীর মনে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে।

৩। পরিবারে ধর্মীয় পরিবেশ নিশ্চিত করাঃ পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপদ, সুন্দর, ধর্মীয় পরিবেশ নিশ্চিত করা স্বামীর দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট কাঙ্ক্ষিত আচরণ আশা করা অসম্ভব।

৪। সাধ্যমত ব্যয় করাঃ পরিবারের সদস্যদের জন্য সাধ্যমত ব্যয় করা উচিত। এক্ষেত্রে যেমনি মুক্ত হস্ত হওয়া যাবেনা তেমনিভাবে কৃপণতা করাও যাবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَجۡعَلۡ یَدَکَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِکَ وَلَا تَبۡسُطۡہَا کُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুণ তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে। (বনী-ইসরাঈল ১৭:২৯)

৫। ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করাঃ সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।  সন্তানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা পিতামাতার দায়িত্ব।  কেননা, ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। আর ধর্ম, নৈতিকতা শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে এই সন্তান সন্ততি একদিন পিতামাতার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

৬। সকলের অধিকারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকাঃ আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেকেই স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে পিতামাতার মনে কষ্ট দেয়। অনেকেই পিতামাতা এবং স্ত্রীকে এক সাথে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হলে পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। অনেকে আবার একাধিক সন্তানের মাঝে অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করতে পারেন না। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সন্তান একাধিক থাকলে সকলের অধিকারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।

৭। সন্তানের সম্মুখে অন্তরঙ্গ না হওয়াঃ অনেক স্বামী স্ত্রী আছেন তারা সন্তানকে ছোট মনে করে তাদের সামনে অন্তরঙ্গ আচরণ করেন যা কচি বাচ্চার মনের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হাদিস শরিফে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».

 ১০ বছর হলেই ছেলেদের বিছানা আলাদা করে দিতে বলেছেন। বাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং আলাদা কক্ষ থাকলে ১০ বছরের আগেও আলাদা করে দেয়ায় বাঁধা নাই। তবে কন্যা সন্তানরা যেহেতু ছেলে সন্তানের তুলনায় আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তাই তাদেরকে আরো আগেই আলাদা করে দেয়া উচিত।

সমাপনীঃ জাতিসংঘ প্রতি বছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালন করে। তারা পরিবার বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং শান্তিময় জীবন লাভের স্বপ্ন নিয়ে এ দিবসের নানা আয়োজন করে। অথচ আমাদের প্রাণের ধর্ম ইসলাম শান্তিময় জীবন ও পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য শেখানোর জন্য দিয়েছে পরিবার ব্যবস্থা কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলেই কেবল আদর্শ পরিবার গঠন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর নির্দেশিত পথে আমাদের পরিবারগুলো গঠন করার তওফিক দিন।

পিডিএফ ডাউনলোড