কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

কোন্ কোন্ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা :  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যে কোন অংশে অংশীদার হওয়া জায়েয। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ-  যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই।  -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। -হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; আলমগীরী ৫/২৯৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানী করা যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪; আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫; মুসনাদে আহমাদ ১/৬১০; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৫২; আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; কাযীখান ৩/৩৫২

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; আলমগীরী ৫/৩০১

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্র করা

মাসআলা : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

মাসআলা : কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; কাযীখান ৩/৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। -আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬; ইমদাদুল মুফতীন পৃ. ৮০২

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : কুরবানীর পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

সংকলকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া


ডাউনলোড করুনঃ

ঈদুল আযহার প্রথম খুতবার পিডিএফ ফাইল

ঈদুল আযহার দ্বিতীয় খুতবার পিডিএফ ফাইল


ঈদুল আযহার খুতবাহ + ঈদুল আযহার দ্বিতীয় খুতবাহ | Eid al-Adha Khutbah + 2nd Khutbah of Eid al-Adha PDF

ঈদুল আযহার খুতবাহ
ঈদুল আযহার খুতবাহ

পৃথিবীর সকল জাতির, সকল গোষ্ঠীর আনন্দ পালনের বিভিন্ন দিবস রয়েছে তেমনি ভাবে মুসলমানদের বছরে দুইটি ঈদ উৎসবের একটি হল ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব কাজেই ঈদ-উল-আযহার ধর্মীয় ও সামাজিক সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম।  

১। ঈদ শব্দের অর্থ

ঈদ শব্দের অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব, প্রত্যাবর্তন, ফিরে আসা, পুনর্মিলন ইত্যাদি।

قال صاحب المعجم والوسيط، العيد هو اليوم الذي يعود كل عام مرتين يفرحون فيه المسلمون ويصلون صلوة مخصوصه لرضاء الله تعالى.

কুরআনে ঈদ শব্দের ব্যবহার

قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ اللّٰہُمَّ رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَارۡزُقۡنَا وَاَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

(সুতরাং) ঈসা ইবনে মারয়াম বলল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন, যা হবে আমাদের এবং আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ উদযাপনের কারণ এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন। আমাদেরকে (এনিআমত) অবশ্যই প্রদান করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। (আল মায়িদাহ ৫:১১৪)

২। আযহা শব্দের অর্থ

আযহা শব্দের অর্থ দ্বিপ্রহর, অর্থাৎ সকাল ও দুপুরের মধ্যবর্তী সময় যখন ঈদের নামাজ পড়া হয়। আরবিতে এই দিনের আরো নাম রয়েছে- ঈদুল আযহা, অর্ধদুপুরের আনন্দ, ইয়াওমিন নাহার বা রক্ত প্রবাহের দিন। ইয়াওমিয যাবাহ বা পশু যবেহের দিন। ইয়াওমিন নুসুক অর্থ কুরবানির দিন বা আত্মত্যাগের দিন, নৈকট্য লাভের দিন।

الاضحى اي وقت الضحى في الصبح يوم الاضحي يوم النحار، يوم عيد الاضحى، يوم الذبح يوم النسك

কুরআনের ভাষায়

‏وَٱلضُّحَىٰ -  ‏وَٱلَّيْلِ إِذَا سَجَىٰ

শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়। (আল আদ দুহা ৯৩:১-২)

৩। কুরবানী শব্দের অর্থ

قرباني من لفظ القرب، معنى التقرب الى الله، اي بوسيله الذبح الانعام،

কুরবানী শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য লাভ করা, আত্ম উৎসর্গ কর, পশু জবেহ করা ও রক্ত প্রবাহিত করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় নেসাব পরিমাণ মালের মালিকের উপর হালাল চতুষ্পদ জন্তু আল্লাহর নামে জবাই করা ওয়াজিব। যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

وَاتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِہِمَا وَلَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰہُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ

এবং (হে নবী!) তাদের সামনে আদমের দু পুত্রের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পড়ে শোনাও, যখন তাদের প্রত্যেকে একেকটি কুরবানী পেশ করেছিল এবং তাদের একজনের কুরবানী কবুল হয়েছিল, অন্যজনের কবুল হয়নি। ২৫ সে (দ্বিতীয়জন প্রথমজনকে) বলল, আমি তোমাকে হত্যা করে ফেলব। প্রথমজন বলল, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই (কুরবানী) কবুল করেন। (আল মায়িদাহ ৫:২৭)

৪। ঈদুল আযহার উদ্দেশ্য

ক। ওয়াজিব আদায় করা।

খ। অকাতরে আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।  

গ। আল্লাহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি জন্তু জানোয়ারের সৃষ্টিকর্তা। কোরবানির মাধ্যমে এর সাক্ষ্য প্রদান।

ঘ। আল্লাহর নামে কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়।

ঙ। হাজীগণ মিনায় কুরবানী করেন।

চ। হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর ও রাসুল (সাঃ) এর তরিকা অনুসরণ।

ছ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ لُحُوۡمُہَا وَلَا دِمَآؤُہَا وَلٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَہَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ ؕ وَبَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

আল্লাহর কাছে তাদের গোশত পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। এভাবেই তিনি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন বলে। যারা সুচারুরূপে সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও। (আল হাজ্জ্ব ২২:৩৭)

শানে নুজুলঃ

হজ্জ ইসলামের পূর্বেও ছিল; কিন্তু ইসলামের পূর্বের হজ্জে কাফেররা বহু কুসংস্কার এবং শিরক অন্তর্ভুক্ত করেছিল । তন্মধ্যে কোরবানীর গোশ্‌ত বায়তুল্লাহ জড়িয়ে দিত এবং তার দেয়ালে রক্ত লেপন করে দিত । ইসলামের আবির্ভাবের পর সমস্ত কু-সংস্কার নির্মূল করে কাবা গৃহকে পাক পবিত্র করে ইবাদতের রঙ্গে সুশোভিত করা হয় । মুসলমানরা যখন প্রথম হজ্জব্রত পালনে আসলেন, তখন তাঁরাও কাঁবা শরীফেকে পূর্ব প্রথানুযায়ী কোরবানীর রক্ত মাংস দিয়ে প্রলেপ দিতে উদ্যত হলে আলোচ্য আয়াতটি নাযিল হয় ।

জ। অভাবী ও নিঃস্বদের গোস্ত খাওয়ানো।

لِّیَشۡہَدُوۡا مَنَافِعَ لَہُمۡ وَیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ۚ  فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَاَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ ۫

যাতে তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেই সকল পশুতে যা তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। ১৭ সুতরাং (হে মুসলিমগণ!) সেই পশুগুলি থেকে তোমরা নিজেরাও খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও। (আল হাজ্জ্ব ২২:২৮)

৫। ইসলাম পূর্ব যুগের উৎসব ও আমাদের ঈদ উৎসব

عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  إِنَّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন। (আবূ দাঊদ ১১৩৬, নাসাঈ ১৫৫৬, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১১৩০)

৬। প্রত্যেক জাতির জন্য কোরবানি

وَلِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ  فَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَلَہٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ  وَبَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ ۙ

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আল্লাহ তাদেরকে যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহ দিয়েছেন তাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা তাঁরই আনুগত্য করবে। আর সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে। (আল হাজ্জ্ব ২২:৩৪)

৭। কুরবানি না করার পরিনাম

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا» رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَه، وَصَحَّحَهُ الْحَاكِمُ، لَكِنْ رَجَّحَ الْأَئِمَّةُ غَيْرُهُ وَقْفَهُ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কুরবানী করার সামর্থ্য রয়েছে তবুও কুরবানী করল না তবে যেন সে আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।

ফুটনোটঃ ইবুন মাজাহ ৩১২৩, আহমাদ ৮০৭৪। হাদিসটি হাসান মাওকূফ তবে বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য; তাওযিহুল আহকাম ৭/৭৯, বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১৩৪৮

৮। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ) এর স্মৃতি রক্ষা

رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর।

فَبَشَّرۡنٰہُ بِغُلٰمٍ حَلِیۡمٍ

সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَہُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ

অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।

فَلَمَّاۤ اَسۡلَمَا وَتَلَّہٗ لِلۡجَبِیۡنِ ۚ

যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।

وَنَادَیۡنٰہُ اَنۡ یّٰۤاِبۡرٰہِیۡمُ ۙ

তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,

قَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ

তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

اِنَّ ہٰذَا لَہُوَ الۡبَلٰٓـؤُا الۡمُبِیۡنُ

নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।

وَفَدَیۡنٰہُ بِذِبۡحٍ عَظِیۡمٍ

আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।

وَتَرَکۡنَا عَلَیۡہِ فِی الۡاٰخِرِیۡنَ ۖ

আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে,

سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰہِیۡمَ

ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।

کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ

এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফাফাত ৩৭:১০০-১১০)

৯। উম্মতে মুহাম্মদীর কুরবানী

‏إِنَّآ أَعْطَيْنَكَ ٱلْكَوْثَرَ-  ‏فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ-  ‏إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ

নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ। (সূরা আল কাউসার ১০৮:১-৩)

১০। কোরবানির ফজিলত

حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ دَخَلَ عَلَيْهَا وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَهَا يَوْمَ فِطْرٍ أَوْ أَضْحًى وَعِنْدَهَا قَيْنَتَانِ تُغَنِّيَانِ بِمَا تَقَاذَفَتْ الأَنْصَارُ يَوْمَ بُعَاثٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ مَرَّتَيْنِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيْدًا وَإِنَّ عِيْدَنَا هَذَا الْيَوْمُ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে, আবূ বকর (রাঃ) ঈদুল ফিত্‌র অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাঁকে দেখতে এলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশা (রাঃ) - এর বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় দুজন অল্প বয়স্কা বালিকা এ কবিতাটি উচ্চঃস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আনসারগণ বুআস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবূ বাকর (রাঃ) দুবার বললেন, এ হল শয়তানের ঢাল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ বাকর, ওদেরকে ছাড়। প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ঈদ আছে আর আজ হল আমাদের ঈদের দিন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৯৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৪)

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنِي أَبُو الْمُثَنَّى، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا ‏"‏ ‏.‏

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)

ফুটনোটঃ তিরমিযী ১৪৯৩, মিশকাত ১৪৭০, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০১। তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী আবুল মুসান্না সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু হাজার আল-আসকালানী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল। ইমাম যাহাবী তাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ রাবীর বিপরীত হাদিস বর্ণনা করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭৬০২, ৩৪/২৫২ নং পৃষ্ঠা)

১১। ঈদুল আযহার ধর্মীয় গুরুত্ব

ক। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ন্যায় আবেগ, অনুভূতি, প্রেম, ভালবাসা ও আন্তরিকতার সাথে কুরবানি করা।

খ। আল্লাহর পথে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার দীপ্ত শপথ গ্রহণের দিন হল ঈদুল আযহার দিন।

গ। পশুর গলায় ছুরি চালানোর মাধ্যমে প্রবৃত্তির গলায় ছুরি চালিয়ে নিষ্কলুষ মানুষে পরিণত হওয়ার দিন।

ঘ। আল্লাহর প্রেমে পাগলপারা হয়ে বা পাচারের কালিমা মুক্ত হওয়ার দিন।

ঙ। হাজিগনের মিনায় পশু কোরবানির সাথে ইসলামী ঐতিহ্যের সাদৃশ্য রক্ষা।

চ। মহানবী (সাঃ) এর সুন্নত পালন করা ও ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল হবার সাক্ষ্য দেয়ার দিন।

ছ। পার্থিব জগতের কল্যাণ পরকালীন মুক্তির পাথেয় সংগ্রহের দিন।

ঈদুল আযহার সামাজিক গুরুত্ব

ক। ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করে অনৈসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে সমাজকে রক্ষা করা।

খ। সামাজিক সাম্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।

গ। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে সম্প্রীতির সমাজ গঠন করা।

ঘ। গর্ব-অহংকার থেকে মুক্ত হয়ে জনসেবা ও জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার শপথ গ্রহণ করা।

ঙ। মুসলিম ভাতৃত্ব কায়েম ও সম্প্রসারণের দিন।

চ। আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ় করার দিন।

ছ। দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করার প্রত্যয় গ্রহণের দিন।

১২। কুরবানীর শিক্ষা

ক। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।

খ। ত্যাগ / সর্বোচ্চ উৎসর্গ।

গ। বিশুদ্ধ নিয়ত এবং তাক্বওয়া।

ঘ। সবর/ ধৈর্য্য।

ঙ। ভাতৃত্ব / সম্প্রীতি।

চ। রিয়া মুক্ত / শিরকমুক্ত ইবাদাত।

ছ। মনের পশুকে কুরবানী।

জ। অহংকার বর্জন।

ঝ। সুষ্ঠ বণ্টন নিশ্চিত করা।

ট। হালাল উপার্জন। 

উপসংহার

ঈদুল আযহা মুসলিম জাতির ধর্মীয় উৎসবের দিন। আল্লাহর জন্য প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিন। পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দিন।  আর্ত মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করার দীপ্ত শপথের দিন। পাপাচার পরিত্যাগ করে ইব্রাহিম (আঃ) এর ন্যায় একনিষ্ঠ ধর্মভীরু হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণের দিন। সুতরাং মুসলমানের উচিত কোরবানির মাধ্যমে দেশ, জাতি ও ধর্মের জন্য আত্মোৎসর্গ করার শিক্ষা গ্রহণ করা।

আরো পড়ুন

কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসআলা মাসায়েল

কুরবানী বিষয়ক কিছু আয়াত ও হাদিস

কুরবানীর তাৎপর্য ফজিলত ও শিক্ষা


ডাউনলোড করুন

ঈদুল আযহার প্রথম খুতবাহ

ঈদুল আযহার দ্বিতীয় খুতবাহ