কুরবানীর তাৎপর্য, ফজিলত ও শিক্ষা | জুমুয়ার খুতবাহ

কুরবানীর তাৎপর্য, ফজিলত ও শিক্ষা

কুরবানীর তাৎপর্য, ফজিলত ও শিক্ষা

কুরবানি শব্দটি আরবি কুরবান শব্দ থেকে একটু পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। এর অর্থ হলো নিকটবর্তী হওয়া। যেহেতু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন হয় তাই একে কুরবানী বলা হয়। শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট কতিপয় হালাল প্রাণীকে জিলহজ্ব মাসের  ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আল্লাহ তায়ালার নিকট্য অর্জনের জন্য উৎসর্গ করায় কুরবানী বলে।

কুরবানীর তাৎপর্য

আল্লাহ তাআলা সকল নবীর উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান দান করেছিলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ  فَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَلَہٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ  وَبَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ ۙ

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও; (সূরা হাজ্জ্ব ২২:৩৪)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা স্পষ্ট ভাবে জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছেন। মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কোরবানি আদম (আঃ) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। যেমন কুরআনে এসেছে

وَاتۡلُ عَلَیۡہِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِہِمَا وَلَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰہُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ

আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা ভয়েই কিছু উৎসর্গ নিবেদন করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনের গৃহীত হয়নি। সে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। সে বললঃ আল্লাহ ধর্মভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন। (সূরা মায়েদাহ ৫:২৭)

আদম (আঃ) এর দুই পুত্রের একজনের নাম ছিল হাবিল। সে মনের আগ্রহ সহকারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি কুরবানী করেছিল। অপর ব্যক্তির নাম ছিল কাবিল।  সে অবহেলার সাথে কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী স্বরূপ পেশ করলো। হাবিলের কুরবানী আকাশ থেকে জ্বালিয়ে গেল।  এটাকে কবুল হওয়ার আলামত মনে করা হতো।  অপরদিকে কাবিলের খাদ্যশস্য আগুন স্পর্শ করল না। আর তা ছিল কবুল না হওয়ার আলামত। মূলত তাকওয়া ব্যতীত কারো কোরবানি কবুল হয় না। আল্লাহ তাআলা দামি, সুন্দর ও বড় পশু চান না, বরং তিনি চান বান্দার তাকওয়া ও ইখলাস। মহান আল্লাহ বলেন,

لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ لُحُوۡمُہَا وَلَا دِمَآؤُہَا وَلٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَہَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ ؕ وَبَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (সূরা হাজ্জ্ব ২২:৩৭)

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ أُسَامَةَ، - وَهُوَ ابْنُ زَيْدٍ - أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ، مَوْلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ يَقُولُ سَمِعْتُ أَبَا، هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ فَذَكَرَ نَحْوَ حَدِيثِ دَاوُدَ وَزَادَ وَنَقَصَ وَمِمَّا زَادَ فِيهِ ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى أَجْسَادِكُمْ وَلاَ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ ‏"‏ ‏.‏ وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ إِلَى صَدْرِهِ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:  এরপর উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ দাউদ-এর হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। তবে এ বর্ণনায় তিনি সামান্য কম-বেশি করেছেন। তারা উভয়ে যতটুকু বাড়িয়ে বলেছেন, তা হচ্ছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের দেহকায় ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। (এ বলে) তিনি তাঁর আঙ্গুলের মাধ্যমে স্বীয় বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৩৬, ই.ফা. ৬৩১০, ই.সে. ৬৩৫৯)

সুতরাং আমাদের কাজকর্ম, জীবন মৃত্যু তথা ইমান আক্বিদা ইত্যাদি যদি আল্লাহর বিধান মত না হয়, তবে আমাদের কোরবানি তাৎপর্যহীন হয়ে যায় এবং কুরবানী করার যে দোয়া পাঠ করা হয় তা মূল্যহীন হয়ে যায়। কারণ কোরবানি করার সময় কোরআনের যে আয়াতটি পাঠ করা হয়। তা হল,

قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَنُسُکِیۡ وَمَحۡیَایَ وَمَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ  لَا شَرِیۡکَ لَہٗ ۚ وَبِذٰلِکَ اُمِرۡتُ وَاَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম ৬:১৬২-১৬৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَانۡحَرۡ ؕ

অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (সূরা কাওসার ১০৮:২)

কুরবানী প্রত্যেক নবীর আমলে ছিল। অবশ্য বিভিন্ন নবীর শরীয়তে কোরবানির রীতিনীতি ভিন্ন ছিল।

وَلِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ  فَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَلَہٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ  وَبَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ ۙ

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও; (সূরা হাজ্জ্ব ২২:৩৪)

কুরআনের বর্ণনায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ইতিহাস

নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর নবুয়ত পাওয়ার পর দীর্ঘজীবন অতিবাহিত হল কোন সন্তানের মুখ দেখেননি।  তার জীবনের বৃদ্ধ বয়সে মহান আল্লাহ তাকে পুত্র সন্তান দিলেন। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হলো এক নতুন ঘটনার। পবিত্র কুরআনের আলোকে,

رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর।

فَبَشَّرۡنٰہُ بِغُلٰمٍ حَلِیۡمٍ

সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَہُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ

অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।

فَلَمَّاۤ اَسۡلَمَا وَتَلَّہٗ لِلۡجَبِیۡنِ ۚ

যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।

وَنَادَیۡنٰہُ اَنۡ یّٰۤاِبۡرٰہِیۡمُ ۙ

তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,

قَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ

তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

اِنَّ ہٰذَا لَہُوَ الۡبَلٰٓـؤُا الۡمُبِیۡنُ

নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।

وَفَدَیۡنٰہُ بِذِبۡحٍ عَظِیۡمٍ

আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।

وَتَرَکۡنَا عَلَیۡہِ فِی الۡاٰخِرِیۡنَ ۖ

আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে,

سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰہِیۡمَ

ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।

کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ

এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। (সূরা সাফাফাত ৩৭:১০০-১১০)

এখানে একটি বড় কোরবানির বিনিময়ে বলতে জান্নাতি দুম্বা বা ভেড়া বোঝানো হয়েছে। বড় কোরবানি বলার আরো একটি কারণ, এ তারিখে সারা দুনিয়ার সমস্ত মুমিন মুসলিমরা পশু কোরবানি করবে এবং বিশ্বস্ততা ও প্রাণ উৎসর্গিতার স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করতে থাকবে। নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসমাইলের (আঃ) বিনিময় যে ভেড়াটি জবাই করা হয়েছিল তার সিং কাবা ঘরে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর তত্ত্বাবধানে ছিল। পরবর্তী সময়ে উমাইয়া শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন কাবা শরীফে ইবনে জুবায়ের (রাঃ) কে অবরোধ করে এবং কাবাঘর ভেঙ্গে ফেলে তখন এ শিং নষ্ট হয়ে যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আমের শাবী উভয়ই এ মর্মে সাক্ষ্য দিলেন যেতারা নিজেরা কাবাঘরে এ শিং দেখেছেন (তাফসিরে ইবনে কাসীর)

যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে ততদিন মুসলমানদের মধ্যে কুরবানীর এ বিরাট স্মৃতি ইসমাইল (আঃ) এর ফিদিয়া রূপে অক্ষুন্ন থাকবে কুরবানীর এ অপরিবর্তনীয় সুন্নতের প্রবর্তক ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)

হাদিসের আলোকে কুরবানীর ফজিলত

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ‏"‏ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏"‏ بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ‏"‏ ‏.‏

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিহ্য) তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭)

ফুটনোটঃ আহমাদ ১৮৭৯৭, মিশকাত ১৪৭৬। তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবী আইযুল্লাহ সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আদী আল জুরজানী বলেন, তার হাদিস বিশুদ্ধ নয়। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি কুফরী নয় এমন কওলী বা আমালী কোন ফিসক এর সাথে জড়িত। আবু যুরআহ আর-রাযী তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম বুখারী বলেন, তার হাদিস বিশুদ্ধ নয়। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩০৬৯, ১৪/৯৩ নং পৃষ্ঠা) ২. আবু দাউদ ইবনুল হারিস সম্পর্কে আবু বিশর আদ-দাওলাবী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইমাম তিরমিযি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। আহমাদ বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে অভিযুক্ত, তার থেকে কোন হাদিস গ্রহন করা যাবে না। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইমাম বুখারী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৪৬৬, ৩০/১০ নং পৃষ্ঠা)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَا عَمِلَ ابْنُ ادَمَ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللّهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ وَإِنَّهُ لَيُؤْتى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلَافِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ بِالْأَرْضِ فَطِيْبُوْا بِهَا نَفْسًا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : কুরবানীর দিনে আদাম সস্তানগণ এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার (অর্থাৎ কুরবানী করা) চেয়ে বেশী প্রিয় হতে পারে। কুরবানীর সকল পশুর শিং, পশম, এদের ক্ষুরসহ ক্বিয়ামাতের দিন (কুরবানীকারীর নেকীর পাল্লায়) এসে হাজির হবে। কুরবানীর পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহর নিকট মর্যাদাকর স্থানে পৌঁছে যায়।  তাই তোমরা সানন্দে কুরবানী করবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ,মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৭০)

সাত (০৭) শরিকে কুরবানী

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ، عَبْدِ اللَّهِ قَالَ كُنَّا نَتَمَتَّعُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْعُمْرَةِ فَنَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ نَشْتَرِكُ فِيهَا ‏.

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ করেছি। আমরা সাত শারীকে মিলে একটি গরু কুরবানী করেছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩০৮১, ই.ফা. ৩০৫৬, ই.সে. ৩০৫৩)

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نَحَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَعَائِشَةَ وَابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ جَابِرٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ يَرَوْنَ الْجَزُورَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ ‏.‏ وَرُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُورَ عَنْ عَشَرَةٍ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ إِسْحَاقَ وَاحْتَجَّ بِهَذَا الْحَدِيثِ ‏.‏ وَحَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ وَجْهٍ وَاحِدٍ ‏.‏

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হুদাইবিয়ার (সন্ধির) বছর একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উটও সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী করেছি। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৯০৪, ইবনু মা-জাহ ৩১৩২, মুসলিম)

ফুটনোটঃ ইবনু উমার, আবূ হুরাইরা, আইশা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করেছেন। একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি গুরুও সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী করাকে তারা জায়িয মনে করেন। এই অভিমত সুফিয়ান সাওরী, শাফিঈ ও আহমাদ (রহঃ)-এর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বরাতে বর্ণিত আছে যে, একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উট দশজনের পক্ষ হতে কুরবানী করা যায়। এই অভিমত ইসহাক (রহঃ)-এর। শুধুমাত্র একটি সূত্রেই আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি জেনেছি।

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِي الْحَسَنُ بْنُ مُسْلِمٍ وَعَبْدُ الْكَرِيمِ الْجَزَرِيُّ أَنَّ مُجَاهِدًا أَخْبَرَهُمَا أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى أَخْبَرَهُ أَنَّ عَلِيًّا أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَهُ أَنْ يَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ يَقْسِمَ بُدْنَهُ كُلَّهَا لُحُومَهَا وَجُلُودَهَا وَجِلاَلَهَا وَلاَ يُعْطِيَ فِي جِزَارَتِهَا شَيْئًا

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোশ্‌ত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং তা হতে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুই না দেয়া হয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭১৭, আঃপ্রঃ ১৫৯৯, ইঃফাঃ ১৬০৬)

কুরবানির পশুর বয়স

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : তোমরা (কুরবানীতে) মুসিন্নাহ্ ছাড়া কোন পশু যাবাহ করবে না। হ্যাঁ, যদি মুসিন্নাহ্ পাওয়া না যায় তবে দুম্বার জাযাআহ্ যাবাহ করতে পার। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৫৫, মুসলিম)

ফুটনোটঃ সহীহ : মুসলিম ১৯৬৩, আবূ দাঊদ ২৭৯৭, নাসায়ী ৪৩৭৮, ইবনু মাজাহ্ ৩১৪১, আহমাদ ১৪৩৪৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৯১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৫৩, ইরওয়া ১১৪৫। যদিও শায়খ সুনানের তাহ্ক্বীক্বে হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন।

পারিশ্রমিক হিসেবে কসাইকে কুরবানীর কিছু দেয়া যাবে না

حديث عَلِيٍّ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُ أَنْ يَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ، وَأَنْ يَقْسِمَ بُدْنَهُ كُلَّهَا لُحُومَهَا وَجُلُودَهَا وَجِلاَلَهَا وَلاَ يُعْطِيَ فِي جِزَارَتِهَا شَيْئًا

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিজের কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে আর এগুলোর সমুদয় গোশ্‌ত, চামড়া এবং পিঠের আবরণসমূহ বিতরণ করতে নির্দেশ দেন এবং তা হতে যেন কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুই না দেয়া হয়। (আল লুলু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ৮২৯, বুখারী পর্ব ২৫/১২১ হাঃ ১৭১৭, মুসলিম পর্ব ১৫/৬১ হাঃ ১৩১৭)

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: أَقَامَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّىْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেছেন। (আর এ দশ বছরই) তিনি একাধারে প্রতি বছর কুরবানী করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৭৫, তিরমিযী)

ফুটনোটঃ যঈফ : আত্ তিরমিযী ১৫০৭, আহমাদ ৪৯৫৫। কারণ এর সানাদে হাজ্জাজ বিন আরত্বত একজন মুদ্দালিস রাবী। তিনি عنعن সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

যবাই করার স্থান

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ يَذْبَحُ وَيَنْحَرُ بِالْمُصَلّى. رَوَاهُ البُخَارِيُّ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবাহ করতেন এবং নহর করতেন ঈদগাহের ময়দানে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৩৮, বুখারী)

ফুটনোটঃ সহীহ : বুখারী ৫৫৫২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১১৯।

عن عبد الله بن عمر: كانَ النَّبيُّ ﷺ يضحِّي بالمدينةِ بالجَزورِ أحيانًا وبالكَبشِ إذا لم يجِدْ جزورًا.ابن حجر العسقلاني (ت ٨٥٢)، فتح الباري لابن حجر ١٠‏/١٤ في إسناده عبد الله بن نافع وفيه مقال

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত, আল্লাহর নবী (সাঃ) মদিনা শরীফে সারা জীবন উট দ্বারা কোরবানি করতেন। আর তিনি উট না পেলে ছাগল দ্বারাই কুরবানী করতেন। (ইবনে মাজাহ)

কুরবানীর দিনের সুন্নত আমল

عن بريدة بن الحصيب الأسلمي: كان رسولُ اللهِ ﷺ لا يَغْدو يَومَ الفِطْرِ حتى يَأكُلَ، ولا يَأكُلُ يَومَ الأضْحى حتى يَرجِعَ، فيَأكُلَ مِن أُضحِيَّتِه..شعيب الأرنؤوط (ت ١٤٣٨)، تخريج المسند ٢٢٩٨٤  •  حسن  •  أخرجه الترمذي (٥٤٢)، وابن ماجه (١٧٥٦)، وأحمد (٢٢٩٨٤) واللفظ له  •  شرح رواية أخرى

বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বেরোতেন না, আর ঈদুল আযহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কোরবানির গোশত খেতেন। (মুসনাদে আহমাদ)

পশু জবাই করার সময়

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ  عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَإِنَّمَا ذَبَحَ لِنَفْسِهِ وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ وَأَصَابَ سُنَّةَ الْمُسْلِمِينَ

উক্ত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পূর্বে যবেহ করে, সে নিজের জন্য যবেহ করে। আর যে নামাযের পরে যবেহ করে, তার কুরবানী সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরীকার অনুসারী হয়। (বুখারী ৫৫৪৫-৫৫৪৬, মুসলিম ৫১৮১, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১১৮৩)

বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবর বলে জবাই

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: ضَحّى رَسُولُ اللّهِ ﷺ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ ذَبَحَهُمَا بِيَدِه وَسَمّى وَكَبَّرَ قَالَ: رَأَيْتُه وَاضِعًا قَدَمَه عَلى صِفَاحِهِمَا وَيَقُولُ: «بِسْمِ اللّهِ وَاللّهُ أكْبَرُ». مُتَّفقٌ عَلَيْهِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক কুরবানীর ঈদে ধূসর রং ও শিংওয়ালা দুটি দুম্বা কুরবানী করলেন। নিজ হাতে তিনি এ দুম্বা দুটিকে বিস্মিল্লা-হ ও আল্ল-হু আকবার বলে যাবাহ করলেন। আমি তাকেঁ (যাবাহ করার সময়) দুম্বা দুটির পাঁজরের উপর নিজের পা রেখে বিসমিল্লা-হি ওয়াল্ল-হু আকবার বলতে শুনেছি। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৫৩, বুখারী, মুসলিম)

ফুটনোটঃ সহীহ : বুখারী ৫৫৬৫, মুসলিম ১৯৬৬, আত্ তিরমিযী ১৪৯৪, নাসায়ী ৪৩৮৭, ইবনু মাজাহ্ ৩১২০, আহমাদ ১৩২০২, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৮৯৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১৬০, ইরওয়া ১১৩৭, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৫৪৩।

কুরবানী করার সময় প্রিয়নবী (সাঃ) যা পড়তেন

وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِىْ سَوَادٍ وَيَبْرَكُ فِي سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِىْ سَوَادٍ فَأُتِيَ بِه لِيُضَحِّيَ بِه قَالَ: «يَا عَائِشَةُ هَلُمِّي الْمُدْيَةَ» ثُمَّ قَالَ: «اشْحَذِيْهَا بِحَجَرٍ» فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَه ثُمَّ ذَبَحَه ثُمَّ قَالَ: «بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَالِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ» . ثُمَّ ضَحّى بِه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে বললেন যা কালোতে হাঁটে, কালোতে শোয়, কালোতে দেখে অর্থাৎ যে দুম্বার পা কালো, পেট কালো ও চোখ কালো। কুরবানী করার জন্য ঠিক এমনি একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাকে (রাঃ) বললেন, হে আয়িশাহ্! একটি ছুরি লও। এটিকে পাথরে ধাঁর করাও। আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি তাই করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছুরিটি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে ধরলেন। অতঃপর এটাকে পাঁজরের উপর শোয়ালেন এবং যাবাহ করতে করতে বললেন, আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি এ কুরবানীকে মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার এবং মুহাম্মাদের উম্মাতের পক্ষ হতে গ্রহণ করো। এরপর তিনি এ কুরবানী দ্বারা লোকদের সকালের খাবার খাইয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৫৪, মুসলিম)

ফুটনোটঃ সহীহ : মুসলিম ১৯৬৭, আবূ দাঊদ ২৭৯২, আহমাদ ২৪৪৯১, শারহু মাআনির আসার ৬২২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯০৪৬।

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: ذَبَحَ النَّبِيُّ ﷺ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ مَوْجَئَيْنِ فَلَمَّا وَجَّهَهُمَا قَالَ: «إِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ للَّذىْ فَطَرَ السَّموتِ وَالْأَرْضَ عَلى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيْفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِىْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذلِكَ أَمَرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ عَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِه بِسْمِ اللّهِ وَاللّهُ أَكْبَرُ ثُمَّ ذَبَحَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لِأَحْمَدَ وَأَبِي دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيِّ: ذَبَحَ بِيَدِه وَقَالَ: «بِسْمِ اللّهِ وَاللّهُ أَكْبَرُ اللّهُمَّ هذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِىْ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কুরবানীর দিনে দুটি ছাই রঙের শিংওয়ালা খাশী দুম্বা কুরবানী করলেন। ওদের ক্বিবলামুখী করে বললেন ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা আলা-মিল্লাতি ইবরা-হীমা হানীফাও্ ওয়ামা-আনা্- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন, লা-শারীকা লাহ্ ওয়াবিযা-লিকা আমারতু ওয়া আনা-মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা আন্ মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহী, বিসমিল্লা-হি ওয়াল্ল-হু আকবার বলে যাবাহ করতেন। (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী। কিন্তু আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী বণর্না করেছেন, নিজ হাতে যাবাহ করলেন এবং বললেন, বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্ল-হুমা হা-যা- আন্নী, ওয়া আম্মান লাম ইউযাহহি মিন উম্মাতী (অর্থাৎ হে আল্লাহ এ কুরবানী আমার পক্ষ থেকে কবূল করো। কবুল করো আমার উম্মাদগনণের মধ্য থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ হতে।)

(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৪৬১)

ফুটনোটঃ যঈফ : আবূ দাঊদ ২৭৯৫, ইবনু মাজাহ্ ৩১২১, আহমাদ ১৫০২২, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৫৪৪। সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১৮৪। কারণ এর সানাদে ইসমাঈল বিন আইয়্যাশ রয়েছে, যার শামীদের থেকে বর্ণিত যার হাদীসগুলো দুর্বল। আর এ বর্ণনাটি সেগুলোর অন্যতম। তারপরের আংশটুকু সহীহ। আবূ দাঊদ ২৮১০, আত্ তিরমিযী ১৫২১, আহমাদ ১৪৮৯৫।

কুরবানী না করার পরিণাম

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)

ফুটনোটঃ আহমাদ ৮০৭৪, তাখরিজুল মুশকিলাতুল ফিকর ১০২, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০৩। তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী যায়দ ইবনুল হুবাব সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। আলী ইবনুল মাদীনী ও উসমান বিন আবু শায়বাহ তাকে সিকাহ বলেছেন। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেছেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২০৯৫, ১০/৪০ নং পৃষ্ঠা) ২. আবদুল্লাহ বিন আয়্যাশ সম্পর্কে আবুল কাসিম বিন বিশকাওয়াল বলেন, তিনি প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু সাঈদ বিন ইউনুস আল-মিসরী বলেন, তিনি কুফুরী নয় এমন কওলী বা আমালী কোন ফিসক এর সাথে জড়িত। আহমাদ বিন শু'আয়ব আন-নাসায়ী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি সত্যবাদী তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সংমিশ্রণ করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৭২, ১৫/৪১০ নং পৃষ্ঠা)

কুরবানীর প্রাণশক্তি

প্রাক ইসলামী যুগে কুরবানী করার পর তার গোশত বাইতুল্লাহে এনে রেখে দিত। তার রক্ত দেওয়ালে মেখে দিত। প্রকৃতপক্ষে রক্ত, গোস্ত এগুলো তো আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না। তার কাছে পৌঁছে কোরবানির আবেগ ও অনুভূতি। গোস্ত ও রক্তের নাম কুরবানী নয়।  বরং কোরবানি সে তত্ত্বেরই নাম যে, আমাদের সবকিছুই আল্লাহর জন্য এবং তাঁর পথে উৎসর্গ করার জন্য। কোরবানিকারি শুধুমাত্র পশুর গলায় ছুরি চালায় না বরং তার সকল কূপ্রবৃত্তির উপর ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করে। এ অনুভূতি ব্যতি রেখে যে কুরবানী করা হয় তা ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর সুন্নত নয়।

কোরবানির শিক্ষা

কুরবানী করা যেন আমাদের মাঝে গোস্ত খাওয়ার মানসিকতা না হয়। কেননা সকল কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কোরবানি করার সময় নিজের মনের কুপ্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিতে এবং শির্ক বিদআত মুক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সমাপনী

মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরবানী থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলনের মাধ্যমে দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি লাভ করার তৌফিক দান করুন।

খুতবাটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

ঈদুল আযহার খুতবা ডাউনলোড করুন

ঈদুল আযহার খুতবাটি এখানে পড়ুন

আরো পড়ুন

কুরবানী বিষয়ক আয়াত ও হাদিস