সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

স্বালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

স্বালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

ভূমিকাঃ ঈমান অনয়ন করার পর একজন ঈমানদারের প্রধান দায়িত্ব হল যথাসময়ে সালাত আদায় করা। সালাত আল্লাহর হুকুম। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সালাত কায়েমের জন্য আদেশ করেছেন। কুরআন ও হাদিসের আলোকে সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

আল কুরআনের আলোকে সালাত

আল কোরআনে সালাত আদায়ের বিষয় বারংবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধনী-দরিদ্র সকলের জন্যই সালাত আদায় করা ফরজ। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ

আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। (সূরা আল বাক্বারা ২:৪৩)

সালাত সাফল্যের চাবিকাঠি

সালাত কে সফলতার মূলমন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা মুমিনুনের মধ্যে বলেন,

قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ الَّذِیۡنَ ہُمۡ فِیۡ صَلَاتِہِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র; (সূরা আল মুমিনুন ২৩:১-২)

সলাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَاَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ ؕ وَلَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)

আল্লাহর স্মরণে সলাত

اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَاَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ

আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। (সূরা তোয়াহা ২০:১৪)

সলাত ইসলামে প্রবেশের প্রমাণ

فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ فَاِخۡوَانُکُمۡ فِی الدِّیۡنِ ؕ وَنُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ

অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। (সূরা আত তাওবা ৯:১১)

সলাত আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার মাধ্যম

وَلَقَدۡ اَخَذَ اللّٰہُ مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۚ وَبَعَثۡنَا مِنۡہُمُ اثۡنَیۡ عَشَرَ نَقِیۡبًا ؕ وَقَالَ اللّٰہُ اِنِّیۡ مَعَکُمۡ ؕ لَئِنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَیۡتُمُ الزَّکٰوۃَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِیۡ وَعَزَّرۡتُمُوۡہُمۡ وَاَقۡرَضۡتُمُ اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا لَّاُکَفِّرَنَّ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَلَاُدۡخِلَنَّکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۚ فَمَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ مِنۡکُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ

আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ বলে দিলেনঃ আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাঁদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋন দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দুর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নিঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। (সূরা আল মায়েদা ৫:১২)

সলাতে অমনোযোগিতা দুর্ভোগের মাধ্যম

فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ  الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنۡ صَلَاتِہِمۡ سَاہُوۡنَ

অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর; (সূরা আল মাউন ১০৭:৪-৫)

হাদিসে সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ فُرِضَتْ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ الصَّلَوَاتُ خَمْسِينَ ثُمَّ نُقِصَتْ حَتَّى جُعِلَتْ خَمْسًا ثُمَّ نُودِيَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ وَإِنَّ لَكَ بِهَذِهِ الْخَمْسِ خَمْسِينَ ‏.‏ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মিরাজের রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হল, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোন অদল বদল নাই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব রয়েছে।

ফুটনোটঃ এ অনুচ্ছেদে উবাদা ইবনু সামিত, তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ, আবূ কাতাদা, আবূ যার, মালিক ইবনু সাসাআ এবং আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ আনাসের হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২১৩)

وَعَن جَابِرٍ  قَالَ:سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ   صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  يَقُوْلُ   إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالكُفرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ رواه

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, মানুষ ও কুফরীর মধ্যে (পর্দা) হল, নামায ত্যাগ করা। (মুসলিম ২৫৬নং) (হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৬২৪)

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ اَنَّه كَتَبَ إِلى عُمَّالِه إِنَّ أَهَمَّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصَّلَاةُ مَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَفِظَ دِينَه وَمَنْ ضَيَّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ ثُمَّ كَتَبَ أَنْ صَلُّوا الظُّهْرَ اَنْ كَانَ الْفَيْءُ ذِرَاعًا إِلى أَنْ يَكُونَ ظِلُّ أَحَدِكُمْ مِثْلَه وَالْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرَّاكِبُ فَرْسَخَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً قَبْلَ مَغِيْبِ الشَّمْسِ وَالْمَغْرِبَ إِذَا غاب الشَّمْسُ وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشَّفَقُ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُه وَالصُّبْحَ وَالنُّجُومُ بَادِيَةٌ مُشْتَبِكَةٌ. رَوَاهُ مَالك

খলীফাহ্ উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তার শাসনকর্তাদের কাছে লিখলেন, আমার কাছে আপনাদের সকল কাজের মধ্যে সলাতই হল সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যে এর যথাযথ হিফাযাত করেছে ও তা রক্ষা করেছে, সে তার দীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা বিনষ্ট করেছে সে তা ছাড়া অপরগুলোর পক্ষে আরো বেশী বিনষ্টকারী প্রমাণিত হবে। অতঃপর তিনি লিখলেন, যুহরের সলাত আদায় করবে ছায়া এক বাহু ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে ছায়া এক মিসাল হওয়া পর্যন্ত (ছায়া আসলী বাদ দিয়ে)। সূর্য উপরে পরিষ্কার সাদা থাকা অবস্থায় আসরের সলাত আদায় করবে, যাতে একজন আরোহী সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দু বা তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করে যেতে পারে। মাগরিবের সলাত আদায় করবে সূর্য অস্ত যাবার পরপর। ইশার সলাত আদায় করবে শাফাক্ব দূর হয়ে যাবার পর থেকে শুরু করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তার চোখ না ঘুমাক যে এর আগে ঘুমাবে (তিনবার বললেন)। অতঃপর ফাজরের সলাত আদায় করবে যখন তারাসমূহ পরিষ্কার হয় ও চকমক করে।

ফুটনোটঃ যঈফ : মুয়াত্ত্বা মালিক ৬। কারণ রাবী নাফি উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে পাননি। তাই এর সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে যা হাদীস দুর্বল হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৮৫)

 عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ‏.‏

জারীর ইব্‌নু আবদুল্লাহ্‌ আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি সালাত কায়িম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার।

(৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫, ৭২০৪; মুসলিম ১/২৩ হাঃ ৫৬, আহমাদ ৩২৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৫) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭

সালাতের ফজিলত

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমুআহ হতে অপর জুমুআহ পর্যন্ত এবং এক রমযান হতে আরেক রমযান পর্যন্ত সব গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়, যদি কাবীরাহ গুনাহ সমূহ বেঁচে থাকা হয়।

ফুটনোটঃ সহীহ : মুসলিম ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৬৪)

وَعَنْ أَنَسٍ، اَنَّه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ صَلّى صَلَاتَنَا وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا وَأَكَلَ ذَبِيْحَتَنَا فَذلِكَ الْمُسْلِمُ الَّذِيْ لَهٗ ذِمَّةُ اللهِ وَذِمَّةُ رَسُولِه فَلَا تُخْفِرُوا اللهَ فِيْ ذِمَّتِه. رَوَاهُ البُخَارِيُّ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সলাত আদায় করে, আমাদের ক্বাবাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করে, আমাদের যাবাহকৃত পশুর গোশত খায়, সে এমন মুসলিম যার জন্য (জান-মাল, ইজ্জাত-সম্ভ্রম রক্ষায়) আল্লাহ ও রসূলের ওয়াদা রয়েছে। তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না।

ফুটনোটঃ সহীহ : বুখারী ৩৯১, নাসায়ী ৪৯৯৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৯৮, সহীহাহ্ ৩৫৬৫, সহীহ আল জামি ৬৩৫০।(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩)

যথাসময়ে সালাত আদায় করার ফজিলত

 عن عبد الله بن مسعود: يا رسولَ اللهِ أيُّ الأعمالِ أحبُّ إلى اللهِ  قال: صلِّ الصلاةَ لمواقيتِها قلت: ثم أيُّ قال: برُّ الوالدينِ قلت: ثم أيُّ قال: ثم الجهادُ في سبيلِ اللهِ قال: ولو استزدْته لزادنيأحمد شاكر (ت ١٣٧٧)، مسند أحمد ٦‏/٤١    إسناده صحيح    شرح رواية أخرى

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) হতে বর্ণিততিনি বলেন, আমি নবী কারীম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, সময় মত সালাত আদায় করা। এরপর কোন কাজটি উত্তমতিনি বললেনপিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। এরপর কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনআল্লাহর পথে জিহাদ করা। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাঃ) আমাকে এগুলোই বললেন। আমি আরো অধিক জিজ্ঞেস করলে তিনি আরো বলতেন। (মুসনাদে আহমাদ ১৩৭৭)

সালাত আদায়ের গুনাহ মাফ হয়

وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ  قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  يَقُوْلُ أَرَأيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرَاً بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ ؟  قَالُوْا : لاَ يَبْقَى مِنْ دَرنهِ شَيْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الخَطَايَا - متفقٌ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছেন, আচ্ছা তোমরা বল তো, যদি কারোর বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি? সাহাবীরা বললেন, (না,) কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ অক্তের নামাযের উদাহরণও সেইরূপ। এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন। (বুখারী ৫২৮নং, মুসলিম ১৫৫৪, তিরমিযী ২৮৬৮, নাসাঈ ৪৬২নং) (হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৬৩৯)

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللّهُ تَعَالى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَه وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَه عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَه وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَه. رَوَاهُ أَحْمَد وأَبُوْ دَاوٗدَ وروى مالك وَالنَّسَائِـيُِّ نحوه

উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, যা আল্লাহ তাআলা (বান্দার জন্য) ফারয্ করেছেন। যে ব্যক্তি এ সলাতের জন্য ভালভাবে উযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

ফুটনোটঃ সহীহ : আহমাদ ২২৭০৪, আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, নাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৭০)

সালাত রবের সাথে গোপন আলাপ

وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأى نُخَامَةً فِي القِبلَةِ، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُؤِيَ في وَجْهِهِ ؛ فَقَامَ فَحَكَّهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ: « إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ، وَإنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبيْنَ القِبلَةِ، فَلاَ يَبْزُقَنَّ أحَدُكُمْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ » ثُمَّ أخَذَ طَرَفَ رِدَائِهِ فَبَصَقَ فِيهِ، ثُمَّ رَدَّ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ، فَقَالَ: « أَوْ يَفْعَلُ هَكَذَا ». متفقٌ عَلَيْهِ

আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুথু দেখতে পেলেন এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারায় সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘষে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে কানে কানে (ফিসফিস করে কথা) বলে। আর তার প্রতিপালক তার ও কেবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু না ফেলে; বরং তার বামে অথবা পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুথু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তার এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ করে।’’

ফুটনোটঃ (সহীহুল বুখারী ৪০৫, ২৪১, ৪১২, ৪১৩, ৪১৭, ৫৩১, ৫৩২, ৮২২, ১২১৪, মুসলিম ৪৯৩, নাসায়ী ৩০৮, ৭২৮, আবূ দাউদ ৪৬০, ইবনু মাজাহ ৭৬২, ২০২৪, আহমাদ ১১৬৫১, ১২৩৯৮, ১২৫৪৭, ১২৫৭৯, ১২৬৫৩, ১২৮০৪, ১৩৪২৪, ১৩৪৭৭, ১৩৫৩৬, ১৩৬৮৫, দারেমী ৪১৩৯৬) (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৬৫৭)

জান্নাতের সুসংবাদ

وعَنْ أَبيْ مُوسى الأَشعَرِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ   صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ صَلَّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ -متفق عَلَيهِ

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা (অর্থাৎ ফজর ও আসরের) নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ৫৭৪, মুসলিম ১৪৭০) (হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৪৯৬)

সকাল বিকেল মসজিদে যাওয়ার ফজিলত

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ مَنْ غَدَا إِلَى المَسْجِدِ أَوْ رَاحَ أَعَدَّ اللهُ  لَهُ فِي الجَنَّةِ نُزُلاً كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ متفقٌ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তার জন্য আপ্যায়ন সামগ্রী জান্নাতের মধ্যে প্রস্তুত করেন। সে যতবার সকাল অথবা সন্ধ্যায় গমনাগমন করে, আল্লাহও তার জন্য ততবার আতিথেয়তার সামগ্রী প্রস্তুত করেন। (বুখারী ৬৬২, মুসলিম ১৫৫৬নং) (হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৬৬৫)

সমাপনী

পবিত্র কোরআনে সালাত প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদিসে সালাত আদায়ের গুরুত্ব এবং আদায় না করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের উচিত যথা সময়ে পরিপূর্ণ হক আদায় করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং অন্যদেরকে সালাত আদায়ের জন্য দাওয়াত দেয়া।

পিডিএফ ডাউনলোড করুন