যাকাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে| জুমুয়ার খুতবা

জুমুয়ার খুতবা

যাকাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।



যাকাত ইসলামের অতীত গুরুত্বপূর্ণ একটা রুকন বা স্তম্ভ। যাকাত আদায় না করা অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য।

الحمد لله رب العالمين، والعاقبه للمتقين، والصلاه والسلام على سيدالانبياء والمرسلين وعلى اله واصحابه اجمعين، اشهدان لااله الاالله واشهدان محمداعبده ورسوله

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আর আল্লাহ ভীরুদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবী (সাঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সমস্ত সাহাবাকেরামের প্রতি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَاسۡتَقِیۡمُوۡۤا اِلَیۡہِ وَاسۡتَغۡفِرُوۡہُ ؕ  وَوَیۡلٌ لِّلۡمُشۡرِکِیۡنَ ۙ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ

বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে।

(হা-মীম সেজদাহ্ -৪১:৬-৭ )

مَا سَلَکَکُمۡ فِیۡ سَقَر قَالُوۡا لَمۡ نَکُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ  ۙ وَلَمۡ نَکُ نُطۡعِمُ الۡمِسۡکِیۡنَ ۙ

বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না,  অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না,

(সুরা মুদ্দাসসির ৭৪: ৪২-৪৪)

فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ فَاِخۡوَانُکُمۡ فِی الدِّیۡنِ ؕ وَنُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ

অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি।

(তাওবা ৯: ১১)

যাকাত অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَالۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَفِی الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِیۡنَ وَفِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

(সুরা তাওবাহ ৯:৬০)

اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَلِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি- সামর্থবান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।

(সুরা হাজ্জ্ব ২২:৪১)

যাকাতের ধর্মীয় গুরুত্ব

وَجَعَلۡنٰہُمۡ اَئِمَّۃً یَّہۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا وَاَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡہِمۡ فِعۡلَ الۡخَیۡرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوۃِ وَاِیۡتَآءَ الزَّکٰوۃِ ۚ  وَکَانُوۡا لَنَا عٰبِدِیۡنَ ۚۙ

আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, নামায কায়েম করার এবং যাকাত দান করার। তাঁরা আমার এবাদতে ব্যাপৃত ছিল।

(সুরা আম্বিয়া ২১:৭৩)

হযরত ঈসমাইল আঃ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন

وَکَانَ یَاۡمُرُ اَہۡلَہٗ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ ۪ وَکَانَ عِنۡدَ رَبِّہٖ مَرۡضِیًّا

তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে পছন্দনীয় ছিলেন। (সুরা মারইয়াম ১৯:৫৫)

হযরত ঈসা আঃ এর উক্তি

وَّجَعَلَنِیۡ مُبٰرَکًا اَیۡنَ مَا کُنۡتُ ۪  وَاَوۡصٰنِیۡ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ مَا دُمۡتُ حَیًّا ۪ۖ

আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। (সুরা মারইয়াম ১৯:৩১)

যাকাত অস্বীকারকারী কাফির

الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ

যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে।

(হা মিম সাজদা ৪১:৭)

যাকাত ঈমানের পরীক্ষা

اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَاَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَاللّٰہُ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ

তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।

(সুরা তাগাবুন ৬৪:১৫)

জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَالرُّہۡبَانِ لَیَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَیَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ  وَالَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَالۡفِضَّۃَ وَلَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ  فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ۙ

হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।

(সুরা তাওবাহ ৯:৩৪)

যাকাতে দানে অন্তরের প্রশান্তি লাভ

وَ اکۡتُبۡ لَنَا فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃً  وَّ  فِی الۡاٰخِرَۃِ   اِنَّا ہُدۡنَاۤ   اِلَیۡکَ ؕ قَالَ عَذَابِیۡۤ  اُصِیۡبُ  بِہٖ  مَنۡ  اَشَآءُ ۚ وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ؕ فَسَاَکۡتُبُہَا لِلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِاٰیٰتِنَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ۚ

আর আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয় আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি বললেন, আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।

(সুরা আরাফ ৭:১৫৬)

যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে

خُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ صَدَقَۃً تُطَہِّرُہُمۡ وَتُزَکِّیۡہِمۡ بِہَا وَصَلِّ عَلَیۡہِمۡ ؕ اِنَّ صَلٰوتَکَ سَکَنٌ لَّہُمۡ ؕ وَاللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে। আর তুমি তাদের জন্য দোয়া কর, নিঃসন্দেহে তোমার দোয়া তাদের জন্য সান্ত্বনা স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ সবকিছুই শোনেন, জানেন।

(সুরা তাওবাহ ৯:১০৩)

যাকাত প্রদানে গুনাহ মাপ করা হয়

وَلَقَدۡ اَخَذَ اللّٰہُ مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۚ وَبَعَثۡنَا مِنۡہُمُ اثۡنَیۡ عَشَرَ نَقِیۡبًا ؕ وَقَالَ اللّٰہُ اِنِّیۡ مَعَکُمۡ ؕ لَئِنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَیۡتُمُ الزَّکٰوۃَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِیۡ وَعَزَّرۡتُمُوۡہُمۡ وَاَقۡرَضۡتُمُ اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا لَّاُکَفِّرَنَّ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَلَاُدۡخِلَنَّکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۚ فَمَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ مِنۡکُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ

আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ বলে দিলেনঃ আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাঁদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋন দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দুর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নিঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

(সুরা আল মায়িদাহ ৫:১২)

উপসংহার

পবিত্র কুরআনে সালাতের পর সব ছেয়ে যাকাতের কথাই বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্রতিটি মুমিন কে যাকাতের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া একান্ত আবশ্যক।

بارك الله لي ولكم في القرآن العظيم، ونفعني وإياكم بالآيات والذكر الحكيم،  أستغفر الله لي ولكم، ولسائر المسلمين من كل ذنب فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم.

মহান আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে আমাকে ও আপনাকে বরকত দান করুন এবং তাঁর আয়াত সমূহ ও শিক্ষণীয় বাণী দ্বারা উপকৃত করুন।আমি আল্লাহর কাছে আমার নিজের,আপনাদের এবং পৃথিবীর সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে সকল পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করছি কেননা তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়াময়।