ইসলামে পানাহারের আদব | জুমুয়ার খুতবা

ইসলামে পানাহারের আদব 

পবিত্র বস্তু দ্বারা আহার

فَکُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ حَلٰلًا طَیِّبًا ۪ وَّاشۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ

অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।

(আন নাহল 16:114)

 বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ قَالَ الْوَلِيدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنِي أَنَّه“ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ كَيْسَانَ أَنَّه“ سَمِعَ عُمَرَ بْنَ أَبِي سَلَمَةَ يَقُوْلُ كُنْتُ غُلاَمًا فِي حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا غُلاَمُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ.

উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহন করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা।

(আ.প্র. ৪৯৭৫, ই.ফা. ৪৮৭১) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৭৬

 খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ هِشَامٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الدَّسْتَوَائِيَّ - عَنْ بُدَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ امْرَأَةٍ، مِنْهُمْ يُقَالُ لَهَا أُمُّ كُلْثُومٍ عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ " .

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৭)

বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করলে শয়তান প্রশ্রয় পায় না

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ فَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللَّهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ " .

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যখন কোন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোর সুযোগই পেলে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৫

হালাল খাবার খাওয়া

یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَاعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ  اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ؕ

হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।

(আল মুমিনূন - 23:51)

ডান হাতে খাওয়া

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَابْنُ، أَبِي عُمَرَ - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ نُمَيْرٍ - قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عُبَيْدِ، اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ جَدِّهِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ " .

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাদ্য খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান  করে, সে যেন ডান হাতে পান করে  কারণ শাইতান বাম হাতে খায় ও পান করে।

(ই.ফা. ৫০৯৩, ই.সে. ৫১০৪) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৬০

একতাবদ্ধভাবে আহার করো

حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، قَالَ حَدَّثَنِي وَحْشِيُّ بْنُ حَرْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ أَصْحَابَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَأْكُلُ وَلاَ نَشْبَعُ . قَالَ " فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُونَ " . قَالُوا نَعَمْ . قَالَ " فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ إِذَا كُنْتَ فِي وَلِيمَةٍ فَوُضِعَ الْعَشَاءُ فَلاَ تَأْكُلْ حَتَّى يَأْذَنَ لَكَ صَاحِبُ الدَّارِ .

ওয়াহশী ইবনু হারব হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ একদা নাবী (সাঃ) এর সাহাবীগণ বললেনহে আল্লাহর রাসূল! আমরা খাবার খাই, কিন্ত পরিতৃপ্ত হতে পারি না।তিনি বললেনঃ হয়ত তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে খাও। তারা বললেনহাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা একত্রে আহার করো এবং খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করোতাহলে তোমাদের খাদ্যে বরকত দেয় হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনযদি তোমাকে কোথাও দাওয়াত করা হয় এবং খাবার সামনে রাখা হয় তাহলে বাড়ির কর্তা অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া শুরু করবে না। 

ইবনু মাজাহআহমাদ। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৪

খাবারের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা

مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ إِنْ اشْتَهَاه“ أَكَلَه“ وَإِنْ كَرِهَه“ تَرَكَهُ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন।

(আধুনিক প্রকাশনী- ৫০০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯০২) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪০৯

মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ أَبُو رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلاَ تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ إِنَّمَا يُعْرَفُ مِنْ حَدِيثِ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ . وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ وَالثَّوْرِيُّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ . وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ .

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্যের মাঝখানে বারকাত নাযিল হয়   অতএব তোমরা এর কিনারা হতে খাওয়া আরম্ভ কর, মাঝখান হতে খেও না 

সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (৩২৭৭) জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮০৫

হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا شَرِيكٌ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ الأَقْمَرِ ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَمَّا أَنَا , فَلا آكُلُ مُتَّكِئًا " .

আবু জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। 

ব্যাখ্যা : আমি হেলান দিয়ে আহার করি না এ উক্তিটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ জন্য বলেছেন, মানুষ যেন তার অনুসরণ করে।

শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ১০০

আঙ্গুল ও পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا بَهْزٌ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي فِي أَيَّتِهِنَّ الْبَرَكَةُ " .

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। 

(ই.ফা. ৫১৩৫, ই.সে. ৫১৪৬) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২০২

পেটের একভাগ খাদ্য এক ভাগ পানি ও এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখা

وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَامِ بنِ مَعدِ يكَرِبَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرّاً مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإنْ كانَ لاَ مَحالةَ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن

আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মাদীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়র জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’

(তিরমিযী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫) রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫২১

খাবার গ্রহণের শুরু ও শেষে হাত ধৌত করা

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنِ ابْنٍ لِكَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " يَأْكُلُ بِأَصَابِعِهِ , الثَّلاثِ وَيَلْعَقُهُنَّ " .

কাব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিন অঙ্গুলি দিয়ে আহার করতেন এবং তা চুষে নিতেন।

ব্যাখ্যাঃ সাধারণত আহারের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করতেন এবং খাওয়ার পর সেগুলো চেটে খেতেন। আঙ্গুল তিনটি হলো বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যম।

কাব ইবনে উজরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)  কে বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা এ আঙ্গুলত্রয় দ্বারা পানাহার করতে দেখেছি। আরো দেখেছি যে, তিনি হাত ধৌত করার আগে তিন আঙ্গুল চেটে খেয়েছেন। প্রথমে মধ্যমা অতঃপর তর্জনী অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুল চেটেছেন।

উল্লেখ্য যে, নবী (সঃ) এর সময় খেজুর, রুটি, গোশত অথবা তরকারীই ছিল প্রধান খাদ্য। এসব খাদ্য গ্রহণের সময় সব আঙ্গুল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বিধায় নবী (সঃ) তিন আঙ্গুল দ্বারা খেতেন। কিন্তু ভাত খাওয়ার সময় পাঁচ আঙ্গুলই ব্যবহার করতে হয়। বিধায় সৰ আঙ্গুলই চেটে খাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ আহার কর, তখন যেন আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।

মুসন্নাফে ইবনে আবু শায়বা, হা/২৪৯৫৫; মুসনাদুল বাযযার, হা/৩৮২০। সহীহ ইবনে হিব্বান,হা/৫২৫৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪০৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২১৬১। শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ১০৫

তিন শ্বাসে এ পানি পান করা

أَبُو عَاصِمٍ وَأَبُو نُعَيْمٍ قَالاَ حَدَّثَنَا عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ قَالَ أَخْبَرَنِي ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ أَنَسٌ يَتَنَفَّسُ فِي الإِنَاءِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ ثَلاَثًا.

সুমামা ইবনু আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্র হতে পানি পান করতেন। তিনি মনে করতেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। 

আধুনিক প্রকাশনী- ৫২২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৬)

তিন শ্বাসে পানি পান না করলে নিম্নে বর্ণিত রোগ ব্যাধি জন্ম নিতে পারেঃ

১। শ্বাসনালীতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।

২। এমন বিঘ্নতা অধিক হলে মাথার খুলির ভিতর চাপ পড়ে। কারণ পানির শিরাসমূহ মাথার পর্দার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আবার মাথার ভিতর ফ্লয়েড আছে যার সম্পর্ক থাকে পানির সাথে। যদি চুষে বা ধীরে ধীরে পানি পান করা হয় তবে বিপদ ও ক্ষতিকর প্রভাব কখনও মাথার উপর পড়ে না।

৩। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পানি বেশী পরমিাণ জমা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়। যথা পানি যখন ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে তখন উপর থেকে চাপ পড়লে হার্ট ও লান্সের ক্ষতি হয়। ডান দিক থেকে চাপ হলে যকৃত এবং বাম থেকে চাপ পড়লে নাড়ি-ভূড়ি উল্টেপাল্টে যায়, এভাবে নানাবিধ ক্ষতি হয়।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩১

পানির পাত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস না ছাড়া  

أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ عَنْ يَحْيٰى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ وَإِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ ذَكَرَه“ بِيَمِينِه„ وَإِذَا تَمَسَّحَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ.

আবদুল্লাহ্‌র পিতা আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন পানি পান করবে সে যেন তখন পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে। আর তোমাদের কেউ যখন প্রস্রাব করে, সে যেন ডান হাতে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে এবং তোমাদের কেউ যখন শৌচ কার্য করে তখন সে যেন ডান হাতে তা না করে। 

(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১১৫)

ফুটনোটঃ

হাদীসে পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতইনা সূক্ষ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এর কারণ হল, পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ত্যাগ করলে যে কোন মুহূর্তে পানি শ্বাসনালীর মধ্যে প্রবেশ করে শ্বাস আদান-প্রদানে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপভাবে নাকের নালীর মধ্যে পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে নাক ও মাথার পর্দার মধ্যে ফুলা ধরতে পারে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৩০

খাবার শেষে দোয়া পড়া

وَعَن مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « مَنْ أكَلَ طَعَامَاً، فَقَالَ: الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن »

মুআয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দোআ পড়বেঃ- আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী  অলা ক্বুউওয়াহ। (অর্থাৎ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’

ফুটনোটঃ

( আবূ দাউদ  ৪২০৩, দারেমী ২৬৯০) রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৭৩৯

 খুতবাটি পিডিএফ ডাউনলোড করুন।