আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে। লেখকঃ শাকের হোসাইন শিবলী। প্রকাশনীঃ আল-এছহাক প্রকাশনী |
মুক্তিযুদ্ধকালীন আলেমদের ভূমিকা কি ছিল তা নিয়ে বিস্তর লেখা। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে ইসলাম কে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি দেখার একটি জোর প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু আসলেই কি বাংলাদেশের আলেম সমাজ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন? নাকি তাদের কে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে? এই চরম সত্যকে উপজীব্য করেই বইটি এগিয়েছে। বইটিতে এক ঐতিহাসিক সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আলেমদের ভূমিকা। প্রসঙ্গত কিছু নামধারী ইতিহাসবিদ এর কাহিনিও উঠে এসেছে। যারা ইতিহাস কে নিজের বাপদাদার সম্পদ মনে করে থাকে। আসলে বাঙালি দের এই বিষয়টি জানা উচিত।
বই থেকে
নেওয়া,
একাত্তরের দিনগুলোতে
তিনি পুরো উত্তর বঙ্গ ঘুরে বেড়ান। বিভিন্ন কৌশলে মানুষকে যুদ্ধের প্রতি উৎসাহিত করেন।
বাড়ি বাড়ি যান। মিটিং করেন। বুঝান। দেশ স্বাধীন করতে হবে। অস্ত্র ধরতে হবে। এর কোন
বিকল্প নেই। তার সে আহ্বানে একটা সাড়া পড়ে যায় উত্তরবঙ্গে। প্রচুর লোকের সমাগম ঘটতে
থাকে প্রতিটি মিটিংয়ে। আ,লীগের সাবেক তথ্য
প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদও উপস্থিত ছিলেন পাবনার বেড়ায় আয়োজিত এক মিটিং-এ। তিনি
জনগণকে যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে ট্রেনিং-এর জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠিয়ে
দিতেন। তাই ধীরে ধীরে পাকহানাদারদের কাছে মাওলানা তর্কবাগীশ একটি মূর্তিমান আতংক হয়ে
ওঠেন। পাকসৈন্য হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। বাড়িতে হানা দেয়। তাকে না পেয়ে তার
বাড়িঘর জ্বালিয়ে ছাই বানিয়ে ফেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তখন তার দু'শ বছরের পুরনো বাড়ির সঙ্গে ইতিহাসের শত শত উপাদান তারা জ্বালিয়ে
দেয়। ২৫ খণ্ডের একটি ইসলামের ইতিহাস ছিল। যে বইটি লিখেছিলেন তর্কবাগীশের দাদা নিজে। সংগ্রহে থাকা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার
আল-কোরআন। মাওলানা তর্কবাগীশের অবস্থান একবার আর্মিরা জেনে ফেলে। তিনি চলনবিলে আছেন।
সঙ্গে তার মেজ ছেলে হাসু। আর্মিরা সংবাদ পাওয়া মাত্র তাদেরকে ঘিরে ফেলে। শ'য়ে শ'য়ে আর্মি। হাসু
যখন আর্মিদের উপস্থিতি টের পেলেন চুপি চুপি অস্ত্রের ব্যাগটা এক বাড়ির মুরগির খোয়াড়ে
লুকিয়ে ফেলেন। তিনি নিজেও আত্মগোপন করেন এক জঙ্গলে। আর্মিরা আস্তে আস্তে মাওলানা তর্কবাগীশের
কাছাকাছি চলে আসে। আর্মি অফিসার তর্কবাগীশকে দেখেই ঘাবড়ে যায় । বেশ উচা, লম্বা, স্বাস্থ্যবান। মুখ
ভরা সফেদ চাপদাড়ি, ফর্সা-দীপ্তিময়
উজ্জ্বল চেহারা দেখে মনে হয় ফেরেশতা। আর্মি অফিসার যখন তার পরিচয় জানল, তিনি পাকিস্তান মাখাদা শরীফের পীর সাহেবের আত্মীয়, পীর ভাই। আরো বেশি দুর্বল হয়ে গেল। বলল, হুজুর আপনার জন্য আমরা কী করতে পারি? হেলিকপ্টার আনি, আপনাকে বাড়িতে বা শহরে পৌছে দেই? মাওলানা তর্কবাগীশ বললেন- না, কিছু লাগবে না আমার।
আমি চাই,
তোমরা এলাকা ছেড়ে চলে যাও, এটাই সবচেয়ে বড় খেদমত হবে।মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ
একাত্তরে মাওলানা
তর্কবাগীশের গ্রামের বাড়িসহ ঢাকার ৩০ বনগ্রাম লেনের বাড়িটিও ধ্বংস হয় পাকিস্তানিদের
হাতে। স্বাধীনতার পর অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম তর্কবাগীশকে বলেন, 'আপনার দু'টি বাড়িই তো শেষ
হয়ে গেছে, কী আর করা বঙ্গভবনে উঠুন পরিবার নিয়ে।
তখন জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গভবনেই অবস্থান করেন মাওলানা তর্কবাগীশ। পরবর্তীতে
এমপি'র বেতন দিয়ে গ্রাম লেনের বাড়িটি মেরামত করে নিজ বাড়িতে ওঠেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পরিষদের তিনি প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। '৭৫-এ বাকশাল গঠনের মাধ্যমে শেখ মুজিব এদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা
কায়েম করে। শেখ মুজিবের এ প্রদক্ষেপ ছিল জাতির জন্য এক বেদনার কারণ। মাওলানা তর্কবাগীশ
বাকশালের ঘোর বিরোধিতা করেন। এতে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। পরে '৭৬-এর অক্টোবরে তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গণ-আজাদী লীগ' । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দলেরই সভাপতি ছিলেন। শাসকশ্রেণীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে
তিনি সোচ্চার ছিলেন সব সময়ই। সংকোচনহীন সত্য বলতেন। দেশকে ভালোবাসতেন, তার ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না। আজকাল যে বড়ই অভাব একজন নিখাদ
দেশপ্রেমিকের। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট পরপারে পারি জমান।
(আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে।
পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪)
বইয়ের পেছনের কথা,
শাকের হোসাইন শিবলি
মূলত ফিচার সাংবাদিক। দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে কাজ করতে গিয়ে ‘আলেম
মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে' শিরোনামে লেখেন এক অসাধারণ ফিচার।
চারদিক থেকে প্রশংসা আসতে থাকে। এরপর এরকমই আরেকটি লেখা তৈরি করেন। কিন্তু দলীয়ভাবে
অন্ধ কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি সুদৃষ্টিতে নেয়নি। লেখককে ডেকে নিয়ে বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করেন-
আলেম মুক্তিযোদ্ধা আবার কী জিনিস? এ অপরাধে তার চাকরিও খেয়ে ফেলেন। লেখকের ভেতর জেদ চেপে বসে, এর শেষ তিনি দেখে নেবেন। এরপর তিনি দৈনিকগুলোতে আলেম মুক্তিযোদ্ধার
খোঁজে টাইটেল করে বিজ্ঞাপন দেন। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা
যোগাযোগ করতে থাকেন তার সঙ্গে। লেখক টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি
জেলা ঘুরে ঘুরে সেসব মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাপ্রেমীকে খুঁজে বের করেছেন, ইতিপূর্বে যাদের কথা কোনো মাধ্যমে উঠে আসেনি। আসতে দেয়া হয়নি।
আবার মওলানা ভাসানী ও তর্কবাগীশের মতো জাতীয় নেতাদের চেপে যাওয়া ইতিহাসকেও তুলে এনেছেন
খুবই বিশ্বস্ত অবয়বে। মোটকথা, কালের খড়স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন যারা, শিকলবন্দি হতে চলেছিল যাদের অবদান, স্বীকৃতি; তাদের অঙ্কুর থেকে বের করে এনে পাদপ্রদীপের আলোয় প্রজ্বলিত করা হয়েছে এ গ্রন্থে।
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস রচনায় এ গ্রন্থ অসামান্য অবদান রাখবে
একথা বলা যায় নির্দ্বিধায়।
বই সম্পর্কে |
|
নাম |
আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে |
লেখক |
শাকের হোসাইন শিবলি |
প্রকাশনী |
আল-এছহাক প্রকাশনী |
ISBN |
9847009400056 |
ভাষা |
বাংলা |
অনলাইনে কিনুন
রকমারী | ইসলামী বই | রুহামা শপ | ইনসাফী
...
একাত্তরের চেপে রাখা ইতিহাস আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে pdf download আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে, একাত্তরের চেপে রাখা ইতিহাস Pdf Download আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে. লেখকঃ শাকের হোসাইন শিবলি. প্রকাশনীঃ আল-এছহাক প্রকাশনী, alem muktijoddhar khoje, একুশের মাওলানারা, শাকের হোসাইন শিবলি, Ekattorer Birjod ha: Khetab Pawa Muktijoddhader Birattagatha
...
অনলাইনে পড়ুন