সাদাকা শব্দের অর্থ দান করা আর ফিতর শব্দের অর্থ বঙ্গ বা অব্যাহতি। শরীয়তের পরিভাষায় সিয়াম পালনে ভুল ত্রুটি সংশোধন করার উদ্দেশ্যে ও গরিব মিসকিন কে ঈদের আনন্দে শরিক করার জন্য যে দান করা হয় তাকে সদকাতুল ফিতর বলে। হিজড়াদের দ্বিতীয় বৎসর ঈদুল ফিতরের দুইদিন পূর্বে ইসলামী সমাজে ফিতরা সর্বপ্রথম বাধ্যতামূলকভাবে প্রচলন করা হয়।
الحمد لله رب العالمين، والعاقبه للمتقين، والصلاه والسلام على سيدالانبياء والمرسلين وعلى اله واصحابه اجمعين، اشهدان لااله الاالله واشهدان محمداعبده ورسوله
সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আর আল্লাহ ভীরুদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম। দুরুদ ও সালাম প্রিয় নবী (সাঃ), তাঁর পরিবারবর্গ ও সমস্ত সাহাবাকেরামের প্রতি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
সাদাকাতুল ফিতর
عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِصَدَقَةِ الْفِطْرِ قَبْلَ أَنْ تُنْزَلَ الزَّكَاةُ فَلَمَّا نَزَلَتْ الزَّكَاةُ لَمْ يَأْمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا وَنَحْنُ نَفْعَلُهُ
কায়স বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। পরে যাকাতের হুকুম নাযিল হলে এ ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশও দেননি এবং নিষেধও করেননি। তবে আমরা পূর্বোক্ত নির্দেশ পালন করে যাচ্ছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮২৮)
ঈদের আনন্দকে সার্বজনীন করতে ফিতরার বিধান
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلَاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ
ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতর ফারয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারন দান হিসেবে গৃহীত হবে। (ইবনে মাজাহ ১৬০৯
ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ.
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, প্রত্যক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতের বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫০৩)
أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ.
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫০৬)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: فِىْ اخِرِ رَمَضَانَ أَخْرِجُوْا صَدَقَةَ صَوْمِكُمْ. فَرَضَ رَسُوْلُ اللّهِ ﷺ هذِهِ الصَّدَقَةَ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ شَعِيْرٍ أَوْ نِصْفَ صَاعٍ مِنْ قَمْحٍ عَلى كُلِّ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوْكٍ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثى صَغِيرٍ أَوْ كَبِيْرٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার তিনি রমাযানের শেষ দিকে লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা তোমাদের সিয়ামের সদাক্বাহ্ দাও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের প্রত্যেক মুসলিম, স্বাধীন-অধীন, গোলাম-বাঁদী, পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড় সকলের পক্ষে এক সা খেজুর ও যব অথবা এক সা-এর অর্ধেক গম সদাক্বাতুল ফিত্বর ফার্য করে দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী) (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৮১৭)
ফিতরা যাদের দিতে হবে
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَالۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَفِی الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِیۡنَ وَفِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য,
আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ( আত তাওবাহ্ - ৯ঃ৬০ )
মহান আল্লাহ তা’আলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে আমাকে ও আপনাকে বরকত দান
করুন এবং তাঁর আয়াত সমূহ ও শিক্ষণীয় বাণী দ্বারা উপকৃত করুন।আমি আল্লাহর কাছে আমার নিজের,আপনাদের এবং পৃথিবীর সকল মুসলমানের পক্ষ
থেকে সকল পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করছি কেননা তিনি ক্ষমাশীল এবং
দয়াময়।
Download
Word | PDF | PowerPoint