রামাদ্বান এর শিক্ষা এবং বাকী ১১ মাসের করণীয় | জুমুয়ার খুতবা

রামাদ্বান এর শিক্ষা এবং বাকী ১১ মাসের করণীয়

রামাদ্বান এর শিক্ষা এবং বাকী ১১ মাসের করণীয়

মাহে রামাদ্বান আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য একটি ট্রেইনিং পিরিয়ড। অর্থাৎ এই মাসে বান্দাহ আল্লাহর ইবাদত করার ট্রেইনিং গ্রহণ করে বাকি ১১ মাস সে অনুযায়ী চলবে। একজন মানুষ যখন রমাদ্বান অতিবাহিত হওয়ার পরেও রামাদ্বানের শিক্ষা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী বাকী সময় অতিবাহিত করে তখন বুঝতে হবে তার সিয়াম সাধনা যথার্থ হয়েছে।  

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।  (আল বাকারা – ২:১৮৫ )

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ)  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।  (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮)

রমাদ্বান এর শিক্ষা

১) যথাসময়ে সালাত আদায় করা

فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ قِیٰمًا وَّقُعُوۡدًا وَّعَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (আন নিসা ৪:১০৩)

২) অশ্লীলতা ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা

قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اللهُ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিস্‌কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৪)

৩) মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ

১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;

২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং

৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩)

৪) গীবত পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّلَا تَجَسَّسُوۡا وَلَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡہِ مَیۡتًا فَکَرِہۡتُمُوۡہُ ؕ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (আল হুজরাত ৪৯:১২)

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ ‏"‏ ‏.‏

আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি ! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের  দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৮০)

৫) প্রকাশ্যে গোপনে দান করা

اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَاِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَتُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَیُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (আল বাকারা ২:২৭১)

৬) অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَتَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَتُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ ؕ وَلَوۡ اٰمَنَ اَہۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ مِنۡہُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَاَکۡثَرُہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (আল ইমরান ৩:১১০)

৭) কুরআন তিলাওয়াত

اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰہُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ وَاِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتُہٗ زَادَتۡہُمۡ اِیۡمَانًا وَّعَلٰی رَبِّہِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ۚۖ

যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (আল আনফাল  ৮:২)

بارك الله لي ولكم في القرآن العظيم، ونفعني وإياكم بالآيات والذكر الحكيم،  أستغفر الله لي ولكم، ولسائر المسلمين من كل ذنب فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم.

মহান আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে আমাকে ও আপনাকে বরকত দান করুন এবং তাঁর আয়াত সমূহ ও শিক্ষণীয় বাণী দ্বারা উপকৃত করুন।আমি আল্লাহর কাছে আমার নিজের,আপনাদের এবং পৃথিবীর সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে সকল পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করছি কেননা তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়াময়।