সুন্নাত ও আধুনিক বিজ্ঞান | Sunnah and Modern Science

রাসূল (সাঃ) এর  সুন্নাত ও আধুনিক বিজ্ঞান , السنة النبوية والعلم الحديث للنبي صلى الله عليه وسلم , Sunnah and modern science of the Prophet (peace be upon him),
সুন্নাত ও আধুনিক বিজ্ঞান

দিন যত যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা মানুষের কল্যাণের জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলছেন। তবে মজার বিষয় হলো বিজ্ঞানীরা আধুনিক যুগে যা কেবল আবিষ্কার করছেন বিশ্বনবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশ বছর আগে সেগুলো উম্মতকে বাতলে দিয়েছেন। সেগুলোর উপর আমলের জোর তাগিদ দিয়েছেন। এ জন্যই তো আধুনিক এই যুগে রাসূলের সুন্নত গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন বস্তু আবিষ্কার করে চলছেন। কয়েকটি সূন্নাত নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ 

১। উযূ করার ফজিলত

সারাদিন নানা কাজ করার মাধ্যমে নানা জায়গায় নানা রকম বস্তুতে আমাদের হাত দিতে হয়। তখন আমাদের হাতে অগণিত অদৃশ্য জীবাণু-ভাইরাস লেগে থাকে। যার ভয়াবহতা বর্তমান covid-19 পরিস্থিতিতে মানুষ খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছে। বিশেষ করে আমাদের শরীরের যে অঙ্গগুলো উন্মুক্ত থাকে সেগুলোতেই নানা প্রকার রোগজীবাণু ভাইরাস লেগে যায়। কোন লোক যদি নিয়মিত অজু করে তাহলে ওযু করার মাধ্যমে তার উন্মুক্ত জায়গা গুলো যেমন হাত, চেহারা, পা পরিষ্কার হয়ে যায়। এবং অনেকাংশেই এর মাধ্যমে রোগজীবাণু থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর তাইতো প্রিয়নবী (সাঃ) সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকতেন এবং সাহাবাদের আদেশ করতেন।

عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ، قَالَ رَقِيتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ، فَتَوَضَّأَ فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ

নুআয়ম মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি উযূ করে বললেনঃ আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, উযূর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।

(মুসলিম ২/১২, হাঃ ২৪৬, আহমাদ ৯২০৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩৮)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৬

অন্য হাদিস শরিফে এসেছে,

حَدَّثَنِي الْبَرَاءُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا أَخَذْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ ثُمَّ قُلِ اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَهْبَةً وَرَغْبَةً إِلَيْكَ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ . فَإِنْ مُتَّ فِي لَيْلَتِكَ مُتَّ عَلَى الْفِطْرَةِ " . قَالَ فَرَدَّدْتُهُنَّ لأَسْتَذْكِرَهُ فَقُلْتُ آمَنْتُ بِرَسُولِكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ فَقَالَ " قُلْ آمَنْتُ بِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ " . قَالَ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنِ الْبَرَاءِ وَلاَ نَعْلَمُ فِي شَيْءٍ مِنَ الرِّوَايَاتِ ذُكِرَ الْوُضُوءُ إِلاَّ فِي هَذَا الْحَدِيثِ .

আল বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি শোয়ার জন্য বিছানায় যেতে চাও সে সময় নামাযের উযূর মত উযূ কর, অতঃপর তোমার ডান কাতে শয়ন কর, অতঃপর বলঃ হে আল্লাহ! আমার চেহারা আমি তোমার দিকে সোপর্দ করলাম, আমার সমস্ত বিষয় তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আশা ও ভয় নিয়ে তোমার দিকে আমার পিঠ সপে দিলাম, তোমার হতে (পালিয়ে) আশ্রয় নেয়ার এবং রক্ষা পাওয়ার তুমি ব্যতীত আর কোন জায়গা নেই। আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের উপর এবং তোমার পাঠানো নাবীর উপর। তারপর যদি ঐ রাতে তুমি মারা যাও, তাহলে দ্বীনের (ইসলামের) উপরই মৃত্যুবরণ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ দুআর বাক্যগুলো পুণরায় বললাম যাতে তা আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আমি তাতে যোগ করলাম, আমি তোমার পাঠানো রাসূলের উপর ঈমান আনলাম। তখন তিনি বললেনঃ তুমি বল, আমি তোমার পাঠানো নাবীর উপর ঈমান আনলাম

সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম (৩৩৯৪) নং পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৪

২। পানিতে নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা

গরম চা বা কফি জাতীয় পানীয় পান করার সময় আমরা সেটিকে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে থাকি। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে পানীয় দ্রব্য পান করার সময় ফুঁ দেয়ার কারণে আমাদের মুখ থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড সে পানীয়তে মিশে যায় এবং আমরা যখন সেটি পান করি তখন সে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পুনরায় আমাদের শরীরে এসে বিষক্রিয়া করে। এই তথ্য বিজ্ঞান বের করল কিছুদিন আগে অথচ আজ থেকে প্রায় ১৪০০ শত বছর আগে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম পানীয় দ্রব্য পান করার সময় ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫৩)। রাসূল (সাঃ) যদি সৃষ্টিকর্তার থেকে প্রেরিত রাসূল না হয়ে থাকতেন তাহলে কিভাবে জানতেন যে এর এভাবে পান করার দ্বারা মানুষের ক্ষতি হবে?

৩। লজ্জাস্থানে জীবাণুর বসবাস

মানুষের শরীরে যে পরিমাণ জীবাণু বসবাস করে তার বিরাট একটা অংশ মানুষের লজ্জা স্থানে বসবাস করে। তাই মানুষ সাধারণত ডান হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে না। কারণ ডান হাত দিয়ে মানুষ খাবার খায়। অথচ ডান হাত দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম অনেক আগেই উপদেশ দিয়ে গেছেন।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ، وَإِذَا أَتَى الْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ "‏‏.

আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরুষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দিয়ে যেন শৌচকার্য না করে।

(১৫৪, ৫৬৩০; মুসলিম ২/১৮, হাঃ ২৬৭, আহমাদ ২২৬২৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৫৫) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫৩

৪। দাঁড়িয়ে পান করা প্রসঙ্গে

আধুনিক বিজ্ঞান বলে, স্নায়বিক উত্তেজনার দিক খতিয়ে দেখলে বসে পানি পান করাই ভালো। চিকিৎসকদের মতে, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে স্নায়ু উত্তেজিত হয় ও বাড়ে রক্তচাপ। বেশিরভাগ সময়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। শরীরের ভিতরের ছাঁকনিগুলি কুঁচকে যায় ও নেফ্রনগুলো শরীর থেকে টক্সিন সরানোর সুযোগ পায় কম। তাই শরীরকে পরিশ্রুত করার কাজ বাধা পায়। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে ধাক্কা দেয়। পাচকরসের ক্ষরণ কমে হজমের সমস্যা দেখা যায়।

অথচ রাসূল (সাঃ) আজ থেকে অনেক আগেই দাঁড়িয়ে পানি পান করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত তথা নিষেধ করে গেছেন। হাদিসের ভাষায়,

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم زَجَرَ عَنِ الشُّرْبِ قَائِمًا .

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করা ব্যাপারে ধমক দিয়েছেন।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩৭/ পানীয় দ্রব্য (كتاب الأشربة), হাদিস নম্বরঃ ৫১০২, মুসলিম ৫১ (ইফা)

৫। মিসওয়াক করার উপকারিতা

দেড় হাজার বছর আগে যে কাজ স্বয়ং রাসূল (সা:) করে গিয়েছেন আজ বিজ্ঞান গবেষণা করে আমাদের সে তথ্য দিচ্ছে। তো আমাদের ভেবে দেখা উচিত সুন্নাত বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী না বিজ্ঞান সুন্নতের মুখাপেক্ষী?

গুরুনানক সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি সর্বদা হাতে মিসওয়াক রাখতেন এবং মিসওয়াক করতেন। তিনি বলতেন, হয়তো এ লাকড়ী গ্রহণ কর, নতুবা রোগকে বরণ কর। দেখুন কত সুন্দর কথা! তিনি বলেছেন, মিসওয়াক দ্বারা রোগ ব্যাধি দূরীভূত হয়। নতুবা অসুস্থ হওয়াটা স্বাভাবিক।

মেসওয়াকের ফজিলত সম্বলিত বহু হাদিস রয়েছে। তন্মেধ্যে কয়েটি তুলে ধরছে।

عن عائشة رضي الله عنها قالت :  قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "تفضل الصلاة التي يُستاك لها على الصلاة التي لا يستاك لها سبعين ضعفا

অর্থ: হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে নামাজের জন্য ওজুর সময় মেসওয়াক করবে তা ওই নামাজ অপেক্ষা সত্তরগুণ উত্তম যা মেসওয়াকবিহীন ওজু দ্বারা আদায় করা হয়েছে।

(আহমদ, বায়হাকি, মিশকতা পৃষ্ঠা ৪৫)

মিসওয়াকের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূল (সাঃ) অন্য হাদিস শরিফে বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ - وَفِي حَدِيثِ زُهَيْرٍ عَلَى أُمَّتِي - لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ " .

আবূ হুরাইরাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনদের জন্যে এবং যুহায়র-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে প্রত্যেক সলাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (ই.ফা. ৪৮০, ই.সে. ৪৯৬) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৭৭

৬। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকার প্রয়োজনীয়তা

আধুনিক বিজ্ঞানে পরিষ্কার থাকার উপর খুব বেশি জোর দিচ্ছে। অধিকাংশ রোগবালাই বর্তমানে অপরিষ্কার বা জীবাণূ থেকে বেঁচে না থাকার কারনে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান কভিড পরিস্থিতিতে নিজেকে নিরাপদ রাখার অন্যতম উপায় হল সকল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। মানুষের শরীর থেকে নির্গত মল-মূত্র অনেক জীবাণু বহন করে। খোলা যায়গায় কেউ মল-মূত্র ত্যাগ করলে তা থেকে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। এবং তা সমাজের অন্য মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ। কেউ নিজের মল-মূত্র থেকে ভালোভাবে বেঁচে না থাকলে অর্থাৎ মল-মূত্র ত্যাগ করার সময় সচেতন না থাকলে এবং সেগুলো গায়ে-জামায় লাগলে সেটাও ব্যক্তির জন্য ক্ষতির কারন। কিন্তু এইসব অপরিষ্কার ময়লা থেকে বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম অনেক আগেই আদেশ দিয়েছে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। পবিত্রতাকে ইমানের অঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর পবিত্রতার একটা প্রথম শর্ত হল নাপাক থেকে বেঁচে থাকা। অনেক মুসলমান দেখা যায় প্রস্রাব পায়খানা থেকে পুরোপুরিভাবে সতর্ক থাকে না।

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ   صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  قَالَ أَكْثَرُ عَذَابِ الْقَبْرِ فِي الْبَوْلِ

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অধিকাংশ কবরের আযাব প্রস্রাবের (ছিটা গায়ে লাগার) কারণে হবে। (আহমদ ৮৩৩১, ইবনে মাজাহ ৩৪৮, হকেম ৬৫৩, সহীহ তারগীব ১৫৩ নং)  হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৫৪২

৭। আঙ্গুল প্লেট চেটে খাওয়ার উপকারিতা

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে প্লেটে এবং আঙ্গুলে লেগে থাকা খাবারের অংশ খাবার হজম হওয়ার জন্য বেশ কার্যকর। কিন্তু ইসলাম অনেক আগেই এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছে। বাসন চেটে বা পরিষ্কার করে খাওয়া নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। এ সুন্নাতটা আরো অধিক পরিমাণে অবহেলার স্বীকার। এ সুন্নাতটাও আমাদের জীবিত করা দরকার।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৯৫)

وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ وَقَالَ " إِنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ فِي أَيِّهِ الْبَرَكَةُ " .

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুল ও বাসন চেটে খেতে নির্দেশ করেছেন। আর তিনি বলেছেন: (খাদ্যের) কোন অংশে বারাকাত আছে তা তোমরা জান না।

(ই.ফা. ৫১২৮, ই.সে. ৫১৩৯)

৮। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে, যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। আর এই মেলাটনিনই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে তাদের ধারণা, রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الْمِنْهَالِ، قَالَ انْطَلَقْتُ مَعَ أَبِي إِلَى أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ فَقَالَ لَهُ أَبِي حَدِّثْنَا كَيْفَ، كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الْمَكْتُوبَةَ قَالَ كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيرَ وَهْىَ الَّتِي تَدْعُونَهَا الأُولَى حِينَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ، وَيُصَلِّي الْعَصْرَ، ثُمَّ يَرْجِعُ أَحَدُنَا إِلَى أَهْلِهِ فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَالشَّمْسُ حَيَّةٌ، وَنَسِيتُ مَا قَالَ فِي الْمَغْرِبِ‏. قَالَ وَكَانَ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُؤَخِّرَ الْعِشَاءَ‏. قَالَ وَكَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَهَا وَالْحَدِيثَ بَعْدَهَا، وَكَانَ يَنْفَتِلُ مِنْ صَلاَةِ الْغَدَاةِ حِينَ يَعْرِفُ أَحَدُنَا جَلِيسَهُ، وَيَقْرَأُ مِنَ السِّتِّينَ إِلَى الْمِائَةِ‏.

আবূ মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারয সালাতসমূহ কোন সময় আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাকো, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর তিনি আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদীনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে আসতে পারতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। অতঃপর আবূ বারযা (রাঃ) বলেন, ইশার সালাত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। আর ইশার পূর্বে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন। আর এমন মুহূর্তে তিনি ফজরের সালাত শেষ করতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পাশ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনত পারত। এ সালাতে তিনি ষাট হতে একশত আয়াত তিলাওয়াত করতেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৯

৯। কম খাওয়ার উপকারীতা  

পেটপুরে খাওয়াটা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। বৈজ্ঞানিক মতে অতিরিক্ত খাবার যোগান শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে। অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। বেশি পরিমান খেলে শরীরে ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ধমনীতে রক্ত চলাচলে সমস্যা দেখা দেয় ওজন বেড়ে গেলে। হজম হবার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। খাবার ঠিক ভাবে হজম হয় না ফলে পাচনপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে না। ওজন বেড়ে গেলে খাবার শরীরের ভিতরে গিয়ে বিভাজিত হয় না ঠিকঠাক, সেই জন্য হজমের সমস্যা দেখা দেয়। মানবদেহের শক্তির মূল উৎস শর্করা, কার্বোহাইড্রেট, চিনি। কিন্তু অধিক মাত্রায় এগুলি শরীরে থাকলে শরীরে সমস্যা তৈরি হয়। কার্বোহাইড্রেট শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানের বেশি থাকলে শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাত অরিতিক্ত পরিমান খেলে দেহে শর্করা, চিনি, কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যায় ফলে নানারকম রোগ চলে আসে শরীরে।

অথচ আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে রাসূল (সাঃ) কম খাওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন,

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدَةُ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَإِنَّ الْكَافِرَ ـ أَوِ الْمُنَافِقَ فَلاَ أَدْرِي أَيَّهُمَا قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ ـ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ ‏"‏‏.‏ وَقَالَ ابْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ‏.‏

মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুমিন এক পেটে খায় আর কাফিব অথবা বলেছেন মুনাফিক। রাবী বলেন, এ দুটি কাজের মধ্যে আমার সন্দেহ আছে যে বর্ণনাকারী কোনটি বলেছেন। উবায়দুল্লাহ বলেনঃ সাত পেটে খায়। ইবনু বুকায়র বলেনঃ মালিক (রহঃ) নাফি (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সহিহ বুখারী (ইফা) ৫০০২