মহানবী (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী - A short biography of the Prophet (peace be upon him)

রাসুল (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী  سيرة مختصرة عن الرسول صلى الله عليه وسلم A short biography of the Prophet (peace be upon him)
রাসুল (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত (সাঃ) জন্ম ও ওফাতের স্মৃতিবিজড়িত দিন।

আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ভালোবেসে, পছন্দ করে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হিসেবে দুনিয়াতে তার প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কালের বিবর্তনে মানুষ হেদায়েতের পথ ভুলে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পশুত্বের পর্যায়ে নেমে আসে। মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও পণ্য সামগ্রীর মত বাজারে বিক্রি হতো।  নারী জাতি ছিল বিনোদনের উপকরণ। দিন রাতে সমান ভাবে চলতে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন ও মদ্যপান। বসতো  জুয়ার আসর। সামান্য বিষয় নিয়ে দীর্ঘকালব্যাপী লড়াই শুরু হতো।

এ অন্ধকার পুরীতে আলো জ্বালাতে, অশান্তির দাবানল নিভিয়ে দিতে, মানুষকে মানুষের মর্যাদার আসন দিতে, নারীজাতিকে সম্মানের আসনে বসাতে পৃথিবীতে আগমন করেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব রহমাতুল্লিল আলামিন।

জন্ম

৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে ১২-ই রবিউল আউয়াল মাসে রোজ সোমবার কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় বিশ্বশান্তির মহানায়ক সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক সমগ্র মানব জাতির নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা

মহানবী (সাঃ) এর ৬৩ বছর জীবনের বিভিন্ন পরিক্রমা

থেকে বছর বয়সঃ

জন্মের প্রথম পাঁচ দিন নিজ মাতার দুগ্ধপান এবং পরবর্তী দুই বছর বয়স পর্যন্ত আরবীয় বেদুইন মহিলা বিবি হালিমার একটি স্তন থেকে দুধ পান করতেন, অন্যটি তার দুধ ভাই আব্দুল্লাহ জন্য রেখে দিতেন। এতে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) এর চরিত্রে ইনসাফ ও ত্যাগের একটি অনুপম দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। বিবি হাওয়ার গৃহে প্রথম পাঁচটি বছর লালিত পালিত হয়।

৬ষ্ঠ বছর বয়সঃ

নানার বাড়ি মদিনা থেকে ফেরার পথে মাতার ইন্তেকাল হওয়ার মাধ্যমে তিনি এতিম হলেন।

৬ থেকে ৮ বছর বয়সঃ

৬ থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত দাদা আবদুল মুত্তালিব এর ইন্তেকাল এবং তার চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। তিনি চাচার অস্বচ্ছল পরিবারে মেষ-ছাগল চরাতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সাহায্য করতেন।

১২  বছর বয়সঃ

চাচার সাথে সিরিয়াতে বাণিজ্যের জন্য গমন করেন এবং শত্রুরা তার অনিষ্ট করতে পারেন পাদ্রী বুহাইরার এমন কথা মতে তিনি মক্কায় ফেরত আসলেন। 

১৪ বছর বয়সঃ

১৪ বছর বয়সে তিনি ওকাজ মেলায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী ফিজার যুদ্ধে (অন্যায় সমর) জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অবলোকন করেন এবং হিলফুল ফুজুল (শান্তি সংঘ) প্রতিষ্ঠা করেন। যার উদ্দেশ্য ছিলঃ

  • আর্তমানবতার সেবা
  •  অত্যাচারীকে প্রতিরোধ
  • অত্যাচারিতকে সাহায্য করা
  •  সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা

তিনি এতে সফল হন এবং কৈশোর বয়সে আলামিন উপাধি লাভ করেন।

২৪ বছর বয়সঃ

খাদিজার ব্যবসা-বাণিজ্য দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন এতে খাদিজা তার প্রতি মুগ্ধ হন।

২৫ বছর বয়সঃ

২৫ বছর বয়সে তিনি খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেন এবং চাচার সহায়তায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন খাদিজার বয়স ৪০ বছর ছিল।

২৬ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সঃ

কাবাঘর পূর্ননির্মাণ, হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করে সঙ্ঘাতময় অবস্থা থেকে মক্কাবাসীকে মুক্তিদান ও অন্যান্য সমাজ সংস্কারমূলক কাজ করেন।

৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সঃ

সমাজ চিন্তা ও জীবন জিজ্ঞাসা নিয়ে হেরা পর্বতে দেন মগ্ন থাকা অবস্থায় ওহী প্রাপ্ত হন। সূরা আলাকের থেকে আয়াত নাযিল হয়।

৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সঃ

গোপনে ইসলাম প্রচার। হযরত খাদিজা (রাঃ), হযরত আবুবকর (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ) সহ ৪০ জনের ইসলাম গ্রহণ।

৪৬ থেকে ৪৯ বছর বয়সঃ

প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার। হযরত হামজা (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ।

৫০ বছর বয়সঃ

মহানবী (সাঃ) এর শোকের বছর। চাচা আবু তালিব ও খাদিজার (রাঃ) ইন্তেকাল।

৫১ বছর বয়সঃ

মহানবীর সাল্লাহু সালাম তায়েফ গমন করেন এবং নির্যাতনের শিকার হন।

৫২ বছর বয়সঃ

মহানবী (সাঃ) কে সান্তনা দেওয়া এবং সাক্ষাত করে ধন্য করার জন্য আল্লাহ তাঁকে মিরাজে গমন করান এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হয়।

৫৩ থেকে ৫৪ বছর বয়সঃ

কুরাইশদের সীমাহীন অত্যাচারে মদিনা হিজরত ও ৪৭ টি ধারা সম্বলিত মদিনা সনদ। প্রথম লিখিত সংবিধান যাতে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তি সম্প্রীতি বিধান রয়েছে। যুদ্ধের আয়াত নাযিল। প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি।

৫৫ থেকে ৬০ বছর বয়সঃ

বদর, উহুদ, খন্দক, খয়বর, হুদায়বিয়ার সন্ধি সহ বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা। উহুদে দানদান মোবারক শহীদ হওয়া।

৬১ থেকে ৬২ বছর বয়সঃ

চৌদ্দশত সাহাবী নিয়ে বিনাবাধায় মক্কা বিজয় করেন। কাবা ঘর থেকে ৩৬০ টি মূর্তি উচ্ছেদ করেন এবং তখন হতে হজ্জ্ব ফরজ হয়।

৬৩ বছর বয়সঃ

১ লক্ষ ১৪ হাজার সাহাবী নিয়ে বিদায় হজ সম্পন্ন করে মদিনায় ফিরে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে জ্বর ও মাথা ব্যাথা বৃদ্ধি পায়। তার ১৪ দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ইন্তেকাল করেন।

রাসুল এর সন্তানাদিঃ

তিনি তিন পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।

যুদ্ধে অংশগ্রহণঃ

তিনি ছোট-বড় প্রায় ৮৫ টি যুদ্ধ পরিচালনা করেন। প্রায় ১৯ টি যুদ্ধের সেনাপতি দায়িত্ব পালন করেন।

উপসংহারঃ

কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা তাকে রহমাতুল্লিল আলামিন (সমগ্র জগতের রহমত), সাইয়েদুল মুরসালিন (সমস্ত নবীদের সরদার), উসওয়াতুন হাসানাহ (উত্তম আদর্শ ও চরিত্রের অধিকারী) বলে উল্লেখ করেছেন। দুনিয়াতে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সিরাজুম মুনিরা (হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রদীপ) হিসেবে।

তিনি সমাজ থেকে অন্যায়, অনাচার, অসত্য, অন্ধকার দূরীভূত করে সত্য-সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়ে গেছেন মানবজাতির জন্য। তার ৬৩ বছরে সংক্ষিপ্ত জীবনের অনুপম শিক্ষা ও জীবন আদর্শ আমাদের ধর্মীয়, পার্থিব ও সামরিক জীবনে অনুসরণের মাধ্যমে শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর (সাঃ) শিক্ষায় উদ্দীপ্ত হয়ে পরবর্তী দিনগুলো অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন।

পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন