কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে বান্দার হক্ব |
হাক্কুল ইবাদ বা
বান্দার হক্ব বলতে মানুষের প্রতি মানুষের সুনির্দিষ্ট কিছু অধিকার বা প্রাপ্যতা বুঝায়।
একজনের জন্য যা অধিকার বা প্রাপ্য অন্যজের জন্য সেটিই দায়িত্ব বা কর্তব্য। ইসলামে বান্দার
হক্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, বান্দার হক্ব সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে বান্দা ক্ষমা করা পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاعۡبُدُوا اللّٰہَ وَلَا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا
وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّبِذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنِ
وَالۡجَارِ ذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡجَارِ الۡجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ
وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ وَمَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ
مَنۡ کَانَ مُخۡتَالًا فَخُوۡرَا ۙ
আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয়
ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং
নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা নিসা ৪:৩৬)
বান্দাহর উল্লেখযোগ্য
কিছু অধিকার
১। বান্দার
রক্ত অপরের নিকট পবিত্র
এই বিষয়ে প্রিয়নবী
(সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم خَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ أَلاَ تَدْرُونَ أَيُّ يَوْمٍ هَذَا قَالُوا
اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ
اسْمِهِ فَقَالَ أَلَيْسَ بِيَوْمِ النَّحْرِ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ
قَالَ أَيُّ بَلَدٍ هَذَا أَلَيْسَتْ بِالْبَلْدَةِ الْحَرَامِ قُلْنَا بَلَى يَا
رَسُولَ اللهِ قَالَ فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ
وَأَبْشَارَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ
هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ
اللهُمَّ اشْهَدْ فَلْيُبَلِّغْ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَإِنَّهُ رُبَّ مُبَلِّغٍ
يُبَلِّغُهُ لِمَنْ هُوَ أَوْعَى لَهُ فَكَانَ كَذَلِكَ قَالَ لاَ تَرْجِعُوا
بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ
حُرِّقَ ابْنُ الْحَضْرَمِيِّ حِينَ حَرَّقَهُ جَارِيَةُ بْنُ قُدَامَةَ قَالَ
أَشْرِفُوا عَلَى أَبِي بَكْرَةَ فَقَالُوا هَذَا أَبُو بَكْرَةَ يَرَاكَ قَالَ
عَبْدُ الرَّحْمَنِ فَحَدَّثَتْنِي أُمِّي عَنْ أَبِي بَكْرَةَ أَنَّهُ قَالَ لَوْ
دَخَلُوا عَلَيَّ مَا بَهَشْتُ بِقَصَبَةٍ.
আবূ বাকরাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ (একবার) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি (নবী সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি জান
না আজ কোন্ দিন? তারা বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই এ সম্পর্কে বেশি জানেন। (বর্ণনাকারী বলেন)
এতে আমরা মনে করলাম হয়ত তিনি অন্য কোন নামে এ দিনটির নামকরণ করবেন। এরপর তিনি (নবী
সাঃ) বললেনঃ এটি কি ইয়াওমন নাহর (কুরবানীর দিন) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল।
এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন্ নগর? এটি হারাম নগর (সম্মানিত নগর) নয়? আমরা বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বললেন নিঃসন্দেহ তোমাদের এ নগরে, এ মাসের এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন হারাম, তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইয্যত ও চামড়া অপরের জন্য তেমনি হারাম। শোন! আমি কি তোমাদের
নিকট পৌঁছিয়েছি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থাক। (তারপর
তিনি বললেন) উপস্থিত ব্যক্তি যেন (আমার বাণী) অনুপস্থিতের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। কারণ অনেক
প্রচারক এমন লোকের নিকট (আমার বাণী) পৌঁছাবে যারা তার চেয়ে বেশি সংরক্ষণকারী হবে। আসলে
ব্যাপারটি তাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার পরে একে অন্যের
গর্দান উড়িয়ে কুফ্রীর দিকে ফিরে যেয়ো না। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৭৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৬৫৯৮)
যে দিন জারিয়্যাহ্ ইবনু কুদামাহ কর্তৃক আলা
ইবনু হাযরামীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, সেদিন জারিয়্যাহ্ তার বাহিনীকে বলেছিল, আবূ বাকরাহর
খবর নাও। তারা বলেছিল এই তো আবূ বকরাহ (রাঃ) আপনাকে দেখছেন। আবদুর রহমান বলেন, আমার মা আমার
কাছে বর্ণনা করেছেন আবূ বকরাহ (রাঃ) বলেছেন, (সেদিন) যদি তারা
আমার গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে আমি তাদেরকে একটি বাঁশের লাঠি নিক্ষেপ (প্রতিহত) করতাম
না। আবূ আবদুল্লাহ্ বলেন, হাদীসের ব্যবহৃত بَهَشْتُ শব্দের অর্থ
رميت অর্থাৎ আমি নিক্ষেপ করেছি।
ফুটনোটঃ আল্লাহর রসূলের
কথা কতই না সত্য। পরবর্তী লোকেরা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী এতই
সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করেছিল যে তাদের নিকট থেকেই মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ইত্যাদি
গ্রন্থের মাধ্যমে উম্মাতে মুসলিমার কাছে আল্লাহর রসূলের বাণীগুলো পৌঁছে গেছে।
অন্য হাদিসে রাসূল
(সাঃ) বলেন,
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ
أَبِيهِ، ذَكَرَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَعَدَ عَلَى بَعِيرِهِ،
وَأَمْسَكَ إِنْسَانٌ بِخِطَامِهِ ـ أَوْ بِزِمَامِهِ ـ قَالَ " أَىُّ
يَوْمٍ هَذَا ". فَسَكَتْنَا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ سِوَى
اسْمِهِ. قَالَ " أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ ". قُلْنَا
بَلَى. قَالَ " فَأَىُّ شَهْرٍ هَذَا ". فَسَكَتْنَا حَتَّى
ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ. فَقَالَ " أَلَيْسَ
بِذِي الْحِجَّةِ ". قُلْنَا بَلَى. قَالَ " فَإِنَّ
دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ
يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا. لِيُبَلِّغِ
الشَّاهِدُ الْغَائِبَ، فَإِنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أَنْ يُبَلِّغَ مَنْ هُوَ
أَوْعَى لَهُ مِنْهُ
আবূ বাক্রাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা উল্লেখ
করে বলেন,
(মিনায়) তিনি তাঁর উটের উপর উপবেশন করলেন। জনৈক
ব্যক্তি তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ এটা কোন্ দিন? আমরা চুপ করে রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এ দিনটির আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা
কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এটা কোন্ মাস? আমরা নীরব রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এর আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, জী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমাদের
রক্ত,
তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার
এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব কথা পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত
এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার
চেয়ে অধিক আয়ত্তে রাখতে পারবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ
৬৭)
২। বান্দার
ইজ্জত-সম্মান পরস্পরের নিকট পবিত্র
মহান আল্লাহর সৃষ্টি
সকল মানুষের মান-সম্মান পরস্পরের নিকট পবিত্র। চাই সে মুসলমান হোক বা অমুসলিম। যেমন
প্রিয়নবি (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا
وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُونُوا عِبَادَ
اللَّهِ إِخْوَانًا . الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ
يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ . التَّقْوَى هَا هُنَا " . وَيُشِيرُ
إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ " بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ
يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ
وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ "
আবূ হুরাইরাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি
করার উদ্দেশে আগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের
চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের
ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাক্ওয়া এখানে, এ কথা বলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার
তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের
জান-মাল ও ইয্যত-আবরু হারাম। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৩৫, ই.ফা. ৬৩০৯, ই.সে. ৬৩৫৮)
৩। কেয়ামতের
দিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায় হবে
এই বিষয়ে প্রিয়নবী
(সাঃ) বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: لَتُؤَدَّنَّ الْحُقُوقُ إِلٰى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتّٰى
يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَذَكَرَ حَدِيثَ جَابِرٍ: اتَّقَوُا الظُّلْمَ. فِىْبَابِ الْإِنْفَاقِ
রাবী [আবূ হুরায়রা
(রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ হাদিস নম্বরঃ ৫১২৮) তিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
১৫৮৮, সহীহুল জামি ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব
৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, আহমাদ
৭২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল
কুবরা ১১৮৩৯।
ব্যাখ্যাঃ (لَتُؤَدَّنَّ
الْحُقُوقُ إِلٰى أَهْلِهَا) এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামতের দিন
চতুষ্পদ জন্তুকেও হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। এ মর্মে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আরো
দলীল রয়েছে। যেমন- وَإِذَا الْوُحُوشُ حشرت তবে তাদেরকে মানুষ এবং জীন জাতির মতো হিসাবের
জন্য বা জবাবদিহিতার জন্য উপস্থিত করা হবে না, বরং বদলা নেয়ার
জন্য উপস্থিত করা হবে। তাদের কেউ কাউকে দুনিয়ার জীবনে শিং দ্বারা একটি আঘাত করে থাকলেও
সেই আঘাত ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই তাদের উঠানো হবে। প্রত্যেকটি প্রাণীর হক সঠিকভাবে আদায়
হয়ে যাবে। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৮২/৬০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী
৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪২০)
৪। অমুসলিমদের
হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে
শুধুমাত্র মুসলমান
বা ঈমানদারদের হক্বের দিকে সতর্ক হলেই হবেনা। অমুসলিমদের প্রতিও সদয় হতে হবে। তাদের
হক্ব নষ্ট করা যাবেনা। যেমন হাদিসে এসেছে,
مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله
عليه وسلم عَنْ آبَائِهِمْ دِنْيَةً عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
قَالَ " أَلاَ مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ
فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا
حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " .
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের কিছু সন্তান তাদের পিতা সূত্র থেকে বর্ণিতঃ যারা
ছিলেন পরস্পর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেনঃ সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির
উপর যুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে
বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব। (গায়াতুল
মারাম ৪৭১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩০৫২)
৫। বান্দার
হক বিনষ্টকারী কিয়ামতের দিন হতদরিদ্র হবে
যারা বান্দার হক্ব
বিনষ্ট করবে কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত শোচনীয়। যেমন রাসুল (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ " أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ " . قَالُوا
الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ . فَقَالَ "
إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ
وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا
وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا
مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ
أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ "
আবূ হুরাইরাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি বলতে পার অভাবী লোক কে? তাঁরা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সলাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে
ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক আমাল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমাল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক্ব তার
নেক আমাল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ
করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৭৩, ই.ফা. ৬৩৪৩, ই. সে. ৬৩৯৩)
৬। অবৈধভাবে
জমি দখলের পরিনাম
অবৈধ যাবে কারো সম্পদ
দখল বা নিজ আয়ত্বে নেয়া যাবে না। তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন,
أَنَّ سَعِيدَ بْنَ زَيْدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ ظَلَمَ مِنَ
الأَرْضِ شَيْئًا طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ ".
সাঈদ ইবনু যায়দ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারো জমির অংশ যুল্ম করে কেড়ে নেয়, কিয়ামতের দিন এর সাত তবক জমিন তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ
বুখারী, হাদিস নং ২৪৫২)
৭। ওয়ারিশ
কে সম্পদের হক থেকে বঞ্চিত করার পরিণাম
বান্দা যত ভালো নেক
আমল করুক না কেন ওয়ারিশদের সম্পদ তাদেরকে বুঝিয়ে না দিলে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কঠিন
জবাবদিহি করতে হবে। ওয়ারিশের সম্পদের বিষয়ে প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন,
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم " مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ قَطَعَ اللَّهُ
مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " .
আনাস বিন মালিক
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে মীরাস দেয়া থেকে পশ্চাদপসরণ করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত
করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৭০৩)
ফুটনোটঃ হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে
বর্ণনা করেছেন। বায়হাকী ফিস সুনান ৬/২৬৪, মিশকাত ৩০৭৮। তাহকীক আলবানীঃ
যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুর রহীম যায়দ আল-আম্মী সম্পর্কে আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল।
আবু হাতিম আর-রাযী তার হাদিস বর্জন করেছেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল।
ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। ইমাম যাহাবী
তাকে বর্জন করেছেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪০৬, ১৮/৩৪ নং পৃষ্ঠা)
২. যায়দ আল-আম্মী সম্পর্কে আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী তার মাওদুআত গ্রন্থে তাকে উল্লেখ
করেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য
হবে না, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু নুমায়র আল-আসবাহানী বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা
রয়েছে। আহমাদ বিন সালিহ আল-জায়লী বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২১০২, ১০/৫৬ নং পৃষ্ঠা)
৮। অন্যের
সম্পদ আত্মসাৎ করার পরিণাম
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ
করা কত জগণ্য অপরাধ সে বিষয়ে রাসূল (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ
يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا
أَتْلَفَهُ اللَّهُ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের
মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর
যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়্যাতে আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করেন। (সহিহ
বুখারী, হাদিস নং ২৩৮৭)
৯। বান্দাকে
হয়রানি করা যাবে না
কোন মানুষকে হয়রাণি
করা যাবেনা। খেলাচ্ছলে হোক বা হিংসা করে হোক।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ،
عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
يَقُولُ " لاَ يَأْخُذَنَّ أَحَدُكُمْ مَتَاعَ أَخِيهِ لاَعِبًا وَلاَ
جَادًّا " . وَقَالَ سُلَيْمَانُ " لَعِبًا وَلاَ جِدًّا "
. " وَمَنْ أَخَذَ عَصَا أَخِيهِ فَلْيَرُدَّهَا " . لَمْ
يَقُلِ ابْنُ بَشَّارٍ ابْنِ يَزِيدَ وَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم .
আবদুল্লাহ ইবনুস
সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তার পিতা হতে তার দাদার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ
তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের কোন জিনিস না নেয়, খেলাচ্ছলেই হোক কিংবা বাস্তবিকই হোক। আর কেউ তার কোন ভাইয়ের লাঠি নিয়ে থাকলে তা
যেন ফিরিয়ে দেয়। (বুখারীর আদাবুল মুফরাদ, তিরমিযী। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০০৩)
১০। মেহমানদের
হক আদায়
মেহমান আসলে আমাদের
অনেকের মন খারাপ হয়। মনে রাখতে হবে মেহমান আমার খাবার খায়না। তাদের রিজিকই তারা খায়।
মেহমানের প্রতি খারাপ ব্যবহার করা যাবেনা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ
فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ
فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ
فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্তে ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ্ ও শেষ দিনে বিশ্বাস
রাখে,
সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ্ ও
শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১৮, মুসলিম ১/১৯, হাঃ ৪৭, আহমাদ ৭৬৩০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৮০)
১১। প্রতিবেশীর
হক আদায়
আমাদের বিপদ আপদে
যারা ছুটে আসে তারা আমাদের প্রতিবেশী। আত্মীয় স্বজনের আগে প্রতিবেশী আমাদের বিপদে এগিয়ে
আসে। তাই তাদের অধিকারের প্রতি সদা সতর্ক থাকতে হবে।
عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم قَالَ " وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللَّهِ
لاَ يُؤْمِنُ ". قِيلَ وَمَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ "
الَّذِي لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَايِقَهُ ". تَابَعَهُ شَبَابَةُ وَأَسَدُ
بْنُ مُوسَى. وَقَالَ حُمَيْدُ بْنُ الأَسْوَدِ وَعُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ وَأَبُو
بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ وَشُعَيْبُ بْنُ إِسْحَاقَ عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ
الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،.
আবূ শুরায়হ্ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বলেছিলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহ্র
শপথ! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহ্র শপথ! সে ব্যক্তি মু'মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহ্র রসূল! কে সে লোক? তিনি বললেনঃ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে
না। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০১৬, মুসলিম ১/১৮, হাঃ ৪৬, আহমাদ ৮৮৬৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৮)
১২। এতিমের
অধিকার রক্ষা
এতিমের অধিকারের
ক্ষেত্রেও একজন মুসলমানকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। যারা এতিমের সম্পদ অন্যায় ভাবে
খায় তাদের বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی
ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ نَارًا ؕ وَسَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا
যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ
অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে
এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। (সূরা
নিসা ৪:১০)
১৩। মুসলমানের
পরস্পরের অধিকার রক্ষা
সকল মুসলমানের অধিকারের
বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ» ،
قِيلَ: مَا هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ
عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ،
وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ تَعُودُهُ، وَإِذَا
مَاتَ فَاتَّبَعْهُ»
আবু হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি কর্তব্য
রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
সেই কর্তব্যগুলো কি কি? তিনি বলেনঃ
(১) তার সাথে তোমার
সাক্ষাত হলে সালাম দিবে।
(২) সে তোমাকে দাওয়াত
দিলে তার দাওয়াত কবুল করবে।
(৩) সে তোমার কাছে
পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে পরামর্শ দিবে।
(৪) সে হাঁচি দিয়ে
আল্লাহর প্রশংসা করলে তুমি তার জবাব দিবে।
(৫) সে অসুস্থ হলে
তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) সে মারা গেলে
তুমি তার জানাযায় ও দাফনে শরীক হবে।
(বুখারী, মুসলিম,
নাসাঈ, আবু আওয়ানাসাঈ, ইবনে
হিব্বান) আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৯৩৩
১৪। ন্যায়
বিচার লাভের অধিকার
اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا
الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَہۡلِہَا ۙ وَاِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ
تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِہٖ ؕ اِنَّ
اللّٰہَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে
নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের
নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান
করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। (সূরা
নিসা ৪:৫৮)
১৫। শ্রমিকের
অধিকার আদায়
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَعْطُوا الأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ
يَجِفَّ عَرَقُهُ " .
আবদুল্লাহ ইবনু উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শ্রমিকের
দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরী দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৪৩)
ফুটনোটঃ হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে
বর্ণনা করেছেন। ইরওয়া ১৪৯৮, মিশকাত ২৯৮৭, রাওদুন নাদীর
১৯৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৫৮। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুর রহমান বিন
যায়দ বিন আসলাম সম্পর্কে আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী বলেন, তার দুর্বলতার
ব্যাপারে সকলে একমত। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল।
উক্ত হাদিসটি সহিহ কিন্তু আবদুর রহমান বিন যায়দ এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির
৩৬ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, তন্মধ্যে ৭ টি খুবই দুর্বল, ১১ টি দুর্বল, ৯ টি হাসান, ৯ টি সহিহ হাদিস
পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ আল-ফাওয়াইদ ৪৪, ১৪১২।
সমাপনীঃ উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে হাক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক
সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। আর এ হক্ব কেউ বিনষ্ট করলে আল্লাহ তাআলা কখনো
ক্ষমা করবেন না। এ জন্য আমাদের প্রত্যেককে পরস্পরের অধিকার সমূহের সঠিকভাবে
সংরক্ষণের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যথায় পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন
হতে হবে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তব
জীবনে আমল করার তাউফিক দান করুন।
খুতবা পিডিএফ ডাউনলোড করুন
আলোচনা পিডিএফ ডাউনলোড করুন
আরো পড়ুনঃ কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে মানুষের অধিকার বা মানবাধিকার