কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে মানুষের অধিকার Human rights in the eyes of Quran and Hadith

কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিতে মানুষের অধিকার  Human rights in the eyes of Quran and Hadith
হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক জুমার আলোচনা

হক শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো অধিকার বা প্রাপ্যতা। আর ইবাদ শব্দের অর্থ হলো বান্দা বা দাস। অর্থাৎ হক্কুল ইবাদ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো বান্দার অধিকার বা মানুষের অধিকার।

বান্দার অধিকার বিষয়ে আল্লাহ বলেন

وَاعۡبُدُوا اللّٰہَ وَلَا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّبِذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡجَارِ ذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡجَارِ الۡجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ  وَمَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ  اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ مُخۡتَالًا فَخُوۡرَا ۙ

আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।

(সূরা নিসা ৪:৩৬)

পিতা মাতার হক বা অধিকার

পিতা মাতার অধিকার হলো জীবদ্দশায় তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা তাদের খেদমত করা ভরণ পোষণ করা এবং মৃত্যুর পরে তাদের নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা।

পিতা-মাতার সাথে দুর্ব্যবহারের পরিনাম

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ ‏ "‏ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের উপর মাতা-পিতার কী অধিকার আছে? তিনি বলেনঃ তারা তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৬২)

আত্মীয় স্বজনের হক

আত্মীয়দের অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে আল্লাহ বলেন

فَاٰتِ ذَا الۡقُرۡبٰی حَقَّہٗ وَالۡمِسۡکِیۡنَ وَابۡنَ‌ السَّبِیۡلِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَ اللّٰہِ ۫ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

আত্নীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম।

(সূরা রুম ৩০:৩৮)

আত্মীয়তা রক্ষা করা

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন

إِنَّ جُبَيْرَ بْنَ مُطْعِمٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ ‏"‏‏.‏

যুবায়র ইবনু মুত'ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

[মুসলিম ৪৫/৬, হাঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৮৪

ওয়ারিশী সম্পদ থেকে বঞ্চিত না করা

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে মীরাস দেয়া থেকে পশ্চাদপসরণ করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৭০৩)

ইয়াতীম মিসকিনের হক

وَاٰتُوا الۡیَتٰمٰۤی اَمۡوَالَہُمۡ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الۡخَبِیۡثَ بِالطَّیِّبِ ۪ وَلَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَہُمۡ اِلٰۤی اَمۡوَالِکُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ حُوۡبًا کَبِیۡرًا

এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।

(সূরা নিসা ৪:২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ نَارًا ؕ  وَسَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا 

যারা এতীমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।

(সূরা নিসা ৪:১০)

প্রতিবেশীর হক

সদাচরণ করা, কষ্ট না দেওয়া

عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْخُزَاعِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ ‏"‏ ‏.

আবূ শুরায়হ আল-খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে।

মাজাহ ৩২৭৫, সহীহুল বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিযী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩৭৪৮, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৮, দারিমী ২০৩৫, ২০৩৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭২

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান প্রদর্শন করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে।

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمانহাদিস নম্বরঃ ৮০

হাদিয়া/ উপহার আদান-প্রদান করা

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ ‏"‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যার! যখন তুমি (তরকারী) রান্না করবে তখন তাতে পানি বেশী দিবে যাতে ঝোলের পরিমাণ অধিক হয় এবং তোমরা তোমাদের প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রেখো।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৪৭/ সদ্ব্যবহার, আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآدابহাদিস নম্বরঃ ৬৪৪৯

প্রতিবেশীর হক নষ্ট করার পরিণাম

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ‏"‏ ‏.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمانহাদিস নম্বরঃ ৭৮

শ্রমিকের হক বা অধিকার

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَعْطُوا الأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ ‏"‏ ‏.‏

 

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরী দাও।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৪৪৩)

নিজের খাবার থেকে শ্রমিককে দেওয়া

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا صَنَعَ لأَحَدِكُمْ خَادِمُهُ طَعَامًا ثُمَّ جَاءَهُ بِهِ وَقَدْ وَلِيَ حَرَّهُ وَدُخَانَهُ فَلْيُقْعِدْهُ مَعَهُ لِيَأْكُلَ فَإِنْ كَانَ الطَّعَامُ مَشْفُوهًا فَلْيَضَعْ فِي يَدِهِ مِنْهُ أَكْلَةً أَوْ أَكْلَتَيْنِ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো খাদেম যখন খাবার তৈরী করে তার জন্য পেশ করে; সে বাবুর্চিখানার উত্তাপ সহ্য করেছে; মালিক যেন তাকে সাথে নিয়ে খায়। খাদ্যের পরিমান কম হলে সে যেন অন্তত তার হাতে এক বা দুই লোকমা খাদ্য তুলে দেয়।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৪৬)

শ্রমিকের ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দেয়া

قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو يَقُولُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَمْ نَعْفُو عَنِ الْخَادِمِ فَصَمَتَ ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلاَمَ فَصَمَتَ فَلَمَّا كَانَ فِي الثَّالِثَةِ قَالَ ‏ "‏ اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً ‏"‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কাজের লোককে প্রতিদিন কতবার মাফ করব? তিনি চুপ থাকলেন। লোকটি আবার একই প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ থাকলেন। তৃতীয় বার প্রশ্ন করলে তিনি বললেনঃ প্রতিদিন সত্তর বার।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১৬৪)

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর হক

স্ত্রীর ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা

وَعَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَہٗ رِزۡقُہُنَّ وَکِسۡوَتُہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী। (সূরা বাকারা ২:২৩৩)

স্ত্রীর মোহরানা প্রদান করা

وَاٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِہِنَّ نِحۡلَۃً ؕ فَاِنۡ طِبۡنَ لَکُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡہُ نَفۡسًا فَکُلُوۡہُ ہَنِیۡٓــًٔا مَّرِیۡٓــًٔا

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরা নিসা ৪:৪)

স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করা

وَعَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۚ

নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা ৪:১৯)

পাঁজরের বাঁকা হাড়

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَهُ ‏"‏‏.‏ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلَاهُ فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থকবে। অতএব, তোমাদেরকে ওসীয়াত করা হল নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার।

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী (كتاب النكاحহাদিস নম্বরঃ ৪৮০৭

সন্তানের হক

সুন্দর নাম রাখা ও আকীকা করা

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ ابْنُ أَبِي زَكَرِيَّاءَ لَمْ يُدْرِكْ أَبَا الدَّرْدَاءِ ‏.

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে, তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী ইবনু আবূ যাকরিয়া (রহঃ) আবূ দারদার (রাঃ) সাক্ষাৎ পাননি।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৪৮)

মাথার চুল ফেলে আকিকা করা

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ كُلُّ غُلاَمٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى ‏"‏

 

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বাহ্‌র বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বাহ করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৮৩৮)

সালাতের আদেশ

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ ‏"‏ ‏.‏

আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে সলাতের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে তখন (সলাত আদায় না করলে) এজন্য তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৫)

সাধারণ মুসলমানের হক

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি যে, এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক্‌ পাঁচটিঃ

১. সালামের জওয়াব দেওয়া,

২. অসুস্থ ব্যাক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া,

৩. জানাযার অনুগমন করা,

৪. দাওয়াত কবূল করা এবং

৫. হাঁচিদাতাকে খুশি করা।

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা (كتاب الجنائزহাদিস নম্বরঃ ১১৬৮

ছোটদের স্নেহ করা বড়দের সম্মান করা

عَنْ زَرْبِيٍّ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ جَاءَ شَيْخٌ يُرِيدُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَبْطَأَ الْقَوْمُ عَنْهُ أَنْ يُوَسِّعُوا لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيُوَقِّرْ كَبِيرَنَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَابْنِ عَبَّاسٍ وَأَبِي أُمَامَةَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَزَرْبِيٌّ لَهُ أَحَادِيثُ مَنَاكِيرُ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ وَغَيْرِهِ ‏.‏

যারবী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‍তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ একজন বয়স্ক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে আসে। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক আমাদের ‍শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৯১৯)

অমুসলিমদের অধিকার

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ وَعَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِيْنَ خَرِيفًا». رَوَاهُ البُخَارِىُّ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মুআহিদ (মুসলিমদের প্রতিশ্রুতিতে আশ্রিত)-কে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূর হতে পাওয়া যায়।

গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), অধ্যায়ঃ পর্ব-১৬ঃ কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاصহাদিস নম্বরঃ ৩৪৫২, সহীহ : বুখারী ৩১৬৬, ইবনু মাজাহ ২৬৮৬, সহীহ আল জামি ৬৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ২৪৫২।