আর্থিক প্রতারণা, বেঁচে থাকার কয়েকটি উপায় |
বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে নিত্য নতুন বের হচ্ছে আর্থিক লেনদেনের নতুন নতুন পদ্ধতি। আর এই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধারণ মানুষ বের করছে প্রতারণার নতুন নতুন মাধ্যম। তাই বর্তমান সময়ে আর্থিক প্রতারণার কিছু স্বরূপ তুলে ধরে তা থেকে বাঁচার বিষয়ে আজকের ক্লাস।
উদ্দেশ্য
আর্থিক প্রতারণার থেকে বেঁচে থাকার জন্য সতর্ক
করা।
আলোচনার সুবিধার্থে আজকের
ক্লাসকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে
১) মোবাইল ব্যাংক কেন্দ্রিক প্রতারণা
২) জেনারেল ব্যাংক কেন্দ্রিক প্রতারণা
৩) অনলাইনে নানা অ্যাপস ও ওয়েবসাইটভিত্তিক প্রতারণা
১) মোবাইল ব্যাংক কেন্দ্রিক
প্রতারণা
মোবাইল ব্যাংক কেন্দ্রিক প্রতারণার প্রথম
সারিতে আছে বিকাশ। আমরা অনেক সময় শুনতে পাই বিকাশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আসলে
যে কেউ চাইলেই আপনার বিকাশ থেকে টাকা নিতে পারবে না যদি না আপনি টাকা নিতে তাকে
সাহায্য না করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি সতর্ক থাকলে আপনার বিকাশ থেকে টাকা
নেয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
OTP বিকাশ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা
নেয়ার প্রথম অস্ত্র হলো ওটিপি। OTP= One Time Password. আপনার
বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কেউ কোথাও পেমেন্ট করলে বা টাকা ট্রানজেকশন করলে আপনার
মোবাইলে একটি ওটিপি আসবে সেটি প্রতারক নিতে না পারলে আপনার মোবাইল একাউন্ট থেকে
টাকা নিতে পারবে না।
কিছু পরামর্শ
ক। বিকাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে *247# ডায়াল করার পরিবর্তে অ্যাপস ব্যবহার করুন।
খ। এজেন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের সময়
এজেন্টের নাম্বার না লিখে এজেন্টের কিউআর কোড স্ক্যান করুন। তাহলে নাম্বার ভুল হওয়ার
সম্ভাবনা থাকবে না।
গ। বিকাশ অফিস থেকে কল করে কখনো আপনার কাছে
পাসওয়ার্ড জিজ্ঞেস করবে না। তাই কাউকে পাসওয়ার্ড দিবেন না।
ঘ। মোবাইলে অপ্রয়োজনীয়
এপ্স ইনষ্টল করা থেকে বিরত থাকুন। এবং ইনষ্টলকৃত
অপ্রয়োজনীয় এপ্স গুলো রিমুভ করে দিন।
ঙ। ট্রাষ্ট মানি
থেকে বিকাশে লেনদেন করুন। তাতে ভূল নাম্বারে টাকা যাওয়ার
সম্ভাবনা কমে যাবে।
ট্রাষ্ট মানি
এপ্স থেকে যেভাবে বিকাশে টাকা প্রেরণ করবেন
১ নং চিত্র |
২ নং চিত্র |
৩ নং চিত্র |
২) সাধারণ ব্যাংক কেন্দ্রিক
প্রতারণা
অনেকেই বর্তমানে ব্যান্ড কেন্দ্রিক প্রথম
শিকার হচ্ছেন। ব্যাংক কেন্দ্রিক প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দেয়া
হলো।
ক। চেক বই নিরাপদ স্থানে রাখুন।
খ। চেক বইতে সিগনেচার করে রাখবেন না।
গ। আপনার এটিএম কার্ড, মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড ইত্যাদি নিরাপদে রাখুন।
ঘ। যথাসম্ভব অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, যে ব্যাংকে
আপনার একাউন্ট সে ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করুন।
ঙ। আপনার ভিসা কার্ড অনলাইনে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩) অ্যাপস ও ওয়েবসাইটভিত্তিক
প্রতারণা
ডিজিটাল যুগে প্রতারকরা প্রতারণার জন্য
বেছে নিয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। বর্তমানে অনেকেই নানা রকম অ্যাপস ও ওয়েবসাইট
বানিয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে অল্প দিনে অনেক লাভের লোভ দেখিয়ে
বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করছে। তাদের প্রতারণার কয়েকটি ধরন আলোচনা করা হলো।
ক। বিনিয়োগের মাধ্যমে অল্পদিনে অনেক টাকা লাভ।
নামসর্বস্ব এসব কোম্পানি মানুষকে অল্প টাকায় অনেক লাভের লোভ দেখিয়ে অর্থ
বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। যাদের নেই কোন অনুমোদন, পরিচয়, এমনকি বাস্তব জীবনে তাদের অফিসের কোনো
অস্তিত্বই নেই। অনেকের চিন্তা করে আমার টাকা তুলে ফেলার পরে কোম্পানি চলে গেল
আফসোস নাই। কিন্তু এমন কোম্পানি যখন অল্প দিনে অনেক বিনিয়োগকারী জোগাতে পারে তখনই
তাদের ভেঙ্গে যাওয়ার সময় হয়। অনেকে এমএলএম পদ্ধতিতে গ্রাহক সংগ্রহ করে। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী আরো বিনিয়োগকারী
এনে দিতে পারলে লভ্যাংশ পাবে।
খ। বিনিয়োগ করে প্রতিদিন ক্লিক করে ইনকাম।
এরা নিজেদের কে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং সাইট বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু
ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং এর সংজ্ঞা হল ব্যক্তি শুধুমাত্র মেধা বিনিয়োগ করবে অর্থ
নয়। ক্লিক করে ইনকাম করা যায় এমন কোম্পানি বাংলাদেশের নতুন নয়। প্রতারণার উদ্দেশ্যে কিছুদিন পর পর তারা নতুন
নামে এসে হাজির হয়।
গ। অল্প টাকায় দামে প্রোডাক্ট কিনতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ
করা।
যে প্রোডাক্ট পাইকার দোকানদার এর চাইতেও কম মূল্যে খুচরা ক্রেতার নিকট
বিক্রয় করা হয় স্বাভাবিক ভাবে বুঝা যায় এতে বিরাট কোন ঝামেলা আছে। কোন ব্যক্তি
যদি নিজের সম্পদ থেকে এভাবে মানুষকে কম দামে পণ্য বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে সে
নিজের ক্ষতির সম্মুখীন হয় তবুও তা বাংলাদেশের আইনে অবৈধ। কেননা এর দ্বারা বাজারে
খারাপ প্রভাব পড়বে এবং বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই লোভে পড়ে অল্প দামে
এইসব কোম্পানি থেকে পণ্য কিনে থাকে বিরত থাকতে হবে।
পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন