কেমন ছিলেন বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) How was the Prophet (peace be upon him)

কেমন ছিলেন বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ ﷺ ? How was the Prophet of the world?

কেমন ছিলেন বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

(১) রাসূলুল্লাহ () মাঝারি আকৃতির ছিলেন। তিনি বেঁটে ছিলেন না, আবার অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন ন। তাঁর কাঁধ প্রশস্ত, মাথা বড়, হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলো পৌরুষ প্রকাশক ও শক্ত এবং মুখ বড় ছিল। তাঁর চক্ষু ছিল আকর্ষণীয়ভাবে বড় এবং ফাড়া। তাঁর শরীরের রং ছিল ফরসা, সুন্দর কিছুটা লালচে মিশ্রিত সাদা। তাঁর চেহারা মোবারক ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মত সুন্দর ও মনেমুগ্ধকর।

(২) তাঁর মাথা ভরা কাল চুল ছিল। তাঁর চুল বেশী কোঁকড়ান বা একবারে সোজা ছিল না, সামান্য কোঁকড়ান ছিল। তাঁর সুবিন্যস্ত চুল সাধারণত তাঁর কান পর্যন্ত লম্বা নেমে আসত। তিনি হজ্জ-ওমরা ছাড়া কখনো মাথা মুণ্ডন করতেন না। ইন্তেকালের পূর্বেও তার চুল ও দাড়ি কাল ছিল। সামান্য ১৫/২০টি চুল সাদা হয়েছিল।

(৩) তিনি দৃঢ় পায়ে বড় বড় পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটতেন, এমনভাবে যে তাকে দেখে মনে হত তিনি ঢালু যমিনের উঁচু থেকে নীচুতে নামছেন এবং পদক্ষেপের সাথে সাথে সামনে ঝুকে পড়ছেন।

(৪) তিনি জাগতিক চাকচিক্য ও বিলাসিতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। খুব সামান্য খাদ্য খেতেন। কখনো কখনো মাসের পর মাস তাঁর ঘরে কিছুই রান্না হত না। শুধুমাত্র ২/১টি খেজুর ও পানি খেয়েই দিন কাটাতেন। মেহমানদের সাথে তিনি কখনো পেটভরে খান নি। তিনি খাওয়ার সময়ে সাধারণত তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করতেন এবং খাওয়ার পরে আঙ্গুলগুলো চেটে নিতেন। তিনি সাধারণ খেজুরের ছোবড়ার বিছানায় শুতেন। তিনি ডান দিকে কাত হয়ে, ডান হাতের তালু তার ডান গালের নীচে রেখে ঘুমাতেন।

(৫) তিনি সুগন্ধি খুবই পছন্দ করতেন। তিনি সর্বদা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। কেউ তাঁকে সুগন্ধি উপহার দিলে তা কখনো ফেরত দিতেন না।

(৬) তিনি কথা বলতেন ধীরে এবং প্রতিটি শব্দ সুস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতেন। তিনি কখনো উচ্চশব্দে হাসতেন না। সর্বদা তিনি মৃদু হাসতেন। তিনি সবার সাথে হাসিমুখে মিলিত হতেন। কারো সাথে কথা বললে তিনি তাঁর দেহ ও মুখমণ্ডল পুরোপুরি তার দিকে ফিরিয়ে এমনভাবে মনোযোগ ও সম্মানের সাথে কথা বলতেন যে, তাঁর সাথে যেই কথা বলত সেই অনুভব করত যে, সে রাসূলুল্লাহ ()-এর নিকট অত্যন্ত সম্মানিত ও প্রিয়।

(৭) তিনি অনাবিল হাসি তামাশা পছন্দ করতেন। কিন্তু কখনোই তিনি হাসি তামাশার জন্য এমন কথা বলতেন না যার মধ্যে মিথ্যার লেশমাত্র রয়েছে। পারিবারিক জীবনে তিনি তাঁর স্ত্রী-পরিজনদেরকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।

(৮) পারিবারিক মতভেদে কথা কাটাকাটিতে তাদের প্রতিবাদ, আপত্তি হাসিমুখে নীরবে শুনতেন। তিনি নিজের কাপড় নিজে পরিস্কার করতেন, নিজের ছাগল নিজে দোহন করতেন, নিজের কাজ নিজে করতেন।

(৯) তিনি কখনো তার কোনো খাদেম বা স্ত্রীকে ধমক দেন নি। তিনি কখনো চিৎকার করে কথা বলতেন না বা ঝগড়া বা গালিগালাজ করতেন না, কখনো অশ্লীল কথা বলতেন না। একমাত্র ইসলামের বিরোধিতা দেখলেই তিনি রাগান্বিত হতেন। এছাড়া কখনো তাকে রাগতে দেখা যায়নি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি কারো উপর রাগ করেন নি, কোনো প্রতিশোধ নেন নি। কেউ তার প্রতি ব্যক্তিগত কোনো অপরাধ করলে বা তাঁকে কেউ কষ্ট দিলে, তিনি তা ক্ষমা করে দিতেন।

(১০) তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন। মদীনায় তিনি ছিলেন একছত্র অধিপতি, শাসক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রধান। কিন্তু কখনো তাঁর আচরণে শক্তি বা প্রতিপত্তির সামান্যতম প্রভাব ছিল না। মদীনার দরিদ্রতম বা নগণ্যতম ব্যক্তিকেও তিনি পরিপূর্ণ সম্মান দান করতেন, ডাকলে তার বাড়ীতে যেতেন, তার কাছে বসে তার কথা শুনতেন। তিনি সর্বদা অতি সাধারণ পোষাক ও বাসস্থান ব্যবহার করতেন।

(১১) তাঁর বিনয়ের একটি দিক ছিল যে, কেউ তার সম্মানে উঠে দাঁড়াক এটা তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁর সাহাবীগণ তাকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসতেন, কিন্তু তাঁকে আসতে দেখলে তার সম্মানে উঠে দাঁড়াতেন না, কারণ তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা পছন্দ করতেন না। তবে তিনি মাজলিস ছেড়ে প্রস্থান করার সময় যখন উঠে দাঁড়াতেন তখন উপস্থিত সাহাবীগণও তাঁর সাথে উঠে দাঁড়াতেন।

তথ্যসূত্রঃ রাসূলুল্লাহ -এর দৈহিক গঠন, চারিত্রিক গুণাবলী ও আচরণ সম্পর্কে তথ্যগুলোর জন্য দেখুন: ইমাম তিরমিযি, আশ শামায়িলুল মুহাম্মাদিয়াহ; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল আলবানী, মুখতাসারুশ শামায়িলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ।