কুরআন সুন্নাহর আলোকে নবী রাসূলগণের জীবিকা কি ছিল? What was the livelihood of the prophets?

নবী রাসূলগণের জীবিকা কি ছিল? What was the livelihood of the prophets?
নবী রাসূলগণের জীবিকা কি ছিল?

নবী রাসূলগণের জীবিকা

নবী-রাসূলদের জীবিকা সম্পর্কে প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন, 

'আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননিযিনি বকরী চরাননি। তখন তাঁর ছাহাবীগণ বলেনআপনিওতিনি বলেনহ্যাঁআমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম। (সহীহ্ বুখারী হা/২২৬২)

হযরত আদম (আঃ)

মানব জাতির আদি পিতা আদম (আঃ) ছিলেন একজন কৃষক। যিনি জমিতে ফসল ফলাতেন এবং নিজ হাতে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরী করতেন। আর এ কাজে তাঁর স্ত্রীও সাহায্য করতেন। তিনি একজন রাজ মিস্ত্রীও ছিলেন।

(ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবহাত ফি তালবির রিযক, পৃঃ ৬৪)

হযরত দাঊদ (আঃ) ছিলেন বর্ম নির্মাতা,

হযরত আদম (আঃ) ছিলেন কৃষক,

হযরত নূহ (আঃ) ছিলেন কাঠ মিস্ত্রী,

হযরত ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন দর্জি,

হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন রাখাল

রাসূলু্ল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 وَإِنَّ نَبِىَّ اللهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ

আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন

(সহীহ্ বুখারী হা/২০৭২)

অন্য হাদিস শরিফে, ইবনু আববাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে যে,

 كَانَ دَاوُدُ زَرَّادًا وَكَانَ آدَمُ حَرَّاثًا وَكَانَ نُوحٌ نَجَّارًا وَكَانَ إِدْرِيسُ خَيَّاطًا وَكَانَ مُوْسَى رَاعِيًا

হযরত দাঊদ (আঃ) ছিলেন বর্ম নির্মাতা, হযরত আদম (আঃ) ছিলেন কৃষক, হযরত নূহ (আঃ) ছিলেন কাঠ মিস্ত্রী, হযরত ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন দর্জি, হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন রাখাল

[সহীহ বুখারীর শারাহ ফাতহুল বারী হা/২০৭২ আলোচনা দ্রঃ]

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 كَانَ زَكَرِيَّاءُ نَجَّارًا

হযরত যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন কাঠ মিস্ত্রী। (সহীহ্ মুসলিম হা/২৩৭৯)

হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর জীবিকা :

সর্বপ্রথম হযরত ইদ্রীস (আঃ) প্রথম ব্যক্তি যিনি সুতার তৈরী সেলাইযুক্ত পোষাক তৈরী করেন।

হযরত নূহ (আঃ) এর জীবিকা : হযরত নূহ (আঃ) নিজ কওমের ছাগল চরাতেন। তিনি কাঠ মিস্ত্রীও ছিলেন। তিনি প্লাবনের পূর্বে স্বহস্তে কাঠের নৌকা তৈরী করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِنْ قَوْمِهِ سَخِرُوا مِنْهُ

সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল, আর যখনই তার কওমের প্রধানদের কোন দল তার নিকট দিয়ে গমন করত, তখনই তার সাথে উপহাস করত (হূদ ১১/৩৮)।

হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জীবিকা : হযরত ইউসুফ (আঃ) ছিলেন মিসরের অর্থমন্ত্রী। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,

قَالَ اجْعَلْنِي عَلَى خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ

ইউসুফ বলল, আপনি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও (এ বিষয়ে) বিজ্ঞ (ইউসুফ ১২:৫৫)

হযরত মূসা (আঃ) এর জীবিকা : হযরত মূসা (আঃ) এর দৈহিক শক্তি ও আমানতদারিতার কারণে আট বা দশ বছর হযরত শোআয়েব (আঃ)-এর ছাগল চরানোর বিনিময়ে তার কন্যাকে বিবাহ করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ

নিশ্চয়ই কর্মচারী হিসাবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত

(কাছাছ ২৮/২৬; ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবহাত ফি তালবির রিযক, পৃঃ ৬৪)

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবিকা : আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীর ছাগল চরাতেন। এ বিষয়ে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيًّا إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ

আল্লাহ তাআলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তখন তাঁর ছাহাবীগণ বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম(সহীহ্ বুখারী হা/২২৬২)

খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবিকা

(১) হযরত আবুবকর (রাঃ)

আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) ছিলেন জাহেলী যুগ থেকেই একজন সৎ ব্যবসায়ী। কুরাইশদের মধ্যে তিনি ছিলেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। ইসলাম কবুল করার পর তার সম্পদ গোলাম আযাদ ও ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যয় করেন। কিন্তু যখন তিনি খলীফা নিযুক্ত হন, তখনও কাপড় নিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য বের হন। পরে ওমর ও আবু ওবায়দার পরামর্শক্রমে ভাতা নির্ধারণ করলে তা থেকে সংসার চালান।  (ফাৎহুল বারী হা/২০৭১নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

(২) হযরত ওমর ফারূক (রাঃ)

হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।

(ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)

(৩) হযরত ওছমান (রাঃ)

হযরত ওছমান (রাঃ) এর উপাদি ছিল গনি অর্থাৎ ধনী তিনি তার সকল সম্পদ ইসলামের কল্যাণে দান করেন। হযরত ওছমান (রাঃ) জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে কাপড় বিক্রয় করতেন এবং এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।

(ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)

(৪) হযরত আলী (রাঃ)

হযরত আলী (রাঃ) নিজ হাতে কাজ করতেন। তিনি খেজুরের বিনিময়ে কুপ থেকে পানি তুলে অন্যের জমিতে সেচ দিতেন। তার কষ্ট এমন পর্যায়ে পৌঁছতো যে হাতে রশির দাগ পড়ে যেত।

( ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযকপৃঃ ৬৮)

অন্যান্য ছাহাবীদের জীবিকা

হযরত খাববাব ইবনে আরত (রাঃ) ছিলেন কর্মকার,

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসূদ (রাঃ) ছিলেন রাখাল,

হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) তীর প্রস্তুতকারী ছিলেন,

হযরত জোবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) দর্জী ছিলেন।

হযরত বেলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ) ও হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) গোলাম ছিলেন।

হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) ক্ষুরকার ও খেজুর গাছে পরাগায়নের কাজ করতেন।

হযরত বারা ইবনে আযেব ও যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) ছিলেন ব্যবসায়ী।

(ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক পৃঃ ৭২)

শিক্ষা 

তাই পেশা হিসেবে যে কোন হালাল পেশা কে খাটো হিসেবে দেখা যাবেনা। হালাল পেশা মানেই সম্মানজনক পেশা।