খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা |
যার দৈহিক শক্তি পর্যাপ্ত তার
কাজকর্ম, চলাফেলা, পড়াশুনা
ইত্যাদি দৈনন্দিন বিষয়গুলো খুব স্বাভাবিক গতিতে চলে। সে থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
দৈহিক শক্তি যার কম তার সবকিছুতে গোলমেলে। স্বল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে। কোন কিছুতেই
পরিপূর্ণ সফলতা পায় না। পুষ্টির অভাব থাকলেই দেহে শক্তির পরিমাণ কম থাকে।
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে নিবিড়
সম্পর্ক রয়েছে দৈহিক শক্তির । বর্তমান যুগে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক
খাদ্যই অনেক বেশি কার্যকর বলে পুষ্টিবিদরা
মনে করছেন।
সময়মত খাবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও
পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শারমিন রুমী আলীম জানালেন, সময়মতো না খাবার খাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি হয় গ্যাসট্রিকের সমস্যা।
বদহজম, গ্যাস ও অম্বল হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। সঠিক সময়ে
সঠিক খাবার না খাওয়ার কারণে বয়স যখন ৪০ পেরিয়ে যায়, তখন
তাঁদের শরীর খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে। তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। দ্রুত
বৃদ্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা।
অনিয়মিত খাবারদাবার ও বেশি রাত করে রাতের খাবার খাওয়া প্রভাব ফেলে আপনার নিত্যদিনের কাজেও। কারণ, সঠিক সময়ে খাবার না খেলে শরীর খুব দ্রুত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। লো প্রেশারের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু খাবার সময়মতো খেয়ে ফেললে শরীর তরতাজা থাকে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে। বেশির ভাগ তরুণ সকালবেলা খাবার খেতে আগ্রহী হন না। কিন্তু দিন যত গড়ায় শরীরের পরিপাক হারও তত বেড়ে যায়। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর পরিপাক হারও কমতে থাকে। ফলে দুপুর বা রাতের চেয়ে সকালে খাবারদাবার অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। সকালে নাশতা কখনোই বাদ দেওয়া উচিত নয়। সকালের খাবার যেমন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বিরত রাখে, তেমনি সারা দিন কাজ করার শক্তি প্রদান করে। ছোট বয়স থেকেই সঠিক সময়ে খাবার খেলে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয়।
তিনবেলা
খাবার
সকাল, দুপুর এবং রাতে প্রতিদিন একই সময় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এবং অল্প পরিমাণ হলেই যথাসময়ে খাওয়া উচিত।
পরিমিত খাবার
শরীরের উচ্চতা-বয়সের ওপর নির্ভর করে ওজন কত
হবে। সে অনুযায়ী জেনে নিতে পারেন আপনার ওজন আসলে কতটুকু হওয়া উচিত। লক্ষ্য স্থির
রেখে সেই ওজন প্রাপ্তির জন্যই করতে হবে চেষ্টা। অনেকে মনে করেন ক্রাশ ডায়েট, ফলের ডায়েট, লেমন ডায়েট
ইত্যাদি হরেক রকম শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। কিন্তু এতে ওজন কমে সাময়িকভাবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হজমের সমস্যা, চুল ঝরা,
ত্বক নষ্ট হওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা
দেয়। এমনকি হারানো ওজনও ফিরে আসে যখন আবার তিনি স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসেন। ওজন
কমানো বা বাড়ানোর জন্য একজন ভালো পুষ্টিবিদের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
শরীরে সব ধরনের পুষ্টির দরকার প্রতিদিন। তাই আপনার ডায়েটে যেন সব ধরনের পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ খাবার থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
এবার জেনে নেয়া যাক শক্তি বৃদ্ধি করে যে খাবারগুলো
ডিম
ডিম অধিক প্রোটিন প্রদানকারী খাবার। দৈহিক
দুর্বলতা দূর করতে ডিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর ভিটামিন বি১২ খাবারকে শক্তিতে
রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ টি করে ডিম খান, এতে আপনার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হবে।
দুধ
দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে
প্রোটিন এবং প্রাণিজ-ফ্যাট আছে যা দ্রুত দৈহিক শক্তির উন্নতি ঘটায়। যেমন খাঁটি
দুধ, দুধের সর, মাখন
ইত্যাদি। ছোটদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রতিদিন এই খাবারগুলো রাখবেন।
মধু
হাজারো গুণে ভরা মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ
আছে যা শরীরে শক্তি যোগায়। দৈহিক দুর্বলতার সমাধানে মধুর গুণের কথা সবারই কম-বেশি
জানা। তাই দৈহিক শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন পরিমাণ মত মধু খেতে পারেন। মধু দৈহিক
শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি করে। পানির সঙ্গে মধু মিলিয়ে খেতে
পারেন।
বাদাম
বাদামের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল।
বাদাম অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, এটি
কোলেস্টেরল কমায়। এ ছাড়া এর রয়েছে আরও অনেক গুণ। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম বাদাম
খেলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল এবং সারাদিনের
শক্তির জোগান দিতে পারে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
খেজুর ও কিশমিশ
দেহে শক্তির অন্যতম উৎস হলো খেজুর ও কিশমিশ। এগুলো খেলে দেহে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি
পায়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা। অধিক ক্ষুধার্ত্য অবস্থায় শরীর
ক্লান্ত লাগে এ মুহূর্তে তিন-চারটি খেজুর খেলে
আপনার শরীরে শক্তি ফিরে আসবে।
কলা
কলার রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি ও পটাশিয়াম। ভিটামিন
বি ও পটাশিয়াম দৈহিক শক্তি বাড়ায়। তাছাড়া কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা যা
দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে ক্লান্তি দূর হয়। সহজ লব্য এই কলা সকালের নাস্তায়
নিয়মিত রাখুন।
ভিটামিন সি জাতীয় ফল
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন খাবার
তালিকায় রাখুন ভিটামিন-সি যুক্ত ফলমূল
যেমন আঙ্গুর, কমলা, তরমুজ, পিচ ইত্যাদি। এই ফলগুলো দৈহিক শক্তি
বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রত্যেকেরই এই খাবারগুলোর সঙ্গে পরিচয় আছে। আপনার
হাতের নাগালেই এই খাবারগুলো পাচ্ছেন যা দৈহিক দুর্বলতাকে দ্রুত দূর করে আপনাকে করে
তুলতে পারে প্রাণবন্ত। তাই আজে বাজে খাবার খেয়ে নিজের শরীরের ক্ষতি না করে উপরোক্ত
পুষ্টিকর খাদ্যগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।
যে সব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতিকর
ফাস্টফুড
সব সময় হামবার্গাস, ভাজা যেকোনো খাদ্য, ঝলসানো
মুরগি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে উচ্চমাত্রায় স্যাটুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। ব্রয়েলড
স্যান্ডউইচ মুরগি খান। চামড়া খাবেন না। এগুলোর সাথে সালাদ খান। যেসব খাবার ঝলসানো
নয়, সেগুলো খান। উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাদ্য ও পনির
এড়িয়ে চলুন।
প্রাণীজ চর্বি, মাখন ও পনির
সাধারণত মাখন বা ঘি দিয়ে যেসব খাবার তৈরি
করা হয়, সেগুলো মুখরোচক। যেমন ঘি দিয়ে আলু
ভর্তা, টোস্ট, পপকর্ন, পানকেক ইত্যাদি। কিন্তু যাদের দেহে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল ও হৃদরোগ
আছে তারা এসব খাবার খাবেন না।
সামুদ্রিক মাছ (চিংড়ি)
যাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় খউখ
কোলেস্টেরল ও যাদের হৃদরোগ আছে, তারা এসব মাছ খাবেন না।
কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে।
লাল গোশত
গরুর গোশত, খাসির গোশত ও ভেড়ার গোশতে উচ্চমাত্রায় খউখ কোলেস্টেরল ও স্যাটুরেটেড
ফ্যাট বিদ্যমান। তাই হৃদরোগী ও কোলেস্টেরল আক্রান্ত ব্যক্তিরা এসব লাল গোশত খাবেন
না। তার বদলে শাকসবজি, শিম, ঝলসানো
নয় এমন মুরগির গোশত খান। স্যামন মাছ খান। এতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে,
যা হার্টের জন্য ও হৃদরোগীদের জন্য উপকারী।
কলিজা বা যকৃত
হৃদরোগী ও সুস্থ সবার জন্য কলিজা অত্যন্ত
ক্ষতিকর খাবার। এগুলো সম্পূর্ণ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার।
আইসক্রিম
যাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট।
হৃদরোগীদের জন্য এটা বিষ বলা যায়।
বেকারি প্রস্তুতকৃত খাদ্য
কেক, স্পঞ্জ কেক, পাইস ও কুকিজ যা প্রাণীজ চর্বি ও
ডিম দিয়ে তৈরি হয়। কাজেই এগুলো কোনো মতেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সবশেষে এ সত্যটি মনে
রাখুন-বাসি, ভেজাল, রঙ মেশানো ও
কীটনাশকযুক্ত খাবার পরিহার করুন। রাতকানা বা অন্ধত প্রতিরোধে ক্যারোটিনযুক্ত খাবার
গাঢ়/রঙিন শাকসবজি, ফল ও ভুট্টা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যেস করা
দরকার। অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। স্মরণ রাখা দরকার আমরা বাঁচার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য বাঁচি না।
ক্যালরি বার্ন বা শক্তি ক্ষয়
দৌড়
জিমে যদি না-ও যান, বাড়ির সামনে কোনো পার্ক বা মাঠ থাকলে চেষ্টা করুন সেখানে কয়েক পাক
দৌড়ে আসতে। এমন গতিতে ছুটবেন, যাতে শরীরে ঘাম হয়।
ছুটোছুটিতে পায়ের পেশী সচল থাকার সঙ্গে শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। মেদও ঝরে খুব
সহজে। ২০ মিনিট দৌড়ালে প্রায় ২৫০-২৬০ ক্যালোরি পোড়ে।
সাঁতার
সবচেয়ে উপকারী ব্যায়ামের মধ্যে অন্যতম হলো
সাঁতার। এই ব্যায়ামে শরীরের বেশির ভাগ পেশীর নড়াচড়া হয়। পিঠ, পেট ও কোমরের মেদ ঝরাতে এটির ভূমিকা অনেক। তাই সময়
পেলেই নেমে পড়ুন জলে। আধ ঘণ্টার সাঁতারে প্রায় ৪০০ ক্যালোরি পোড়ে।
স্কিপিং
ছেলেবেলার অভ্যাস ঝালিয়ে নিতে
পারেন। দিনে কিছু ক্ষণ সময় কাটান লাফদড়ির সঙ্গে। দম তো বাড়বেই, সঙ্গে লাফালাফিতে সরে যাবে অতিরিক্ত মেদও। ১৫ মিনিট স্কিপিংয়ে ঝরাতে
পারেন মোটামুটি ৪০০ ক্যালোরি।
সাইকেল চালানো
এই কাজ কম-বেশি অনেকেই করেন। আপনি শুরু করুন রুটিন মেনে। দিনের মধ্যে কিছু ক্ষণ সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিন। জোরে সাইক্লিং করে ঘুরে আসুন খানিকটা। ১৫ মিনিট সাইকেল চালালে প্রায় ১৫০-২০০ ক্যালোরি ঝরাতে পারেন। কোমরের আকার ধরে রাখতে ও এই অঞ্চলের চর্বি ঝরাতে এর জুড়ি নেই।
জগিং
দৌড়নোর মাঝে মাঝেই গতি কমিয়ে জগিং শুরু
করুন। মনে মনে হিসাব রাখুন কত পা জগিং করলেন। ধীরে ধীরে জগিংয়ের সময় বাড়ান। পা, কোমর, জঙ্ঘার মেদ কমাতে জগিং
অন্যতম সেরা উপায়। ২০ মিনিট জগিংয়ে ঝরে প্রায় ২৫০ ক্যালোরি।
বয়সের সাথে খাদ্যাভ্যাসের
পরিবর্তন
মানুষের জীবনচক্রকে মোট চারটি
ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-শিশুকাল, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধ বয়স। সুস্থ থাকার জন্য এই চার স্তরে খাবারের চাহিদা এক
রকম নয়, বিভিন্ন রকম। যদি সঠিক বয়সে সঠিক পরিমাণে সুষম
খাবার খাওয়া হয়, তাহলে রোগ প্রতিরোধ করা যেমন সহজ,
তেমনি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকাও সম্ভব।
জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত
মায়ের দুধই শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের
পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। তা না হলে শিশুর বৃদ্ধি ঠিকমতো
হবে না। এর কারণ, ছয় মাস পর থেকে শিশুর যতটুকু দুধ মায়ের
কাছ থেকে পাওয়া দরকার, ততটুকু সে পায় না। অর্থাৎ এ সময় শুধু মায়ের দুধে তার পেট ভরে না। আবার শিশুর দেহ বর্ধনের জন্য যেসব খাদ্য উপাদান থাকা উচিত, তার
সব দুধের মধ্যে নেই। যেমন ভিটামিন সি ও লোহা দুধে এত কম আছে যে তা দিয়ে শিশুর
চাহিদা পূরণ হয় না।
এক থেকে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুরা
ছোটাছুটি ও দুষ্টুমির জন্য খুব একটা খেতে পারে না বা খেতে চায় না। অর্থাৎ তারা কম খেতে পছন্দ করে। এ সময় তাদের প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি দিতে হবে। অধিক আঁশ ও অধিক ভুসিযুক্ত খাবার তাদের না দেওয়াই ভালো। এ বয়সে দেখা যায়, অনেকে দুধ খেতে পছন্দ করে না। এ কারণে তাদের সরাসরি দুধ না দিয়ে,
দুধের তৈরি খাবার যেমন পুডিং, পায়েস,
দুধ-সেমাই, স্যুপ-এসব খাবার দেওয়া ভালো।
অন্যদিকে দেখা যায়, কিছু শিশু দুধ বেশি পছন্দ করে। এ
কারণে সে আবার অন্যান্য খাবার খেতে চায় না। এ ক্ষেত্রে দুধের পরিমাণ কমিয়ে
প্রোটিনযুক্ত অন্যান্য খাবার দিতে হবে। বাচ্চাদের নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিতে হবে। এই বয়সে প্রোটিন, ভিটামিন 'সি' ও 'এ' খুবই দরকার।
এর পরে যখন তারা স্কুলে যায়, তখন তাদের মধ্যে খাবার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে দেখা দেয়।
স্কুল বয়সী বাচ্চাদের এ সময় বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। খুব বেশি বাইরের
খাবার খেলে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন-ওজন বেশি, সঠিক
পুষ্টির অভাব, ঘরে তৈরি খাবারে অনীহা, কৃমির প্রকোপ ইত্যাদি। সুতরাং বাইরের খাবার প্রতিদিন না খেতে দিয়ে
মাঝেমধ্যে দেওয়া যেতে পারে। বাইরের খাবার এড়ানোর ভালো উপায় বাসায় বাচ্চার পছন্দের
খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া। যে ধরনের খাবার সে প্রত্যাশা করে তার সঙ্গে মিল রেখে
খাবার তৈরি করলে নিশ্চয়ই ঘরের খাবারই সে বেশি পছন্দ করবে।
১২ থেকে ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে
ক্যালরি ও প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ক্ষুধা বাড়ে এবং শর্করাবহুল খাবারের
প্রতি ঝোঁক বাড়ে। প্রোটিন তেমন খেতে চায় না। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ সময় হাড়
ও মাংসপেশি বর্ধনের জন্য ক্যালসিয়াম ও লৌহ প্রয়োজন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এ সময়
লৌহের প্রয়োজন বেড়ে যায়। এ জন্য তাদের খাবারে থাকতে হবে ডিম, কলিজা, মাংস, সব
রকমের সবজি ও শাক, বিশেষ করে কচুশাক। প্রতিদিন ডাল ও টক
ফল খেতে পারলে ভালো হয়। এ সময় বিপাকক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়, ফলে আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হয়। এদিকে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের
বি-ভিটামিন বেশি প্রয়োজন তাদের শক্তি ও বর্ধনের জন্য।
মানুষের জীবনচক্রের শেষপ্রান্ত
হলো পূর্ণবয়স্ক ও বৃদ্ধ বয়স। বয়স বাড়লেও শারীরিক ক্রিয়াকর্ম থেমে থাকে না।
প্রকৃতির নিয়মে তা চলতেই থাকে। তবে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগে শারীরিক বর্ধনের গতি শেষ
হয়।
বয়স্ক থেকে বৃদ্ধ-এ সময়টাকে তিন ভাগে ভাগ
করা যায়। যেমন-
১৮-৪০ বছর,
৪০-৬০ বছর এবং
৬০-৮০ ও তার ওপরে।
১৮-৬০ বছর-এই সময়ে মানুষ বেশ
মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ এবং নিজের ক্যারিয়ার
নিয়ে ব্যস্ত থাকা ও শরীরের প্রতি যত্ন না নেওয়া। ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় কেউ
কেউ ভুগে থাকেন। বয়স যত বাড়বে, ক্যালরির পরিমাণ ধীরে
ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। এ সময় সহজ শর্করা অর্থাৎ চিনি-গুড় কমিয়ে ফেলা অথবা একেবারে বাদ দেওয়া ভালো। জটিল শর্করা যেমন-ভুসিযুক্ত আটার রুটি, লাল
চাল, ডাল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। এতে ওজন বৃদ্ধি ও
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচা যাবে।
মোট ক্যালরির ১০-১৫ শতাংশ চর্বি
জাতীয় খাবার খেতে হবে। সাধারণত ৫০ বছরের পর কোলেস্টেরল বেশি হতে দেখা যায়। সে জন্য
উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার যেমন-ডিমের কুসুম, কলিজা,
মগজ, মাছের ডিম, চর্বিযুক্ত দুধ, হাঁস-মুরগির চামড়া বাদ দিতে
হবে।
মোট ক্যালরির ১৫-২০ শতাংশ
প্রোটিন বা আমিষ দিতে হবে। কারণ এ সময় নতুন কোষ গঠন না হলেও শুধু কোষের
রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই প্রোটিন প্রয়োজন। এদিকে হাড়ের ক্ষয় রোধ করার জন্য
ভিটামিন-ডি প্রয়োজন, যা ক্যালসিয়াম শোষণের কাজে লাগে।
খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও লৌহের প্রতি জোর দিতে হবে।
পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে
হবে কোষ্ঠকাঠিন্য ও প্রস্রাবে যাতে কোনো সংক্রমণ না হয় সে জন্য। পর্যাপ্ত পানি পান
করলে ত্বকও ভালো থাকে, শরীরে বয়সের ছাপ কম পড়ে। অনেক
অসুখবিসুখ কম হয়।
৬০ বছরের পর মানুষের খাবারের
প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ কমে যায়। এ সময় যেকোনো খাবার হজম করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ
কারণে বৃদ্ধ বয়সে খাবার যেমন কমিয়ে দিতে হবে, তেমনি
খাবার হতে হবে কম মসলাযুক্ত ও সহজপাচ্য। দাঁতের সমস্যার জন্য যাদের খাবার খেতে
অসুবিধা হয় তাদের নরম ও তরল খাবারই ভালো।
যাদের শারীরিক অসুখবিসুখ আছে, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও লিভারের অসুখ, হার্টের অসুখ ইত্যাদি তাদের খাদ্য নির্বাচন করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।
খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা,
বিভিন্ন দেশের খাদ্যাভ্যাস, বাঙালির খাদ্যাভ্যাস
ও পোশাকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শরীরচর্চা ও সুস্থ জীবন, শরীরচর্চা কি?, শরীরচর্চা
কাকে বলে?, শরীরচর্চা করার নিয়ম, শরীরচর্চা এস্যাইনম্যান্ট, শরীরচর্চা করার উপকারিতা,
ব্যায়াম এর উপকারিতা, Eating habits and exercise,
what to eat after workout to lose weight, best foods for fitness, gym food list
for weight loss,
দ্যাভ্যাস ও পোশাকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, শরীরচর্চা ও সুস্থ জীবন, শরীরচর্চা কি?, শরীরচর্চা কাকে বলে?, শরীরচর্চা করার নিয়ম, শরীরচর্চা এস্যাইনম্যান্ট, শরীরচর্চা করার উপকারিতা, ব্যায়াম এর উপকারিতা, Eating habits and exercise, what to eat after workout to lose weight, best foods for fitness, gym food list for weight loss,