কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে তাওহীদের গুরুত্ব ও প্রকারভেদ | The importance and types of Tauhid in the eyes of Quran and Hadith

 

কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে তাওহীদের গুরুত্ব ও প্রকারভেদ
তাওহীদের গুরুত্ব ও প্রকারভেদ

ভূমিকা

আল্লাহ তাআলার যাবতীয় গুণাবলীর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গুণ বা সিফাত হল তাওহীদ। দেহের সুস্থতা যেমনিভাবে আত্মার উপর নির্ভর করে তেমনি ভাবে ইসলামের পরিশুদ্ধতা ও সুস্থতা সঠিক আক্বীদা বা তাওহীদের উপর নির্ভরশীল। তাওহীদের সাক্ষ্য মহান আল্লাহ তা'আলা নিজেই দিয়েছেন,

شَہِدَ اللّٰہُ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۙ  وَالۡمَلٰٓئِکَۃُ وَاُولُوا الۡعِلۡمِ قَآئِمًۢا بِالۡقِسۡطِ ؕ  لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ؕ

আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।

(সূরা আল ইমরান ৩:১৮)

তাওহীদ এর আভিধানিক অর্থ

তাওহীদ توحيد শব্দটি ভাবে তাফয়ীল (باب تفعيل) এর মাসদার। وحد ধাতু থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হল একত্ববাদ, একক, কাউকে একক বলে স্বীকার করা। ইংরেজিতে এর অর্থ হলো Unique, Singular, Incomparable ইত্যাদি।

তাওহীদ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা

আসমান ও যমীনসহ এর ভিতর ও বাইরের জানা-অজানা সকল সৃষ্টির একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।

তাওহীদের প্রকারভেদ

ক। توحيد الربوبيه (রব ও প্রতিপালক হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ)।

খ। توحيد الالوهيه (ইলাহ ও মাবুদ হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ)।

গ। توحيد الاسماء والصفات (নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদ)।

ক। তাওহিদুর রবুবিয়্যাহঃ توحيد الربوبيه হল রব ও প্রতিপালক হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ব সাব্যস্ত করা। যেমন মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,

اَلَا لَہُ الۡخَلۡقُ وَالۡاَمۡرُ ؕ

শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। (সূরা আরাফ ৭:৫৪)

মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা ইউনুসে বলেন,

قُلۡ مَنۡ یَّرۡزُقُکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ اَمَّنۡ یَّمۡلِکُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَمَنۡ یُّخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَیُخۡرِجُ الۡمَیِّتَ مِنَ الۡحَیِّ وَمَنۡ یُّدَبِّرُ الۡاَمۡرَ ؕ فَسَیَقُوۡلُوۡنَ اللّٰہُ ۚ فَقُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ

তুমি জিজ্ঞেস কর, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! তখন তুমি বলো তারপরেও ভয় করছ না(সূরা ইউনুস ১০:৩১)

সূরা জাসিয়াহ এ আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَلِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ

নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই।(সূরা জাসিয়াহ ৪৫:২৭)

খ। তাওহিদুল উলুহিয়্যাহঃ توحيد الالوهيه কে তাওহীদুল ইবাদাহ ও বলা হয়। বান্দার ইবাদত-বন্দেগী তথা সকল কার্যাবলী তে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। যেমন, সালাত, সাওম, হজ্বযাকাত, দোয়া, ভয়, আশা ইত্যাদি।

যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَالۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।(সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)

অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَاعۡبُدُوا اللّٰہَ وَلَا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا

আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। (সূরা নিসা ৪:৩৬)

সূরা আম্বিইয়ায় আল্লাহ প্রশ্ন করেন,

قَالَ اَفَتَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ مَا لَا یَنۡفَعُکُمۡ شَیۡئًا وَّلَا یَضُرُّکُمۡ ؕ

তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না (সূরা আম্বিয়া ২১:৬৬)

খ। তাওহীদুল আসমায়ী ওয়াস সিফাতিঃ মহান আল্লাহ তায়ালা যেসব সুন্দর নাম ও উন্নত গুণাবলীর দ্বারা নিজেকে গুণান্বিত করেছেন হুবহু সেভাবে এই গুণগুলো আল্লাহর জন্য এককভাবে সাব্যস্ত করাই হচ্ছে توحيد الاسماء والصفاتএক্ষেত্রে অর্থের কোন বিকৃতি করা যাবে না এবং অন্য কারো সাথে তার তুলনা করা যাবেনা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

لَیۡسَ کَمِثۡلِہٖ شَیۡءٌ ۚ وَہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡر

কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। (সূরা শুরা ৪২:১১)

সূরা আরাফে আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَلِلّٰہِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡہُ بِہَا ۪ وَذَرُوا الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اَسۡمَآئِہٖ ؕ سَیُجۡزَوۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।

(সূরা আরাফ ৭:১৮০)

মোটকথা, এই তিন প্রকারের তাওহীদের প্রত্যেকটি পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি আরেকটির সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেকোনো একটি বাদ দিলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। সে তাওহীদবাদী হতে পারে না।

তাওহীদের গুরুত্ব

আমলের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে তাওহীদ এর উপর।

১। তাওহীদ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি

ইসলামের পাঁচটি খুঁটির মধ্যে প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি হল তাওহীদ। যেমন হাদীছ শরীফে এসেছে,

حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا عَاصِمٌ، - وَهُوَ ابْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ - عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ "

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রসূল- এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সলাত  কায়িম করা, যাকাত দেয়া, বাইতুল্লাহর হাজ্জ করা ও রমাযানের সিয়াম পালন করা।

(ই.ফা. ২১; ই.সে. ২১) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২১

২। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে তাওহীদ

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বপ্রথম আবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে তাওহীদ। কোন মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে গেলে প্রথমে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। যেমনি ভাবে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যখন মহাজীবনের জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়েমেনে পাঠালেন তখন তাকে বললেন,

 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ " إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ، فَإِذَا جِئْتَهُمْ فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ، فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لَكَ بِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ "‏‏.

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, মুআয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের উপর সদকা (যাকাত) ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ হতে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদদুআকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদুআ) এবং আল্লাহ্‌র মাঝে কোন পর্দা থাকে না।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৪৯৬

৩। তাওহিদই সঠিক পথ পাওয়ার মাধ্যম

মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَلَمۡ یَلۡبِسُوۡۤا اِیۡمَانَہُمۡ بِظُلۡمٍ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡاَمۡنُ وَہُمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ 

যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী। (সূরা আনআম ৬:৮২)

আলোচ্য আয়াতে জুলুম দ্বারা শিরিক কে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সেরেক ও জুলুম সম্পর্কে বলেন,

اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ

নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। (সূরা লোকমান ৩১:১৩)

৪। তাওহীদ ছাড়া ইবাদত কবুল হবে না

তাওহীদ হচ্ছে ইবাদত সঠিক ও কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। ইবাদত যখন তাওহীদ ছাড়া শির্ক যুক্ত হয় তখন তা বরবাদ হয়ে যায়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدۡ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ وَاِلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ لَئِنۡ اَشۡرَکۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُکَ وَلَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। (সূরা যুমার ৩৯:৬৫)

৫। তাওহীদ হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ করার একমাত্র মাধ্যম

তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ এর সাক্ষ্য ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যেমন প্রিয় রাসূল সাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ النَّارَ " .

যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। 

(ই.ফা. ৪৯; ই.সে. ৫০) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৮

৬। তাওহীদ দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ থেকে মুক্তির উপায়

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

فَاِذَا رَکِبُوۡا فِی الۡفُلۡکِ دَعَوُا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۚ  فَلَمَّا نَجّٰہُمۡ اِلَی الۡبَرِّ اِذَا ہُمۡ یُشۡرِکُوۡنَ ۙ

তারা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে। (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৫)

৭। তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করাই নবী-রাসূলগণের দায়িত্ব ছিল

পৃথিবীতে যত নবী রাসূল আগমন করেছেন তারা সবাই তাহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَاجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ ہَدَی اللّٰہُ وَمِنۡہُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡہِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। (সূরা নাহল ১৬:৩৬)

৮। মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো তাওহীদ প্রতিষ্ঠা

আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَمَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَالۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত ৫১:৬৫)

তাওহীদের দাবি সমূহ

তাওহীদের দাবি সমূহ সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হল

১। একমাত্র আল্লাহকে ভালবাসতে হবে

وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰہِ

যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহ কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। (সূরা বাকারা ২:১৬৫)

২। একমাত্র আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَاشۡکُرُوۡا لِلّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগী কর। (সূরা বাকারা ২:১৭২)

৩। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে

وَاعۡبُدُوۡہُ وَاشۡکُرُوۡا لَہٗ ؕ اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ

আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

(সূরা আনকাবুত ২৯:১৭)

৪। একমাত্র আল্লাহকেই সেজদা করতে হবে

 

وَمِنۡ اٰیٰتِہِ الَّیۡلُ وَالنَّہَارُ وَالشَّمۡسُ وَالۡقَمَرُ ؕ لَا تَسۡجُدُوۡا لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَاسۡجُدُوۡا لِلّٰہِ الَّذِیۡ خَلَقَہُنَّ اِنۡ کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ تَعۡبُدُوۡنَ

তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর।  (সূরা হা-মীম সেজদাহ ৪১:৩৭)

৫। একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে

قُلۡ ہَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّہۡدِیۡۤ اِلَی الۡحَقِّ ؕ قُلِ اللّٰہُ یَہۡدِیۡ لِلۡحَقِّ ؕ اَفَمَنۡ یَّہۡدِیۡۤ اِلَی الۡحَقِّ اَحَقُّ اَنۡ یُّتَّبَعَ اَمَّنۡ لَّا یَہِدِّیۡۤ اِلَّاۤ اَنۡ یُّہۡدٰی ۚ فَمَا لَکُمۡ ۟ کَیۡفَ تَحۡکُمُوۡنَ

জিজ্ঞেস কর, আছে কি কেউ তোমাদের শরীকদের মধ্যে যে সত্য-সঠিক পথ প্রদর্শন করবে? বল, আল্লাহই সত্য-সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, সুতরাং এমন যে লোক সঠিক পথ দেখাবে তার কথা মান্য করা কিংবা যে লোক নিজে নিজে পথ খুঁজে পায় না, তাকে পথ দেখানো কর্তব্য। অতএব, তোমাদের কি হল, কেমন তোমাদের বিচার(সূরা ইউনুস ১০:৩৫)

৬। একমাত্র আল্লাহকে ভয় করতে হবে

وَقَالَ اللّٰہُ لَا تَتَّخِذُوۡۤا اِلٰـہَیۡنِ اثۡنَیۡنِ ۚ اِنَّمَا ہُوَ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَاِیَّایَ فَارۡہَبُوۡنِ

আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর। (সূরা নাহল ১৬:৫১)

৭। আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَاِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ

আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

(সূরা ফাতিহা ১:৪)

৮। একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করা উচিত

اِنۡ یَّنۡصُرۡکُمُ اللّٰہُ فَلَا غَالِبَ لَکُمۡ ۚ وَاِنۡ یَّخۡذُلۡکُمۡ فَمَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَنۡصُرُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِہٖ ؕ وَعَلَی اللّٰہِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ

যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত। (সূরা আল ইমরান ৩:১৬০)

৯। আল্লাহর বিধান মানতে হবে

اِتَّبِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَلَا تَتَّبِعُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اَوۡلِیَآءَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ

তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না। (সূরা আরাফ ৭:৩)

সমাপনী

ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তাওহীদ বিহীন নেক আমল কোন কাজেই আসবে না। নির্ভেজাল তাওহীদ মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি দিবে। তাই তাহরীতের জ্ঞান অর্জন করে শিরক মুক্ত সমাজ গঠন করা সকলের অন্যতম দায়িত্ব।

 তাওহীদ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা, তাওহিদ অর্থ, তাওহিদ মানে কি? তাওহিদ ইসলাম, তাওহিদ সুরা, তাওহীদ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা, তাওহীদ কী, তাওহীদ কাকে বলে ও কি কি, তাওহীদে উলুহিয়্যাহ কাকে বলে, tawhid meaning, tawhid islam, tawhid definition, tawhid quotes, tawhid en islam, tawhid rububiyyah, tawhid surah, tawhid book,tawhid name meaning in Bengali, tawhid name meaning, tawhid definition islam, tawhid ortho ki, tawhid quran, tawhid hadith, tawhid facebook, tawhid livre, tawhid example, tawhid mosque, tawhid symbol, tawhid in the quran, tawhid cest quoi, tawhid wal jihad, tawhid of allah, tawhid vs shirk, tawhid 3 types, tawhid rububiyyah and uluhiyyah,  tawhid name, tawhid hossain. tawhid coran, tawhid shirk, tawhid lyon, tawhid of islam, tawhid afridi Wikipedia, tawhid pronunciation, tawhid foundation, tawhid yabiladi, tawhid define, tawhid masjid, tawhid rahman, tawhid wiki, tawhid kake bole, tawhid jamil gojol, tawhid islam definition, tawhid quran quotes, tawhid belief, tawhid kitab, tawhid gcse, tawhid publications, tawhid enterprise, tawhid wallpaper, tawhid means, tawhid sign, tawhid def, tawhid the oneness of allah, tawhid name style,

 

]ডাউনলোড করুন