বই রিভিউ: বেলা ফুরাবার আগে : আরিফ আজাদ | Arif Azad

বই রিভিউ: বেলা ফুরাবার আগে   : আরিফ আজাদ | Arif Azad
বই রিভিউ: বেলা ফুরাবার আগে

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে একটি সাড়া জাগানো ইসলামিক বই নিয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত বা রিভিউ শেয়ার করব।  বইটির নাম "বেলা ফুরাবার আগে"।  বইটির লেখক আরিফ আজাদ।  এটি একুশে বই মেলা ২০২০ এর আরিফ আজাদ এর লেখা নতুন বই। বইটি প্রকাশ করেছে সমকালীন প্রকাশনী।

এর আগে লেখক আরিফ আজাদ প্যারাডক্সিকাল সাজিদআরজ আলী সমীপে লিখে ব্যপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার বই পড়ে অনেক যুবক হতে সাজিদ হতে চেয়েছে। তিনি মূলত ইসলামিক চিন্তাধারার লেখক। মূলত তাঁর বিশ্বাসকে লেখনির মাধ্যমে তরুণদের মাঝে প্রচার করছেন। তবে যারা ভিন্ন বিশ্বাসের সাথে যুক্ত তারা বরাবরের মতো তার লেখার বিরোধিতা করেছেন। আপনারা অবগত আছেন আরিফ আজাদের লেখা বেলা ফুরাবার আগে বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশনীকে অনেক চাপ নিতে হয়েছে। বই মেলাগুলোতে একধরণের অঘোষিত নিষধাজ্ঞা আরোপিত হয়ছিল তাঁর বই প্রকাশ ও বিক্রির উপর। এটা লেখক নিজেই ফেবুতে একটি স্ট্যাটাসে বলেছিলেন।

যা হোক সব শেষে বেলা ফুরাবার আগে বইটি ঢাকার বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত বই মেলায় বিক্রির অনুমতি পায়। বইটি প্রকাশে বাঁধা থাকার ফলে বইটির একধরনের প্রচার আগেই সোসাল মিডিয়ায় হয়ে যায়।তাই প্রথম দিনেই বই প্রেমীদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। একদিনেই প্রায় ১৫হাজার কপি বিক্রি হয়। যাই হোক এটা ছিল প্রেক্ষাপট।  এখন আমরা বইটি সম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করব।

বুক রিভিউ : বেলা ফুরাবার আগে, লেখক আরিফ আজাদ

এটা আমার একান্ত বাধ্যগত মতামত, তাই পাঠকভেদে প্রত্যকের মতামত ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।  হয়ত বইটি পড়লে আপনি আপনার জায়গা থেকে বুঝবেন এবং সেভাবেই মতামত দিবেন।

বইটির মূল উপজীব্য হচ্ছে তরুণ সমাজকে তাদের ভুলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া পথের দিক নির্দেশনা দেওয়া। তবে শুধু তরুণ সমাজ বললে ভুল হবে। কেননা এখানে মূলত যারাই সত্য ও সঠিক পথ ভুলে গিয়ে নিজেকে মিথ্যা আর অন্ধকার এর কালো মায়ায় জড়িয়ে প্রচন্ড হাবুডুবু খাচ্ছেন কিন্তু উত্তরনের পথ পাচ্ছেনা এবং পেতে চান তারাই আরিফ আজাদের উদ্দেশ্যে।

বইয়ের লেখাগুলো মূলত গল্পের মত। লেখক এখানে গল্পের মাধ্যমে আবার কুরআন হাদিসের কথাগুলো অত্যন্ত চমৎকারভাবে স্থান কাল পাত্রভেদে উপস্থাপন করেছেন। পাঠকদের মন আটকে রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। এই সময়ে যুবকরা হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে নিজের সময়, নিজের ক্যারিয়ারজীবন, অর্থাৎ মহামূল্যবান সসম্পদগুলো হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে, তাদের এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় বলে দিয়েছেন।  সাথে সাথে নিজের জীবনের কিছু সমস্যা এনে তার সমাধান করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

আরো সংক্ষেপে বলেতে গেলে, লেখক মূলত তার বিশ্বাসকে কুরআন ও হাদিসের বানী দিয়ে বইটি সাজিয়েছেন সময়োপযোগী করে। আর সেখানে আছে বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান।

তিনি বইটি অনেকগুলো গল্প দিয়ে সাজিয়েছেন।  তার মধ্যে প্রথম গল্পটার নাম ছিল "শুরুর আগে"। এখান বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল এর ঘটনাটি এনেছেন এবং তাঁর ইন্তেকালে সাহাবিদের মানসিক অবস্থার বর্ণনাও দিয়েছেন।

আর যে গল্প দিয়ে মূলত তিনি বইটির নামকরণ করেছেন বলে আমার মনে হয় তা হচ্ছে বেলা ফুরাবার আগে। এই গল্পে তিনি রড্রিগেজ নামের এক ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর জীবনের অভিজ্ঞতা এনেছেন। যেখানে নারী ছিল একজন বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার। তার ব্যবহার করার মত গাড়ী, বাড়ি, জুতো, কাপড়, ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই ছিল এবং সেগুলো সবচেয়ে দামী ও উন্নত ব্র‍্যান্ডের কিন্ত তিনি কিছুই ব্যবহার করতে পারেন নি। তিনি শুধু হসপিটাল থেকে দেওয়া একটি চাদর ব্যবহার করতে পেরেছে। জীবনের এমন নির্মম পরিস্থিতির কথা গল্পের মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে লেখক আরিফ আজাদ পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন।

শেষের গল্পটি ছিল, চলো বদলাই।  এখানে লেখক মুসলমানদের ইতিহাসের কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার মনে হয়েছে তিনি বুঝাতে চাচ্ছিলেন মুসলিমের উচিত তাদের ইতিহাস বা তাদের পূর্ব পুরুষদের ভুলে না যাওয়া। কারণ যে জাতি তার অতীত ইতিহাস ভুলে যায় তাদের পতন নিশ্চিত। আমি মনে করি হেদায়েত প্রত্যাশী প্রতিটি মানুষের এই বইটি পড়া উচিৎ 

কিছু অসংগতি না বললেই নয়, তা হচ্ছে লেখকের এত জনপ্রিয়তা অথচ বইয়ে কিছু অতি সাধারণ বানানে ভুল দেখা যাচ্ছে।  এটা আমি লেখককেই দোষ দিচ্ছিনা হয় টাইপিং মিসটেইকও হতে পারে কিন্ত এটা আরিফ আজাদের লেখা বই থেকে প্রত্যাশা করা যায় না। কারণ তার লেখাগুলোর অনেক বিরোধিতাকারী আছে।

বইটি পড়ে নিজের মতামত জানানোর অনুরোধ রইল।

বুক রিভিউ : বেলা ফুরাবার আগে : আরিফ আজাদ


অনলাইনে অর্ডার করুন।

রকমারি | ওয়াফিলাইফ | দারাজ