মিথ্যা, অসততা, দায়িত্বহীনতা ও অন্যায় এর ক্ষতিকারক দিক সমূহ এবং প্রতিকারের উপায়

মিথ্যা, অসততা, দায়িত্বহীনতা ও অন্যায়

ভূমিকাঃ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আমরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নানা প্রকার অন্যায় অপরাধে জড়িত। এইগুলোর মধ্যে কোনটি বড়, কোনটি ছোট। তবে সকল পাপের ফলাফলই খারাপ। শুধুমাত্র যে পরকালে শাস্তি হবে বিষয়টা এমন নয়। দুনিয়ার জীবনেও এর একটা ক্ষতিকর প্রভাব থাকে। প্রসঙ্গক্রমে আজকের মোটিভেশন ক্লাসের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে মিথ্যা, অসততা, দায়ীত্বহীনতা ও অন্যায় এর ক্ষতিকারক দিক সমূহ এর প্রতিকারের উপায়। পুর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে কয়েকটি কথা বলার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ। 

মিথ্যাঃ মিথ্যা ভয়াবহ গুনাহ। মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকতে ইসলাম দৃঢ়ভাবে সতর্ক করেছে। ইসলামে মিথ্যার সামান্যতম আশ্রয় বা সুযোগ নেই। কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, এটা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ও গর্হিত। মিথ্যাবাদীর পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতে খুবই নিন্দনীয়। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে ও মৌলিক স্বার্থে মিথ্যা বলার অবকাশ দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহর সাথে মিথ্যাঃ  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
‏إِنَّمَا يَفْتَرِى ٱلْكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِـَٔايَتِ ٱللَّهِ ۖ وَأُو۟لَٓئِكَ هُمُ ٱلْكَذِبُونَ
মিথ্যা তো তারাই বানায়,যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ঈমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যুক। (সুরা নাহাল,আয়াত: ১০৫)

মুসলিম মনীষীরা বলেছেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর ওপর মিথ্যারোপ করা। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। কেউ কেউ এ জাতীয় মিথ্যুককে কাফের পর্যন্ত বলেছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন,

 ‏وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ ٱلْكَذِبَ هَذَا حَلَلٌۭ وَهَذَا حَرَامٌۭ لِّتَفْتَرُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার ওপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর ওপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না। (সুরা নাহাল, আয়াত : ১১৬)

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,
এর অর্থ হচ্ছে যে রাসূল সা. এর ওপর মিথ্যা বলবে সে যেন নিজ স্থায়ী ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়। (তারিকুল হিজরাতাইন : ১৬৯)

মিথ্যা বলা মুনাফিকের লক্ষণঃ মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি


عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنهأنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ». متفقٌ عَلَيْهِ . زَادَ في رِوَايةٍ لمسلم: « وإنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أنَّهُ مُسْلِمٌ » .
বাংলা অনুবাদ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনমুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি
(১) কথা বললে মিথ্যা বলে।
(২) ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং
(৩) আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে,যদিও সে রোযা রাখে এবং নামাজ পড়ে ও ধারণা করে যেসে মুসলিম।’ [বুখারি ৩৩২৬৮২২৭৪৯৩১৭৮মুসলিম ৫৮তিরমিযি ২৬৩২নাসায়ি ৫০২০আবু দাউদ ৪৬৮৮আহমদ ৬৭২৯৬৮২৫৬৮৪০]
সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে যেরাসূল (সা.) বলেছেনতিনটি জিনিস মুনাফিকের নিদর্শনসে যতই নামায-রোযা করুক এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করুকতাহলো কথা বললে সে মিথ্যা বলেওয়াদা করলে তা খেলাফ করে এবং আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে।'

বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে রাসূল (সা.) বলেছেন,


চারটি দোষ যার ভেতরে থাকবে সে পাক্কা মুনাফিক। আর যার ভেতরে এর একটি থাকবে, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার ভেতরে মুনাফেকির একটি আলামত থেকে যাবে। আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা খেলাফ করা, মিথ্যা বলা ও ঝগড়ার সময় গালিগালাজ করা।' সহীহ বুখারীতে যে দীর্ঘ হাদীসে রাসূল (সা.)-এর স্বপ্নের বৃত্তান্ত দেয়া হয়েছে, তার এক জায়গায় রাসূল বলেন, এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আমরা উপস্থিত হলাম। দেখলাম, এক ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়িয়ে লোহার একটি অস্ত্র দিয়ে একবার তার ডানপাশের চোয়াল ও চোখ একেবারে পেছন পর্যন্ত ফেড়ে দিচ্ছে। তারপর যখনই বাম দিকে অনুরূপ ফেড়ে দিচ্ছে, তখন ডান দিকটা আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ডান দিকে পুনরায় চোয়াল ফেড়ে দিলে বাম দিক ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম : এই ব্যক্তি কে? আমার সঙ্গী ফিরিশতাদ্বয় বললেন, সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা গুজব রটিয়ে ছেড়ে দিতো এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত।

গুজব ছড়ানোঃ অনেকের মধ্যে নিজের বিশ্বাস প্রচারের প্রবণতা দেখা যায়, যারা প্রচারিত কোনো সংবাদ নিজের মত, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূলে হলে তা যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করে না। পাওয়ামাত্রই প্রচার শুরু করে। ইসলাম এই প্রবণতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে।

শোনা কথা বিশ্বাস করাঃ হাফস ইবন আসেম থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেনে, ব্যক্তির মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলবে। (মুসলিম : ৫)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ সব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যা যা শোনা যায় তার সব কিছু বলা নিষেধ। কারণ, প্রতিনিয়ত সত্য-মিথ্যা অনেক কিছুই শোনা যায়, অতএব যে ব্যক্তি সব কিছু বলে বেড়াবেতার দ্বারা মিথ্যা প্রচারিত হওয়াই স্বাভাবিক, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আর এটাই হচ্ছে মিথ্যা, মিথ্যার জন্য ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দখল নেই। হ্যাঁ, গোনাহগার হওয়ার ইচ্ছা শর্ত। আল্লাই ভাল জানেন। (শরহু মুসলিম : ১/৭৫)
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِۦ عِلْمٌ ۚ إِنَّ ٱلسَّمْعَ وَٱلْبَصَرَ وَٱلْفُؤَادَ كُلُّ أُو۟لَٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔولًۭا
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই,তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান,চোখ,অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে যেসব কারণে
এক. যুদ্ধে মিথ্যা বলা বৈধ।
দুই. দুপক্ষের মাঝে সমঝোতা করার জন্য মিথ্যা বলা বৈধ।
তিন. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও মিল তৈরির করার জন্যও মিথ্যা বলা বৈধ।
উম্মে কুলসুম (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দুই জনের মাঝে সমঝোতা করার জন্য ভালো কথার আদান-প্রদানকালে মিথ্যা বলেসে মিথ্যুক নয়। (বুখারি, হাদিস নং : ২৫৪৬; মুসলিম, হাদিস নং : ২৬০৫)
আসমা বিনতে ইয়াজিদ বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন জায়গা ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মিথ্যা বলা, যুদ্ধে মিথ্যা বলা এবং দুজনের মাঝে সমঝোতা করার জন্য মিথ্যা বলা বৈধ। (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৯৩৯; সহিহ আল-জামে : ৭৭২৩)

মিথ্যাবাদীর পরিণামঃ
 لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَذِبِينَ
মিথ্যাবাদীদের উপর অভিসম্পাত।' (আল-ইমরান-৬১)
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ مُسْرِفٌۭ كَذَّابٌۭ
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা মিথ্যুক অপচয়ীকে সুপথ দেখান না।' (মুমিন : ২৮)।

সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, সত্যবাদীতা মানুষকে সততার পথে টেনে নিয়ে যায়, আর সততা টেনে নেয় জান্নাতের দিকে। কোন ব্যক্তি ক্রমাগত সত্য বলতে থাকলে এবং সত্যের পথ অন্বেষণ করতে থাকলে এক সময় তাকে সিদ্দিক তথা পরম সত্যনিষ্ঠ' বলে সে আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ হয়। আর মিথ্যা মানুষকে পাপাচারের দিকে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়। আর কোন ব্যক্তি ক্রমাগত মিথ্যা বলা ও মিথ্যার পথ অন্বেষণ করতে থাকলে এক সময় আল্লাহর দরবারে সে মিথ্যুক' হিসাবে লিখিত হয়।

মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায়ঃ কথা উঠেছিল আমাদের এক শিক্ষককে নিয়ে যিনি মিথ্যা কথা বলতে ছাত্রদেরকে নিষেধ করতেন। একদা আমরা তার বৈঠকখানায় অবস্থান করছিলাম, এমতাবস্থায় সেখানে এমন এক লোক এসে উপস্থিত যাকে তিনি পছন্দ করতেন না। আসা মাত্রই লোকটি প্রশ্ন করলো: তোমাদের গুরুমশাই কোথায়? আমরা জানতাম যে, উস্তাদজী তার সাথে দেখা করতে চান না; অথচ আমাদেরকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যকার সর্বকনিষ্ঠ জন সভয়ে বলে ফেললো যে, তিনি পাশের ফ্লাটে আছেন। উস্তাদজীকে তার কথামত ডাকা হলো, তিনি আসলেন এবং তার সাথে জরুরী কথাবার্তা সারলেন। কিছুক্ষণ পর লোকটি বিদায় নিলো। আমরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলামআমাদের অবস্থা দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে, তার অবস্থান বলে দেয়ায় তিনি যে খুশী হননি, এটা আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি, কিন্তু আমরা অপরাগ ছিলাম, কারণ মিথ্যা বলা যাবে না। তিনি ব্যাপারটা সহজ করে নিতে নিতে বললেন, তোমরা এমনটি বললেই পারতে যে, তিনি এখানে নেই আমরা বলে উঠলাম: এটা কি মিথ্যা নয়তিনি বললেন: না, এটা মিথ্যা নয় বরং বলার কৌশল। সাহাবী ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: 

ان في المعاريض لملدوحة عن الكذب
 বাচনভঙ্গী ও কথার কৌশলের মাধ্যমে মিথ্যা থেকে বাঁচা যায় [বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৮৫৭]
অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন
من صمت نجا
যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়

অসততাঃ
সুরাহ ইউসুফের ৮২ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সততটার উদাহরণ দিতে গিয়ে আলোচ্য ঘটনার অবতারণা করেন।
 ‏وَسْـَٔلِ ٱلْقَرْيَةَ ٱلَّتِى كُنَّا فِيهَا وَٱلْعِيرَ ٱلَّتِىٓ أَقْبَلْنَا فِيهَا ۖ وَإِنَّا لَصَدِقُونَ

(আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে) যে জনপদে আমরা ছিলাম, তার অধিবাসীদের জিজ্ঞেস করুন এবং যে যাত্রীদলের সঙ্গে আমরা এসেছি, তাদেরও জিজ্ঞেস করুন। আমরা অবশ্যই সত্য বলছি। [সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮২
তাফসির : ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা বিনিয়ামিনের ব্যাপারে সত্য কথা বলেছিল। তারা বলেছিল, বিনিয়ামিন চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা নিজেদের থেকে তার কোনো ক্ষতি করিনি। তারা সত্য কথা বললেও বাবা ইয়াকুব (আ.) তাদের কথা বিশ্বাস করেননি। কারণ তারা এর আগে ইউসুফ (আ.)-এর ব্যাপারে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিল। আর বিশ্বাস এমন একটি জিনিস, একবার নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
সত্যবাদিতার পুরস্কার জান্নাতঃ আর মিথ্যার শাস্তি জাহান্নাম। হজরত আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে মুখস্থ করেছি,
যা তোমাকে সন্দেহে পতিত করে, তা ছেড়ে দিয়ে এমন বস্তুর দিকে যাও, যা তোমাকে সন্দেহে পতিত করে না। সততা ও সত্যবাদিতা নিশ্চয়ই প্রশান্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী। (তিরমিজি শরিফ)
এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ সত্য কথা বলে মনে প্রশান্তি লাভ করে, যদিও তা নিজেদের বিরুদ্ধে যায়। অন্যদিকে মানুষ মিথ্যা বলে মানসিকভাবে চিন্তিত থাকে। ভয় করে লোকসমাজে আমার মিথ্যা ধরা পড়ে যায় কি না।
সততা মানব চরিত্রে একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। মানব জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ গুণ যার মাঝে আছে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সত্যিকার মুমিন সততাকে চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য থেকে ঊর্ধ্বে মনে করেন। কেননা তারা জানেন, এটি ইমান ও ইসলামের পূর্ণতা দান করে।
সুরাহ তাওবার ১১৯ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 

 
‏يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَكُونُوا۟ مَعَ ٱلصَّدِقِينَ
সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত-সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হও। সূরা আত তওবা: ১১৯

অনেক স‍ৎ গুণের বৈশিষ্ঠ সততা। অসংখ্য হাদিসেও সততার গভীরতার বিষয়টি ফুটে ওঠেছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিয়তের বিশুদ্ধতা ও সততা সঙ্গে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনের প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছাবে.... যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। সহিহ মুসলিম


অন্য এক হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সততা আন্তরিকতার সঙ্গে শাহাদত লাভ করতে চায়, শহীদ না হলেও শহীদের র্মযাদা ও সওয়াব দেয়া হবে। সহিহ মুসলিম

সততা, যোগ্যতা, দক্ষতাঃ একজন মানুষের মধ্যে এই তিনটি গুণ থাকতে হবে। একটির ঘাটতি দেখা দিলে তার দ্বারা নানা প্রকার বিপর্যয় দেখা দিবে।
অসততা থেকে বাঁচার উপায়ঃ প্রতারক কখনো ঈমানদার বা বিশ্বাসী হতে পারে না। ধর্মভীরু হতে হলে তাকে নিশ্চয়ই প্রতারণামূলক আচরণ পরিহার করতে হবে। যে লোক প্রতারণা করে, তাকে কেউ বিশ্বাস ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করে না। এমনকি তার সঙ্গে কেউ লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহিত হয় না। সবার কাছে সে উপেক্ষিত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে প্রতারক ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয় এবং সে সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হয়ে যায়। যারা প্রতারণামূলক অপরাধে জড়িয়ে পড়বে, তাদের ইসলামি আদর্শের গণ্ডিবহির্ভূত বলে গণ্য করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে সে আমাদের মুসলমানদের দলভুক্ত নয়। (মুসলিম)

দায়িত্বহীনতাঃ
সৃষ্টির সেরারূপে মানুষকে সৃষ্টি করে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের ওপর কোনো না কোনো দায়-দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। কর্মময় জীবনে মানুষ নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করবে, এটাই স্বাভাবিক। সাধারণত আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে দায়িত্ব সম্পাদন করাই কর্তব্যপরায়ণতা।

জীবনের সর্বাবস্থায় ধর্মীয় রীতি-নীতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে ভূমিকা পালনের চেতনাই হল কর্তব্যপরায়ণতার মূল অঙ্গীকার। আল্লাহতায়ালা মানুষকে কর্তব্য পালনের নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন, তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে।

কর্তব্যপরায়ণতার পরিধি অনেক বিস্তৃত। মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়। সে খেয়ালখুশি অনুযায়ী চলতে পারে না। সমাজের সবার সুবিধার্থে ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হয়। শুধু ঘরে বসে অলস জীবনযাপনের কোনো অর্থ হয় না। এমনকি বিরাট অর্থ-বিত্তশালী ব্যক্তিও কাজকর্ম ছাড়া অলসভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পছন্দ করে না। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে সব মানুষের প্রতি পারস্পারিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তাই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। ইমানদারের প্রতিটি কর্তব্যই ইবাদত, যদি তা কল্যাণকর ও নিঃস্বার্থ হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কর্মের ফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সহিহ বোখারি

দায়িত্বহীনতার পরিণামঃ
 وعن ابن عمر رضي اللَّه عنهما قَالَ: سمِعتُ رسولَ اللَّه يقولكُلُّكُم راعٍ، وكُلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رعِيَّتِهِ: الإمامُ راعٍ ومَسْؤُولٌ عَنْ رعِيَّتِهِ، والرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرأَةُ راعيةٌ في بيتِ زَوجها وَمسؤولةٌ عَنْ رعِيَّتِها، والخَادِمُ رَاعٍ في مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وكُلُّكُم رَاعٍ ومسؤُولٌ عَنْ رعِيَّتِهِ متفقٌ عَلَيْهِ.
বাংলা অনুবাদ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ [বুখারি ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযি ১৭০৫, আবু দাউদ ২৯২৮, আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০]

অন্য হাদিসে এসেছে
من ولي من امر المسلمين شيئا فغشهم هو في النار   عن انس (رض) قال قال رسول الله اللَّه
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোন বিষয়ে দায়িত্বশীল হলো, অতপর তাতে বিশ্বাসঘতকতা করলো, সে জাহান্নামে যাবে। (তাবারানী আল মুজামুস সগীর)

অন্যায়ঃ
আমাদের সমাজে অনেক অন্যায় বিদ্যমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি প্রায় সকল পরিমণ্ডলে আমরা নানা প্রকার অন্যায়ে লিপ্ত। আমাদের সমাজে খুব বেশি প্রচলিত কয়েকটি অন্যায়ের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।

১) গীবতঃ আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা হুজুরতের ১২ নং আয়াতে বলেন
يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱجْتَنِبُوا۟ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ ٱلظَّنِّ إِثْمٌۭ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا۟ وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًۭا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٌۭ رَّحِيمٌۭ 
হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ৷  দোষ অন্বেষন করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷  এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷  
গীবত কবরে শাস্তি ভোগের অন্যতম কারণ: একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (সা:) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে তেমন বড় কোন অপরাধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছেনা (যা পালন করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিল)। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, চুগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের ব্যাপারে অসতর্কতার কারনে। 
 অপর হাদিসে চুগলখোরীর পরিবর্তে গীবত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

২) চোগলখোরীঃ আল্লাহ বলেন,
 ‏وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍۢ مَّهِينٍ - ‏هَمَّازٍۢ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِيمٍۢ
সে ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যে কথায় কথায় শপথ করে, সে লাঞ্ছিত, যে অসাক্ষাতে নিন্দা করে, যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগায়। [সুরা আলা কালাম ১০ -১১]
রাসুল সঃ বলেছেনচোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [বুখারি, মুসলিম]

৩) সুদ ও ঘুষঃ সুদ ও ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন :

وَلَا تَأْكُلُوٓا۟ أَمْوَلَكُم بَيْنَكُم بِٱلْبَطِلِ وَتُدْلُوا۟ بِهَآ إِلَى ٱلْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا۟ فَرِيقًۭا مِّنْ أَمْوَلِ ٱلنَّاسِ بِٱلْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ 
তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না। 
(বাকারা ১৮৮)

ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী (সা.) সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদী কারবারের সাক্ষী এবং সুদ চুক্তি লিখনকে অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ঘুষ গ্রহণকারী এবং ঘুষদানকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লানত। (বুখারী, মুসলিম)

৪) অপচয় ও অপব্যয়ঃ
অপচয় ও অপব্যয়ের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। মানুষ যাতে এই খারাপ প্রবণতা থেকে দূরে থাকে সে জন্যই এ দুটি বিষয় সম্পর্কে এত বেশি সতর্ক করা হয়েছে। অপব্যয়কারীদের পবিত্র কোরআনে শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এরশাদ করা হয়েছে,
 - ‏إِنَّ ٱلْمُبَذِّرِينَ كَانُوٓا۟ إِخْوَنَ ٱلشَّيَطِينِ ۖ وَكَانَ ٱلشَّيْطَنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورًۭا
- ‏وَءَاتِ ذَا ٱلْقُرْبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلْمِسْكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا

আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কর না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনি ইসরাইল ২৬-২৭)
অপব্যয়ের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আল্লাহপাক সুরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে বলেছেন,

  يَبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ وَلَا تُسْرِفُوٓا۟ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْرِفِينَ
হে বনী আদম। তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপচয় কর না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ : ৩১)

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বিলাসিতা পরিহার কর, আল্লাহর নেক বান্দারা বিলাসী জীবনযাপন করে না। (মুসনাদে আহমদ)

৫) মাদকঃ কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ * إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও (ভাগ্য) নির্ণায়ক) শর ঘৃণ্য বস্ত্ত, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
শয়তান তো এ-ই চায় যে, মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখবে। সুতরাং তোমরা কি নিবৃত্ত হচ্ছ?
-সূরা মাইদা ৫: ৯০-৯১

৬) অহংকারঃ অহংকার একটি খারাপ গুণ। এটি ইবলিস ও দুনিয়ায় তার সৈনিকদের বৈশিষ্ট্য; আল্লাহ যাদের অন্তর আলোহীন করে দিয়েছেন।
সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির উপর যে অহংকার করেছিল সে হচ্ছে লানতপ্রাপ্ত ইবলিস। যখন আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিলেন আদমকে সেজদা কর; তখন সে অসম্মতি জানিয়ে বলল: 

وَلَقَدْ خَلَقْنَكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ ٱلسَّجِدِينَ
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌۭ مِّنْهُ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ

আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন: 
আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম, এরপর আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বললামআদমকে সেজদা কর; তখন সবাই সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের মধ্যে ছিল না। আল্লাহ বললেন: আমি যখন তোকে সেজদা করার আদেশ দিলাম তখন কিসে তোকে সেজদা করতে বাধা দিল? সে বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে। [সূরা আরাফ, আয়াত: ১১-১২]

সমাপনিঃ উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন  আমাদের সকলকে সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাউফিক দান করুন। আমিন
MOTIVATION CLASS,  মোটিভেশন ক্লাস

 PDF Download

এই ক্লাসটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

এই ক্লাসটি DOC ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন