Header Ads

ad728
  • ব্রেকিং

    কুরআন এবং হাদিসের আলোকে মুনাফিকের আলামত ও নেফাকি থেকে বাঁচার উপায়

    কুরআন এবং হাদিসের আলোকে মুনাফিকের আলামত ও নেফাকি থেকে বাঁচার উপায়

    মুনাফিকের আলামত এবং নেফাকি থেকে বাঁচার উপায় 

    ইসলামী আক্বিদার মৌলিক বিষয় গুলো অকপটে স্বীকার করে অন্তরে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। আর অস্বীকার করাকে বলা হয় কুফর। ঈমান এবং কুফরের মধ্যখানে একটি স্তর আছে, তা হল নিফাক অর্থাৎ মুনাফিকী। মুনাফিকরা অবিশ্বাসীদের চাইতে বেশি ভয়ংকর। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় অবিশ্বাসীদের চেয়ে মুনাফিকরাই ইসলামের বেশি ক্ষতি করেছে। অবিশ্বাসীরা ক্ষতি করে প্রকাশ্যে আর মুনাফিকরা ক্ষতি করে গোপনে। তাই তাদেরকে চেনা যায়না। এই কারনেই আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ সতর্ক করেছেন।

    মুনাফিকের পরিচয়।   আরবী নিফাক শব্দ থেকে মুনাফিক শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ হল দ্বি-মুখি স্বভাব বিশিষ্ট, বিশ্বাসঘাতক। অন্তরে কুফরি রেখে বাহ্যিক ইসলামী আচরণ প্রদর্শন করা। ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতি সাধনকারী ব্যক্তিকে মুনাফিক বলা হয়। ইঁদুরের গর্তের চোরা বাহির হওয়ার  পথকে আরবিতে না-ফিক্বা বলা হয়, যে পথে দিয়ে সে প্রয়োজনে লুকিয়ে মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাতে পারে। মুনাফিক ব্যক্তিও নিজেকে বাঁচানোর জন্য এভাবে চোরা পথ ব্যবহার করে।

    মুনাফিক চেনার উপায়।

    ক। মুনাফিকরা আল্লাহ ও পরকালে অবিশ্বাস করে না

    وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ اٰمَنَّا بِاللّٰہِ وَبِالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَمَا ہُمۡ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ۘ

    আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। (সূরা আল বাকারা ২:৮)

    খ।  প্রদর্শনমূলক সৎকাজ করা

    اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰہَ وَہُوَ خَادِعُہُمۡ ۚ  وَاِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ  یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰہَ اِلَّا قَلِیۡلًا ۫ۙ

    অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সূরা আন নিসা ৪:১৪২)

    গ। প্রদর্শনীমূলক দান-খয়রাত করে

    وَالَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ رِئَآءَ النَّاسِ وَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَلَا بِالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ وَمَنۡ یَّکُنِ الشَّیۡطٰنُ لَہٗ قَرِیۡنًا فَسَآءَ قَرِیۡنًا

    আর সে সমস্ত লোক যারা ব্যয় করে স্বীয় ধন-সম্পদ লোক-দেখানোর উদ্দেশে এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না, ঈমান আনে না কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং শয়তান যার সাথী হয় সে হল নিকৃষ্টতর সাথী। (সূরা আন নিসা ৪:৩৮)

    ঘ।  মুশরিকদের সাথে আন্তরিকতা এবং তাদেরকে পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করা

    اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ تَوَلَّوۡا قَوۡمًا غَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ ؕ مَا ہُمۡ مِّنۡکُمۡ وَلَا مِنۡہُمۡ ۙ وَیَحۡلِفُوۡنَ عَلَی الۡکَذِبِ وَہُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ

    আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও দলভূক্ত নয়। তারা জেনেশুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে। (সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১৪)

    ঙ। ভালো কাজে বাঁধা দানকারী, মন্দ কাজে উৎসাহদাতা

    اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡکَرِ وَیَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَیَقۡبِضُوۡنَ اَیۡدِیَہُمۡ ؕ نَسُوا اللّٰہَ فَنَسِیَہُمۡ ؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

    মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তার, কাজেই তিনিও তাদের ভূলে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান। (সূরা আত তাওবাহ ৯:৬৭)

    চ। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দান

    یَوۡمَ یَبۡعَثُہُمُ اللّٰہُ جَمِیۡعًا فَیَحۡلِفُوۡنَ لَہٗ کَمَا یَحۡلِفُوۡنَ لَکُمۡ وَیَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ عَلٰی شَیۡءٍ ؕ اَلَاۤ اِنَّہُمۡ ہُمُ الۡکٰذِبُوۡنَ

    যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুত্থিত করবেন। অতঃপর তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে, যেমন তোমাদের সামনে শপথ করে। তারা মনে করবে যে, তারা কিছু সৎপথে আছে। সাবধান, তারাই তো আসল মিথ্যাবাদী। (সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১৮)

    ছ। হাদিসের দৃষ্টিতে মুনাফিকের তিনটি বিশেষ আলামত

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ

    আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ  

    ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;

    ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং

    ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩)

    জ। মুনাফিকরা তাদের শপথকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে

    اِتَّخَذُوۡۤا اَیۡمَانَہُمۡ جُنَّۃً فَصَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَلَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ

    তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছেন, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করে। অতএব, তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।(সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১৬)

    ঝ। মুনাফিকরা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে 

    اِتَّخَذُوۡۤا اَیۡمَانَہُمۡ جُنَّۃً فَصَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَلَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ

    তারা তাদের শপথকে ঢাল করে রেখেছেন, অতঃপর তারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বাধা প্রদান করে। অতএব, তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা আল মুজাদালাহ ৫৮:১৬)

    ঞ। মুনাফিকরা সলাতে উদাসীন

    وَمَا مَنَعَہُمۡ اَنۡ تُقۡبَلَ مِنۡہُمۡ نَفَقٰتُہُمۡ اِلَّاۤ اَنَّہُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰہِ وَبِرَسُوۡلِہٖ وَلَا یَاۡتُوۡنَ الصَّلٰوۃَ اِلَّا وَہُمۡ کُسَالٰی وَلَا یُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا وَہُمۡ کٰرِہُوۡنَ

    তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাসী, তারা নামাযে আসে অলসতার সাথে ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে। (সূরা আত তাওবাহ ৯:৫৪)

    اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰہَ وَہُوَ خَادِعُہُمۡ ۚ  وَاِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ  یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰہَ اِلَّا قَلِیۡلًا ۫ۙ

    অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সূরা আন নিসা ৪:১৪২)

    ট। ধর্মীয় পোশাকধারী

    وَاِذَا رَاَیۡتَہُمۡ تُعۡجِبُکَ اَجۡسَامُہُمۡ ؕ وَاِنۡ یَّقُوۡلُوۡا تَسۡمَعۡ لِقَوۡلِہِمۡ ؕ کَاَنَّہُمۡ خُشُبٌ مُّسَنَّدَۃٌ ؕ یَحۡسَبُوۡنَ کُلَّ صَیۡحَۃٍ عَلَیۡہِمۡ ؕ ہُمُ الۡعَدُوُّ فَاحۡذَرۡہُمۡ ؕ قٰتَلَہُمُ اللّٰہُ ۫ اَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ

    আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। তারা প্রাচীরে ঠেকানো কাঠসদৃশ্য। প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। ধ্বংস করুন আল্লাহ তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে ? (সূরা আল মুনাফিকুন ৬৩:৪)

    ঠ। মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী

    اِذَا جَآءَکَ الۡمُنٰفِقُوۡنَ قَالُوۡا نَشۡہَدُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُ اللّٰہِ ۘ  وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُہٗ ؕ  وَاللّٰہُ یَشۡہَدُ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَکٰذِبُوۡنَ ۚ

    মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সূরা আল মুনাফিকুন ৬৩:১)

    ড। ইসলাম বিরোধীদের নিকট বিচারপ্রার্থী

    فَلَا وَرَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَیُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

    অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।  (সূরা আন নিসা ৪:৬৫)

    ঢ। ইসলামী ব্যক্তিদের চরিত্র হননকারী

    اِنَّ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ بِالۡاِفۡکِ عُصۡبَۃٌ مِّنۡکُمۡ ؕ لَا تَحۡسَبُوۡہُ شَرًّا لَّکُمۡ ؕ بَلۡ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ لِکُلِّ امۡرِیًٴ مِّنۡہُمۡ مَّا اکۡتَسَبَ مِنَ الۡاِثۡمِ ۚ وَالَّذِیۡ تَوَلّٰی کِبۡرَہٗ مِنۡہُمۡ لَہٗ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ

    যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি। (সূরা নূর ২৪:১১)

    ণ। জিহাদকে ভয় করা

    اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ قِیۡلَ لَہُمۡ کُفُّوۡۤا اَیۡدِیَکُمۡ وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ ۚ فَلَمَّا کُتِبَ عَلَیۡہِمُ الۡقِتَالُ اِذَا فَرِیۡقٌ مِّنۡہُمۡ یَخۡشَوۡنَ النَّاسَ کَخَشۡیَۃِ اللّٰہِ اَوۡ اَشَدَّ خَشۡیَۃً ۚ وَقَالُوۡا رَبَّنَا لِمَ کَتَبۡتَ عَلَیۡنَا الۡقِتَالَ ۚ لَوۡلَاۤ اَخَّرۡتَنَاۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ؕ قُلۡ مَتَاعُ الدُّنۡیَا قَلِیۡلٌ ۚ وَالۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لِّمَنِ اتَّقٰی ۟ وَلَا تُظۡلَمُوۡنَ فَتِیۡلًا

    তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি জেহাদের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। (সূরা আন নিসা ৪:৭৭)

    ত। ঈমানদারদের বিপদে খুশী হয়

    اِنۡ تَمۡسَسۡکُمۡ حَسَنَۃٌ تَسُؤۡہُمۡ ۫  وَاِنۡ تُصِبۡکُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّفۡرَحُوۡا بِہَا ؕ  وَاِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَتَتَّقُوۡا لَا یَضُرُّکُمۡ کَیۡدُہُمۡ شَیۡـًٔا ؕ  اِنَّ اللّٰہَ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطٌ 

    তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান ৩:১২০)

    নেফাকী থেকে বাঁচার উপায়।

    একজন মুসলিম নিজকে মুনাফিকী থেকে পূতপবিত্র রাখতে চাইলে তাকে অবশ্যই সদগুণাবলী ও সৎকর্মে বিভূষিত হতে হবে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা তুলে ধরা হল :

    ক। তাকবীরে তাহরীমার সাথে সলাত আদায়

    مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فِى جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيْرَةَ الأُوْلَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ.

     

    যে ব্যক্তি প্রথম তাকবীর প্রাপ্তিসহ একাধারে চল্লিশ দিন (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত) জামাআতে আদায় করবে তার জন্য দুটি মুক্তিপত্র লিখে দেওয়া হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দ্বিতীয়টি মুনাফিকী থেকে মুক্তি। (তিরমিযী হা/২৪১)

    খ। কাফেরদের আনুগত্য না করা

    يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ اتَّقِ اللهَ وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيْماً حَكِيْماً.

    হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য কর না। অবশ্যই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (সূরা আল আহযাব ৩৩/১)

    গ। মুনাফিকদের উপেক্ষা করা

    أُولَـئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلاً بَلِيْغاً .

    ঐ মুনাফিকরাই তো তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি ওদের এড়িয়ে চল বা উপেক্ষা কর, ওদের উপদেশ দাও এবং ওদের এমন কথা যা মর্মে গিয়ে পৌঁছে (সূরা আন নিসা ৪/৬৩)

    ঘ।মুনাফিকদের সঙ্গে বিতর্কে না জড়ানো

    وَلاَ تُجَادِلْ عَنِ الَّذِيْنَ يَخْتَانُوْنَ أَنْفُسَهُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ خَوَّاناً أَثِيْماً.

    যারা নিজেদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তুমি তাদের পক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কখনো বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠকে পসন্দ করেন না (সূরা আন নিসা ৪/১০৭)

    ঙ। মুনাফিকদের প্রতি অবজ্ঞা দেখান এবং তাদের নেতা না বানানো

    عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تَقُولُوْا لِلْمُنَافِقِ سَيِّدٌ فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ سَيِّدًا فَقَدْ أَسْخَطْتُمْ رَبَّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ.

    বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা কোন মুনাফিককে সাইয়্যিদ বা নেতা নামে আখ্যায়িত করো না। কেননা সে যদি সত্যিই (তোমাদের) নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুকে ক্ষুব্ধ করবে। (আবু দাঊদ হা/৪৯৭৭)

    চ। মুনাফিকদের জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ না করা

    وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَداً وَلاَ تَقُمْ عَلَىَ قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ.

    তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে তুমি কখনও তার জানাযার ছালাত আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং পাপাচারী অবস্থাতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে (সূরা আত তওবা ৯/৮৪)

    ছ। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা 

    مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِّفَاقٍ 

    যে ব্যক্তি যুদ্ধ-জিহাদ না করে অথবা নিজের মনে যুদ্ধ-জিহাদের সংকল্প না করে মারা যাবে, সে মুনাফিকীর একটি শাখার উপর মারা যাবে। (সহিহ মুসলিম হা/১৯১০)

    সমাপনি

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা আলা আমাদের সকলকে নেফাকি থেকে বেঁচে থাকার তাউফিক দান করুন। আমিন 

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728