কুরআন ও হাদিসের আলোকে মুত্তাকী ব্যক্তির পরিচয় - জুমুয়ার খুতবা

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মুত্তাকী ব্যক্তির পরিচয়

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুত্তাকীর পরিচয়


 জুমুয়ার খুতবা

 الحمد لله رب العالمين، والعاقبه للمتقين، والصلاه والسلام على سيد الانبياء والمرسلين وعلى اله واصحابه اجمعين، اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ ভীরুদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম দুরুদ সালাম প্রিয় নবী (সাঃ), তাঁর পরিবারবর্গ সমস্ত সাহাবা কেরামের প্রতি আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই তাঁর কোন অংশীদার নেই আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা রাসূল

ايها الحاضرون الكرام، موضوع الخطبه في هذه اليوم "تعريف المتقي في ضوء القرآن والحديث"

সম্মানিত উপস্থিতি! আজকে আমাদের খুতবার আলোচ্য বিষয়

"কুরআন হাদিসের আলোকে মুত্তাকী ব্যক্তির পরিচয়"

তাকওয়ার পরিচিতি

ان عمر بن الخطاب رضي الله عنه سال ابي بن كعب عن التقوى، فقال له، اما سلكت طريقا ذا شوك؟ قال بلي قال فما علمت؟ قال شمرت واجتهدت. قال فذلك التقوى. ( مكتبه الشامله)

খলিফা ওমর (রাঃ) একবার হযরত উবাই ইবনে কা' কে জিজ্ঞেস করছিলেন, তাকওয়া কি? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আপনি কি কখনো কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন? তিনি বললেন হাঁ, উবাই ইবনে কা' বললেন, তখন আপনি কিভাবে চলেছেন? তিনি বললেন, খুব সতর্কতার সাথে কাঁটার আঁচড় থেকে শরীর কাপড় বাঁচিয়ে চলেছি উবাই ইবনে কা' বললেন, এটাই হলো তাকওয়া(সুরা বাকারার - নং আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর)

অদৃশ্যে বিশ্বাস, সালাত কায়েম, দান করা মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য

ايها الحاضرون الكرام، يقول الله تعالى عن هذا في القرآن الكريم

الٓـمّٓذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚ-  فِیۡہِ ۚ  ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ - الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَیُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ

সম্মানিত উপস্থিতি! মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বিষয়ে বলেনআলিফ লাম মীম সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই এটা মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াতযারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে(সূরা বাকারাঃ ১-)

কিতাব ও আখিরাতে বিশ্বাস

وَالَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَمَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ  وَبِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ  - اُولٰٓئِکَ عَلٰی ہُدًی مِّنۡ رَّبِّہِمۡ ٭ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করেতারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম(সূরা বাকারাঃ ৪-)

অর্থ উৎসর্গ, ক্রোধ সংবরণ ও ক্ষমা করা

وَسَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَجَنَّۃٍ عَرۡضُہَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُ ۙ  اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَۙ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَالۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ  وَاللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَۚ

মহান আল্লাহ তা'য়ালা অন্য আয়াতে বলেনঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান যমীন যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য

যারা স্বচ্ছলতায় অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন(আল ইমরানঃ ১৩৩-১৩৪)

মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য

لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَالۡمَغۡرِبِ وَلٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَالۡمَلٰٓئِکَۃِ وَالۡکِتٰبِ وَالنَّبِیّٖنَۚ وَاٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّہٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنَ وَابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَالسَّآئِلِیۡنَ وَفِی الرِّقَابِ ۚ وَاَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَی الزَّکٰوۃَ ۚ وَالۡمُوۡفُوۡنَ بِعَہۡدِہِمۡ اِذَا عٰہَدُوۡا ۚ وَالصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, ধার্মিকতা শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ ফিরাবে, বরং প্রকৃত ধার্মিকতা হলঃ

) আল্লাহর উপর ঈমান আনবে,

) কিয়ামত দিবসের উপর,

) ফেরেশতাদের উপর,

) কিতাবের উপর

নবী-রসূলগণের উপর,

) আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে

) আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে,

) যাকাত দান করে,

) যারা অঙ্গীকার পূর্ণ করে,

১০) যারা অভাবে, রোগে-শোকে যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী(আল বাকারাঃ ১৭৭)

আল্লাহ দেখছেন এই বিশ্বাস নিয়ে চলা

عن عباده بن الصامت قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم :«ان أفضل الإيمان أن تعلم أن الله معك حيث ما كنت» ( المعجم الا وسط الطيران - 8796)

হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "সর্বোত্তম ঈমান হল কথা বিশ্বাস করা যে, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ তোমার সাথে রয়েছেন" (তাবারানী- ৮৭৯৬)

বন্ধু গ্রহণের সতর্ক থাকা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে(মিশকাতঃ ৫০১৯, জামে আত-তিরমিজিঃ ২৩৭৮)

اعوذ بالله من الشيطان الرجيم اَلَّذِیۡنَ اسۡتَجَابُوۡا لِلّٰہِ وَالرَّسُوۡلِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَصَابَہُمُ الۡقَرۡحُ ؕۛ  لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا مِنۡہُمۡ وَاتَّقَوۡا اَجۡرٌ عَظِیۡمٌۚ

বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইআল্লাহ বলেন, যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার(আল ইমরানঃ ১৭২)

بارك الله لنا ولكم في القران الكريم ونفعنا واياكم بما فيه من الايات والذكر الحكيم

মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে আমাকে আপনাদেরকে বরকত দান করুন এবং তাঁর আয়াতসমূহ শিক্ষণীয় বাণী দ্বারা উপকৃত করুন

পিডিএফ ডাউনলোডকরুন