কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আলেমের মর্যাদা

 

কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আলেমের মর্যাদা
কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আলেমের মর্যাদা

আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সম্মানিত করেছেন ওহির জ্ঞান ও জীবন-বিধান দিয়ে। সেই ওহির জ্ঞান ও বিধি-বিধান মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল। তাঁরা ছিলেন জগত্বাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় করুণা ও রহমতস্বরূপ। আল্লাহর রহমতের সেই নবুয়তি ধারা আদম (আ.) থেকে শুরু হয়ে সমাপ্ত হয়েছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। তিনি শেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী এই দুনিয়াতে আগমন করবেন না। যুগে যুগে যাঁরা এই নবীদের জ্ঞান ধারণ করে আসছেন তাঁরাই যুগের হক্কানি উলামায়ে কেরাম।

১। আলেমদের আনুগত্য করা

তাঁরা আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তাঁদের কাছেই মানুষ লাভ করে কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান। চিনতে নিজের প্রভুকে, শিখতে পারে আল্লাহর বিধি-বিধান। বুঝতে পারে শরিয়তকে। মানতে পারে হালাল-হারামকে। তাঁদের মাধ্যমেই মানুষ খুঁজে পায় নিজের আসল পরিচয়। যাঁদের সংস্পর্শে এসে অন্ধকার জগতের মানুষগুলো সন্ধান পায় আলোকিত জীবনের। মৃত হৃদয়গুলো হয় পুনর্জীবিত। তাঁরা পৃথিবীর জন্য রহমত। তাঁরা উম্মতের জন্য বরকত। পরম হিতৈষী ও মঙ্গলকামী।  আল-কোরআনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের সঙ্গেই তাঁদের আনুগত্যেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَاَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَاُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বসম্পন্ন (সূরা আন নিসা ৪:৫৯)

২। আলেমরা আল্লাহকে বেশি ভয় করে

وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالۡاَنۡعَامِ مُخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُہٗ کَذٰلِکَ ؕ اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰہَ مِنۡ عِبَادِہِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ

এবং মানুষ, পশু ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও আছে অনুরূপ বর্ণ-বৈচিত্র্য। আল্লাহকে তো কেবল তারাই ভয় করে, যারা জ্ঞানের অধিকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি ক্ষমাশীল। (সূরা ফাত্বির ৩৫:২৮)

৩। যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা সমান নয়

اَمَّنۡ ہُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیۡلِ سَاجِدًا وَّقَآئِمًا یَّحۡذَرُ الۡاٰخِرَۃَ وَیَرۡجُوۡا رَحۡمَۃَ رَبِّہٖ ؕ  قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَالَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ  اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

তবে কি (এরূপ ব্যক্তি সেই ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে,) যে রাতের মুহূর্তগুলোতে ইবাদত করে, কখনও সিজদাবস্থায়, কখনও দাঁড়িয়ে, যে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজ প্রতিপালকের রহমতের আশা করে? বল, যারা জানে আর যারা জানে না উভয়ে কি সমান? (কিন্তু) উপদেশ গ্রহণ তো কেবল বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাই করে। (সূরা আয্‌-যুমার ৩৯:৯)

৪। আলেমদের নিকট জিজ্ঞাসা করার আদেশ

وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِمۡ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ۙ

(হে নবী!) তোমার পূর্বেও আমি অন্য কাউকে নয়, কেবল পুরুষ মানুষকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী নাযিল করতাম। (হে অবিশ্বাসীগণ!) যদি এ বিষয়ে তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। (সূরা আন নাহ্‌ল ১৬:৪৩)

৫। হাদিসের আলোকে আলেমের মর্যাদা

وعن عمرو بن شعيب، عن أبيه، عن جده - رضي الله عنهم - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرنَا، وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبيرِنَا». حديث صحيح رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح». وفي رواية أبي داود: «حَقَّ كَبيرِنَا».

আমর ইবনে শুআইব তার পিতার সূত্রে তার পিতামহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ () বলেছেন, সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের আলেমদের মর্যাদার জ্ঞান রাখে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং: ৪৮৫৯, রিয়াযুস সালিহীন, হাদীস নং ৩৫৫)

৬। আলেমদের সাথে শত্রুতা করার পরিণাম

وأما الأحاديث: فالأول: عن أبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الله تَعَالَى قَالَ: مَنْ عادى لي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ». رواه البخاري. «آذَنتُهُ»: أعلمته بأني محارِب لَهُ. «اسْتَعَاذَني» روي بالنون وبالباءِ.

হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ () বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শক্রতা রাখবে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা আমি যা তার উপর ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোন ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু সাওয়ালকরে, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। (রিয়াযুস সালিহীন, হাদীস নং ৯৫)

৭। আলেমগণ দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত কল্যাণের অধিকারী

مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ

আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। (বুখারী হাদিস নং ৭১)

৮। আলেমরা নবীগণের ওয়ারিশ

حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دَاوُدَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ رَجَاءِ بْنِ حَيْوَةَ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ جَمِيلٍ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ كُنْتُ جَالِسًا عِنْدَ أَبِي الدَّرْدَاءِ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ أَتَيْتُكَ مِنَ الْمَدِينَةِ مَدِينَةِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ لِحَدِيثٍ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَدِّثُ بِهِ عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏.‏ قَالَ فَمَا جَاءَ بِكَ تِجَارَةٌ قَالَ لاَ ‏.‏ قَالَ وَلاَ جَاءَ بِكَ غَيْرُهُ قَالَ لاَ ‏.‏ قَالَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ طَالِبَ الْعِلْمِ يَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاءِ وَالأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانِ فِي الْمَاءِ وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‏"‏ ‏.‏

নসর ইবন আলী জাহযামী (রাহঃ) কাসীর ইবন কায়স (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি দামেশকের মসজিদে আবু দারদা (রাযিঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বললোঃ হে আবু দারদা! আমি মদীনাতুর রাসূল () থেকে আপনার কাছে একটি হাদীস শোনার জন্য এসেছি। আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি নবী () থেকে তা বর্ণনা করেন। তিনি বললেনঃ তুমি তো কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আসনি? সে বললোঃ না। তিনি বললেনঃ সম্ভবত অন্য কোন উদ্দেশ্য হেতু আগমন করেছ? সে বললোঃ না। তিনি বললেনঃ অবশ্যই আমি রাসূলুল্লাহ ()-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের জন্য সফর করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সুগম করে দেন। আর নিশ্চয়ই ফিরিশতাগণ ইলম অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য তাঁদের পাখাসমূহ বিছিয়ে দেন। আর ইলম অন্বেষণকারীর জন্য আসমান ও যমীনবাসী আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করে, এমন কি পানির মাছও। নিশ্চয়ই আলিমের ফযীলত আবিদের উপর, যেমন চাঁদের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর। নিশ্চয়ই আলিমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দীনার ও দিরহাম উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে যান নাই, বরং তারা মীরাস হিসেবে রেখে যান ইলম দীন। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন এক বিরাট হিসসা লাভ করলো। (সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২২৩, আন্তর্জাতিক নং ২২৩)

৯। সকল সৃষ্টি আলেমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّهُ لَيَسْتَغْفِرُ لِلْعَالِمِ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الْحِيتَانِ فِي الْبَحْرِ ‏"‏ ‏.‏

হিশাম ইবন আম্মার (রাহঃ) আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ()-কে বলতে শুনেছিঃ বস্তুত সারা আসমান ও যমীনের অধিবাসী আলিমের জন্য মাগফিরাত চায়, এমন কি সমুদ্রের মাছও। (সুনানে ইবনে মাজা', হাদীস নং ২৩৯, আন্তর্জাতিক নং ২৩৯)

১০। আলেমরাই মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে

وَمَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰہِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি আনুগত্য স্বীকারকারীদের একজন। (হা-মীম আস-সিজদাহ্ ৪১:৩৩)

১১। আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى الصَّنْعَانِيُّ، حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ جَمِيلٍ، حَدَّثَنَا الْقَاسِمُ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ " . ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ . قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عَمَّارٍ الْحُسَيْنَ بْنَ حُرَيْثٍ الْخُزَاعِيَّ يَقُولُ سَمِعْتُ الْفُضَيْلَ بْنَ عِيَاضٍ يَقُولُ عَالِمٌ عَامِلٌ مُعَلِّمٌ يُدْعَى كَبِيرًا فِي مَلَكُوتِ السَّمَوَاتِ .

মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল আলা (রাহঃ) আবু উমামা আল-বাহিলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ () এর নিকট দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হল- একজন আবেদ আর একজন আলিম। রাসূলুল্লাহ্ () বললেনঃ একজন আবেদের উপর একজন আলিমের ফযীলত তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম ব্যক্তির তুলনায় আমার ফযীলতের ন্যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ্ () আরো বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা নিজে এবং তাঁর ফিরিশতাগণ, আসমান ও যমীনের সব অধিবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও (পানির) মাছ পর্যন্ত মানুষকে কল্যাণপ্রসূ শিক্ষকের (আলিমের) জন্য অবশ্যই দুআ করে থাকেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৮৫, আন্তর্জাতিক নং ২৬৮৫)

এই হাদীসটি হাসান-গারীব-সহীহ। ইমাম তিরমিযী (রাহঃ) বলেনঃ আবু আম্মার হুসাইন ইবনে হুরায়ছ খুযাঈ (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ফুযায়াল ইবনে ইয়ায বলেছেনঃ একজন আমলদার শিক্ষক আলিমকে আকাশ রাজ্যে মহান বলে আখ্যায়িত করা হয়।

১২। আলেমের মৃত্যুর মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا، يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا ". قَالَ الْفِرَبْرِيُّ حَدَّثَنَا عَبَّاسٌ قَالَ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ عَنْ هِشَامٍ نَحْوَهُ.

ইসমাঈল ইবনে আবু উওয়ায়স (রাহঃ)  আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ ()-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তাআলা বান্দার অন্তর থেকে ইলম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০০, আন্তর্জাতিক নং ১০০)

১৩। ধ্বংসের কারণ আলেমের বিরোধীতা করা

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِيهٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اغْدُ ‌عَالِمًا ‌أَوْ ‌مُتَعَلِّمًا ‌أَوْ ‌مُسْتَمِعًا أَوْ مُحِبًّا وَلَا تَكُنِ الْخَامِسَ فَتَهْلَكَ

হযরত আবূ বাকরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আলেম হও, অথবা আলেমের ছাত্র হও, অথবা আলেমের শ্রোতা হও, অথবা আলেমকে মোহাব্বতকারী হও, পঞ্চম ব্যক্তি হয়ো না, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবা। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৬২৬, আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৫১৭১, আলমুজামুস সগীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৭৮৬, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৭০৯, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪৯১]

১৪। আলেমদের বিরুদ্ধাচারণের কুফল

ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা ও মুসলমানদের বিশুদ্ধ পথে পরিচালনা করার জন্য যে আলেমরা নিজেদের সর্বস্ব কোরবান করেন তাদের প্রতি অবজ্ঞা বা ধৃষ্টতা প্রদর্শন করলে, তাদের নিয়ে উপহাস বা ঠাট্টা করলে বা বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করলে এর পরিণতি হবে ভয়ংকর।

ইমাম ত্বহাবী রহ, তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল আকিদাতুত তহাবিয়্যায় লিখেছেন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম যারা হাদিস, ফিকহ ও দ্বীনি দূরদর্শীতাসম্পন্ন, ন্যায়সঙ্গত কারণ ব্যতিত তাদের সমালোচনা করা জায়েজ নেই। যারা অন্যায়ভাবে তাদের সমালোচনা করবে তারা গোমরাহ হিসেবে গণ্য হবে। (আল আকিদাতুত ত্বহাবিয়্যাহ,,পৃষ্ঠা:১৪৫)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত: আলেমদের রক্ত বিষাক্ত। যে তার ঘ্রাণ নিবে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। যে তা ভক্ষণ করবে সে মারা যাবে।

আলেমদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করা আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করার নামান্তর। যে আলেমের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করে সে যেন স্বয়ং আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত হল।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন যে আমার ওলির সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করল; পরিণামে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। (সহিহ বুখারি)

আলেমের প্রতি বিদ্রুপ করলে অন্তর মরে যায়। হাফেজ ইবনে আসাকির (রহ.) বলেনযে ব্যক্তি আলেমের প্রতি বিদ্রুপাত্মক শব্দ ব্যবহার করে মৃত্যুর আগে তার অন্তর মরে যাবে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মোরগকে গালি দিও না; কেননা সে প্রত্যুষে মানুষকে নামাজের জন্য জাগিয়ে তোলে। (আবু দাউদ : ৫১০১)

নামাজের জন্য ডাকার কারণে একটি সাধারণ মোরগের ব্যাপারে যখন এমন বলা হল, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী, নবীর উত্তরাধিকারী আলেমদের সম্মান ও মানহানি থেকে বিরত থাকা তো আরও অধিকতর গুরুত্বের দাবি রাখে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন তার কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে। নিজেও সৎকর্ম করে এবং এও বলে যে, নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা হা মীম সাজদা)

অতএব, ইসলামি বিধি-বিধানের প্রকৃত মূল্যবোধ বজায় ও জাগরিত রাখার জন্য আলেম-ওলামাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও আস্থাশীল হতে হবে। তাদের প্রতি মান্যতা থাকতে হবে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে না। কারণ, আলেমদের বিরোধিতা করা ইসলাম বিরোধী হওয়ার নামান্তর।

সমাপনী

উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, আলেমগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাদের মাধ্যমেই মানব সমাজ ঐশী হেদায়াতের আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে। সেকারণ একজন আলেমের জন্য প্রবন্ধে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করা আবশ্যক। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণপূর্বক তোমার দ্বীন সঠিকভাবে বুঝার, তা একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করার এবং তার প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তাওফীক্ব দান কর এবং আলেমে দ্বীন হিসাবে কবুল কর- আমীন!

পিডিএফ ডাউনলোড

Direct DownloadGoogle Drive