ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ Secularism এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বৈষয়িক, অস্থায়ী এবং প্রাচীন।Secularism “সেক্যুলারিজম” একটি ল্যাটিন শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ রাজ্য, নীতি, শিক্ষা ইত্যাদি ধর্মের প্রভাব হতে মুক্ত রাখার মতবাদ। বাংলায় এর অনুবাদ করা হয় বৈষয়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ধর্মহীনতাবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায়, ধর্মের ব্যাপারে ব্যক্তি স্বাধীনতা বা ধর্মের পক্ষপাত শূন্যতা। এক কথায় ধর্মীয় অনুশাসনমুক্ত নাস্তিক্যবাদকেই বুঝায়।ধর্মনিরপেক্ষতার প্রবক্তাগণ কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম-কর্ম পালনে আপত্তি না জানালেও সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠার ঘোরতর বিরোধী।
এরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নাস্তিক হওয়ার পাশাপাশি সকল প্রকার
বৈষয়িকতা, রাজ্য অনুশাসন রীতি-নীতি ও মানব জীবনের সামষ্টিক বিষয়াদি হতে ধর্মকে নির্বাসন
দেয়ার একনিষ্ঠ সমর্থক।ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহাস : “সেক্যুলারিজম”-এর উৎপত্তি ইউরোপে।
ঊনবিংশ শতকে একজন ইংরেজ চিন্তাবিদ “সেক্যুলারিজম” কে একটি বিশ্বজনীন আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা চালান। এরা সেক্যুলারিষ্ট,
বৈষয়িকতাবাদী ধর্ম বিমুক্ত চিন্তাবিদ পরিচয় দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এদের মধ্যে বিশিষ্ট্য
স্থান দখল করেছিলেন জি.জে. হলিউক।
সেক্যুলারিজমকে প্রতিষ্ঠিত করণ প্রচেষ্টায় হলিউকের সহকর্মীদের মধ্যে চার্লস সাউথ ওয়েস, থমাস কুপার , থমাস পিটারসন ও ইউলিয়াম বিরটনব প্রমুখের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়। হলিউক ১৮৫১ খ্রী: “সেক্যুলারিজম” পরিভাষাটি রচনা করেন। ইউরোপে পাদ্রীদের মনগড়া মতামতের সাথে যখন গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের গবেষণালব্ধ মতামতের দ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং তারই ভিত্তিতে পাদ্রীদের উৎখাত করার জন্য “গীর্জা বনাম রাষ্ট্রের লড়াই” নামক দু’শ বছর ব্যাপী ঐতিহাসিক রক্তয়ী সংগ্রাম পরিচালিত হলে তখন সংস্কারবাদীরা একটি আপোষ রফার জন্য মার্টিন লথারের নেতৃত্বে প্রস্তাব দিল যে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক আর সমাজের ও পার্থিব জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকুক। এখান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে খ্রীস্টান ধর্মযাজক ও পাদ্রীদের প্রভাব নি:শেষ হয়ে যায়। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন ধর্মীয় প্রভাবহীন হয়ে পড়ে।১৮৪৯ খ্রী: এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। হলিউক এই আন্দোলনকে নাস্তিক্যবাদের উত্তম বিকল্প হিসেবে অভিহিত করেন।
ঐতিহাসিকভাবে সেক্যুলারিজম সব সময় নাস্তিক্যবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নেতা ব্রেডলেফ এর মত ছিল ধর্মীয় আক্বীদা-বিশ্বাস প্রতিহত করাই সেক্যুলারিজম এর কর্তব্য। তিনি মনে করতেন, ধর্মের এই সব কুসংষ্কারমূলক ধারণা বিশ্বাস যতদিন পর্যন্ত পূর্ণ শক্তিতে বিকশিত হতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত বস্তুগত উন্নতি লাভ করা সম্ভব হবে না। (ইসলামী আক্বীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, পৃষ্ঠা- ৬০১)উপরের ইতিহাস গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয় যে, খ্রীস্টবাদ ও গীর্জার আগ্রাসী ভূমিকা এবং পুঁর্তি-দুর্গন্ধময় কুসংষ্কার ও আবর্জনা থেকে পরিত্রান ও উত্তরণের নিমিত্তে তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রীস্টসমাজ ধর্ম নিরপেতার মতবাদে শান্তির অন্বেষা করেছিল। পাদ্রীদের সংকীর্ণ চিন্তাধারা ও আত্মকেন্দ্রিকতা এবং শোষকের ভূমিকায়, নির্লজ্জ পদচারণের বিরুদ্ধে এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদ ইউরোপীয় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আদৌ কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিকতায় উৎকর্ষতা সাধনের ফলে পার্থিব ও বৈষয়িক ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতি করলেও নৈতিক অবয় ও মূল্যবোধের দৈন্যতা কুরে কুরে খাচ্ছে তাদেরকে। ফলে তাদের সমাজে হতাশা, ক্ষোভ, মানসিক অশান্তি ও বৈকল্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।পান্তরে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা পাশ্চাত্যের খ্রীস্টবাদী সমাজের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে নেই গীর্জা ও পাদ্রীদের ন্যায় মসজিদ ও আলেম সমাজের আগ্রাসী ভূমিকা।পবিত্র কালামে ইরশাদ হয়েছে, “ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা-২৫৬)। ইসলাম শান্তির ধর্ম কোন ব্যক্তিকে জবরদস্তি করার পক্ষপাতি নয় ইসলাম। তার সম্মুখে বেহেস্ত ও দোযখের দু’টি পথই খোলা রয়েছে। অবশ্যই ইসলাম এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে যে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে সম হবেন। কোন দেশে যদি প্রকৃত ইসলামী খেলাফত ও হুকুমত কায়েম হয় তখন ইসলামী রাষ্ট্র মুসলমানদের ন্যায় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের অধিকারও সমান মর্যাদার সাথে হেফাযত করে থাকে।রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসনযন্ত্র তার প্রজাদেরকে অমুসলিমদের মর্জি ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজে জোর খাটায় না। এবং ছিনিয়ে নেয় না তাদের অর্থ কড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। সুশাসন, ন্যায় বিচার সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিকল্প হতে পারে না কোন ধর্ম কিংবা মতবাদ। তাই তো ইসলামকে অভিহিত করা হয়ে থাকে শান্তির ধর্ম হিসাবে। মুসলিম দেশ ও সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা “সেক্যুলারিজমের” কথা কল্পনাও করা যায় না।কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবি মহলের উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত এই চিন্তাধারা মরীচিকা বৈ নয়। প্রকৃত পে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নাস্তিকরা সমগ্র পৃথিবীকে শৃঙ্খলাহীনতা, বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা ও ভোগবাদিতার নরক কুণ্ডে পরিণত করতেই আগ্রহী।মনে রাখতে হবে, কোন সমাজ ও রাষ্ট্র যদি ধর্মনিরপেতা বাদীদের করতলগত হয়। তবে অচিরেই এই রাষ্ট্র ও সমাজের পতন, ধ্বংস অনিবার্য।
সেক্যুলারিজমকে প্রতিষ্ঠিত করণ প্রচেষ্টায় হলিউকের সহকর্মীদের মধ্যে চার্লস সাউথ ওয়েস, থমাস কুপার , থমাস পিটারসন ও ইউলিয়াম বিরটনব প্রমুখের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়। হলিউক ১৮৫১ খ্রী: “সেক্যুলারিজম” পরিভাষাটি রচনা করেন। ইউরোপে পাদ্রীদের মনগড়া মতামতের সাথে যখন গবেষক ও বৈজ্ঞানিকদের গবেষণালব্ধ মতামতের দ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং তারই ভিত্তিতে পাদ্রীদের উৎখাত করার জন্য “গীর্জা বনাম রাষ্ট্রের লড়াই” নামক দু’শ বছর ব্যাপী ঐতিহাসিক রক্তয়ী সংগ্রাম পরিচালিত হলে তখন সংস্কারবাদীরা একটি আপোষ রফার জন্য মার্টিন লথারের নেতৃত্বে প্রস্তাব দিল যে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকুক আর সমাজের ও পার্থিব জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকুক। এখান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে খ্রীস্টান ধর্মযাজক ও পাদ্রীদের প্রভাব নি:শেষ হয়ে যায়। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন ধর্মীয় প্রভাবহীন হয়ে পড়ে।১৮৪৯ খ্রী: এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। হলিউক এই আন্দোলনকে নাস্তিক্যবাদের উত্তম বিকল্প হিসেবে অভিহিত করেন।
ঐতিহাসিকভাবে সেক্যুলারিজম সব সময় নাস্তিক্যবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নেতা ব্রেডলেফ এর মত ছিল ধর্মীয় আক্বীদা-বিশ্বাস প্রতিহত করাই সেক্যুলারিজম এর কর্তব্য। তিনি মনে করতেন, ধর্মের এই সব কুসংষ্কারমূলক ধারণা বিশ্বাস যতদিন পর্যন্ত পূর্ণ শক্তিতে বিকশিত হতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত বস্তুগত উন্নতি লাভ করা সম্ভব হবে না। (ইসলামী আক্বীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, পৃষ্ঠা- ৬০১)উপরের ইতিহাস গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয় যে, খ্রীস্টবাদ ও গীর্জার আগ্রাসী ভূমিকা এবং পুঁর্তি-দুর্গন্ধময় কুসংষ্কার ও আবর্জনা থেকে পরিত্রান ও উত্তরণের নিমিত্তে তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রীস্টসমাজ ধর্ম নিরপেতার মতবাদে শান্তির অন্বেষা করেছিল। পাদ্রীদের সংকীর্ণ চিন্তাধারা ও আত্মকেন্দ্রিকতা এবং শোষকের ভূমিকায়, নির্লজ্জ পদচারণের বিরুদ্ধে এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদ ইউরোপীয় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আদৌ কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিকতায় উৎকর্ষতা সাধনের ফলে পার্থিব ও বৈষয়িক ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতি করলেও নৈতিক অবয় ও মূল্যবোধের দৈন্যতা কুরে কুরে খাচ্ছে তাদেরকে। ফলে তাদের সমাজে হতাশা, ক্ষোভ, মানসিক অশান্তি ও বৈকল্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।পান্তরে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা পাশ্চাত্যের খ্রীস্টবাদী সমাজের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে নেই গীর্জা ও পাদ্রীদের ন্যায় মসজিদ ও আলেম সমাজের আগ্রাসী ভূমিকা।পবিত্র কালামে ইরশাদ হয়েছে, “ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা-২৫৬)। ইসলাম শান্তির ধর্ম কোন ব্যক্তিকে জবরদস্তি করার পক্ষপাতি নয় ইসলাম। তার সম্মুখে বেহেস্ত ও দোযখের দু’টি পথই খোলা রয়েছে। অবশ্যই ইসলাম এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে যে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে সম হবেন। কোন দেশে যদি প্রকৃত ইসলামী খেলাফত ও হুকুমত কায়েম হয় তখন ইসলামী রাষ্ট্র মুসলমানদের ন্যায় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের অধিকারও সমান মর্যাদার সাথে হেফাযত করে থাকে।রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসনযন্ত্র তার প্রজাদেরকে অমুসলিমদের মর্জি ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজে জোর খাটায় না। এবং ছিনিয়ে নেয় না তাদের অর্থ কড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। সুশাসন, ন্যায় বিচার সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিকল্প হতে পারে না কোন ধর্ম কিংবা মতবাদ। তাই তো ইসলামকে অভিহিত করা হয়ে থাকে শান্তির ধর্ম হিসাবে। মুসলিম দেশ ও সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা “সেক্যুলারিজমের” কথা কল্পনাও করা যায় না।কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবি মহলের উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত এই চিন্তাধারা মরীচিকা বৈ নয়। প্রকৃত পে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নাস্তিকরা সমগ্র পৃথিবীকে শৃঙ্খলাহীনতা, বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা ও ভোগবাদিতার নরক কুণ্ডে পরিণত করতেই আগ্রহী।মনে রাখতে হবে, কোন সমাজ ও রাষ্ট্র যদি ধর্মনিরপেতা বাদীদের করতলগত হয়। তবে অচিরেই এই রাষ্ট্র ও সমাজের পতন, ধ্বংস অনিবার্য।
উপসংহার: ধর্মনিরপেক্ষতার
পারিভাষিক অর্থ ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদীদের আচরিত অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতাএকটি ইসলাম পরিপন্থী
মতবাদ। কারণ ধর্মের ব্যাপকতায় রাজনীতি, শিক্ষাও অর্থনীতি ইত্যাদি সবকিছু আওয়াভুক্ত।
ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং সবকিছুর জন্য আদর্শ। এমন কিছু নেই যার আদর্শ ইসলামে
অনুপস্থিত। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, অর্থাৎ “আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এই কিতাব,
যা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা ও হিদায়াত। (সূরা নাহল-৬৯) আরো ইরশাদ আছে ‘আমি এই কিতাবে কোন বিষয় বর্ণনা
করতে ছেড়ে দেইনি।” (সূরা আনআম-৮)
১। ধর্মনিরপেক্ষ
মতবাদে ইসলামের এই ব্যাপকতাকে অস্বীকার করা বা অপছন্দ করা আল্লাহর সাথে চরম বিদ্রোহ।
ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাসকে কেউ যদি কুসংস্কার ধারণা বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করে, তাহলে
তার ঈমান থাকে না।খ্রীষ্টান ধর্মযাজকদের মতবাদে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকও আন্তর্জাতিক
কর্মকাণ্ড পরিচালনার কত কোন সুষ্ঠু আদর্শ নেই। ফলে তাদের সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতার আন্দোলন
হয়তো বা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। কিন্তু ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য শাশ্বত
আদর্শ রেখেছে এবং তা স্বয়ং সর্বজান্তা সর্বজ্ঞ
আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত আদর্শ। তাই ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতার কোন যৌক্তিকতা বা কোন
অবকাশ নেই।
২। আরো ইরশাদ
হয়েছে ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার
অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সূরা
: মায়েদা-৩)আসলে স্রষ্টার সৃষ্টি কর্মের মূলে আছে একটি কথা। তাহল, ধর্ম কর্ম হতেই
সমগ্র জগতের জন্ম। এই জন্য প্রবাদ আছে যে, জন্মের কর্মের চেয়ে ধর্ম বড়। কি পরিমাণ
বড়, তা বলা সম্ভব নয়। ইহজগত ও পরজগতের সৃষ্টির মূলে আছে ধর্ম। ধর্মই জগতের প্রাণ।
এই প্রাণ যতদিন জগতের শিরা উপশিরায় সচল থাকবে, ততদিন এই জগতের স্থায়িত্ব থাকবে। তেমনি
, যে ব্যক্তি ধর্ম দ্বারা অন্তরকে সঞ্জীবিত করে, সে মরেও অমর হয়। আল্লাহর ইলমের যেমন
ক্ষয় নাই, তেমনি সেই ইলমের পরশ পাওয়া অন্তরও য়িষ্ণু হয় না। এই কারণে নিষ্ঠাবান
আলেম দ্বারা জীবদ্দশায় ইলমের যে পরিমাণ সেবা হতে দেখা যায়, মরণের পরেও সেই সেবা অব্যাহত
থাকে, বরং দিন দিন আরও বৃদ্ধিপায়। উদ্দেশ্য কথা, মৃত্যুকে জীবিত এবং জীবিতকে অমর করার
জন্যই আল্লাহ নবী রাসূল গনের মাধ্যমে নিজের ইলম তথা ধর্মকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
যারা খোদার ধর্মের অনুসারী হয়, তারা তাই অমর জীবনের অধিকারী হয়। উল্লেখ্য যে, আমাদের
নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ সব আমাদের পক্ষে যেমন-পানি, বাতাস, ব্যবসা ও সামাজিকতা
ইত্যাদি । ধর্ম কেন নিরপেক্ষ হবে? এটার প্রয়োজনীয়তা তো আরো বেশী। আল্লাহ তাআলা সারা
জাহানের মালিক। মাদরাসা, মসজিদ ও খানকা যেমন আল্লাহ তাআলার মালিকানার অন্তর্ভূক্ত,
তেমনি সংসদ ও রাজনৈতিক অঙ্গনও আল্লাহ তাআলার মালিকানার অন্তর্ভূক্ত। আর যেখানে যার
মালিকানা সেখানে তারই হুকুম চলবে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে রাজনীতিকে ইসলামী বিধি
বিধানের বহির্ভূত মনে করা ইসলাম বিদ্ধেষ বৈ আর কিছুই নয়। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার কুফল
হবে ধর্ম হীনতা। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে যেখানে সব রকমের রাজনীতি
চলতে পারে সেখানে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্ট করা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র
হরণ বৈ আর কিছুই নয়। খ্রীষ্ট রাজ্যে যদি খ্রীষ্ট-ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চলতে পারে এবং
কোন কোন দেশে যদি হিন্দুধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি আপত্তিকর না হয়, তাহলে শতকরা ৯০% মুসলমানের
রাজ্য বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি অবৈধ হওয়ার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে। দীর্ঘ ১১ বছর
পর্যন্ত হক্কানী ওলামায়ে কেরামের রক্তয়ী আন্দোলন ও অগনিত শহীদের শাহাদাতের ফসল হিসেবে
গত ১২ মে ফতোয়ার বৈধতা দেওয়া হয়। আবার এদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার আইন পাশের আলোচনা ও
তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে। উভয়টি পরস্পর সাংঘর্ষিক। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার
আইন পাশ হলে তা ফতোয়া বাস্তবায়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। ফতোয়া বলার চেয়ে বাস্তবায়নের
গুরুত্ব অনেক বেশী। বাস্তবায়ন বিমুখ ফতোয়ায় সমাজের তেমন কোন উপকারিতা নেই। ফতোয়া
যদি বাস্তবায়ন না হয়, হালাল হারামের পার্থক্য থাকবে না।অশালীনতা-অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার
সয়লাবে দেশ ভেসে যাবে। মানুষ মানুষত্ব ভুলে গিয়ে পশুত্ব শিখবে। ন্যায় বিচার ভুলে
গিয়ে যুলুম অত্যাচার শিখবে। আমরা আগেই বলেছি, ধর্মনিরপেক্ষতার একমাত্র অর্থ হচ্ছে
ধর্মহীনতা। মানুষ যত দিন ধর্মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকবে, ততদিন সকল কাজ শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে
সম্পন্ন হবে। যুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, সন্ত্রাস-ডাকাতী, খুন ধর্ষণসহ সকল
অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকবে। আর যখন ধর্মের শৃঙ্খল গলা থেকে দূরে নিপে করবে, তখন
অন্যায় অবিচার করতে দ্বিধাবোধ করবে না। খুন ধর্ষণে কেউ বাধাগ্রস্থ হবে না। শিক্ষা
প্রতিস্থান থেকে সভ্য শিক্ষিত ছাত্র বের হওয়া
তো দূরের কথা, কতগুলি চোর ডাকাত আর সন্ত্রাসী বের হয়ে সমাজ অপবিত্র করবে। ধর্মনিরপেক্ষতার
আইন ২০১১ সালের কুরআন সুন্নাহ বিরোধী নারীনীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতিরই সহায়ক হবে।
আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার আইন করা দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর।ধর্মনিরপেক্ষ
আইন হলে মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস থাকবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না, সংবিধানের
শুরুতে বিসমিল্লাহ বাদ পড়বে। (অবশ্য এখন বিকৃত অবস্থায় আছে) আর এদেশের পরিণতি তুরস্ক
ও স্পেপের ন্যায় হয়ে এই মুসলিম প্রধান দেশ ইসলামের পরিচিতি হারাবে। যা এদেশের জনগণ
কখনো মেনে নিবে না। বরং রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও এসকল বিজাতীয় ষড়যন্ত্র প্রতিহত
করবে, ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহর
উপর আস্থা ও বিশ্বাস:অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় যে, গত ৯ জুন ২০১১ দৈনিক আমার দেশে
প্রকাশ করা হয় যে, বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধন কমিটির সদস্যরা সংবিধান সংশোধন করতে গিয়ে
বলেছে, সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি বাদ দিতে হবে। অথচ বুখারী
শরীফে বর্ণিত হাদীসে উম্মুস সুন্নাহয় হযরত জিবরাইল (আ:) এর এক প্রশ্নের জবাবে রসূলুল্লাহ
(সা:) বলেছেন, ঈমান আক্বীদার গোড়া ও মূলনীতি হল সর্বেেত্র আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা
ও বিশ্বাস স্থাপন করা। এমতাবস্থায় আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি সংবিধান
থেকে বাদ দেয়া কুফুরী, বেঈমানী ও মহান আল্লাহর সাথে প্রচন্ড বিদ্রোহের শামিল। নমরুদ,
ফেরাউন এবং আবু জাহাল পর্যন্ত এমন বেঈমানী করার দু:সাহস করেনি। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা
ও বিশ্বাস না থাকলে ফতোয়ার বৈধতা, নামায, রোজা, হজ্ব; এক কথায় কোন ধর্মীয় কাজই সহীহ
শুদ্ধ হবে না। কারণ শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী মুরতাদ ও বেঈমানের কোন আমল আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন কবুল করেন না। আসলে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি বাদ দেয়াটাই শতকরা
৯০% মুসলমানের বাংলাদেশের সংবিধান কুরআন বিরোধী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।মোটকথা , মহান সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করাই সব কিছুর মূল। সংবিধান থেকে যদি এটা বাদ দেয়া
হয়, দেশে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, রক্তপাত ও বিশৃংখলা বেড়েই চলবে। যা দেশের
শান্তি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।তথ্যসূত্র: আল-মুইন,
স্বরনিকা-২০১১/১৪৩২ হিজরী।
হযরত আল্লামা
হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ সাহেব (দা.বা.)প্রখ্যাত মুহাদ্দিস- দুরুল উলূম মুঈনুল ইসলাম,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।