কুরআন এবং হাদিসের আলোকে স্বদেশপ্রেম

 

ইসলামের আলোকে স্বদেশ প্রেম

ইসলাম স্বদেশ প্রেমকে উৎসাহিত করে। কোরআন ও হাদিসে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সেবার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) নিজেও স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখিয়েছেন। ইসলামে স্বদেশ প্রেম শুধু ভূখণ্ডের প্রতি ভালোবাসা নয়, বরং দেশের মানুষের সেবা ও দেশের উন্নতির জন্য কাজ করাকেও বোঝায়।

মাতৃভূমি ও জন্মস্থানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বা ভালবাসা, গভীর অনুভূতি ও মমত্ববোধকে স্বদেশপ্রেম বলে। মাতৃভূমি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। যে ব্যক্তি দেশের প্রতি কর্তব্য সমূহ পালন করে সে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে। আর যে ব্যক্তি দেশের প্রতি কর্তব্যসমূহ পালন করে না, সে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। সে পূর্ণ মুমিন নয়। এ জন্য আরবী প্রবাদে বলা হয়

حُبُّ الْوَطَنِ مِنَ الْإِيْمَان 

দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।

ইসলামের দৃষ্টিতে দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হলে স্বদেশ প্রেম অত্যাবশ্যক। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের ও প্রয়োজন হতে পারে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে না পারলে মান-সম্মান, স্বাধিকার, ঈমান ও আমল রক্ষা করা যায় না। এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বদেশ প্রেমের গুরত্ব অত্যাধিক। ইসলামে স্বদেশের প্রতি ভালবাসার জোরালো দিক নির্দেশনা রয়েছে। দেশ ও রাষ্ট্রে ব্যবস্থা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ব্যাপক আলোচনা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন:

لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِالۡبَیِّنٰتِ وَاَنۡزَلۡنَا مَعَہُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡمِیۡزَانَ لِیَقُوۡمَ النَّاسُ بِالۡقِسۡطِ ۚ  وَاَنۡزَلۡنَا الۡحَدِیۡدَ فِیۡہِ بَاۡسٌ شَدِیۡدٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ

আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতির মানদন্ড যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। (সূরা হাদীদ ৫৭ঃ২৫)

শাসকের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَلِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ 

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। (সূরা হজ্জ ২২:৪১)

ইসলাম দেশপ্রেম ও দেশাত্ববোধকে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শে ও স্বভাব চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। তিনি স্বদেশকে খুব ভাল বাসতেন। মক্কার কাফেরদের নির্মম নির্যাতনে যখন জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করছিলেন। তখন তিনি বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে যা বলছিলেন, তা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এভাবেঃ

عن ابنِ عباسٍ، قال: لما خرجَ رسول اللهِ ﷺ من مكةَ قال: أما واللهِ إني لأَخرجُ منكِ وإني لأعلمُ أنك أحبّ بلادِ اللهِ إلى اللهِ، وأكرمهُ على اللهِ؛ ولولا أهلكِ أخرجُوني منك ما خَرجتُ

الراوي: عبدالله بن عباس • ابن عبد البر، التمهيد (٦/٣٣) • من أصح الآثار • أخرجه الترمذي (٣٦٢٩)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন, আমি অবশ্যই বের হয়ে যাচ্ছি। তবে আমি জানি (হে মক্কা) তুমি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং সম্মানিত শহর। যদি তোমার অধিবাসিরা আমাকে তোমার থেকে বের করে না দিত, তবে আমি বের হয়ে যেতাম না। (দুররুল মানসূর)

জাযায়িরী তাঁর আইসারুত তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন।

وكاين من قرية هي أشد قوة من قريتك التي أخرجتكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلا نَاصِرَ لَهُمْ . هذه الآية نزلت ساعة خروج الرسول صلى الله عليه وسلم من بيته إلى غار ثور مهاجرا فقد التفت إلى مكة وقال أنت أحب البلاد إلى الله وأحب بلاد الله إلى ولو أن المشركين لم يخرجوني لم أخرج . ايسر التفاسير الجزائري 

আর তোমার জনপদ যা থেকে তারা তোমাকে বহিষ্কার করেছে তার তুলনায় শক্তিমত্তায় প্রবলতর অনেক জনপদ ছিল, আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম, ফলে তাদের কোনই সাহায্যকারী ছিল না। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৩)

এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে, যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরতের উদ্দেশ্যে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে গারে সূরের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি মক্কার দিকে ফিরে বলছিলেন, হে মক্কা তুমি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় শহর এবং আল্লাহর শহর আমার কাছেও প্রিয়। যদি মুশরিকরা আমাকে বের করে না দিত তবে আমি তোমার থেকে বের হয়ে যেতাম না।

সাহাবাদের মাঝে স্বদেশপ্রেম

সাহাবায়ে কিরামও স্বদেশকে খুব ভাল বাসতেন। হিজরতের পর আবু বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের মনে প্রাণে স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলী স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় নবী করিম (সাঃ) সাহাবীদের মনের এ দূরাবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ আমরা মক্কাকে যেমন ভালবাসি তেমনি তার চেয়ে বেশী মদীনাকে ভালবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন। (বুখারী)

৬ষ্ঠ হিজরীতে স্বপ্নে আদেশ পেয়ে রাসূল (সাঃ) যখন ওমরা পালনের জন্য মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন তখন সাহাবীরা স্বদেশের কথা স্বরণ করে আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন।

দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত মানুষেরা সমাজের চোখে যেমন সম্মানিত তেমনি আল্লাহর কাছে ও অত্যন্ত গৌরবময় মর্যাদার অধিকারী। নবুয়ত লাভের পর সুদীর্ঘ ১৩ বছর মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীরা স্বদেশ মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হয়েছেন এবং নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত দেশ ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অতঃপর ১০ম হিজরীতে বিজয়ীর বেশে মহানবী (সাঃ) যখন মক্কায় প্রবেশ করলেন, মক্কার মুসলমানদের উপর যে ভীষণ অন্যায় ও অত্যাচার করা হয়েছিল, তা ভূলে গেলেন এবং দেশবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় দেশ প্রেম, উদারতা ও মহানুভবতার আদর্শ স্থাপন করেন। ইউছুফ (আঃ) তাদের ভাইদের ব্যাপারে যা বলেছিলেন তিনিও সেই ঘোষণা প্রদান করেন। যা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এসেছে,

  قَالَ لَا تَثۡرِیۡبَ عَلَیۡکُمُ الۡیَوۡمَ ؕ یَغۡفِرُ اللّٰہُ لَکُمۡ ۫ وَہُوَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ 

আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। (সুরা ইউছুফ ১২:৯২)

দেশ প্রেমের ফলে মানুষের মন উদার ও মহৎপ্রাণ হয়। অপরের জন্য কল্যাণবোধ জন্ম লাভ করে। তাই দেশের স্বার্থ বিরোধীদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালানো উচিত। 

দেশের সীমান্ত পাহারা দেয়ার গুরুত্ব

দেশের সীমান্ত প্রহরীদের সম্পর্কে রাসূলে আকরাম (সঃ) ঘোষণা

أنَّ رَسولَ اللَّهِ ﷺ قالَ: رِباطُ يَومٍ في سَبيلِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيا وما عَلَيْها صحيح البخاري (٢٨٩٢)


অর্থাৎ একদিন আল্লাহর রাস্তায় সীমানা পাহারা দেয়া পৃথিবী ও পৃথিবীর উপরস্থ সব কিছু থেকে উত্তম

(বুখারী ২৮৯২ ও মুসলিম ৪৮৩২)

অপর হাদীসে এসেছে,

عن سلمان قال سمعتُ رسولِ اللهِ (ص) يَقُول رِباطُ يَومٍ ولَيْلَةٍ خَيْرٌ مِن صِيامِ شَهْرٍ وقِيامِهِ، وإنْ ماتَ جَرى عليه عَمَلُهُ الذي كانَ يَعْمَلُهُ، وأُجْرِيَ عليه رِزْقُهُ، وأَمِنَ الفَتّانَ

الراوي مسلم، (١٩١٣)

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, একদিন ও একরাত রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়া একমাস রোজা রাখা ও রাতে ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এ অবস্থায় যদি সে মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মারা যাওয়ার পরও তা তার জন্য জারী থাকবে, তার রিজিক ও জারী থাকবে এবং কবরের পরীক্ষা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। (মুসলিম- জিহাদ অধ্যায়)

দেশপ্রেম জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়

রাসূল (সাঃ) এর বাণী,

عينان لا تمسُّهما النّارُ عينٌ بكت من خشيةِ اللهِ، وعينٌ باتت تحرسُ في سبيلِ اللهِ

أخرجه الترمذي (١٦٣٩)

দুইটি চোখকে জাহান্নামের আগুণ স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। যে চোখ আল্লাহর পথে রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। (তিরমিজি- ১৬৩৯)

ধৈর্যধারণ করা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা বা সীমানা পাহারা দেয়া এবং আল্লাহকে ভয় করা সফলতার উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَصَابِرُوۡا وَرَابِطُوۡا ۟  وَاتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ 

হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ধারণ কর ধৈর্যের প্রতিযোগীতা কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (সূরা আলে-ইমরান ৩:২০০)

দেশপ্রেম ও সেনাবাহিনী।

একজন সৈনিকের নিকট দেশ তথা মাতৃভূমি সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এ ক্ষেত্রে আমরা বীরশ্রেষ্ঠ সহ অনেক সেনা সদস্যের কথা স্মরণ করতে পারি যারা দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও তা হেফাজতের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। আর এ জন্যই বলা হয় আমার দেশ, আমার প্রাণ, বাঁচলে দেশ, বাঁচবে মান। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য প্রাণ প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিবেদিত। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কেহ কেহ শপথের কথা ভুলে যান। একজন ঈমানদার ব্যক্তি কোন অবস্থাতেই শপথ বা প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করতে পারে না। শপথ অনুযায়ী কাজ করা, সততা ও সত্যবাদিতা দেশ প্রেমেরই বাস্তব দিক।

সুতরাং দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হলো শপথ বা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা।শপথ বা প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন, 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ ۬

মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। (সূরা মায়িদা ৫:১)

 অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, 

وَاَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ الۡعَہۡدَ کَانَ مَسۡـُٔوۡلًا 

তোমরা প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে (কিয়ামতে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৩৪) 

অঙ্গীকার সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, 

خطبَنا رسولُ اللَّهِ ﷺ فقال: لا إيمانَ لمن لا أمانَ لَهُ ولا دينَ لمن لا عَهدَ لَهُ

যার আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না তার ধর্ম নেই। (মিশকাত- ঈমান অধ্যায়)

শান্তিকালীন সময়ে সরকারী সকল দ্রব্য সামগ্রী যন্ত্রপাতি ও যানবাহনকে ঈমানদারীর সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা দেশ প্রেমের পরিচায়ক। সরকারী সম্পদের অপচয় না করে এর সঠিক ও সদ্ব্যবহার করাই হলো শান্তিকালীন সময়ে একজন সৈনিকের প্রকৃত দেশপ্রেম। একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক রাষ্ট্রীয় সম্পদ, পানি, গ্যাস, বিদ্যুত, খাদ্য কোন কিছুই অপচয় করতে পারে না।

দেশপ্রেম মানুষকে মমত্ববোধ, ভ্রাতৃত্ব বোধ, সহজ সরল আচরণ শেখায়। নিজদেশের শান্তি সমৃদ্ধি সুখ ও মঙ্গলের জন্য ভাবতে অনুপ্রাণিত করে। দেশের মানুষের বিভিন্ন দল-মত সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল পরস্পরের প্রতি বিরোধ, সংঘর্ষ ও প্রতিহিংসার পরিবর্তে একে অন্যের সহযোগীতা, সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতার ভাবধারা গড়ে তোলার জন্য পরম সহিষ্ণুতা শিষ্টাচার একান্ত প্রয়োজন। দেশাত্ববোধ ও স্বদেশের প্রতি মমতা অনেক অন্যায় ও অপরাধ প্রবনতা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারে। তাই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করতে হলে অবশ্যই দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। স্বদেশের প্রতি অনুগত থেকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে ভালবাসা সবার ঈমানী দায়িত্ব ও পবিত্র কর্তব্য। সর্বোপরি দেশের জনগনের যার যার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা ইসলামী বিধি নিষেধের যথার্থ অনুশীলন আমাদের প্রকৃত ঈমানদার মানুষে পরিণত করতে পারে। এবং সমাজ জীবনে বয়ে আনতে পারে শান্তি সুখের সুশীতল সমীরণ।

শেষ কথা

ইসলামের আলোকে দেশপ্রেম ও দেশাত্ববোধ মানুষকে স্বদেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে দেশ প্রেমিক নিজের জানা-মাল উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। স্বদেশকে হেফাযত করতে না পারলে ধর্মকে হেফাযত করা যায় না। দেশের মানুষকে রক্ষা করা যায় না। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায় না। দেশ প্রেমিক ধর্মভীরু মানুষকে স্বদেশের উন্নতি সাধনে সজাগ রাখে। দেশের জাতীয় সম্পদ অপচয় রোধে উদ্বুদ্ধ করে। আর দেশাত্ববোধ ব্যতীত কোন দেশের স্বাধীনতা স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না।

তাই আল্লাহ পাকের দরবারে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন বাংলার মাটি থেকে জঙ্গীবাদী, বোমাবাজ, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, চোরাকারবারী, চাঁদাবাজ, সুদখোর, ঘুষখোর অবৈধ মজুদদার, ভেজাল ব্যবসায়ী, দেশের ভাবমুর্তি বিনষ্টকারী ও দেশের স্বার্থ বিরোধী দুর্নীতিবাজদের মূলোৎপাটন করে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী শোষণমুক্ত স্বাবলম্বী সোনার বাংলাদেশ গঠনের তাওফিক দান করেন। আমিন।