পরকীয়া ও এর ক্ষতিকর প্রভাব |
বর্তমান সময়ে এক
মহামারির নাম পরকীয়া। পরকীয়া একটি অমানবিক ক্রিয়া। বিকৃত মানসিকতার কাজ। শরিয়তের পরিভাষায়
পরকীয়া বলা হয় বিবাহ-পরবর্তী কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রেম-ভালোবাসাকে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণরূপে
হারাম করা হয়েছে। পরকীয়া মানবতাবিরোধী একটি অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম একটি মানবিক
ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। সুস্থ
মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক
শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক
সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরকীয়া নামের অসামাজিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অশুভ থাবায় বিপর্যয়ের
মুখে সংসার ও পরিবার প্রথা।
উদ্দেশ্যঃ
আজকের ক্লাশের উদ্দেশ্য হল পরকীয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সকলকে সচেতন
করা এবং পরকীয়া নির্মূলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা।
পরকীয়ার
পরিচয়ঃ পরকীয়া বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ। পরকীয়া হল বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ
নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া। সমাজে এটি নেতিবাচক
হিসাবে গণ্য।
মূলত পরকীয়া হল-
বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নিজ স্বামী বা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে পর পুরুষ বা পর
নারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
পরকীয়ায় জড়িত হওয়ার
কারণ
বর্তমানে সমাজে পরকীয়ার
হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল তাঁর ‘দ্য স্টেট অব অ্যাফেয়ার’ গ্রন্থে পরকীয়াকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (কালের
কণ্ঠ)
বিবাহিত নারী-পুরুষের
পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল।-
১. ইসলামী
শিক্ষার অভাব
ইসলাম মানব জাতির
চরিত্রের হিফাযতের জন্য নারী-পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছে এবং বিবাহ বহির্ভূত যাবতীয় সম্পর্ককে হারাম ঘোষণা
করেছে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ
لَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ
প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার কাছেও যেয়ো না, (সূরা আনআম ৬:১৫১)
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক
হারাম ও এর ভয়াবহ শাস্তি না জানার কারণে মানুষ পরকীয়ার মত নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে।
২. সামাজিক
কারণ
ইসলাম সামর্থ্যবান
পুরুষকে একাধিক বিবাহের অনুমতি দিলেও (নিসা ৪/৩) অনেক পুরুষ সামাজিক কারণে একাধিক বিয়ে
করতে পারেন না। কারণ সমাজ বহু বিবাহকে ভাল চোখে দেখে না। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
যৌন চাহিদার অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়। অপরদিকে দুর্বল ও অসুস্থ পুরুষের
ক্ষেত্রেও নারী সামাজিক ভয়ে তালাক না নিয়ে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
৩. নারী-পুরুষের
অবাধ মেলামেশা
পুরুষ-নারীর অবাধ
মেলামেশার সুযোগে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর আলাপচারিতা ও পরবর্তীতে পরকীয়ায়
জড়িয়ে পড়ে। মহিলারা আজকাল চাকুরী, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য
কারণে ইসলামী বিধান উপেক্ষা করে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে। আর পর পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও ঠাট্টা-মশকরার মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি ঝুকে
পড়ছে। অথচ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى
النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ؟ قَالَ:
«الْحَمْوُ الْمَوْتُ»
উকবা ইবনু আমির
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোনো নারীদের নিকট গমন (নিঃসঙ্গভাবে
গৃহে প্রবেশ) করো না। (এটা শুনে) জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে
আল্লাহর রসূল! দেবর সম্পর্কে আপনি কি বলেন? (উত্তরে) তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দেবর তো মরণসম বা মরণের ন্যায়। (বুখারী ৫২৩২, মুসলিম ২১৭২, তিরমিযী
১১৭১, আহমাদ ১৭৩৪৭, দারিমী ২৬৮৪,
সহীহ আত্ তারগীব ১৯০৮)
স্বামীর ভাইয়ের ব্যাপারে
যদি ইসলাম এত কঠোরতা আরোপ করে তাহলে অপরিচিত বা সাময়িক পরিচিতদের ব্যাপারে ইসলামের
বিধান কি হতে পারে? নিঃসন্দেহে তা আরো
কঠোর হবে।
৪. পর্দাহীনতা
পরকীয়ার অন্যতম কারণ
হল পর্দাহীনতা। এর ফলে নারী-পুরুষ একে অপরের দেখা-সাক্ষাৎ করার ও কথা বলার সুযোগ পায়।
এতে তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর শয়তান এটাকে আরো সুশোভিত করে উপস্থান করে এবং
পরকীয়ার দিকে নিয়ে যায়। এজন্য ইসলাম পর্দাহীনতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন
,الْمَرْأَةُ
عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ
মহিলারা হচ্ছে আবৃত
বস্ত্ত। সে বাইরে বের হলে শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে। (তিরমিযী
হা/১১৭৩)
সুতরাং যে পোষাকে
নারীর চুল, গ্রীবা, বক্ষ, পেট, পিঠ ও আবৃত অঙ্গ প্রকাশিত থাকে তা পরিধান করা হারাম।
৫. ইচ্ছার
বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া
পরকীয়ার আকেরটি কারণ
হল,
ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের অমতে বিয়ে দেওয়া।
অভিভাবকরা নিজেদের কথা ভাবেন এবং অনেক তাড়াহুড়া করে তাদের সন্তানদের বিয়ে দেন। কিন্তু
ছেলে-মেয়ের পসন্দ বা মতামতকে অনেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন না। ফলে এসব ছেলে-মেয়েদের
বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। ছেলে-মেয়ে প্রথমে মেনে নিলেও পরে তাদের মধ্যে পারিবারিক
অশান্তির সৃষ্টি হয়। পরিবারের ভয়ে কিছু না বললেও এক সময়য়ে তারা উভয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত
হয়ে পড়ে।
৬. দৈহিক
অক্ষমতা
নারী-পুরুষ জৈবিক
চাহিদা পূরণ করার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু এই চাহিদা পূরণ না হলে নারী-পুরুষ
পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি
সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলালুদ্দীন আহমাদ বলেন, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণে মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। প্রথমে আসে দৈহিক
বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে অনেকে এ সম্পর্কে জড়ায়।
৭. প্রযুক্তির
সহজলভ্যতা
প্রযুক্তি যেমন মানুষের
জীবনকে সহজ ও গতিময় করেছে তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এর অপকারিতা জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
হাতের নাগালে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক
বিভিন্ন মাধ্যমে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত অনেকের সাথে পরিচয় হচ্ছে এ পরিচয় থেকে অনেকে
পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।
পরকীয়ার ক্ষতিকর
প্রভাব
পরকীয়ার
ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
১। পরিবারে অশান্তি
পরকীয়ার
প্রধান ক্ষতিকর প্রভাব হল পরকীয়ার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুখের পরিবারব্যবস্থা
ধ্বংস হয়ে যায়।
২। ব্যভিচারের পথ সুগম হয়
পরকীয়ার
আরো একটি বড় কুফল হল এর মাধ্যমে সমাজে ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। সমাজে ব্যভিচারের অসংখ্য
রাস্তা খুলে যায়।
৩। ছেলেমেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যত
পরকীয়ার মাধ্যমে
যখন একটি পরিবারে অশান্তি দেখা দেয় তখন সে পরিবারের ছোটছোট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত
অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নিজেদের চোখে সামনে যখন পিতামাতার নৈতিক অবক্ষয় দেখতে পায়
তখন তাদের মনের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় পরকীয়ার সঙ্গীর সহায়তায়
নিজ সন্তানকেও অনেক মা বাবা হত্যা করতে দ্বিধা করেনা।
পরকীয়া প্রতিরোধে
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে
যেসব নীতিমালা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবধর্মী। ইসলাম পরকীয়ার প্রতিকারে নিম্নোক্ত
পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে-
১. খোদাভীরুতা
ইসলাম প্রথম স্বামী-স্ত্রীকে
খোদাভীরুতা, দুনিয়াবিমুখতা ও কৃতকর্মের জবাবদিহিতার
ভয় অর্জনের প্রতি জোর তাকিদ করেছে। কারণ তারা এসব গুণে গুণান্বিত হলে দাম্পত্য জীবনে
আল্লাহ বিধানকে লঙ্ঘন করবে না। পর নারী ও পর পুরুষে আসক্ত হবে না। আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে
তার জীবনসঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও
নারী। (সূরা নিসা-১)।
২. নৈতিক
শিক্ষা
ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে
নৈতিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তাদের আত্মিক কলুষতামুক্ত হয়ে কষ্ট
সহিষ্ণুতা, ধৈর্যশীলতা, অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতার মতো মহৎ গুণাবলি অর্জনের নির্দেশ দিয়েছে।
কারণ মানুষের চাহিদা অসীম। সসীম জগতে তা মেটানো সম্ভব নয়। তাই দাম্পত্য জীবনে তারা
যদি পরস্পর ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হয়, সুখ-দুঃখ খুশি মনে মেনে নেয়, আল্লাহর দেওয়া আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক শক্তি-সামর্থ্যের ওপর তুষ্ট থাকে, তাহলে তারা কখনো পরকীয়ায় জড়াবে না। দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহ প্রদত্ত
শ্রেষ্ঠ উপহার হিসাবে মনে করবে।
৩. পরস্পরে
ভালোবাসা
পারস্পরিক ভালোবাসা
বৃদ্ধি পায় এবং পরস্পরের আকর্ষণ হ্রাস না পায় এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বামী-স্ত্রীকে
ইসলাম আদেশ দিয়েছে। যেমন কখনো একই পাত্র থেকে আহার গ্রহণ করা। একে অপরের মুখে খাবার
তুলে দেওয়া। স্বামীকে চিন্তিত দেখলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া ও সাহস জোগানো। আম্মাজান
খাদিজা (রা.) রাসূল (সা.)-এর দুঃখের সময় তার পাশে ছিলেন। তাকে সাহস জুগিয়েছেন। কর্মস্থল
থেকে ফিরে হাস্যোজ্জ্বল ও সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা। স্ত্রীও মুচকি হাসি দিয়ে বরণ
করা,
কুশলাদি জিজ্ঞেস করা। অফিসে যাওয়ার সময় হলে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে
দেওয়া,
মোবাইল, ব্যাগ ইত্যাদি হাতে
তুলে দেওয়া। স্বামী স্ত্রীর কপালে কিংবা হাতে চুমু দেওয়া। বাসা-বাড়িকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
ও পরিপাটি রাখা। নিজে সেজেগুজে থাকা। সাংসারিক কাজকর্মে স্ত্রীকে সাহায্য করা। হাজারো
ব্যস্ততার মাঝেও স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দেওয়া। কিছু সময় একান্তে কাটানো। রোমান্টিক
কথাবার্তা বলে ভালোবাসা প্রকাশ করা। মোটকথা পারস্পরিক সম্পর্ককে দৃঢ় ও মজবুত করা। নিজেদের
মধ্যে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ না দেওয়া।
৪. দৃষ্টি
সংযত রাখা
পর নারী কিংবা পর
পুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া, তাদের সঙ্গে দেখা
সাক্ষাৎ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, অবাধে মেলামেশা ইত্যাদি থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে ইসলাম। আল্লাহ
পাক বলেন : হে নবি! মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ইহাই তাদের জন্য
উত্তম। ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে
নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সূরা নূর ৩০-৩১)।
৫. অবাধে
মেলামেশা না করা
কর্মস্থলে নিজ দায়িত্ব
পালনের প্রতি মনোযোগী থাকবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পর পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। একাকিত্বে
খোশ গল্পে মেতে উঠবে না। প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে। আকর্ষণীয়, কোমল ও নম্র কণ্ঠে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন : যদি তোমরা আল্লাহকে
ভয় করো,
তবে পর পুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে কুবাসনা করে। তোমরা সঙ্গত কথা
বল। (সূরা আহযাব ৩২)।
৬. অবৈধ
যৌনাচারে লিপ্ত না হওয়া
মহানবি (সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল তোমরা অবৈধ যৌন মিলনকে ভয় কর। কেননা তার ছয়টি অশুভ
পরিণাম রয়েছে। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি পরকালে। দুনিয়ার তিনটি পরিণাম হলো- শ্রীহীনতা, দরিদ্র ও আয়ুষ্কাল হ্রাস। পরকালের তিনটি পরিণাম হলো-আল্লাহর
ক্রোধ, মন্দ হিসাব, দোজখের শাস্তি’ (শুয়াবুল ইমান, বায়হাকী)। যে অপরকে পরকীয়ার জন্য ফুসলায় তার ব্যাপারে হাদিসে
কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে অন্যের স্ত্রীকে অথবা ক্রীতদাসকে ফুসলিয়ে তার বিরুদ্ধে উসেক দেবে সে আমার দলভুক্ত
নয়। (সুনানে আবু দাউদ)।
পরকীয়ার শাস্তি
ইসলাম ধর্মে পরকীয়াকে
অত্যান্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের
নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তোমরা ব্যভিচারের
নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি
হিসেবে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। (সুরা নুর, ২)
হাদিস শরিফে ব্যভিচারের
ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেন না এর ছয়টি শাস্তি
রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি
দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(১) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং
(৩) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি
আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,
(১) আল্লাহর অসন্তোষ,
(২) কঠিন হিসাব ও
(৩) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
হজরত সাহল ইবনে সাদ
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেন, যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার
বেহেশতের জামিনদার হবো। (বুখারিঃ ৭৬৫৮)
Download PDF File