রমাদ্বানের শিক্ষা এবং বাকী ১১
মাসের করণীয় |
মাহে রমাদ্বান হল
মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ। এই রমজান মাস হল
বান্দাহর জন্য ট্রেইনিং এর সময়। যেমনিভাবে কোন মানুষ যখন নতুন
কোন চাকুরীতে যোগদান করে তখন শুরুতে ট্রেইনিং এর মাধ্যমে তাকে শিখিয়ে দেয়া হয় চাকুরীতে
যোগদান করার পর তার কি কি করণীয় এবং বর্জনীয়। তেমনিভাবে মুসলিম
মিল্লাতের জন্য প্রতি বছর এই একটি মাস হল ট্রেইনিং এর জন্য। যেন বান্দাহ এই মাসে
শিক্ষা গ্রহণ করে তার জীবন এই শিক্ষায় পরিচালিত করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তাআলা এই মাসকে হেদায়েত পাওয়ার মাস হিসেবে উল্লেখ করে সূরা বাক্বারায় বলেন,
شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ
وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ
فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ
عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ
وَلَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَلِتُکَبِّرُوا
اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে
কোরআন, যা
মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের
মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের
মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা
রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে।
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত
দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (আল বাকারা ২:১৮৫ )
প্রিয়নবী (সাঃ)
এর হাদিস দ্বারাও এই মাহে রমজানের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। যেমনিভাবে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم " مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ
مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ
ক্ষমা করে দেয়া হয়। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৭)
রমাদ্বান এর উদ্দেশ্য
বান্দাহর উপর রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য
আমরা পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারার ১৮৩ নং আয়াতে দেখতে পাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা
বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ
کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ۙ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের
উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল
তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন
করতে পার। (সূরা বাক্বারা ২:১৮৩)
রমাদ্বান এর শিক্ষা
১) যথাসময়ে
সালাত আদায় করাঃ
মাহে রমাদ্বানের
একটি অন্যতম শিক্ষা হল যথাসময়ে সালাত আদায় করা। রমজান মাসে যেমনি ভাবে মানুষ পাঁচ
ওয়াক্ত সালাত যথাসময়ে আদায়ের জন্য চেষ্টা করে তেমনি ভাবে রমজানের পরেও সে ধারা
অব্যহত রাখতে হবে। যথাসময়ে সালাত আদায়ের বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সূরা
নিসায় বলেন,
فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ
قِیٰمًا وَّقُعُوۡدًا وَّعَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا
الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا
অতঃপর যখন তোমরা
নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত
হয়ে যাও,
তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যে। (আন নিসা ৪:১০৩)
মহান আল্লাহর
নিকট বান্দার অধিক প্রিয় একটি আমল হল যথাসময়ে সালাত আদায় করা। বুখারীর বর্ণনায়,
حَدَّثَنَا أَبُو
الْوَلِيدِ، هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ
الْوَلِيدُ بْنُ الْعَيْزَارِ أَخْبَرَنِي قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عَمْرٍو الشَّيْبَانِيَّ،
يَقُولُ حَدَّثَنَا صَاحِبُ، هَذِهِ الدَّارِ وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللَّهِ
قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى
اللَّهِ قَالَ " الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا ". قَالَ
ثُمَّ أَىُّ قَالَ " ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ ". قَالَ ثُمَّ
أَىُّ قَالَ " الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ". قَالَ
حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي.
আবূ আমর শায়বানি
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর বাড়ির দিকে ইংগিত করে বলেন, এ বাড়ির মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস
করলাম,
কোন
আমল আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথা সময়ে সালাত আদায় করা। ইবনু মাসউদ (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি? আল্লাহ্র রসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অতঃপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহ্র পথে জিহাদ)। ইবনু মাসউদ (রাঃ)
বলেন,
এগুলো তো আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও অধিক জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আমাকে আরও বলতেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৭
সালাতে বিলম্ব
করতে করতে অনেকেই সালাত কাজা করে ফেলে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ,
কুরআনের ভাষায়
عَنِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ۙ مَا سَلَکَکُمۡ فِیۡ سَقَرَ ،
قَالُوۡا لَمۡ نَکُ مِنَ الۡمُصَلِّیۡنَ ۙ
অপরাধীদের সম্পর্কে
বলবেঃ তোমাদেরকে
কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, (আল মুদ্দাসসির ৭৪:৪১-৪৩)
আর প্রতিটি
পরিবারে বড়দের দায়িত্ব হল নিজেরা যেমনিভাবে যথা সময়ে সালাত আদায় করবে তেমনি ভাবে
অন্য সদস্যদেরকে তাগিদ দিবে। পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে আল্লাহ
পবিত্র কুরআনের সূরা আত তাহরীমে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا
اَنۡفُسَکُمۡ وَاَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّقُوۡدُہَا النَّاسُ وَالۡحِجَارَۃُ
عَلَیۡہَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰہَ مَاۤ اَمَرَہُمۡ
وَیَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
মুমিনগণ, তোমরা
নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। (সূরা আত-তাহরীম ৬৬:৬)
২) অশ্লীলতা
ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা
মাহে রমাদ্বানের
আরেকটি অন্যতম শিক্ষা হল সকল প্রকার অশ্লীলতা এবং ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা এবং
বাকি জীবন সে অনুযায়ী চলা, হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ اللهُ
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ
وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ
صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ
عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا إِذَا
أَفْطَرَ فَرِحَ وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু
সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয়
এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিস্কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি।
সায়িমের জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৯০৪
অশ্লিলতা
প্রসার না করা
নিজে যেমনি ভাবে
সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকবে তেমনি অশ্লীলতা যেন প্রচার / প্রসার না হয়
সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অশ্লীলতা প্রচারকারীদেরকে শাস্তির কথা বর্ণনা করে আল্লাহ
সূরা নূরে বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ
الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا
وَالۡاٰخِرَۃِ ؕ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ
জানেন,
তোমরা জান না। (সূরা আন-নূর ২৪:১৯)
প্রকাশ্য
অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকা
قُلۡ تَعَالَوۡا اَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّکُمۡ عَلَیۡکُمۡ
اَلَّا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ۚ وَلَا
تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ مِّنۡ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُکُمۡ وَاِیَّاہُمۡ ۚ
وَلَا
تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَمَا بَطَنَ ۚ وَلَا
تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ ؕ ذٰلِکُمۡ
وَصّٰکُمۡ بِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ
আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই
যে,
আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের
কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও
তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা
অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। (সূরা আল আনআম ৬:১৫১)
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য
অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকা বিষয়ে অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
وَذَرُوۡا ظَاہِرَ الۡاِثۡمِ وَبَاطِنَہٗ ؕ
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡسِبُوۡنَ الۡاِثۡمَ سَیُجۡزَوۡنَ بِمَا کَانُوۡا یَقۡتَرِفُوۡنَ
তোমরা প্রকাশ্য
ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। (সূরা
আল আনআম ৬:১২০)
লজ্জা
ঈমানের অঙ্গ
যাদের লজ্জা নেই
তারাই অশ্লীল কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। অথচ লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে উল্লেখ
করা হয়েছে,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ
أَخْبَرَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ
اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى
رَجُلٍ مِنَ الأَنْصَارِ وَهُوَ يَعِظُ أَخَاهُ فِي الْحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর
পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের নাসীহাত করছিলেন।
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের
অঙ্গ।
(৬১১৮; মুসলিম ১/১২
হাঃ ৩৬, আহমাদ ৪৫৫৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৩)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪
৩) মিথ্যা
থেকে বেঁচে থাকা
মাহে রমজানের
আরেকটি শিক্ষা হল মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা। কেননা মিথ্যাকে সকল পাপের মা হিসেবে বলা
হয়েছে এবং মিথ্যাকে মুনাফিকের লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বুখারীর বর্ণনায়,
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ أَبُو الرَّبِيعِ، قَالَ
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ مَالِكِ
بْنِ أَبِي عَامِرٍ أَبُو سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ
كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
আবূ হুরাইরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;
২. যখন অঙ্গীকার
করে ভঙ্গ করে এবং
৩. আমানত রাখা হলে
খিয়ানত করে।
(২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৯, আহমাদ
৯১৬২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩২) সহিহ বুখারী,
হাদিস নং ৩৩
গুজবে
কান দেয়া যাবেনা
গুজব এক ধরণের
মিথ্যা। কারন কোন কথা শুনার পর তা যাচাইবাচাই না করে প্রচার করাকে হাদিসে মিথ্যা
হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে,
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ،
ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَفْصٍ،
قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ
بْنِ عَاصِمٍ، - قَالَ ابْنُ حُسَيْنٍ فِي حَدِيثِهِ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ
يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَلَمْ
يَذْكُرْ حَفْصٌ أَبَا هُرَيْرَةَ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَلَمْ يُسْنِدْهُ
إِلاَّ هَذَا الشَّيْخُ يَعْنِي عَلِيَّ بْنَ حَفْصٍ الْمَدَائِنِيَّ .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী
সাভ্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। সুনানে
আবু দাউদ,
হাদিস নং ৪৯৯২
কোন সংবাদ আসার
পর তা যাচাই বাচাই করে দেখার আদেশ দিয়ে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা হুজরাতের ৬ নং
আয়াতে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا
اَنۡ تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ نٰدِمِیۡنَ
মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের
কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের
কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। (সূরা আল হুজরাত ৪৯:৬)
মিথ্যাবাদীকে
আল্লাহ হেদায়েতের আলো দেখান না। এই বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সূরা যূমারের
৩ নং আয়াতে বলেন,
اَلَا لِلّٰہِ الدِّیۡنُ الۡخَالِصُ ؕ وَالَّذِیۡنَ
اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اَوۡلِیَآءَ ۘ مَا نَعۡبُدُہُمۡ اِلَّا لِیُقَرِّبُوۡنَاۤ
اِلَی اللّٰہِ زُلۡفٰی ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَحۡکُمُ بَیۡنَہُمۡ فِیۡ مَا ہُمۡ فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ۬ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِیۡ مَنۡ ہُوَ
کٰذِبٌ کَفَّارٌ
জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে
উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের
পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত
করেন না। (সূরা আয-যুমার ৩৯:৩)
অনুমান
করে কথা বলা নিষেধ
মিথ্যা যেমন
পরিত্যাজ্য তেমনিভাবে ধারনা করেও কথা বলা যাবেনা। ধারণা করে অনুমানে কথা বলার
বিষয়ে আল্লাহ সূরা যারিয়াতে বলেন,
قُتِلَ الۡخَرّٰصُوۡنَ ۙ
অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক, (সূরা আজ-যারিয়াত
৫১:১০)
এবং সূরা
বনী-ইসরাইলে বলেন,
وَلَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ اِنَّ السَّمۡعَ
وَالۡبَصَرَ وَالۡفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنۡہُ مَسۡـُٔوۡلًا
যে বিষয়ে তোমার
কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা
বনী-ইসরাইল ১৭:৩৬)
ধারণা থেকে
বেঁচে থাকার জন্য প্রিয়নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ
عَلَى مَالِكٍ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِيَّاكُمْ
وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ
تَجَسَّسُوا وَلاَ تَنَافَسُوا وَلاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ
تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا " .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা খারাপ ধারণা
করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, খারাপ ধারণা প্রসূত বিষয় সর্বাপেক্ষা মিথ্যা। আর তোমরা ছিদ্রান্বেষণ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, সুপ্তদোষ অনুসন্ধান করো না, তোমরা পরস্পর লিপ্সা
করো না,
পরস্পর পরস্পরের প্রতি শত্রুতা করো না, হিংসা করো না; একে অন্যের পিছনে লেগে থেকো না বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে
যাও। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৩০ (ই.ফা. ৬৩০৪, ই.সে. ৬৩৫৩)
৪) গীবত
পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা
গীবত পরনিন্দা আমাদের
সমাজে খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। অনেকে এইগুলোকে পাপই মনে করেনা। কিন্তু এর ফলাফল কত ভয়ংকর তা বর্ণনা করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সূরা আল হুজরাতে
বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا
مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّلَا تَجَسَّسُوۡا وَلَا یَغۡتَبۡ
بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡہِ مَیۡتًا
فَکَرِہۡتُمُوۡہُ ؕ وَاتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।
এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের
কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (আল হুজরাত - ৪৯:১২)
গীবত কাকে
বলে?
গীবত কাকে বলে
এই উত্তর আবু দাউদ শরিফের এই হাদিসে
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ
الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، - يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ - عَنِ
الْعَلاَءِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قِيلَ يَا رَسُولَ
اللَّهِ مَا
الْغِيبَةُ قَالَ " ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ " .
قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ قَالَ " إِنْ كَانَ
فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُولُ
فَقَدْ بَهَتَّهُ " .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত
কী? তিনি
বললেন, তোমরা
ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো
তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৪
حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنِ
الأَعْمَشِ، قَالَ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا، يُحَدِّثُ عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ " إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ
فِي كَبِيرٍ، أَمَّا هَذَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَأَمَّا هَذَا فَكَانَ يَمْشِي
بِالنَّمِيمَةِ ". ثُمَّ دَعَا بِعَسِيبٍ رَطْبٍ، فَشَقَّهُ
بِاثْنَيْنِ، فَغَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا ثُمَّ قَالَ
" لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا، مَا لَمْ يَيْبَسَا ".
ইবনু আব্বাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুটি কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ
নিশ্চ্য়ই এ দুজন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে বড় কোন গুনাহের কারণে কবরে তাদের
আযাব দেয়া হচ্ছে না। এই কবরবাসী প্রস্রাব করার সময় সতর্ক থাকত না। আর ঐ কবরবাসী গীবত করে বেড়াত। এরপর
তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দুটুকরো করে এক টুকরো এক কবরের উপর এবং এক
টুকরো অন্য কবরের উপর গেড়ে দিলেন। তারপর বললেনঃ এ ডালের টুকরো দুটি শুকিয়ে না যাওয়া
পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের শাস্তি কমিয়ে দিবেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০৫২
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫১৩)
حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُصَفَّى، حَدَّثَنَا
بَقِيَّةُ، وَأَبُو الْمُغِيرَةِ، قَالاَ حَدَّثَنَا صَفْوَانُ، قَالَ حَدَّثَنِي
رَاشِدُ بْنُ سَعْدٍ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ جُبَيْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ
مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَمَّا عُرِجَ
بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ
وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ
يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ " .
قَالَ أَبُو دَاوُدَ حَدَّثَنَاهُ يَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ عَنْ بَقِيَّةَ لَيْسَ
فِيهِ أَنَسٌ .
আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের
নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা
কারা? তিনি
বললেন, এরা
সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো (গীবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো ।
সুনানে
আবু দাউদ,
হাদিস নং ৪৮৭৮
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ
بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ
تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ
اللَّهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ
" .
আবূ বারযাহ আল-আসলামী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে
প্রবেশ করেনি ! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি
খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন।
সুনানে
আবু দাউদ,
হাদিস নং ৪৮৮০
৫) প্রকাশ্যে
গোপনে দান করা
اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَاِنۡ
تُخۡفُوۡہَا وَتُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَیُکَفِّرُ
عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ
যদি তোমরা প্রকাশ্যে
দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত
গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন।
আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (আল বাকারা ২:২৭১)
অভাবীদের খুঁজে বের
করে দান করা
لِلۡفُقَرَآءِ الَّذِیۡنَ اُحۡصِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ
اللّٰہِ لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ضَرۡبًا فِی الۡاَرۡضِ ۫ یَحۡسَبُہُمُ الۡجَاہِلُ
اَغۡنِیَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِ ۚ تَعۡرِفُہُمۡ بِسِیۡمٰہُمۡ ۚ لَا یَسۡـَٔلُوۡنَ
النَّاسَ اِلۡحَافًا ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِیۡمٌ
খয়রাত ঐ সকল গরীব
লোকের জন্যে যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে-জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে
সক্ষম নয়। অজ্ঞ লোকেরা যাঞ্চা না করার কারণে তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদেরকে
তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা
যে অর্থ ব্যয় করবে, তা আল্লাহ তাআলা
অবশ্যই পরিজ্ঞাত। (আল বাকারা ২:২৭৩)
৬) অন্যের
প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ
تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَتَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَتُؤۡمِنُوۡنَ
بِاللّٰہِ ؕ وَلَوۡ اٰمَنَ اَہۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ مِنۡہُمُ
الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَاَکۡثَرُہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম
উম্মত,
মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা
সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর
আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য
মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (আল
ইমরান ৩:১১০)
مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَالَّذِیۡنَ
مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا
سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ
وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ
وَمَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ
فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ
الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ
مَّغۡفِرَۃً وَّاَجۡرًا عَظِیۡمًا
মুহাম্মদ আল্লাহর
রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে
রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা
এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে
আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের
মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। (সূরা
ফাতহ ৪৮:২৯)
فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ ۚ
وَلَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ
عَنۡہُمۡ وَاسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ
فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ
আল্লাহর রহমতেই আপনি
তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা
আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য
মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার
উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। (সূরা
আল ইমরান ৩:১৫৯)
সাহাবাদের মাঝে সহানুভূতির
উদাহরণ
وَالَّذِیۡنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَالۡاِیۡمَانَ
مِنۡ قَبۡلِہِمۡ یُحِبُّوۡنَ مَنۡ ہَاجَرَ اِلَیۡہِمۡ وَلَا یَجِدُوۡنَ فِیۡ
صُدُوۡرِہِمۡ حَاجَۃً مِّمَّاۤ اُوۡتُوۡا وَیُؤۡثِرُوۡنَ عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ
وَلَوۡ کَانَ بِہِمۡ خَصَاصَۃٌ ؕ۟ وَمَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِہٖ فَاُولٰٓئِکَ
ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ۚ
যারা মুহাজিরদের
আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে
ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের
কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। (সূরা
আল হাশর ৫৯:৯)
৭) কুরআন
তিলাওয়াত
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ
اللّٰہُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ وَاِذَا تُلِیَتۡ عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتُہٗ زَادَتۡہُمۡ
اِیۡمَانًا وَّعَلٰی رَبِّہِمۡ یَتَوَکَّلُوۡنَ ۚۖ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ
করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা
স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (আল আনফাল ৮:২)
সমাপনীঃ মাহে রমাদ্বানের শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা যেন আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত অতিবাহিত করতে পারি আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাউফিক দান করুন।